রংপুর সিটি করপোরেশন
দুই মাস ধরে অফিস করেন না বিভাগীয় কমিশনার!দুর্ভোগে নগরবাসী
- সংবাদ প্রকাশের সময় : ০১:০২:১২ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৬ জানুয়ারী ২০২৫ ৪৯ বার পড়া হয়েছে
প্রায় ২০ লাখ জনসংখ্যা অধুষিত রংপুর সিটি করপোরেশনে সব ধরনের নাগরিক সুবিধা বন্ধ রয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। রংপুর বিভাগীয় কমিশনার শহীদুল ইসলামকে সিটি করপোরেশনের প্রশাসকের দায়িত্ব দেয়া হলেও তিনি গত দুই মাস ধরে করপোরেশন কার্যালয়ে আসেন না। নগরবাসী তার কোন সেবা পান না-সেই সাথে করপোরেশনের উন্নয়ন কর্মকান্ড সহ সার্বিক কাজে চরম স্থবিরতা দেখা দিয়েছে বলে নগরবাসির অভিযোগ।
এদিকে, বিভিন্ন জাতীয় ও স্থানীয় দৈনিক পত্রিকার বিজ্ঞাপন বিল দীর্ঘদিন ধরে পড়ে থাকলেও প্রশাসক বিল প্রদান করছেন না। উল্টো বিভিন্ন অজুহাতে ফাইল আটকে রাখারও অভিযোগ গণমাধ্যম কর্মীদের।
৫ আগষ্ট গণঅভুত্থানের পর সারা দেশের মতো রংপুর সিটি করপোরেশনের নির্বাািচত মেয়র ও কাউন্সিলরদের অব্যাহতি দেয়া হয়। কাউন্সিলর হিসেবে বিভিন্ন দপ্তরের সরকারী কর্মকর্তাদের দায়িত্ব দেয়া হলেও তারা কেউই সিটি করপোরেশন কার্যালয়ে আসেননা। তাদের কার্যালয়ে গেলেও নাগরিক সনদসহ কোন কাগজ পত্রে তারা স্বাক্ষর করেন না। ফলে নগরবাসির চরম দূর্ভোগের শিকার হচ্ছে।
একই অবস্থা সিটি করপোরেশনের প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব পাওয়া রংপুর বিভাগীয় কমিশনার শহীদুল ইসলাম। তিনি গত দুইমাস ধরে করপোরেশনে আসেননা অফিসও করেন না।
এর ফলে ২০৫ বর্গ কিলোমিটার বিশাল এলাকার ৩৩টি ওয়ার্ডের নগরবাসির দুর্ভোগ চরম আকার ধারন করেছে। অন্যদিকে সিটি করপোরেশন কার্যালয়ে বজ্র শাখা , ভূমি শাখা সহ সকল শাখার কার্যক্রমে চরম স্থবিরতা বিরাজ করছে। কর্মকর্তা কর্মচারীদের কাছে গেলে কাংখিত সেবা মিলছে না।
সরেজমিন রংপুর সিটি করপোরেশন কার্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, বিভিন্ন ওয়ার্ড থেকে আসা নগরবাসী বিভিন্ন দপ্তরে দপ্তরে ঘুরে কাংখিত সেবা না পেয়ে দুর্ভোগে পড়েছেন।
নগরীর ২২ নম্বর ওয়ার্ডের অধিন মুলাটোল এলাকার বাসিন্দা সালাউদ্দিন জানান, তিনি এক সপ্তাহ ধরে নাগরিক সনদের জন্য ঘুরছেন দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা কেউ না আসায় তার কাজ হচ্ছে না। প্রধান নির্বাহি কর্মকর্তা কথা বলতে চান না।
এদিকে চাকুরীর জন্য সাগরিক সনদ খুবই জরুরী কিন্তু পাচ্ছেননা। একই অভিযোগ করলেন ২১ নম্বর ওয়ার্ড বাবু খাঁ মহল্লার জমিলা খাতুন তিনি জানান, ওয়ারিশান সার্টিফিকেটের তার প্রয়োজন সেই কাগজ নিয়ে সিটি করপোরেশনে ৭ দিন ধরে ঘুরছেন তার কাজ হচ্ছে না।
কর্মকর্তা কর্মচারীরা বলছেন, প্রতিটি ওয়ার্ডের জন্য একজন সরকারী কর্মকর্তাকে অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে কাউন্সিলরের দায়িত্ব দেয়া হলেও তারা স্বাক্ষর করতে চান না। তাদের সাফ কথা আমরা জানিনা সত্যিকার নগরবাসি কিনা। এ ছাড়াও নানান অজুহাত দেখিয়ে তারা স্বাক্ষরও করেন না।
নগরীর জুম্মাপাড়া মহল্লার রাহেলা বেগম জানান তার জমি সংক্রান্ত সমস্যা হয়েছে এর সমাধানের জন্য সিটি করপোরেশনে ৩দিন ধরে ঘুরেও সমাধান পাননি। এই ধরনের অসংখ্য অভিযোগ নগরবাসির।
এ ব্যাপারে সাবেক দুজন কাউন্সিলরের সাথে কথা বললে নাম প্রকাশ না করে তারা বলেন, রংপুর সিটি করপোরেশন দেশের অন্যতম বৃহৎ সিটি করপোরেশন, এখানে ২০ লাখের বেশী মানুষের বসবাস। আমরা যারা ওয়ার্ড কাউন্সিলরের দায়িত্বে ছিলাম আমাদের নিজস্ব দপ্তর ছিলো যে কোন সেবার জন্য আসলে আমরা তাদের কাংখিত সেবা প্রদান করতাম। এখন অভিভাবক শুন্য হয়ে পড়েছে সিটি করপোরেশন।
এদিকে রংপুরে কর্মরত বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় কর্মরত সাংবাদিকরা অভিযোগ করেন নির্বাচিত মেয়র ও কাউন্সিলরদের অপসারনেরে আগে তাদের স্ব স্ব পত্রিকার বিজ্ঞপিনের বিল দীর্ঘদিন ধরে পড়ে আছে সেই বিল প্রদান করা হচ্ছে না। অন্তত ৩০টি জাতীয় দৈনিকের বিজ্ঞাপন বিল প্রদান করা হচ্ছে না। এ ব্যাপারে সিটি করপোরেশনের প্রশাসক শহীদুল ইসলামের সাথে সাংবাদিকরা বেশ কয়েকবার দেখা করলেও তিনি বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে বিলগুলো আটকিয়ে রেখেছেন।
ইতিমধ্যে বিল সংক্রান্ত ফাইল অন্তত ১৫ বার ফাইল নোট পরিবর্তন করতে বলেছেন প্রশাসক। তিনি রীতিমত টাল বাহানা শুরু করেছেন। রংপুর থেকে প্রকাশিত দৈনিক পত্রিকার সম্পাদক অভিযোগ করেন প্রশাসক তো দেখা করেননা কথা বলতে চাননা তার পত্রিকা সহ অনেক পত্রিকার বিল কেন তিনি প্রধান না করে ঝুলিয়ে রেখেছেন তার কোন সদুত্তোর আমরা পাচ্ছিনা।
এ ব্যাপারে রংপুর রিপোটার্স ক্লাবের সভাপতি শাহ বায়েজিদ আহাম্মেদ জানান, সিটি করপোরেশনের প্রশাসক হিসেবে বিভাগীয় কমিশনার অফিসই করেননা। অনেক পত্রিকার বিজ্ঞাপনের বিল ফেলে রাখা হয়েছে পত্রিকার বিল পরিশোধে নানান টালবাহানা করা হচ্ছে অথচ অন্যান্য বিল দেয়া হলেও সাংবাদিকদের বিল প্রদান না করা তাদের হয়রানির তীব্র নিন্দা জানান। দ্রুত বিজ্ঞাপন বিল পরিশোধ করার দাবি জানান অন্যথায় আন্দোলনে যাবে সাংবাদিকরা বলে জানান তিনি।
এদিকে নগরবাসি অভিযোগ করেছেন, রংপুর বিভাগীয় কমিশনার ও প্রশাসক সিটি করপোরেশন শহীদুল ইসলাম গত ২ মাসে একবারের জন্যও করপোরেশন কার্যালয়ে আসেন না। একবার মাসিক একটা সভায় যোগ দিতে এসেছিলেন তার পর থেকে তিনি অফিস করেন না। কিন্তু দুপুর সাড়ে ৩টার পর রংপুর সার্কিট হাউজে এক ঘন্টার জন্য বসেন সেখানে জরুরী দাপ্তরিক কাগজ পত্রে স্বাক্ষর করেন। নগরবাসির সাথে সাক্ষাত করেন না। তার সাফ জবাব অনুমতি দিলেই নাকি কথা বলার যাবে কিন্তু সেটিও পাওয়া যায়না।
এ ব্যাপারে বীরমুক্তিযোদ্ধা শাহাদত হোসেন বলেন, সিটি করপোরেশনের সকল কর্মকান্ড স্থবির হয়ে গেছে নগরবাসি কোন সেবা পাচ্ছেননা। এ ভাবে চলতে পারেনা। যারা দাযিত্ব পালন করতে চাননা তাদের দায়িত্ব ছেড়ে রেদয়া উচিত বলে জানান তিনি।
অপরদিকে, বাসদ জেলা সদস্য সচিব আরেফিন তিতু অভিযোগ করেন রংপুর সিটি করপোরেশন অকার্যকর হয়ে পড়েছে। নগরবাসি সব ধরনের নাগরিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত। প্রশাসক অফিসে অসেননা এটা দুঃখজনক তিনি নগরবাসির কাংখিত সেবা নিশ্চিত করার দাবি জানান।
সার্বিক বিষয়ে জানতে রংপুরের বিভাগীয় কমিশনার ও প্রশাসক রংপুর সিটি করপোরেশন শহীদুল ইসলামের সাথে শনিবার (২৫ জানুয়ারি) দুপুরে মোবাইল ফোনে য্গোাযোগ করা হলে তিনি অনেকক্ষন পর ফোন রিসিভ করে বলেন মিটিং এ আছেন পরে যোগাযোগ করতে হবে। এরপর কিছুক্ষন পর আবারো ফোন করা হলে তিনি আর ফোন ধরেননি।