ফ্রিল্যান্স সাংবাদিকরাও পাবেন অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড
- সংবাদ প্রকাশের সময় : ১০:২১:২০ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৯ জানুয়ারী ২০২৫ ১৯ বার পড়া হয়েছে
আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে সাংবাদিকদের অ্যাক্রিডিটেশন কার্ডের জন্য নতুন নীতিমালা প্রকাশ করা হবে । বুধবার (২৯ জানুয়ারি) রাজধানীর হেয়ার রোডে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত মিডিয়া ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান প্রধান উপদেষ্টার উপ-প্রেসসচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার।
সাংবাদিকদের প্রেস অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড দেয়ার ক্ষেত্রে স্থায়ী বা অস্থায়ী কার্ড- একই ধরনের কার্ড দেয়া হচ্ছে। যার মেয়াদ হবে তিন বছর। আর কার্ড দেয়া হবে কোনো গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানের সম্পাদক, বার্তা সম্পাদক, বিভাগীয় সম্পাদক ও রিপোর্টারের মোট সংখ্যার সর্বোচ্চ ৩০ শতাংশ অথবা ১৫ জন সাংবাদিককে।
নতুন প্রেস অ্যাক্রিডিটেশন নীতিমালা করার জন্য প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস তথা সরকারের পক্ষ থেকে এমন কিছু বিধান সংযোজন-বিয়োজনের সুপারিশ করা হয়েছে।
প্রেস অ্যাক্রিডিটেশন নীতিমালা পুনর্মূল্যায়নের জন্য সম্প্রতি ১৭ সদস্যের কমিটি গঠন করেছে সরকার। রাষ্ট্রপতির প্রেস সচিব মো. সরওয়ার আলমকে কমিটির আহ্বায়ক করা হয়েছে। এই কমিটি প্রেস অ্যাক্রিডিটেশন নীতিমালা ২০২২ পুনর্মূল্যায়ন করে প্রয়োজনীয় সংযোজন, সংশোধন ও পরিমার্জনের সুপারিশ করবে। আগামী ১০ ফেব্রুয়ারির মধ্যে কমিটিকে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
এ অবস্থায় সরকারের পক্ষ থেকে সুপারিশের কথা তুলে ধরা হয়েছে। এ বিষয়ে উপ–প্রেস সচিব মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ মজুমদার বলেন, প্রধান উপদেষ্টার পক্ষ থেকে কিছু প্রস্তাব আছে। তবে এই প্রস্তাব চূড়ান্ত নয়। যখন কমিটিতে এ নিয়ে আলোচনা হবে, তখন সাংবাদিক প্রতিনিধিরা মতামত দেবেন এবং সবার মতামত নিয়েই নীতিমালা চূড়ান্ত করা হবে। তাঁরা আশা করছেন, এক-দেড় সপ্তাহের মধ্যে নীতিমালা চূড়ান্ত করা যাবে। এরপর নতুন নীতিমালার আলোকে প্রেস অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হবে। আর যতক্ষণ পর্যন্ত নতুন কার্ড দেওয়া হচ্ছে না, ততক্ষণ পর্যন্ত বিদ্যমান অ্যাক্রিডিটেশন কার্ডের কার্যকারিতা বহাল থাকবে।
যেসব সুপারিশ করেছে সরকার: প্রেস অ্যাক্রিডিটেশন নীতিমালা, ২০২২–এর কথা উল্লেখ করে উপ–প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার বলেন, এই নীতিমালা পর্যালোচনা করতে গিয়ে দেখা গেছে, নীতিমালার প্রথম শর্তই ছিল সরকারের উন্নয়নের কথাবার্তা প্রচার করতে হবে। অন্তর্বর্তী সরকার এই শব্দগুচ্ছ বাতিল করার সুপারিশ করছে। সরকার মনে করে এটি স্বাধীন সাংবাদিকতার পরিপন্থী কাজ।
আবুল কালাম আজাদ মজুমদার বলেন, নতুন নীতিমালায় স্থায়ী-অস্থায়ী এ রকম আলাদা করে অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড রাখার পক্ষপাতী নয় অন্তর্বর্তী সরকার। এ নিয়ে সাংবাদিকদের পক্ষও থেকেও সুপারিশ এসেছে। সাংবাদিকদের কিছু সংগঠনের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় বেশির ভাগ সাংবাদিক প্রস্তাব করেছেন একই ধরনের কার্ড হবে—স্থায়ী-অস্থায়ী বলে কিছু থাকবে না। সেই কার্ডের মেয়াদ হবে কমপক্ষে তিন বছর। সেই প্রস্তাব সরকার গ্রহণ করছে।
বর্তমানে স্থায়ী ও অস্থায়ী-এই দুই ধরনের অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড দেওয়া হয়। এর মধ্যে স্থায়ী কার্ডের মেয়াদ তিন বছর এবং অস্থায়ী কার্ডের মেয়াদ এক বছর।
বিদ্যমান নীতিমালায় একটি প্রতিষ্ঠান কটি কার্ড পাবে, তা নির্ধারিত হতো পত্রিকার প্রচারসংখ্যার ভিত্তিতে। এই বিধানটি উঠিয়ে দেওয়ার সুপারিশ করা হচ্ছে। আবুল কালাম আজাদ মজুমদার বলেন, এর পরিবর্তে সরকার এমন একটি ব্যবস্থা রাখতে চায়, যাতে সম্পাদক, বার্তা সম্পাদক, বিভাগীয় সম্পাদক এবং মোট রিপোর্টারের সংখ্যার ভিত্তিতে সর্বোচ্চ ৩০ শতাংশ বা ১৫ জনকে কার্ড দেওয়ার বিধানের সুপারিশ করা হচ্ছে।
বর্তমানে অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড বাতিল ও ইস্যু করার ক্ষমতা প্রধান তথ্য কর্মকর্তার হাতে ন্যস্ত রয়েছে। সরকার এই দায়িত্ব একটি কমিটির হাতে দিতে চায় বলে জানান উপ–প্রেস সচিব। তিনি বলেন, এই কমিটিতে প্রধান তথ্য কর্মকর্তাও থাকবেন, সাংবাদিকদের প্রতিনিধিও থাকবেন। অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড ইস্যু ও বাতিলের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে এই কমিটি। এই কমিটির সিদ্ধান্ত কারও মনঃপূত না হলে আপিল করার ব্যবস্থা রাখার সুপারিশ করা হচ্ছে। অন্যদিকে জেলা পর্যায়ের সাংবাদিকদের জেলা থেকে যাতে আলাদাভাবে অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড দেওয়া যায়, সেই সুপারিশও করা হচ্ছে।
এতোদিন অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড বাতিলের ক্ষেত্রে একটি নিয়ম ছিল-কারও বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা দায়ের হলেও কার্ড বাতিলের সুযোগ আছে। আবুল কালাম আজাদ মজুমদার বলেন, এই ধারাটিও সংশোধন করে কোনো সাংবাদিকের বিরুদ্ধে যদি ফৌজদারির মামলায় অভিযোগ গঠন করা হয়, তাহলে তার কার্ড স্থগিত করার বিধান সুপারিশ করা হচ্ছে। আর যদি বিচারে সাজাপ্রাপ্ত হন, তাহলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে তা বাতিল করার সুপারিশ করা হচ্ছে।
ফ্রিল্যান্স সাংবাদিকদের প্রেস অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড দেয়ার ক্ষেত্রেও কিছু পরিবর্তন আনার সুপারিশ করছে সরকার। আজাদ মজুমদার বলেন, অতীতে এই ফ্রিল্যান্স সাংবাদিকদের ধারাকে অপব্যবহার করে অনেক অসাংবাদিক বা যাঁরা আসলে সাংবাদিকতার পেশার সঙ্গে যুক্ত নন, নামকাওয়াস্তে সাংবাদিক-তারা এই কার্ড নিয়েছেন। এতে প্রকৃত সাংবাদিকেরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। সরকারের পক্ষ থেকে প্রস্তাব হলো, ফ্রিল্যান্স সাংবাদিকদের এই বিদ্যমান ধারা বাতিল করে কিছু সংশোধনী আনা। যেমন সাংবাদিকতার পেশায় যাঁরা সম্মানিত ব্যক্তি, যারা লেখালেখির সঙ্গে যুক্ত আছেন, তাঁদের ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক শ্রেণিতে প্রেস অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড দেওয়া হবে। এ ক্ষেত্রে কিছু শর্ত যোগ করা হচ্ছে; যেমন তাঁদের কমপক্ষে ২০ বছর সাংবাদিকতায় যুক্ত থাকতে হবে এবং সাংবাদিকদের অধিকার রক্ষায় কাজ করে, এ রকম কোনো সংগঠনের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকতে হবে, যেমন সাংবাদিকদের ইউনিয়ন।
বিদ্যমান নীতিমালায় বলা আছে, সাংবাদিকেরা যদি বিদেশ যান, তাহলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের রাষ্ট্রাচার অনুবিভাগ অথবা প্রধান তথ্য কর্মকর্তাকে অবহিত করে যেতে হবে। আজাদ মজুমদার বলেন, এটি সাংবাদিকদের জন্য খুবই অবমাননাকর। যদিও বাস্তবে এই ধারার খুব প্রয়োগ হতে দেখা যায় না। সরকার মনে করে, এই ধারাটি থাকা উচিত নয়। এই ধারাও বাতিল করার সুপারিশ করা হচ্ছে।
সংবাদ ব্রিফিংয়ে আরও উপস্থিত ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব মোহাম্মদ শফিকুল আলম, সিনিয়র সহকারী প্রেস সচিব ফয়েজ আহম্মদ, সহকারী প্রেস সচিব সুচিস্মিতা তিথি।