ঢাকা ১১:৫৩ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৪ জানুয়ারী ২০২৫, ১১ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

নৌকা ডুবিয়ে আরামে-আয়েশে আছেন তারা

বিশেষ প্রতিবেদক
  • সংবাদ প্রকাশের সময় : ১২:১৯:১০ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৪ জানুয়ারী ২০২৫ ৩০ বার পড়া হয়েছে
বাংলা টাইমস অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের ক্ষমতাচ্যুত হন শেখ হাসিনা নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার। দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর আওয়ামী লীগ সরকারের মন্ত্রী, এমপি এমনকি দলের হেভিওয়েট নেতারা গ্রেপ্তার হয়েছেন। আবার অনেকে পালিয়ে গেলেও আটকের সংখ্যাও দীর্ঘ। তবে ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়ে গেছেন দলের অঙ্গ, সগযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের নেতারা।

কয়েকমাস আগেও মাঁতীলীগ, মহিলা লীগ, স্বেচ্ছসেবক লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, যুব মহিলা লীগ, কৃষক লীগের নেতাকর্মীদের দাপটে দলের কেন্দ্রীয় নেতারাও একসময় তটস্থ থাকতে। ৫ আগস্টের পর নৌকা ডুবিয়ে তারা গা ঢাকা দিয়েছেন। সচিবালয়-মন্ত্রী পাড়া ও দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ছিল এসব সংগঠনের নেতাদের আধিপত্য। এইসব নেতারা দলের বিপদ দেখে সটকে পড়েছেন।

জুলাই আন্দোলনে রাজপথে ছাত্র-জনতার ওপর সবচেয়ে বেশি নির্যাতন করেছে আওয়ামী লীগের অঙ্গ, সগযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনগুলো। সারাদেশের কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে তারা সাধারণ ছাত্রদের ওপর অমানুষিক নির্যাতন চালিয়েছে বিশেষ করে ছাত্রলীগ।

আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনগুলো হচ্ছে- মহিলা আওয়ামী লীগ, কৃষক লীগ, যুব মহিলা লীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, তাঁতী লীগ, মৎস্যজীবী লীগ, বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ। ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন ছাত্রলীগ ও তাঁতী লীগ।

যুব মহিলা লীগের নেত্রীদের দাপট ছিল চোখে পড়ার মতো। ক্ষমতায় থাকাকালীন সচিবালয় ও বিভিন্ন অফিসে প্রভাব দেখিয়েছেন। তাদের তদবির, টেন্ডারে ভাগ দেয়া নিয়ে অতিষ্ঠ ছিলেন মন্ত্রী-এমপিরা। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকতে এই নেত্রীরা এতটাই প্রভাবশালী ছিলেন যে নানা অপকর্ম করলেও তাদের বিরুদ্ধে মিডিয়ায় প্রতিবেদনও করা যেত না। সেই দাপুটে নেত্রীরা এখন কোথায়? দলের দুর্দিনে তারা পালিয়ে রয়েছে।

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের সাবেক কাউন্সিলর ডেইজি সরোয়ার যুব মহিলা লীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন। বর্তমানে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে রয়েছেন বলে সূত্রে জানা গেছে। সাধারণ সম্পাদক শারমিন সুলতানা লিলি সিলেট রয়েছেন বলে ধারণা সংগঠনের একাধিক নেত্রীর। সংগঠনের দায়িত্ব পাওয়ার পর অনেক ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেত্রীদের বাদ দিয়ে সংগঠনে ‘ইডেন’ সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছিলেন।

কৃষক লীগের সভাপতি সমীর চন্দ ভারতে গেলেও কয়েক দিনের মাথায় তিনি দেশে ফিরে আসেন। পরে তাকে ডিবি পুলিশ গ্রেপ্তার করে। এখন তিনি জেলহাজতে। সাধারণ সম্পাদক উম্মে কুলসুম স্মৃতির বিদেশ যাওয়ার কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।

যুবলীগ চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ সস্ত্রীক কানাডায় রয়েছেন। সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হোসেন খান নিখিল রয়েছেন ভারতে। নেতা-কর্মীদের সাথে সাধারণ সম্পাদকের কথা হলেও চেয়ারম্যান কাউকে পাত্তা দিচ্ছেন না। কারও ফোনও ধরছেন না তিনি। বিদেশে বসে বেশ আয়েশি জীবনযাপন করছেন চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ।

মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মেহের আফরোজ চুমকি। অনেকের ধারণা, তিনি দেশেই রয়েছেন। সাধারণ সম্পাদক শবনম পারভিন শিলা সিঙ্গাপুরে এমন দাবি সংগঠনের নেতা-কর্মীদের। দুই নেত্রীই কারও সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করছেন না বলে জানা গেছে।

স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি গাজী মেসবাউল হক সাচ্চু ও সাধারণ সম্পাদক আফজালুর রহমান বাবু ভারতে আছেন বলে একাধিক সূত্রে জানা গেছে।

মৎস্যজীবী লীগের সভাপতি সাইদুর রহমান সাঈদ দেশেই রয়েছেন। সাধারণ সম্পাদক আজগর আলী নস্কর দুবাইয়ে বসে আলীশান জীবনযাপন করছেন বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে। তাতী লীগের সভাপতি শওকত হোসেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় অবস্থান করছেন। সাধারণ সম্পাদক খগেন্দ্র নাথ ভারতে অবস্থান করছেন বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে।

আর নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান ভারতে রয়েছেন বলে জানা গেছে। বেশ কিছুদিন চুপ থাকলেও বর্তমানে তারা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সক্রিয় হয়েছেন।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

ট্যাগস :

নৌকা ডুবিয়ে আরামে-আয়েশে আছেন তারা

সংবাদ প্রকাশের সময় : ১২:১৯:১০ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৪ জানুয়ারী ২০২৫

ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের ক্ষমতাচ্যুত হন শেখ হাসিনা নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার। দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর আওয়ামী লীগ সরকারের মন্ত্রী, এমপি এমনকি দলের হেভিওয়েট নেতারা গ্রেপ্তার হয়েছেন। আবার অনেকে পালিয়ে গেলেও আটকের সংখ্যাও দীর্ঘ। তবে ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়ে গেছেন দলের অঙ্গ, সগযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের নেতারা।

কয়েকমাস আগেও মাঁতীলীগ, মহিলা লীগ, স্বেচ্ছসেবক লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, যুব মহিলা লীগ, কৃষক লীগের নেতাকর্মীদের দাপটে দলের কেন্দ্রীয় নেতারাও একসময় তটস্থ থাকতে। ৫ আগস্টের পর নৌকা ডুবিয়ে তারা গা ঢাকা দিয়েছেন। সচিবালয়-মন্ত্রী পাড়া ও দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ছিল এসব সংগঠনের নেতাদের আধিপত্য। এইসব নেতারা দলের বিপদ দেখে সটকে পড়েছেন।

জুলাই আন্দোলনে রাজপথে ছাত্র-জনতার ওপর সবচেয়ে বেশি নির্যাতন করেছে আওয়ামী লীগের অঙ্গ, সগযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনগুলো। সারাদেশের কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে তারা সাধারণ ছাত্রদের ওপর অমানুষিক নির্যাতন চালিয়েছে বিশেষ করে ছাত্রলীগ।

আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনগুলো হচ্ছে- মহিলা আওয়ামী লীগ, কৃষক লীগ, যুব মহিলা লীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, তাঁতী লীগ, মৎস্যজীবী লীগ, বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ। ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন ছাত্রলীগ ও তাঁতী লীগ।

যুব মহিলা লীগের নেত্রীদের দাপট ছিল চোখে পড়ার মতো। ক্ষমতায় থাকাকালীন সচিবালয় ও বিভিন্ন অফিসে প্রভাব দেখিয়েছেন। তাদের তদবির, টেন্ডারে ভাগ দেয়া নিয়ে অতিষ্ঠ ছিলেন মন্ত্রী-এমপিরা। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকতে এই নেত্রীরা এতটাই প্রভাবশালী ছিলেন যে নানা অপকর্ম করলেও তাদের বিরুদ্ধে মিডিয়ায় প্রতিবেদনও করা যেত না। সেই দাপুটে নেত্রীরা এখন কোথায়? দলের দুর্দিনে তারা পালিয়ে রয়েছে।

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের সাবেক কাউন্সিলর ডেইজি সরোয়ার যুব মহিলা লীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন। বর্তমানে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে রয়েছেন বলে সূত্রে জানা গেছে। সাধারণ সম্পাদক শারমিন সুলতানা লিলি সিলেট রয়েছেন বলে ধারণা সংগঠনের একাধিক নেত্রীর। সংগঠনের দায়িত্ব পাওয়ার পর অনেক ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেত্রীদের বাদ দিয়ে সংগঠনে ‘ইডেন’ সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছিলেন।

কৃষক লীগের সভাপতি সমীর চন্দ ভারতে গেলেও কয়েক দিনের মাথায় তিনি দেশে ফিরে আসেন। পরে তাকে ডিবি পুলিশ গ্রেপ্তার করে। এখন তিনি জেলহাজতে। সাধারণ সম্পাদক উম্মে কুলসুম স্মৃতির বিদেশ যাওয়ার কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।

যুবলীগ চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ সস্ত্রীক কানাডায় রয়েছেন। সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হোসেন খান নিখিল রয়েছেন ভারতে। নেতা-কর্মীদের সাথে সাধারণ সম্পাদকের কথা হলেও চেয়ারম্যান কাউকে পাত্তা দিচ্ছেন না। কারও ফোনও ধরছেন না তিনি। বিদেশে বসে বেশ আয়েশি জীবনযাপন করছেন চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ।

মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মেহের আফরোজ চুমকি। অনেকের ধারণা, তিনি দেশেই রয়েছেন। সাধারণ সম্পাদক শবনম পারভিন শিলা সিঙ্গাপুরে এমন দাবি সংগঠনের নেতা-কর্মীদের। দুই নেত্রীই কারও সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করছেন না বলে জানা গেছে।

স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি গাজী মেসবাউল হক সাচ্চু ও সাধারণ সম্পাদক আফজালুর রহমান বাবু ভারতে আছেন বলে একাধিক সূত্রে জানা গেছে।

মৎস্যজীবী লীগের সভাপতি সাইদুর রহমান সাঈদ দেশেই রয়েছেন। সাধারণ সম্পাদক আজগর আলী নস্কর দুবাইয়ে বসে আলীশান জীবনযাপন করছেন বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে। তাতী লীগের সভাপতি শওকত হোসেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় অবস্থান করছেন। সাধারণ সম্পাদক খগেন্দ্র নাথ ভারতে অবস্থান করছেন বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে।

আর নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান ভারতে রয়েছেন বলে জানা গেছে। বেশ কিছুদিন চুপ থাকলেও বর্তমানে তারা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সক্রিয় হয়েছেন।