ঢাকা ০৫:৪৮ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ১১ শ্রাবণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আবারও ভাঙলো জাতীয় পার্টি

বিশেষ প্রতিবেদক
  • সংবাদ প্রকাশের সময় : ০৫:৪৩:৪৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ৯ মার্চ ২০২৪ ১০১ বার পড়া হয়েছে
বাংলা টাইমস অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

আবারও ভাঙলো জাতীয় পার্টি। রওশন অংশের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন দলের প্রতিষ্ঠাতা হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের সহধর্মিণী রওশন এরশাদ। আর মহাসচিব নির্বাচিত হয়েছেন কাজী মামুনুর রশীদ। এ নিয়ে চার দফায় ভাঙনের কবলে পড়লো ১৯৮৬ সালে প্রতিষ্ঠিত দলটি।

রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ারিং ইনিস্টিউটে শনিবার (৯ মার্চ) দুপুরে জাতীয় সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন জাপার কো-চেয়ারম্যান কাজী ফিরোজ রশিদ।

সম্মেলনে তিনি চেয়ারম্যান হিসেবে রওশন এরশাদের নাম ঘোষণা করেন। এ সময় উপস্থিত কাউন্সিলর ও ডেলিগেটরা সমর্থন জানান। এরপর দলের অপর প্রেসিডিয়াম সদস্য ফখরুজ্জামান জাহাঙ্গীর দলের অন্যান্য সিনিয়র নেতাদের নাম ঘোষণা করেন।

এরমধ্যে কাজী ফিরোজ রশিদকে নির্বাহী চেয়ারম্যান, সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান এবং সাহিদুর রহমান টেপা, শফিকুল ইসলাম সেন্টু, আল মাহগির শাদ এরশাদ, গোলাম সারোয়ার মিলন ও সুনীল শুভ রায়কে কো-চেয়ারম্যান হিসেবে ঘোষণা করা হয়। নাম ঘোষণার পর উপস্থিত কাউন্সিলর ও ডেলিগেটদের কাছে মহাসচিব হিসেবে কাজী মামুনুর রশীদের নাম ঘোষণা করেন গোলাম সারোয়ার মিলন।

এ সময় রওশন এরশাদ বলেন, সম্মেলন না হলে জাতীয় পার্টি হারিয়ে যেতো। এরশাদের জাতীয় পার্টিতে কোন বিভেদ নাই। চেয়ারম্যান হিসেবে একক ক্ষমতা ধরে রাখতে চাই না। ক্ষমতা বিকেন্দ্রীকরণ করতে চাই।

দলের প্রতিষ্ঠাতা এরশাদের মৃত্যুর পরই জাতীয় পার্টিতে বিরোধ চলছে দেবর জিএম কাদের এবং ভাবি রওশন এরশাদের মধ্যে। বিরোধীদলীয় নেতার পদ নিয়ে প্রথম বিরোধ দেখা দেয় তাদের মধ্যে। দেবর-ভাবি পৃথকভাবে নিজেকে বিরোধীদলীয় নেতা করার জন্য স্পিকারকে চিঠি দিয়েছিলেন বিগত সংসদে। শেষপর্যন্ত রওশন এরশাদকে বহাল করেন স্পিকার।

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রওশন এরশাদ এবং তার সন্তানকে পার্টি থেকে মনোনয়ন না দেওয়া দেবর-ভাবির সম্পর্ক আরও অবনতি হতে শুরু করে। গত ২৮ জানুয়ারি রওশন এরশাদ জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের ও মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নুকে তাদের দলের পদ থেকে অব্যাহতি প্রদান করেন। নিজেকে জাপার চেয়ারম্যান ঘোষণা করে রওশন এরশাদ দাবি করেন, তৃণমূল ও কেন্দ্রীয় নেতাদের অনুরোধে এ সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছি।

২০২২ সালের ডিসেম্বরে জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির মেয়াদ শেষ হয়। ২০১৯ সালের ২৮ ডিসেম্বর দলের সর্বশেষ কাউন্সিল হয়েছিলো।

১৯৮৫ সালে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ গঠন করেন জাতীয় ফ্রন্ট। এরপর ১৯৮৬ সালের ১ জানুয়ারি ‘সরকারি রাজনৈতিক দল’ জাতীয় পার্টির আত্মপ্রকাশ করে।

জাতীয় পার্টিতে প্রথম বড় ধরনের ভাঙন শুর হয় আনোয়ার হোসেন মঞ্জু আলাদা জাতীয় পার্টি ঘোষণা করলে। ১৯৯৬ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সংখ্যাগরিষ্ঠ দল হিসেবে সরকার গঠনের সময় জাতীয় পার্টি প্রথমে তাদের সমর্থন দিলেও পরে চারদলীয় জোটে চলে যায়। সেই সময় যোগাযোগ মন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জু এরশাদের এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে জাতীয় পার্টি নামে নতুন দল গঠন করেন।

এরশাদের জাতীয় পার্টিতে আরেক দফা ভাঙন ধরে ২০০১ সালের নির্বাচনের আগে। নাজিউর রহমান মঞ্জু জাতীয় পার্টি নামে আরেকটি দল গঠন করে এবং বিএনপির নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোটের অংশ হয়ে নির্বাচনে যায়। বর্তমানে এই অংশের নেতৃত্বে আছেন আন্দালিব রহমান। এই অংশটির ভেতরও আরেকটি ভাঙন আছে। মন্ত্রিত্ব নিয়ে ঝামেলার একপর্যায়ে এম এ মতিন আলাদা জাতীয় পার্টি গঠন করেন।

এরপর এক এগারোর সময়ও জাতীয় পার্টি দুটি অংশে বিভক্ত হয়েছিল। পরে অবশ্য এ দুটি অংশই এরশাদের নেতৃত্বে এক হয়ে যায়।

সবশেষ জাতীয় পার্টিতে ভাঙন ধরান তার পুরোনো রাজনৈতিক সহকর্মী কাজী জাফর আহমেদ। ২০১৪ সালের জাতীয় নির্বাচনের আগে কাজী জাফর এরশাদকে ছেড়ে আলাদা জাতীয় পার্টি গঠন করেন। তারপর বিএনপি-জোটে যোগ দে। ২০১৩ সালের ২০ ডিসেম্বর জাতীয় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে দলের বিশেষ কাউন্সিলের মাধ্যমে নতুন জাতীয় পার্টির ঘোষণা দেন কাজী জাফর। একই সঙ্গে তিনি এরশাদকে বহিষ্কারও করেন।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আবারও ভাঙলো জাতীয় পার্টি

সংবাদ প্রকাশের সময় : ০৫:৪৩:৪৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ৯ মার্চ ২০২৪

আবারও ভাঙলো জাতীয় পার্টি। রওশন অংশের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন দলের প্রতিষ্ঠাতা হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের সহধর্মিণী রওশন এরশাদ। আর মহাসচিব নির্বাচিত হয়েছেন কাজী মামুনুর রশীদ। এ নিয়ে চার দফায় ভাঙনের কবলে পড়লো ১৯৮৬ সালে প্রতিষ্ঠিত দলটি।

রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ারিং ইনিস্টিউটে শনিবার (৯ মার্চ) দুপুরে জাতীয় সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন জাপার কো-চেয়ারম্যান কাজী ফিরোজ রশিদ।

সম্মেলনে তিনি চেয়ারম্যান হিসেবে রওশন এরশাদের নাম ঘোষণা করেন। এ সময় উপস্থিত কাউন্সিলর ও ডেলিগেটরা সমর্থন জানান। এরপর দলের অপর প্রেসিডিয়াম সদস্য ফখরুজ্জামান জাহাঙ্গীর দলের অন্যান্য সিনিয়র নেতাদের নাম ঘোষণা করেন।

এরমধ্যে কাজী ফিরোজ রশিদকে নির্বাহী চেয়ারম্যান, সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান এবং সাহিদুর রহমান টেপা, শফিকুল ইসলাম সেন্টু, আল মাহগির শাদ এরশাদ, গোলাম সারোয়ার মিলন ও সুনীল শুভ রায়কে কো-চেয়ারম্যান হিসেবে ঘোষণা করা হয়। নাম ঘোষণার পর উপস্থিত কাউন্সিলর ও ডেলিগেটদের কাছে মহাসচিব হিসেবে কাজী মামুনুর রশীদের নাম ঘোষণা করেন গোলাম সারোয়ার মিলন।

এ সময় রওশন এরশাদ বলেন, সম্মেলন না হলে জাতীয় পার্টি হারিয়ে যেতো। এরশাদের জাতীয় পার্টিতে কোন বিভেদ নাই। চেয়ারম্যান হিসেবে একক ক্ষমতা ধরে রাখতে চাই না। ক্ষমতা বিকেন্দ্রীকরণ করতে চাই।

দলের প্রতিষ্ঠাতা এরশাদের মৃত্যুর পরই জাতীয় পার্টিতে বিরোধ চলছে দেবর জিএম কাদের এবং ভাবি রওশন এরশাদের মধ্যে। বিরোধীদলীয় নেতার পদ নিয়ে প্রথম বিরোধ দেখা দেয় তাদের মধ্যে। দেবর-ভাবি পৃথকভাবে নিজেকে বিরোধীদলীয় নেতা করার জন্য স্পিকারকে চিঠি দিয়েছিলেন বিগত সংসদে। শেষপর্যন্ত রওশন এরশাদকে বহাল করেন স্পিকার।

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রওশন এরশাদ এবং তার সন্তানকে পার্টি থেকে মনোনয়ন না দেওয়া দেবর-ভাবির সম্পর্ক আরও অবনতি হতে শুরু করে। গত ২৮ জানুয়ারি রওশন এরশাদ জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের ও মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নুকে তাদের দলের পদ থেকে অব্যাহতি প্রদান করেন। নিজেকে জাপার চেয়ারম্যান ঘোষণা করে রওশন এরশাদ দাবি করেন, তৃণমূল ও কেন্দ্রীয় নেতাদের অনুরোধে এ সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছি।

২০২২ সালের ডিসেম্বরে জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির মেয়াদ শেষ হয়। ২০১৯ সালের ২৮ ডিসেম্বর দলের সর্বশেষ কাউন্সিল হয়েছিলো।

১৯৮৫ সালে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ গঠন করেন জাতীয় ফ্রন্ট। এরপর ১৯৮৬ সালের ১ জানুয়ারি ‘সরকারি রাজনৈতিক দল’ জাতীয় পার্টির আত্মপ্রকাশ করে।

জাতীয় পার্টিতে প্রথম বড় ধরনের ভাঙন শুর হয় আনোয়ার হোসেন মঞ্জু আলাদা জাতীয় পার্টি ঘোষণা করলে। ১৯৯৬ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সংখ্যাগরিষ্ঠ দল হিসেবে সরকার গঠনের সময় জাতীয় পার্টি প্রথমে তাদের সমর্থন দিলেও পরে চারদলীয় জোটে চলে যায়। সেই সময় যোগাযোগ মন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জু এরশাদের এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে জাতীয় পার্টি নামে নতুন দল গঠন করেন।

এরশাদের জাতীয় পার্টিতে আরেক দফা ভাঙন ধরে ২০০১ সালের নির্বাচনের আগে। নাজিউর রহমান মঞ্জু জাতীয় পার্টি নামে আরেকটি দল গঠন করে এবং বিএনপির নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোটের অংশ হয়ে নির্বাচনে যায়। বর্তমানে এই অংশের নেতৃত্বে আছেন আন্দালিব রহমান। এই অংশটির ভেতরও আরেকটি ভাঙন আছে। মন্ত্রিত্ব নিয়ে ঝামেলার একপর্যায়ে এম এ মতিন আলাদা জাতীয় পার্টি গঠন করেন।

এরপর এক এগারোর সময়ও জাতীয় পার্টি দুটি অংশে বিভক্ত হয়েছিল। পরে অবশ্য এ দুটি অংশই এরশাদের নেতৃত্বে এক হয়ে যায়।

সবশেষ জাতীয় পার্টিতে ভাঙন ধরান তার পুরোনো রাজনৈতিক সহকর্মী কাজী জাফর আহমেদ। ২০১৪ সালের জাতীয় নির্বাচনের আগে কাজী জাফর এরশাদকে ছেড়ে আলাদা জাতীয় পার্টি গঠন করেন। তারপর বিএনপি-জোটে যোগ দে। ২০১৩ সালের ২০ ডিসেম্বর জাতীয় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে দলের বিশেষ কাউন্সিলের মাধ্যমে নতুন জাতীয় পার্টির ঘোষণা দেন কাজী জাফর। একই সঙ্গে তিনি এরশাদকে বহিষ্কারও করেন।