ঢাকা ০৮:৩৪ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৫ জানুয়ারী ২০২৫, ২ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
টাঙ্গাইলের চরাঞ্চলে মেধাবী ছাত্র ছাত্রীদের সম্মাননা ও ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প  টাঙ্গাইলে প্রাথমিক বিদ্যালয় গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্নামেন্ট শুরু হবিগঞ্জের পুলিশ সুপার রেজাউল হক খানকে বিদায় সংবর্ধনা সংসদের মেয়াদ চার বছর, দু’বারের বেশি প্রধানমন্ত্রী নয় চাঁপাইনবাবগঞ্জে ছাত্রদল নেতাকে কুপিয়ে হত্যা চেষ্টা টাঙ্গাইলে লোকজ সাংস্কৃতিক ও পিঠা উৎসব শুরু তাবলীগ জামাতের চলমান সঙ্কট নিরসনের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন নতুন বই না পেয়ে কার্যালয়ে সহকারী হিসাব রক্ষককে লাঞ্ছিত বাগেরহাটে দুই শতাধিক থ্যালাসেমিয়া রোগীকে বিনামূল্যে রক্ত প্রদান রামপালে প্রযুক্তি সপ্তাহ ও বিজ্ঞান মেলা

বীর মুক্তিযোদ্ধার গলায় জুতার মালা পরিয়ে গ্রাম প্রদক্ষিণ

‘আমার স্বামীকে মেরে ফেললেও এতোটা কষ্ট পেতাম না’

কুমিল্লা প্রতিনিধি
  • সংবাদ প্রকাশের সময় : ১২:৪৭:২৯ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪ ৩৭ বার পড়া হয়েছে
বাংলা টাইমস অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে বয়ো:বৃদ্ধ বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হাই কানুকে গলায় জুতার মালা পরিয়ে গ্রাম প্রদক্ষিণ করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, তাকে কুমিল্লা ছেড়ে অন্যত্র চলে যাওয়ারও হুমকি দেয়া হয়েছে। তার সাথে ন্যাক্কারজনক এ ঘটনার ১ মিনিট ৪৬ সেকেন্ডের একটি ভিডিও রোববার (২২ ডিসেম্বর) রাতে ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়লে এ নিয়ে জনমনে তীব্র ক্ষোভ ও অসন্তোষের ঝড় ওঠে।

রোববার দুপুরে তাকে চৌদ্দগ্রাম উপজেলার বাতিশা ইউনিয়নের পাতড্ডা বাজার থেকে তুলে নিয়ে কুলিয়ারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শহীদ মিনারের সামনে নিয়ে মারধরের একপর্যায়ে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনার সাথে জড়িতদের গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন ওই মুক্তিযোদ্ধার পরিবার।

এদিকে সোমবার প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে জানানো হয়, প্রধান উপদেষ্টা এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে দোষীদের আইনের আওতায় আনার জন্য পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছেন।

জানা যায়, বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হাই কানু চৌদ্দগ্রামের বাতিসা ইউনিয়নের লুদিয়ারা এলাকার বাসিন্দা এবং কৃষকলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য। তিনি আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন। আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে ২০১৮ সালের নির্বাচনের আগ পর্যন্ত মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হাই কানু ও তার পরিবার সাবেক রেলমন্ত্রী ও স্থানীয় এমপি মুজিবুল হক ও তার অনুসারীদের রোষানলের শিকার হয়ে এলাকা ছাড়া হন। সেই থেকে তারা চৌদ্দগ্রামের বাড়ি ছেড়ে ফেনীতে বাসা ভাড়া নিয়ে বসবাস করে আসছেন।

তার ছেলে মো. গোলাম মোস্তফা ভুঁইয়া বিপ্লব জানান, ওই সময় দলের রাজনীতি করা সত্বেও গ্রুপিংয়ের কারণে মুজিবুল হকের অনুসারীরা আমি ও আমার বাবার বিরুদ্ধে হত্যাসহ বেশ কয়েকটি মামলা দিয়ে হয়রানী করে। ২০২৪ সালের নির্বাচনের পর এমপি মুজিবুল হক আমার বাবাকে কাছে টেনে নেন। গত রোববার তিনি গ্রামের বাড়িতে এসে হেনস্তার শিকার হন। রোববার দুপুরে তাকে পেয়ে স্থানীয় ১০ থেকে ১২ ব্যক্তি হেনস্থা করে গলায় জুতার মালা দিয়ে প্রদক্ষিণ করে।

তিনি আরও বলেন, এ ঘটনার পর তিনি (আবদুল হাই কানু) বর্তমানে অসুস্থ হয়ে ফেনীর একটি হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। দেশের জন্য জীবনবাজী রেখে তিনি যুদ্ধ করেছেন, এখন জীবনের শেষ বয়সে এসে এমন ন্যাক্কারজনক ঘটনায় তিনি মানসিকভাবে বিপর্যস্ত।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে দেখা যায়, স্থানীয় কিছু ব্যক্তি বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হাই কানুকে (৭৮) গলায় জুতার মালা পরিয়ে এলাকা প্রদক্ষিণ করাচ্ছে। ভিডিওতে জনৈক আবুল হাসেমের নেতৃত্বে কয়েকজন স্থানীয় যুবক মুক্তিযোদ্ধাকে হেনস্তা করে এবং তাকে কুমিল্লা ছাড়া হওয়ার হুমকি দিচ্ছে। এসময় তিনি জুতার মালা সরিয়ে ‘আমি আর এখানে আসব না’ বলেও জানান। এসময় তার ভিডিও ধারণ ও ছবি নেওয়া হয়। ওই ব্যক্তিরা বলতে থাকেন ‘এক গ্রাম লোকের সামনে মাফ চাইতে পারবেন কিনা? অন্যরা বলতে থাকেন তিনি কুমিল্লা আউট, এলাকা আউট, ছেড়ে দাও।’

মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হাই কানুর বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, স্ত্রী রেহানা বেগম বাড়িতে রয়েছেন। তিনি বলেন, আমার স্বামীকে মেরে ফেললেও এতোটা কষ্ট পেতাম না। তাকে যে অপমান করা হয়েছে, এটা আমরা কখনো ভাবতে পারিনি। কতোটা কষ্ট পেয়ে তিনি (কানু) বাড়ি ছেড়েছেন, তা বলার ভাষা আমার নেই।

মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হাই কানু সাংবাদিকদের বলেন, আমি কখনোই কারো ক্ষতি করিনি, বরং আওয়ামী লীগের এমপির রোষানলে পড়ে ৮ বছর এলাকা ছাড়া ছিলাম। হঠাৎ আমাকে একা পেয়ে জোর করে ওরা জুতার মালা গলায় দিয়ে ভিডিও করেন।

চৌদ্দগ্রাম উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা প্রমোদ রঞ্জন চক্রবর্তী বলেন, বিজয়ের ৫৩ বছরে এমন ঘটনায় আমরা নির্বাক। আমাদের ভাষা একরকম রুদ্ধ। জড়িতদের দ্রুত গ্রেফতার করা না হলে আমরা প্রতিবাদ, প্রতিরোধসহ সবকিছুই করব। আমরা চাই মুক্তিযোদ্ধা কানুকে লাঞ্ছিতের ঘটনায় জড়িতদের গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা হোক।

তবে ঘটনার বিষয়ে চৌদ্দগ্রাম উপজেলা জামায়াতের আমীর মো. মাহফুজুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, এ ঘটনার সঙ্গে স্থানীয় জামায়াতের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। প্রবাসী আবুল হাসেম আমাদের দলের কেউ না। এ বিষয়ে আরও খোঁজ খবর নেওয়া হচ্ছে। আমাদের দলের কেউ জড়িত থাকলে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

এদিকে সোমবার প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং (চিফ এডভাইজার জিওবি) থেকে ফেসবুক পেইজে বলা হয়, ‘রবিবার চৌদ্দগ্রামে মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হাইকে মানহানির ঘটনায় আমরা তীব্র নিন্দা জানাই। পুলিশ ও স্থানীয় প্রশাসনকে ঘটনার তদন্ত শুরু করে দোষীদের আইনের আওতায় আনার জন্য বলা হয়েছে।

স্থানীয় পুলিশ জানিয়েছে, মি: হাই হত্যাসহ নয়টি মামলার আসামি। আমরা সকলকে আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়া থেকে বিরত থাকতে বলি। -সিএ প্রেস উইং।’

চৌদ্দগ্রাম থানার ওসি এটিএম আক্তারুজ্জামান জানান, ঘটনার পর মুক্তিযোদ্ধা কানু মোবাইল ফোনে আমাকে বিষয়টি জানান। রোববার রাতে ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেখে আমরা জড়িতদের গ্রেফতারে এলাকায় অভিযান পরিচালনা শুরু করি। জড়িতরা এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ায় তাদের গ্রেফতার করা যায়নি। কিন্তু তিনি এ বিষয়ে এখনো অভিযোগ দেননি। জড়িতদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনা হবে।

কুমিল্লা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ নাজির আহমেদ খান বলেন, বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হাই কানুকে লাঞ্ছিত করার বিষয়টি জেনেছি। এ ঘটনার সাথে জড়িতদের দ্রæত গ্রেফতারের জন্য পুলিশের অভিযান অব্যাহত আছে।

এদিকে কুমিল্লা-১১ (চৌদ্দগ্রাম) আসনের সাবেক এমপি ও বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মু. তাহের জানান, ঘটনাটি অত্যন্ত নিন্দনীয়। জড়িতরা যে দলের হোক না কেন কেউ আইন হাতে তুলে নিতে পারে না। মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হাই কানু বা কেউ অপরাধ করলে তাকে শাস্তি অবশ্যই পেতে হবে এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সেই বিষয়টি নিশ্চিত করবে।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

ট্যাগস :

বীর মুক্তিযোদ্ধার গলায় জুতার মালা পরিয়ে গ্রাম প্রদক্ষিণ

‘আমার স্বামীকে মেরে ফেললেও এতোটা কষ্ট পেতাম না’

সংবাদ প্রকাশের সময় : ১২:৪৭:২৯ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪

কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে বয়ো:বৃদ্ধ বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হাই কানুকে গলায় জুতার মালা পরিয়ে গ্রাম প্রদক্ষিণ করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, তাকে কুমিল্লা ছেড়ে অন্যত্র চলে যাওয়ারও হুমকি দেয়া হয়েছে। তার সাথে ন্যাক্কারজনক এ ঘটনার ১ মিনিট ৪৬ সেকেন্ডের একটি ভিডিও রোববার (২২ ডিসেম্বর) রাতে ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়লে এ নিয়ে জনমনে তীব্র ক্ষোভ ও অসন্তোষের ঝড় ওঠে।

রোববার দুপুরে তাকে চৌদ্দগ্রাম উপজেলার বাতিশা ইউনিয়নের পাতড্ডা বাজার থেকে তুলে নিয়ে কুলিয়ারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শহীদ মিনারের সামনে নিয়ে মারধরের একপর্যায়ে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনার সাথে জড়িতদের গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন ওই মুক্তিযোদ্ধার পরিবার।

এদিকে সোমবার প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে জানানো হয়, প্রধান উপদেষ্টা এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে দোষীদের আইনের আওতায় আনার জন্য পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছেন।

জানা যায়, বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হাই কানু চৌদ্দগ্রামের বাতিসা ইউনিয়নের লুদিয়ারা এলাকার বাসিন্দা এবং কৃষকলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য। তিনি আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন। আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে ২০১৮ সালের নির্বাচনের আগ পর্যন্ত মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হাই কানু ও তার পরিবার সাবেক রেলমন্ত্রী ও স্থানীয় এমপি মুজিবুল হক ও তার অনুসারীদের রোষানলের শিকার হয়ে এলাকা ছাড়া হন। সেই থেকে তারা চৌদ্দগ্রামের বাড়ি ছেড়ে ফেনীতে বাসা ভাড়া নিয়ে বসবাস করে আসছেন।

তার ছেলে মো. গোলাম মোস্তফা ভুঁইয়া বিপ্লব জানান, ওই সময় দলের রাজনীতি করা সত্বেও গ্রুপিংয়ের কারণে মুজিবুল হকের অনুসারীরা আমি ও আমার বাবার বিরুদ্ধে হত্যাসহ বেশ কয়েকটি মামলা দিয়ে হয়রানী করে। ২০২৪ সালের নির্বাচনের পর এমপি মুজিবুল হক আমার বাবাকে কাছে টেনে নেন। গত রোববার তিনি গ্রামের বাড়িতে এসে হেনস্তার শিকার হন। রোববার দুপুরে তাকে পেয়ে স্থানীয় ১০ থেকে ১২ ব্যক্তি হেনস্থা করে গলায় জুতার মালা দিয়ে প্রদক্ষিণ করে।

তিনি আরও বলেন, এ ঘটনার পর তিনি (আবদুল হাই কানু) বর্তমানে অসুস্থ হয়ে ফেনীর একটি হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। দেশের জন্য জীবনবাজী রেখে তিনি যুদ্ধ করেছেন, এখন জীবনের শেষ বয়সে এসে এমন ন্যাক্কারজনক ঘটনায় তিনি মানসিকভাবে বিপর্যস্ত।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে দেখা যায়, স্থানীয় কিছু ব্যক্তি বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হাই কানুকে (৭৮) গলায় জুতার মালা পরিয়ে এলাকা প্রদক্ষিণ করাচ্ছে। ভিডিওতে জনৈক আবুল হাসেমের নেতৃত্বে কয়েকজন স্থানীয় যুবক মুক্তিযোদ্ধাকে হেনস্তা করে এবং তাকে কুমিল্লা ছাড়া হওয়ার হুমকি দিচ্ছে। এসময় তিনি জুতার মালা সরিয়ে ‘আমি আর এখানে আসব না’ বলেও জানান। এসময় তার ভিডিও ধারণ ও ছবি নেওয়া হয়। ওই ব্যক্তিরা বলতে থাকেন ‘এক গ্রাম লোকের সামনে মাফ চাইতে পারবেন কিনা? অন্যরা বলতে থাকেন তিনি কুমিল্লা আউট, এলাকা আউট, ছেড়ে দাও।’

মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হাই কানুর বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, স্ত্রী রেহানা বেগম বাড়িতে রয়েছেন। তিনি বলেন, আমার স্বামীকে মেরে ফেললেও এতোটা কষ্ট পেতাম না। তাকে যে অপমান করা হয়েছে, এটা আমরা কখনো ভাবতে পারিনি। কতোটা কষ্ট পেয়ে তিনি (কানু) বাড়ি ছেড়েছেন, তা বলার ভাষা আমার নেই।

মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হাই কানু সাংবাদিকদের বলেন, আমি কখনোই কারো ক্ষতি করিনি, বরং আওয়ামী লীগের এমপির রোষানলে পড়ে ৮ বছর এলাকা ছাড়া ছিলাম। হঠাৎ আমাকে একা পেয়ে জোর করে ওরা জুতার মালা গলায় দিয়ে ভিডিও করেন।

চৌদ্দগ্রাম উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা প্রমোদ রঞ্জন চক্রবর্তী বলেন, বিজয়ের ৫৩ বছরে এমন ঘটনায় আমরা নির্বাক। আমাদের ভাষা একরকম রুদ্ধ। জড়িতদের দ্রুত গ্রেফতার করা না হলে আমরা প্রতিবাদ, প্রতিরোধসহ সবকিছুই করব। আমরা চাই মুক্তিযোদ্ধা কানুকে লাঞ্ছিতের ঘটনায় জড়িতদের গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা হোক।

তবে ঘটনার বিষয়ে চৌদ্দগ্রাম উপজেলা জামায়াতের আমীর মো. মাহফুজুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, এ ঘটনার সঙ্গে স্থানীয় জামায়াতের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। প্রবাসী আবুল হাসেম আমাদের দলের কেউ না। এ বিষয়ে আরও খোঁজ খবর নেওয়া হচ্ছে। আমাদের দলের কেউ জড়িত থাকলে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

এদিকে সোমবার প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং (চিফ এডভাইজার জিওবি) থেকে ফেসবুক পেইজে বলা হয়, ‘রবিবার চৌদ্দগ্রামে মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হাইকে মানহানির ঘটনায় আমরা তীব্র নিন্দা জানাই। পুলিশ ও স্থানীয় প্রশাসনকে ঘটনার তদন্ত শুরু করে দোষীদের আইনের আওতায় আনার জন্য বলা হয়েছে।

স্থানীয় পুলিশ জানিয়েছে, মি: হাই হত্যাসহ নয়টি মামলার আসামি। আমরা সকলকে আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়া থেকে বিরত থাকতে বলি। -সিএ প্রেস উইং।’

চৌদ্দগ্রাম থানার ওসি এটিএম আক্তারুজ্জামান জানান, ঘটনার পর মুক্তিযোদ্ধা কানু মোবাইল ফোনে আমাকে বিষয়টি জানান। রোববার রাতে ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেখে আমরা জড়িতদের গ্রেফতারে এলাকায় অভিযান পরিচালনা শুরু করি। জড়িতরা এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ায় তাদের গ্রেফতার করা যায়নি। কিন্তু তিনি এ বিষয়ে এখনো অভিযোগ দেননি। জড়িতদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনা হবে।

কুমিল্লা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ নাজির আহমেদ খান বলেন, বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হাই কানুকে লাঞ্ছিত করার বিষয়টি জেনেছি। এ ঘটনার সাথে জড়িতদের দ্রæত গ্রেফতারের জন্য পুলিশের অভিযান অব্যাহত আছে।

এদিকে কুমিল্লা-১১ (চৌদ্দগ্রাম) আসনের সাবেক এমপি ও বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মু. তাহের জানান, ঘটনাটি অত্যন্ত নিন্দনীয়। জড়িতরা যে দলের হোক না কেন কেউ আইন হাতে তুলে নিতে পারে না। মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হাই কানু বা কেউ অপরাধ করলে তাকে শাস্তি অবশ্যই পেতে হবে এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সেই বিষয়টি নিশ্চিত করবে।