ঢাকা ০৯:৪১ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৫ জানুয়ারী ২০২৫, ২ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

নতুন সূর্য, নতুন সম্ভাবনা

বিশেষ প্রতিবেদক
  • সংবাদ প্রকাশের সময় : ১১:৪৬:৪১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩১ ডিসেম্বর ২০২৪ ৬৮ বার পড়া হয়েছে
বাংলা টাইমস অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

সময়কে কখনো বেঁধে রাখা যায় না। কালের পরিক্রমায় এভাবেই দিনপঞ্জির পাতা উল্টাতে উল্টাতে দোরগোড়ায় হাজির হলো নতুন আরও একটি বছর ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ। শুভ ইংরেজি নববর্ষ! পৃথিবীর প্রায় সব দেশে উৎসবের মেজাজে সাড়ম্বরে পালিত হয়ে থাকে। কিছু জাতি যেমন চীনা, ইহুদি, মুসলমান প্রভৃতির মধ্যে নিজ নিজ ক্যালেন্ডার অনুসারে নববর্ষ পালন করতে দেখা যায়।

যেসব দেশে গ্রেগোরিয়ান ক্যালেন্ডার ব্যবহার করা হয়, তারা সাধারণত নববর্ষ ১ জানুয়ারিতে পালন করে থাকে। ঐতিহাসিকভাবে, রোমান ক্যালেন্ডারে নতুন বর্ষ শুরু হতো ১ মার্চ থেকে। এর প্রভাব বছরের কয়েকটা মাসের ওপর দেখা যায়। ল্যাটিন ভাষায় সেপ্টেম্বরের অর্থ হচ্ছে সাত, অক্টোবর আট, নভেম্বর নয় এবং ডিসেম্বর দশ। সেই সময় রোমান সরকারের নতুন অধিবেশন শুরু হতো জানুয়ারি মাস থেকে। জুলিয়াস সিজার খ্রিস্টপূর্ব ৪৭ সালে এ ক্যালেন্ডারে পরিবর্তন ঘটিয়ে জুলিয়ান ক্যালেন্ডারের সৃষ্টি করেন। এতে খ্রিস্টপূর্ব ৪৪ সালে মার্ক অ্যান্টোনির কনসুল এক দফা পরিবর্তন ঘটানোর পর খ্রিস্টপূর্ব ৮ সালে এম্পরর অপাসটাস সিজার আরেক দফা পরিবর্তন ঘটান।

২০২৪ সালকে বলাই হচ্ছিল ভোটের বছর। যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, রাশিয়াসহ ৮০টি দেশে বছরজুড়ে নির্বাচন হয়েছে। তাতে অনেক দেশেই ক্ষমতাসীনদের বিদায় নিতে হয়েছে। আবার নামকাওয়াস্তে নির্বাচনে ক্ষমতা ধরে রেখেও শেষ রক্ষা হয়নি কোনও কোনও রাষ্ট্রনায়কের।

বাংলাদেশেও হয়েছিল নির্বাচন, বছরের একেবারে শুরুতেই। বিরোধীদলবিহীন সেই নির্বাচনের মধ্য দিয়ে ক্ষমতা ধরে রেখেছিলেন দেড় দশকের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কিন্তু তার সাত মাসের মধ্য অভ‚তপূর্ব এক অভ্যুত্থানে বিদায় নিতে হয় তাকে। শুধু প্রধানমন্ত্রীর পদই ছাড়েননি তিনি, দেশও ছাড়তে হয় তাকে। বছরের শেষে এসে তার মতোই বিদায় নিতে হয়ে সিরিয়ার ২৪ বছরের শাসক বাশার আল আসাদকে।

ছাত্র-জনতার সেই অভ্যুত্থান বাংলাদেশকে নতুন প্রশ্নের মুখে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। তাহলো রাষ্ট্র পরিচালনার পদ্ধতি কি একই রকমভাবে চলবে? নাকি তা বদলে দেওয়া হবে? রক্তাক্ত এই অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন নতুন এক বাংলাদেশের স্বপ্নে বিভোর।

সাত মাস আগে যে শহীদ মিনার থেকে শেখ হাসিনাকে হটানোর এক দফা দাবি তুলেছিলেন তারা, বছরের শেষ দিনে সেখানেই সমাবেশ থেকে তারা দেশের নতুন শাসনতন্ত্র রচনার দাবি তুলেছে, সেজন্য আহŸান জানিয়েছে গণপরিষদ গঠনের।

এই অভ্যুত্থানের ফসল অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসও তারুণ্যের স্বপ্নের সহচর হওয়ার প্রতিশ্রæতি দিয়েছেন।

খ্রিস্টীয় নতুন বছরের বাণীতে তিনি বলেছেন, নতুন বছরের এই মাহেন্দ্রক্ষণে সকল চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে নতুন সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে উন্নতির নতুন শিখরে আরোহণে অঙ্গীকারবদ্ধ বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।

রাষ্ট্রপতি মো. শাহাবুদ্দিনও অভ্যুত্থান পরবর্তী বর্তমান প্রেক্ষাপটে নতুন বছরে নতুন সুযোগ ও সম্ভাবনা দেখার কথা জানিয়েছেন তার বাণীতে।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানও আশা প্রকাশ করেছেন, নতুন বছরে বাংলাদেশ সামগ্রিক রূপান্তরের একটি পর্বে উপনীত হতে পারবে।

বিদায়ী বছর স্মরণ করে নতুন বছরের শুভেচ্ছা বার্তায় তিনি বলেছেন, গেল বছরটি এখন আমাদের মনে জাগরুক হয়ে থাকবে। গত বৎসরের বেশকিছু তিক্ত অভিজ্ঞতা, ছাত্র-জনতার আত্মদান এবং অধিকার হারানোর যন্ত্রণা আগামী বৎসরে আমাদের একদিকে যেমন বেদনার্ত করবে আবার অন্যদিকে নতুন উদ্যমে শান্তি, স¤প্রীতি ও বহুদলীয় গণতন্ত্রের অধিকার ফিরে পাওয়ার সম্ভাবনায় আমাদেরকে উদ্বুদ্ধ করবে।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

ট্যাগস :

নতুন সূর্য, নতুন সম্ভাবনা

সংবাদ প্রকাশের সময় : ১১:৪৬:৪১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩১ ডিসেম্বর ২০২৪

সময়কে কখনো বেঁধে রাখা যায় না। কালের পরিক্রমায় এভাবেই দিনপঞ্জির পাতা উল্টাতে উল্টাতে দোরগোড়ায় হাজির হলো নতুন আরও একটি বছর ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ। শুভ ইংরেজি নববর্ষ! পৃথিবীর প্রায় সব দেশে উৎসবের মেজাজে সাড়ম্বরে পালিত হয়ে থাকে। কিছু জাতি যেমন চীনা, ইহুদি, মুসলমান প্রভৃতির মধ্যে নিজ নিজ ক্যালেন্ডার অনুসারে নববর্ষ পালন করতে দেখা যায়।

যেসব দেশে গ্রেগোরিয়ান ক্যালেন্ডার ব্যবহার করা হয়, তারা সাধারণত নববর্ষ ১ জানুয়ারিতে পালন করে থাকে। ঐতিহাসিকভাবে, রোমান ক্যালেন্ডারে নতুন বর্ষ শুরু হতো ১ মার্চ থেকে। এর প্রভাব বছরের কয়েকটা মাসের ওপর দেখা যায়। ল্যাটিন ভাষায় সেপ্টেম্বরের অর্থ হচ্ছে সাত, অক্টোবর আট, নভেম্বর নয় এবং ডিসেম্বর দশ। সেই সময় রোমান সরকারের নতুন অধিবেশন শুরু হতো জানুয়ারি মাস থেকে। জুলিয়াস সিজার খ্রিস্টপূর্ব ৪৭ সালে এ ক্যালেন্ডারে পরিবর্তন ঘটিয়ে জুলিয়ান ক্যালেন্ডারের সৃষ্টি করেন। এতে খ্রিস্টপূর্ব ৪৪ সালে মার্ক অ্যান্টোনির কনসুল এক দফা পরিবর্তন ঘটানোর পর খ্রিস্টপূর্ব ৮ সালে এম্পরর অপাসটাস সিজার আরেক দফা পরিবর্তন ঘটান।

২০২৪ সালকে বলাই হচ্ছিল ভোটের বছর। যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, রাশিয়াসহ ৮০টি দেশে বছরজুড়ে নির্বাচন হয়েছে। তাতে অনেক দেশেই ক্ষমতাসীনদের বিদায় নিতে হয়েছে। আবার নামকাওয়াস্তে নির্বাচনে ক্ষমতা ধরে রেখেও শেষ রক্ষা হয়নি কোনও কোনও রাষ্ট্রনায়কের।

বাংলাদেশেও হয়েছিল নির্বাচন, বছরের একেবারে শুরুতেই। বিরোধীদলবিহীন সেই নির্বাচনের মধ্য দিয়ে ক্ষমতা ধরে রেখেছিলেন দেড় দশকের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কিন্তু তার সাত মাসের মধ্য অভ‚তপূর্ব এক অভ্যুত্থানে বিদায় নিতে হয় তাকে। শুধু প্রধানমন্ত্রীর পদই ছাড়েননি তিনি, দেশও ছাড়তে হয় তাকে। বছরের শেষে এসে তার মতোই বিদায় নিতে হয়ে সিরিয়ার ২৪ বছরের শাসক বাশার আল আসাদকে।

ছাত্র-জনতার সেই অভ্যুত্থান বাংলাদেশকে নতুন প্রশ্নের মুখে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। তাহলো রাষ্ট্র পরিচালনার পদ্ধতি কি একই রকমভাবে চলবে? নাকি তা বদলে দেওয়া হবে? রক্তাক্ত এই অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন নতুন এক বাংলাদেশের স্বপ্নে বিভোর।

সাত মাস আগে যে শহীদ মিনার থেকে শেখ হাসিনাকে হটানোর এক দফা দাবি তুলেছিলেন তারা, বছরের শেষ দিনে সেখানেই সমাবেশ থেকে তারা দেশের নতুন শাসনতন্ত্র রচনার দাবি তুলেছে, সেজন্য আহŸান জানিয়েছে গণপরিষদ গঠনের।

এই অভ্যুত্থানের ফসল অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসও তারুণ্যের স্বপ্নের সহচর হওয়ার প্রতিশ্রæতি দিয়েছেন।

খ্রিস্টীয় নতুন বছরের বাণীতে তিনি বলেছেন, নতুন বছরের এই মাহেন্দ্রক্ষণে সকল চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে নতুন সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে উন্নতির নতুন শিখরে আরোহণে অঙ্গীকারবদ্ধ বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।

রাষ্ট্রপতি মো. শাহাবুদ্দিনও অভ্যুত্থান পরবর্তী বর্তমান প্রেক্ষাপটে নতুন বছরে নতুন সুযোগ ও সম্ভাবনা দেখার কথা জানিয়েছেন তার বাণীতে।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানও আশা প্রকাশ করেছেন, নতুন বছরে বাংলাদেশ সামগ্রিক রূপান্তরের একটি পর্বে উপনীত হতে পারবে।

বিদায়ী বছর স্মরণ করে নতুন বছরের শুভেচ্ছা বার্তায় তিনি বলেছেন, গেল বছরটি এখন আমাদের মনে জাগরুক হয়ে থাকবে। গত বৎসরের বেশকিছু তিক্ত অভিজ্ঞতা, ছাত্র-জনতার আত্মদান এবং অধিকার হারানোর যন্ত্রণা আগামী বৎসরে আমাদের একদিকে যেমন বেদনার্ত করবে আবার অন্যদিকে নতুন উদ্যমে শান্তি, স¤প্রীতি ও বহুদলীয় গণতন্ত্রের অধিকার ফিরে পাওয়ার সম্ভাবনায় আমাদেরকে উদ্বুদ্ধ করবে।