শহীদ ৫ সাংবাদিকের পরিবারকে কোটি টাকার চেক দিলো বসুন্ধরা গ্রুপ
- সংবাদ প্রকাশের সময় : ১০:১৭:৫৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৯ জানুয়ারী ২০২৫ ১৮ বার পড়া হয়েছে
জুলাই আন্দোলনে শহীদ পাঁচ সাংবাদিকের পরিবারকে প্রতিশ্রুতি দেয়া এক কোটি টাকার চেক হস্তান্তর করেছে দেশের শীর্ষ স্থানীয় শিল্প প্রতিষ্ঠঅন বসুন্ধরা গ্রুপ।
বুধবার (২৯ জানুয়ারি) ইস্ট ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপের কনফারেন্স রুমে বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যানের পক্ষ থেকে এক কোটি টাকা অনুদানের চেক হস্তান্তর করা হয়।
এর আগে, চলতি বছরের ৯ জানুয়ারি দৈনিক কালের কণ্ঠের ১৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে শহীদ পাঁচ সাংবাদিক পরিবারকে সম্মাননা স্মারক এবং প্রত্যেককে দুই লাখ টাকার চেক দেয়া হয়। অনুষ্ঠানে বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান শহীদ পাঁচ পরিবারকে এক কোটি টাকা সহায়তার প্রতিশ্রুতি দেন। এ সময় তিনি প্রত্যেকের নামে ওই টাকা ফিক্সড ডিপোজিট করে মাসে মাসে তা থেকে প্রাপ্ত মুনাফা শহীদ পরিবারের ভরণ-পোষণে ব্যবহার করার অনুরোধ করেন।
শহীদ পাঁচ সাংবাদিক হলেন-অনলাইন নিউজপোর্টাল ঢাকা টাইমসের জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক হাসান মেহেদী; তিনি ১৮ জুলাই রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে গুলিতে শহীদ হন। দ্য রিপোর্ট ডটলাইভের সাবেক ভিডিও জার্নালিস্ট তাহির জামান প্রিয়; তিনি ১৯ জুলাই ধানমন্ডির সেন্ট্রাল রোডে সংঘর্ষ চলাকালে শহীদ হন। দৈনিক ভোরের আওয়াজের গাজীপুরের গাছা থানা প্রতিনিধি শাকিল হোসেন; উত্তরার আজমপুরে ভিডিও ধারণ ও ছবি তুলতে গিয়ে শহীদ হন। দৈনিক নয়া দিগন্তের সিলেট ব্যুরোর প্রধান আবু তাহের তুরাব ও দৈনিক খবরপত্রের প্রদীপ ভৌমিক; তিনি ১৯ জুলাই সিলেটের কোর্ট পয়েন্টে পুলিশের গুলিতে শহীদ হন।
চেক বিতরণ অনুষ্ঠানে ইস্ট ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক কাদের গণি চৌধুরী বলেন, আমি সকল শহীদদের গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি। জুলাই বিপ্লবের সময় দেশ ছিল অন্ধকারে নিমজ্জিত। দেশে কোনো গণতন্ত্র ছিল না। সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা বলে কিছুই ছিল না। সাদাকে সাদা কালোকে কালো বলার কোনো উপায় ছিল না। দেশের সবকিছুই চলতো এক ব্যক্তির ইচ্ছায়। গণমাধ্যমে ততটাই লেখা যেত যতটা সরকারের পক্ষ থেকে চাইতো। জুলাই বিপ্লবের সময় কোনো দাবি অথবা কথা বললেই গুলি চালানো হতো। সেসময় অসংখ্য ছাত্রকে আমরা দেখেছি ঢাকার পিচঢালা কালো রাস্তায় পড়ে থাকতে। এমন বীভৎস চিত্র একটি স্বাধীন সার্বভৌম দেশে কখনো কল্পনাই করা যায় না। নিজ দেশের কোনো সরকারপ্রধান এমনটা করতে পারে, এটা কোনো সভ্য দেশে চিন্তাই করা যায় না।
তিনি আরও বলেন, অনেকেই বলেছেন, আজকে শহীদ পরিবারের জন্য দুঃখের দিন। তবে আমি বলব, এর থেকে গৌরবের আর কিছু হতে পারে না। কারণ কয়জনের ভাগ্য থাকে বীরের ভাই হওয়া, বাবা হওয়া, মা হওয়ার এবং সন্তান হবার। আপনাদের সন্তানরা একটি জাতিকে রক্ষা করেছে।
কাদের গণি চৌধুরী আরও বলেন, আমাদের বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান শহীদ পরিবারের সকলকে সালাম ও শ্রদ্ধা জানিয়েছেন। দেশের জন্য যারা কাজ করেন তিনি সব সময় তাদের পাশে নীরবে দাঁড়ান। অন্যরা কে থাকল, তা আমরা জানি না। তবে বসুন্ধরা গ্রুপ সব সময় আপনাদের পাশে থাকবে।
জুলাই বিপ্লবের শহীদরা আমাদের অনেক শিক্ষা দিয়েছেন উল্লেখ করে কাদের গণি চৌধুরী বলেন, সংবাদপত্রে কোনো আপস হবে না। আমরা তাদের থেকে শিক্ষা নিয়ে এখন থেকে ‘ওয়াচ ডগের’ ভূমিকা পালন করব। বাংলাদেশের সাংবাদিকরা ‘পেট ডগের’ ভূমিকা পালন করবে না অতীতের মতো।
দৈনিক কালের কণ্ঠের নির্বাহী সম্পাদক হায়দার আলী বলেন, শহীদ পরিবারের জন্য বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়াম্যান ১ কোটি টাকার অনুদান দিয়েছেন। বসুন্ধরা গ্রুপ সকল প্রকার মানবিক কাজে এগিয়ে আসে। এরই ধারাবাহিকতায় আজকের এ আয়োজন। এজন্য বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান মহোদয়কে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই।
কালের কণ্ঠের সম্পাদক হাসান হাফিজ বলেন, আজকের এই আয়োজন কোনো আনন্দের নয়। এটি কষ্টের একটি সময় শহীদদের পরিবারের জন্য এবং আমাদের জন্যও। বসুন্ধরা গ্রুপ এর আগেও সাংবাদিক দম্পতি সাগর রুনির ছেলের ভরণ-পোষণের জন্য সহায়তা দিয়েছে। পাশাপাশি বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যানের স্ত্রী নিজে জুলাই ফাউন্ডেশনে ৫ কোটি টাকা আর্থিক অনুদান দিয়েছেন। সেখান থেকেও এই শহীদ পরিবার সহায়তা পাবেন। তবে অনুদানের থেকে বড় বিষয় হচ্ছে, এ সকল পরিবারের জীবিকার জন্য চাকরির ব্যবস্থা করে দেওয়া। ইতোমধ্যে বসুন্ধরা গ্রুপ রংপুরে শহীদ আবু সাইদের ভাইকে বসুন্ধরা গ্রুপে চাকরির ব্যবস্থা করেছে।
বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কমের সম্পাদক লুৎফর রহমান হিমেল বলেন, যারা সন্তান হারিয়েছেন, তাদের কষ্ট সবচেয়ে বেশি। এই শহীদ পরিবারের মধ্যে সাংবাদিক প্রিয় আমার অধীনেই চাকরি করেছিলেন। তিনি খুবই সাহসী তরুণ ছিলেন এবং দায়িত্বের প্রতি অটল ছিলেন। তার শহীদ হবার ঘটনা আমি যখন শুনেছিলাম তখন চিন্তা করছিলাম, এই খবর যেন মিথ্যা হয়! আমরা ধন্যবাদ জানাই বসুন্ধরা গ্রুপকে ও কালের কণ্ঠের এই মহৎ উদ্যোগকে।
ইস্ট ওয়েস্ট গ্রুপের নির্বাহী পরিচালক ইয়াসিন রহমান পাভেল বলেন, শহীদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানাচ্ছি। আমরা বসুন্ধরা গ্রুপের পক্ষ থেকে সকল শহীদ ও আহতদের পাশে দাঁড়াব। শহীদ পরিবারের সবার প্রতি অনুরোধ থাকবে আপনাদের যে কোনো প্রয়োজনে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করার অনুরোধ রইল।
শহীদ সাংবাদিক তাহির জামান প্রিয়’র মা সামসিয়ানা জাহান বলেন, প্রথম যখন আমি বসুন্ধরা গ্রুপের অনুষ্ঠানে এসেছিলাম তখন আমার ছেলের ছবি দেখে একদিকে যেমন গর্বে বুক ভরে যায়, অন্যদিকে কষ্টেও বুক ফেটে যায়! সে এখন আমার সঙ্গে নেই। আমাদের সন্তানেরা সত্য প্রতিষ্ঠার জন্য জীবন দিয়েছে। বসুন্ধরা গ্রুপ ও এর চেয়ারম্যানের প্রতি আমি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। যে অর্থ আপনারা না চাইতেই দিয়েছেন, সে জন্যও আপনাদের প্রতি কৃতজ্ঞ। আমার ছেলের একটা ছোট্ট মেয়ে আছে, এই অর্থ যেন আমি আমার নাতনির জন্য সুন্দরভাবে ব্যবহার করতে পারি।
শহীদ সাংবাদিক হাসান মেহেদীর স্ত্রী ফারহানা ইসলাম পপি বলেন, আমার স্বামী যখন মারা যায়, এর কিছুক্ষণ আগেও কথা হয়েছে। তখন এত আওয়াজ শুনে আমি তাকে বলেছিলাম, তুমি ঝামেলা থেকে সরে যাও। তখন সে আমাকে বলেছিল, এটা আমার দায়িত্ব, আমি যেতে পারব না।
দৈনিক ভোরের আওয়াজের গাজীপুরের গাছা থানা প্রতিনিধি শাকিল হোসেনের বাবা বলেন, বসুন্ধরা গ্রুপ যেভাবে শহীদ পরিবারের দুঃখ-বেদনার পাশে দাঁড়িয়েছে, তার কৃতজ্ঞতার ভাষা আমার নেই। বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান একজন দানবীর হিসেবে পরিচিত। তিনি যেন সকল শহীদ পরিবারের পাশে থাকতে পারেন, সে কামনা করছি।