ঢাকা ০৬:১৫ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

এমপি আনার খুন/ মামলার এজাহারে যা আছে

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • সংবাদ প্রকাশের সময় : ১২:২৮:২৩ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৩ মে ২০২৪ ৮০ বার পড়া হয়েছে
বাংলা টাইমস অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

ঝিনাইদহ-৪ আসনের এমপি আনোয়ারুল আজিম আনারকে কলকাতায় নিয়ে পরিকল্পিত হত্যার ঘটনায় ঢাকার শেরেবাংলা নগর থানায় অপহরণ মামলা দায়ের করা হয়েছে। বুধবার (২২ মে) সন্ধ্যায় নিহত আনারের মেয়ে মুমতারিন ফেরদৌস ডরিন বাদী হয়ে এই মামলাটি করেন।

মামলায় উল্লেখ করেন, ‘রাজধানীর মানিক মিয়া এভিনিউয়ের বাসায় আমরা সপরিবারে বাস করি। চলতি মাসের ৯ মে রাত ৮টার দিকে আমার বাবা আনোয়ারুল আজিম আনার ঝিনাইদহ যাওয়ার উদ্দেশে যাত্রা করেন। এরপর ১১ মে বিকেল পৌনে ৫টার দিকে বাবার সাথে ভিডিও কলে কথা বললে বাবার কথাবার্তায় কিছুটা অসংলগ্ন মনে হয়। বাবার মোবাইল নম্বরে একাধিকবার কল দিলেও বন্ধ পাই।

‘এরপর ১৩ মে বাবার ভারতীয় নম্বর থেকে উজির মামার হোয়াটসঅ্যাপে একটি ক্ষুদে বার্তা আসে। তাতে লেখা ছিলো, ‘আমি হঠাৎ করে দিল্লি যাচ্ছি, আমার সাথে ভিআইপি রয়েছে। আমি অমিত সাহার কাজে নিউটাউন যাচ্ছি। আমাকে ফোন দেওয়ার কোনো দরকার নাই। আমি পরে ফোন দিবো।’ এছাড়াও আরো কয়েকটি বার্তা আসে। আমার বাবার মোবাইল ফোন ব্যবহার করে অপহরণকারীরা ক্ষুদে বার্তাগুলো করে থাকতে পারে।’

মামলায় আরও উল্লেখ করেন, ‘এ ঘটনার পর বিভিন্ন জায়গায় বাবার খোঁজ করতে থাকি। কোনো সন্ধান না পেয়ে তার বন্ধু গোপাল বিশ্বাস বাদী হয়ে ভারতের বারানগর পুলিশ স্টেশনে একটি সাধারণ ডায়েরি করেন। তারপরও খোঁজাখুজি অব্যাহত রাখি। পরবর্তীতে বিভিন্ন গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জানতে পারি অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিরা পরিকল্পিতভাবে পরস্পর যোগসাজসে বাবাকে অপহরণ করেছে।’

এদিকে, বুধাবার (২২ মে) দুপুরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, ভারতে নিখোঁজ আনোয়ারুল আজীম আনারকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। হত্যাকাণ্ডে বাংলাদেশীরা জড়িত।

চিকিৎসা করাতে চলতি মাসের ১২ মে কলকাতা যান এই এমপি। তার পর পরিবারের সাথে কোনো যোগাযোগও করেননি তিনি। ১৪ মে থেকে তার ফোনও ‘সুইচড অফ’ ছিলেঅ। পুলিশ সূত্রের খবর, শেষবার এমপি আনোয়ারুল আজিমের মোবাইল টাওয়ারের লোকেশন উত্তরপ্রদেশে পাওয়া গিয়েছিলো। তবে তার সাথে যোগাযোগ করতে না পেরে তার পরিবারের পক্ষ থেকেজোনানো হয় ডিবি অফিসে। এরপর যোগাযোগ করে দিল্লি ও কলকাতায় বাংলাদেশের দূতাবাসের সাথে। নিখোঁজ এমপির খোঁজে তদন্ত শুরু করে বিধাননগর পুলিশ। তদন্তে নেমে একাধিক ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ। আর তা থেকেই দাবি, খুন করা হতে পারে ওই এমপিকে।

এদিকে, বুধবার (২২ মে) সকালে আনোয়ারুল আজীম আনারের মৃত্যুর ছড়িয়ে পড়লে দলের হাজার হাজার নেতা-কর্মী, স্বজন ও বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ তার বাড়ি ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ শহরের নিশ্চিন্তপুর এলাকায় ভীড় করতে থাকেন। এক পর্যায়ে লোকে লোকারন্য হয়ে যায়। নেতাকর্মি ও ভক্তরা কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন।

ঘটনার খবর পেয়ে সংসদ সদস্যের বাড়িতে আসেন কালীগঞ্জ ইউএনও ইসরাত জাহান, কালীগঞ্জ থানার ওসি মোহাম্মদ আবু আজিফ।

সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনার ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার পার-শ্রীরামপুর গ্রামের ইয়াকুব আলীর ছেলে। তার চার ছেলের মধ্যে ছোট তিনি। ছাত্র জীবন থেকেই খেলাধুলা আর ব্যবসার সাথে জড়িয়ে পড়েন। ১৯৮৬ সালে ব্যবসা আর ৮৮ সালে রাজনীতির সাথে যুক্ত হন।

সেই সময়কার বিএনপি নেতা ও পরবর্তীতে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য আব্দুল মান্নানের সাথে থেকে রাজনীতি শুরু করেন। ১৯৯২ সালে কালীগঞ্জ পৌরসভা গঠিত হলে আনোয়ারুল আজিম আনার প্রথম পৌর কাউন্সিলর নির্বাচিত হন।

১৯৯৫ সালে আব্দুল মান্নান বিএনপি ছেড়ে আওয়ামী লীগে যোগ দেন আনোয়ারুল আজীম আনার। এরপর তিনি আওয়ামী লীগের সক্রিয় কর্মী হয়ে ওঠেন। পরে ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করলে তারা দু’জনই এলাকায় আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন।

২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার ক্ষমতায় এলে তিনি ভারতে চলে যান। বিভিন্ন সময়ে তার নামে তিনটি হত্যাসহ ২১টি মামলা হয়। পরে মামলাগুলো খারিজ হয়ে যায়। আনার ভারতে দীর্ঘদিন অবস্থানকালে ২০০৪ সালে কালীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। এরপর তিনি দেশে ফিরে আসেন।

২০০৯ সালে তত্ববাধায়ক সরকারের সময় আব্দুল মান্নান আওয়ামী লীগের মনোনয়ন নিয়ে এমপি আর দলের সমর্থনে আনোয়ারুল আজীম কালীগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান থাকাকালীন আব্দুল মান্নান এর সাথে রাজনৈতিক গ্রুপিং তৈরী হয় তার। ২০১৪ সালে তিনি আব্দুল মান্নানকে জনপ্রিয়তায় পেছনে ফেলে দলীয় মনোনয়ন নিয়ে ঝিনাইদহ-৪ আসনের এমপি নির্বাচিত হন। সেই থেকে পর পর তিনবার আওয়ামী লীগের দলীয় এমপি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

ট্যাগস :

এমপি আনার খুন/ মামলার এজাহারে যা আছে

সংবাদ প্রকাশের সময় : ১২:২৮:২৩ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৩ মে ২০২৪

ঝিনাইদহ-৪ আসনের এমপি আনোয়ারুল আজিম আনারকে কলকাতায় নিয়ে পরিকল্পিত হত্যার ঘটনায় ঢাকার শেরেবাংলা নগর থানায় অপহরণ মামলা দায়ের করা হয়েছে। বুধবার (২২ মে) সন্ধ্যায় নিহত আনারের মেয়ে মুমতারিন ফেরদৌস ডরিন বাদী হয়ে এই মামলাটি করেন।

মামলায় উল্লেখ করেন, ‘রাজধানীর মানিক মিয়া এভিনিউয়ের বাসায় আমরা সপরিবারে বাস করি। চলতি মাসের ৯ মে রাত ৮টার দিকে আমার বাবা আনোয়ারুল আজিম আনার ঝিনাইদহ যাওয়ার উদ্দেশে যাত্রা করেন। এরপর ১১ মে বিকেল পৌনে ৫টার দিকে বাবার সাথে ভিডিও কলে কথা বললে বাবার কথাবার্তায় কিছুটা অসংলগ্ন মনে হয়। বাবার মোবাইল নম্বরে একাধিকবার কল দিলেও বন্ধ পাই।

‘এরপর ১৩ মে বাবার ভারতীয় নম্বর থেকে উজির মামার হোয়াটসঅ্যাপে একটি ক্ষুদে বার্তা আসে। তাতে লেখা ছিলো, ‘আমি হঠাৎ করে দিল্লি যাচ্ছি, আমার সাথে ভিআইপি রয়েছে। আমি অমিত সাহার কাজে নিউটাউন যাচ্ছি। আমাকে ফোন দেওয়ার কোনো দরকার নাই। আমি পরে ফোন দিবো।’ এছাড়াও আরো কয়েকটি বার্তা আসে। আমার বাবার মোবাইল ফোন ব্যবহার করে অপহরণকারীরা ক্ষুদে বার্তাগুলো করে থাকতে পারে।’

মামলায় আরও উল্লেখ করেন, ‘এ ঘটনার পর বিভিন্ন জায়গায় বাবার খোঁজ করতে থাকি। কোনো সন্ধান না পেয়ে তার বন্ধু গোপাল বিশ্বাস বাদী হয়ে ভারতের বারানগর পুলিশ স্টেশনে একটি সাধারণ ডায়েরি করেন। তারপরও খোঁজাখুজি অব্যাহত রাখি। পরবর্তীতে বিভিন্ন গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জানতে পারি অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিরা পরিকল্পিতভাবে পরস্পর যোগসাজসে বাবাকে অপহরণ করেছে।’

এদিকে, বুধাবার (২২ মে) দুপুরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, ভারতে নিখোঁজ আনোয়ারুল আজীম আনারকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। হত্যাকাণ্ডে বাংলাদেশীরা জড়িত।

চিকিৎসা করাতে চলতি মাসের ১২ মে কলকাতা যান এই এমপি। তার পর পরিবারের সাথে কোনো যোগাযোগও করেননি তিনি। ১৪ মে থেকে তার ফোনও ‘সুইচড অফ’ ছিলেঅ। পুলিশ সূত্রের খবর, শেষবার এমপি আনোয়ারুল আজিমের মোবাইল টাওয়ারের লোকেশন উত্তরপ্রদেশে পাওয়া গিয়েছিলো। তবে তার সাথে যোগাযোগ করতে না পেরে তার পরিবারের পক্ষ থেকেজোনানো হয় ডিবি অফিসে। এরপর যোগাযোগ করে দিল্লি ও কলকাতায় বাংলাদেশের দূতাবাসের সাথে। নিখোঁজ এমপির খোঁজে তদন্ত শুরু করে বিধাননগর পুলিশ। তদন্তে নেমে একাধিক ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ। আর তা থেকেই দাবি, খুন করা হতে পারে ওই এমপিকে।

এদিকে, বুধবার (২২ মে) সকালে আনোয়ারুল আজীম আনারের মৃত্যুর ছড়িয়ে পড়লে দলের হাজার হাজার নেতা-কর্মী, স্বজন ও বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ তার বাড়ি ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ শহরের নিশ্চিন্তপুর এলাকায় ভীড় করতে থাকেন। এক পর্যায়ে লোকে লোকারন্য হয়ে যায়। নেতাকর্মি ও ভক্তরা কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন।

ঘটনার খবর পেয়ে সংসদ সদস্যের বাড়িতে আসেন কালীগঞ্জ ইউএনও ইসরাত জাহান, কালীগঞ্জ থানার ওসি মোহাম্মদ আবু আজিফ।

সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনার ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার পার-শ্রীরামপুর গ্রামের ইয়াকুব আলীর ছেলে। তার চার ছেলের মধ্যে ছোট তিনি। ছাত্র জীবন থেকেই খেলাধুলা আর ব্যবসার সাথে জড়িয়ে পড়েন। ১৯৮৬ সালে ব্যবসা আর ৮৮ সালে রাজনীতির সাথে যুক্ত হন।

সেই সময়কার বিএনপি নেতা ও পরবর্তীতে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য আব্দুল মান্নানের সাথে থেকে রাজনীতি শুরু করেন। ১৯৯২ সালে কালীগঞ্জ পৌরসভা গঠিত হলে আনোয়ারুল আজিম আনার প্রথম পৌর কাউন্সিলর নির্বাচিত হন।

১৯৯৫ সালে আব্দুল মান্নান বিএনপি ছেড়ে আওয়ামী লীগে যোগ দেন আনোয়ারুল আজীম আনার। এরপর তিনি আওয়ামী লীগের সক্রিয় কর্মী হয়ে ওঠেন। পরে ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করলে তারা দু’জনই এলাকায় আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন।

২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার ক্ষমতায় এলে তিনি ভারতে চলে যান। বিভিন্ন সময়ে তার নামে তিনটি হত্যাসহ ২১টি মামলা হয়। পরে মামলাগুলো খারিজ হয়ে যায়। আনার ভারতে দীর্ঘদিন অবস্থানকালে ২০০৪ সালে কালীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। এরপর তিনি দেশে ফিরে আসেন।

২০০৯ সালে তত্ববাধায়ক সরকারের সময় আব্দুল মান্নান আওয়ামী লীগের মনোনয়ন নিয়ে এমপি আর দলের সমর্থনে আনোয়ারুল আজীম কালীগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান থাকাকালীন আব্দুল মান্নান এর সাথে রাজনৈতিক গ্রুপিং তৈরী হয় তার। ২০১৪ সালে তিনি আব্দুল মান্নানকে জনপ্রিয়তায় পেছনে ফেলে দলীয় মনোনয়ন নিয়ে ঝিনাইদহ-৪ আসনের এমপি নির্বাচিত হন। সেই থেকে পর পর তিনবার আওয়ামী লীগের দলীয় এমপি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন।