কে থামাবে ফায়ার ফাইটার নয়নের মা-বাবার কান্না
- সংবাদ প্রকাশের সময় : ১২:৫৫:০০ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪ ৩৩ বার পড়া হয়েছে
ঢাকার সচিবালয়ে ভয়াবহ আগন নেভাতে এসে ট্রাক চাপায় মর্মান্তিক ভাবে নিহত হয়েছে ফায়ার সার্ভিস কর্মী শাহানুজ্জামান নয়ন। এ ঘটনা জানাজানি হলে নিহত নয়নের বাড়ি রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার ছড়ান আটপুনিয়া গ্রামে চলছে শোকের মাতম। মা নারগিস বেগম সন্তানের শোকে বার বার জ্ঞান হারিয়ে ফেলছেন। স্বজনদের বুক ফাটা আর্তনাদ সেখানকার বাতাস ভারী হয়ে উঠেছে। এ ঘটনার জন্য প্রশাসনের দায়িত্বহীনতাকেও দায়ি করেছে নিহতের বাবা মা সহ স্বজনরা।
তারা অভিযোগ করেছে সচিবালয়ের মতো ভিভিআইপি এলাকায় আগুন লাগার পর ওই সড়কটি দিয়ে যান চলাচল বন্ধ করে দেয়া উচিত ছিলো। তা না করে অবাধে যান চলাচল করায় আগুন নেভানোর কাজে নিয়োজিত ফায়ার ফাইটার নয়ন কর্তব্যরত অবস্থায় তাকে ট্রাক চাপা দিয়ে হত্যা করেছে তারা এ ঘটনার বিচার দাবি করেছে।
সরেজমিন বৃহস্পতিবার (২৬ ডিসেম্বর) বেলা সাড়ে ১১ টায় রংপুর থেকে দীর্ঘ ৬০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে ফায়ার ফাইটার নিহত নয়নের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় পুরো আটপুনিয়া গ্রাম যেন শোকে স্তব্ধ হয়ে গেছে।
স্বজনদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, নিহত নয়নের বাবা আখতারুজ্জামান কথা বলার ভাষা হারিয়ে ফেলেছেন তিনি কোন কথাই বলতে পারছেন না। সন্তানের নিহত হবার খবর মোবাইল ফোনে পাবার পর থেকে তিনি নির্বাক হয়ে পড়েছেন। কারো সাথে কথা বলছেননা।
বড় বোন সীমা আখতার জানান, নয়নের চাকুরীর বয়স মাত্র ২ বছর। মুল কর্মস্থল ছিলো সিলেট জেলার বিশ্বনাথ উপজেলা ফায়ার সার্ভিস অফিসে ডেপুটিটেশনের কর্মরত ছিলেন ঢাকার তেজগাও ফায়ার সার্ভিস ষ্টেশনে। সেখানে ২১ দিনের প্রশিক্ষন গ্রহন শেষে বর্তমানে ফায়ার সার্ভিসের বিশেষ টীমের সাথে কর্মরত ছিলেন। বুধবার গভীর রাতে সচিবালয়ে আগুন লাগার খবর পেয়ে অন্যান্য সহ কর্মীদের সাথে নয়নও ঘটনা স্থলে আসেন। দায়িত্বপালন করা কালে একটি ট্রাক তাকে চাপা দেয় এতে গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে হাসপাতালে নেয়া হয়। এ খবরটি ভোর ৫ টার দিকে আমার বাবা আখতারুজ্জামানকে মোবাইল ফোনে ঢাকা থেকে জানানো হয়। সে সময় থেকেই আমরা পরিবারের সকলেই তার অবস্থা জানার জন্য বার বার যোগাযোগ করছিলাম। কিন্তু ভোর ৬ টার পর আমরা জানতে পারি আমার ছোট ভাই নয়ন চিকিৎসাধিন অবস্থায় মারা যান। এ কথা বলে তিনি হাউমাউ করে কাঁদতে থাকেন এক পর্যায়ে মাটিতে গড়াগড়ি দিয়ে আহাজারি করতে থাকেন।
নিহত ফায়ার ফাইটার নয়নের নিহত নয়নের ভাতিজা শাফিউল ইসলাম শিমুল বলেন, আইন শৃংখলা বাহিনীর অসর্তকার জন্যই তার চাচাকে প্রান দিতে হয়েছে। তিনি ঘাতক ট্রাকের ড্রাইভারের দৃষ্টান্ত মুলক শাস্তি দাবি করেন।
নিহত ফায়ার ফাইটার নয়নের ভগ্নিপতি সাইফুল ইসলাম জানান নয়ন, পরিবারে এক মাত্র উপার্জন কারী ছিলো। তার বেতনের টাকায় তাদের সংসার চলতো। জমি জমা বিক্রি করে চাকুরী নিয়েছিলো তার মৃত্যুতে পুরো পরিবার নিঃস হয়ে গেলো। তিনির বলেন কয়েকদিন আগে পাওনাদারের টাকা পরিশোধ করতে অগ্রনী ব্যাংক থেকে ৫ লাখ টাকা ঋন নিয়ে পাওনাদারের টাকা পরিশোধ করেছে এখন ব্যাংক থেকে নেয়া ঋন কিভাবে শোধ করবে সংসারে কিভাবে চলবে বলে তিনি কাঁদতে থাকেন। নিহত নয়নের বড় বোন সীমা আবারো স্বামী সাইফুলের গলা জড়িয়ে ধরে কাঁদতে কাঁদতে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন।
নিহত নয়নের মা নারগিস বেগম বেলন নয়ন ডিগ্রী পরীক্ষা দিয়েছিলো এখনো রেজাল্ট হয়নি। তাকে বলতো মা আমি ডিগ্রী পাশ করলে আমার পদোন্নতী হবে তখন সংসারে অভাব থাকবেনা। কিন্তু আল্লাহর কি লিলা খেলা পরীক্ষার লেজাল্টও জানতে পারলোনা। তিনি বলেন যে ট্রাক ড্রাইভার তাকে সন্তান হারা করেছে তার কঠিন এবং কঠোর বিচার দাবি করেন তিনি।
নিহত নয়নের বাব আখতারুজ্জামান বললেন, আমাদের সব শেষ হয়ে গেল আমার ছেলের বদলে আমার মৃত্যু কেন হলোনা। বাবা হিসেবে সন্তানের লাশ বহন করা কি কষ্টের তা কাউকেই বোঝানো যাবেনা। তিনি সন্তনি হত্যার বিচার দাবি করেন।
এলাকাবাসি সাহেব আলী , মোকলেসুর রহমান বলেন, নয়ন এলাকার খুবা জনপ্রিয় ছিলো তার অকাল মৃত্যু আমাদের গ্রামে যে শোকের সৃষ্টি হয়েছে তা আমাদের ভষিণ কষ্ট দিচ্ছে।