ঢাকা ০৬:৩৮ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ইটভাটার ধোঁয়ায় পুড়েছে কৃষকের ফসল

মেহেদী হাসান মিলন,ব্রাহ্মণবাড়িয়া
  • সংবাদ প্রকাশের সময় : ১২:৪৮:৫৭ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২ মে ২০২৪ ৪৭ বার পড়া হয়েছে
বাংলা টাইমস অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

ইটভাটার কালো ধোঁয়ায় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল এবং বিজয়নগর উপজেলার সাপুটিয়া শশই হাওরের অন্তত ২৪ একর জমির উঠতি বোরো ধান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ঘরে তোলার আগমুহূর্তে বছরের একমাত্র ফসল ইরি এবং বোরো ধান হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন অর্ধশতাধিক কৃষক। এ নিয়ে ক্ষতিপূরণ দাবি করেছেন তারা।

ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা জানিয়েছেন, বিশাল সাপুটিয়া হাওরের মাঝামাঝি স্থানে অবস্থিত শাপলা অটো ব্রিকস এবং ইউনিয়ন ব্রিকস। দুটি ইটভাটার কালো ধোঁয়ায় তাদের উঠতি বোরো ধান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ইটভাটা মালিকদের কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ না পেলে আন্দোলনে নামতে বাধ্য হবেন। এ ব্যাপারে স্থানীয় সংসদ সদস্য গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন তারা।

সরেজমিনে দেখা গেছে, জমির বেশিরভাগ ধান ভালো থাকলেও দুটি ইটভাটার আশপাশের ২৪ একরের বোরো ধানের শিষ চিটা হয়ে গেছে। দূর থেকে দেখলে মনে হয় পাকা ধান। কাছে গিয়ে দেখা যায় এর ভেতরে চাল নেই। চিটা হয়ে গেছে।

ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা জানান, মাথার ঘাম পায়ে ফেলে ধারদেনা করে ধানের চারা রোপণ করেছিলেন। শীষগুলোতে ফুলও এসেছিল পর্যাপ্ত পরিমাণ। কিন্তু শাপলা অটো ব্রিকস এবং ইউনিয়ন ব্রিকসের কালো ধোঁয়ায় সব ধান এখন নষ্ট হয়ে গেছে।

ক্ষতিগ্রস্ত এক কৃষক বলেন, বিগত বছরে দুটি ইটভাটার মালিক ক্ষতিপূরণ দিয়েছিলো। এবছর শাপলা অটো ব্রিকস কর্তৃপক্ষ কিছুটা নমনীয় হলেও ইউনিয়ন ব্রিকস ক্ষতির বিষয়টি আমলেই নিচ্ছে না। এ অবস্থায় গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরীর হস্তক্ষেপ কামনা করছি।

মো. হাকিম মিয়া নামে আরেক কৃষক বলেন, ‘এই জায়গায় আগেও আমরা ধান করে ঘরে নিতে পেরেছি। যখন থেকে এখানে ইউনিয়ন ব্রিকস দিয়েছে, তখন থেকে আর ধান ঘরে তুলতে পারি না। ইটভাটার ধোঁয়ার কারণে আমাদের সব ধান নষ্ট হয়ে যায়। এর আগে দুই-তিনবার ক্ষতিপূরণ দিয়েছিল তারা। এ বছর ফসল নষ্ট হলেও তারা ক্ষতিপূরণ দিতে চায় না। যদি ক্ষতিপূরণ না দেয় তাহলে আমরা আন্দোলনে নামতে বাধ্য হবো।’

ক্ষতিগ্রস্ত এক কৃষক বলেন, ‘ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে ফসল চাষ করেছি। এখন ইটভাটার ধোঁয়ার কারণে আমাদের সব ধান নষ্ট হয়ে গেছে। তারা আমাদের ক্ষতিপূরণ দেবে না বলছে। আমরা এখন কোথায় যাবো?

চান্দুরা ইউনিয়ন পরিষদের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক মেম্বার কাজী সিদ্দিকুর রহমান বলেন, শাপলা অটো ব্রিকস এবং ইউনিয়ন ব্রিকসের ধোঁয়ার সোনালি ফসল পুড়ে নষ্ট হয়ে গেছে। কৃষকরা এখন দিশেহারা হয়ে পড়েছে। এখন যদি কর্তৃপক্ষ না দেখে, তাহলে আন্দোলনে যেতে বাধ্য হবো।

এদিকে, ইটভাটা মালিক পক্ষের বক্তব্য নিতে গেলে সাংবাদিক দেখে অফিসে তালা দিয়ে চলে যান ইউনিয়ন ব্রিকসের দায়িত্বশীলরা। তবে কৃষকদের দাবির বিষয়টি যৌক্তিক এবং সঠিক প্রমাণিত হলে ক্ষতিপূরণ দেয়ার আশ্বাস দেন শাপলা অটো ব্রিকস কর্তৃপক্ষ।

এ বিষয়ে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক সুশান্ত সাহা বলেন, ইটভাটার ধোঁয়ার জন্য যে চিমনি ব্যবহার করা হয়, তার নির্দিষ্ট উচ্চতা রয়েছে। যদি চিমনি নিচু হয় তাহলে ফসলের ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান বলেন, অবৈধ ইটভাটার বিষয়ে পরিবেশ অধিদফতরকে সাথে নিয়ে জেলা প্রশাসন যৌথভাবে অভিযান পরিচালনা করছে। কৃষকরা যদি ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তাহলে অবশ্যই ভাটাগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

ইটভাটার ধোঁয়ায় পুড়েছে কৃষকের ফসল

সংবাদ প্রকাশের সময় : ১২:৪৮:৫৭ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২ মে ২০২৪

ইটভাটার কালো ধোঁয়ায় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল এবং বিজয়নগর উপজেলার সাপুটিয়া শশই হাওরের অন্তত ২৪ একর জমির উঠতি বোরো ধান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ঘরে তোলার আগমুহূর্তে বছরের একমাত্র ফসল ইরি এবং বোরো ধান হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন অর্ধশতাধিক কৃষক। এ নিয়ে ক্ষতিপূরণ দাবি করেছেন তারা।

ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা জানিয়েছেন, বিশাল সাপুটিয়া হাওরের মাঝামাঝি স্থানে অবস্থিত শাপলা অটো ব্রিকস এবং ইউনিয়ন ব্রিকস। দুটি ইটভাটার কালো ধোঁয়ায় তাদের উঠতি বোরো ধান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ইটভাটা মালিকদের কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ না পেলে আন্দোলনে নামতে বাধ্য হবেন। এ ব্যাপারে স্থানীয় সংসদ সদস্য গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন তারা।

সরেজমিনে দেখা গেছে, জমির বেশিরভাগ ধান ভালো থাকলেও দুটি ইটভাটার আশপাশের ২৪ একরের বোরো ধানের শিষ চিটা হয়ে গেছে। দূর থেকে দেখলে মনে হয় পাকা ধান। কাছে গিয়ে দেখা যায় এর ভেতরে চাল নেই। চিটা হয়ে গেছে।

ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা জানান, মাথার ঘাম পায়ে ফেলে ধারদেনা করে ধানের চারা রোপণ করেছিলেন। শীষগুলোতে ফুলও এসেছিল পর্যাপ্ত পরিমাণ। কিন্তু শাপলা অটো ব্রিকস এবং ইউনিয়ন ব্রিকসের কালো ধোঁয়ায় সব ধান এখন নষ্ট হয়ে গেছে।

ক্ষতিগ্রস্ত এক কৃষক বলেন, বিগত বছরে দুটি ইটভাটার মালিক ক্ষতিপূরণ দিয়েছিলো। এবছর শাপলা অটো ব্রিকস কর্তৃপক্ষ কিছুটা নমনীয় হলেও ইউনিয়ন ব্রিকস ক্ষতির বিষয়টি আমলেই নিচ্ছে না। এ অবস্থায় গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরীর হস্তক্ষেপ কামনা করছি।

মো. হাকিম মিয়া নামে আরেক কৃষক বলেন, ‘এই জায়গায় আগেও আমরা ধান করে ঘরে নিতে পেরেছি। যখন থেকে এখানে ইউনিয়ন ব্রিকস দিয়েছে, তখন থেকে আর ধান ঘরে তুলতে পারি না। ইটভাটার ধোঁয়ার কারণে আমাদের সব ধান নষ্ট হয়ে যায়। এর আগে দুই-তিনবার ক্ষতিপূরণ দিয়েছিল তারা। এ বছর ফসল নষ্ট হলেও তারা ক্ষতিপূরণ দিতে চায় না। যদি ক্ষতিপূরণ না দেয় তাহলে আমরা আন্দোলনে নামতে বাধ্য হবো।’

ক্ষতিগ্রস্ত এক কৃষক বলেন, ‘ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে ফসল চাষ করেছি। এখন ইটভাটার ধোঁয়ার কারণে আমাদের সব ধান নষ্ট হয়ে গেছে। তারা আমাদের ক্ষতিপূরণ দেবে না বলছে। আমরা এখন কোথায় যাবো?

চান্দুরা ইউনিয়ন পরিষদের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক মেম্বার কাজী সিদ্দিকুর রহমান বলেন, শাপলা অটো ব্রিকস এবং ইউনিয়ন ব্রিকসের ধোঁয়ার সোনালি ফসল পুড়ে নষ্ট হয়ে গেছে। কৃষকরা এখন দিশেহারা হয়ে পড়েছে। এখন যদি কর্তৃপক্ষ না দেখে, তাহলে আন্দোলনে যেতে বাধ্য হবো।

এদিকে, ইটভাটা মালিক পক্ষের বক্তব্য নিতে গেলে সাংবাদিক দেখে অফিসে তালা দিয়ে চলে যান ইউনিয়ন ব্রিকসের দায়িত্বশীলরা। তবে কৃষকদের দাবির বিষয়টি যৌক্তিক এবং সঠিক প্রমাণিত হলে ক্ষতিপূরণ দেয়ার আশ্বাস দেন শাপলা অটো ব্রিকস কর্তৃপক্ষ।

এ বিষয়ে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক সুশান্ত সাহা বলেন, ইটভাটার ধোঁয়ার জন্য যে চিমনি ব্যবহার করা হয়, তার নির্দিষ্ট উচ্চতা রয়েছে। যদি চিমনি নিচু হয় তাহলে ফসলের ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান বলেন, অবৈধ ইটভাটার বিষয়ে পরিবেশ অধিদফতরকে সাথে নিয়ে জেলা প্রশাসন যৌথভাবে অভিযান পরিচালনা করছে। কৃষকরা যদি ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তাহলে অবশ্যই ভাটাগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।