ধানের দাম নিয়ে দু:শ্চিন্তায় কৃষক
উৎপাদন খরচই উঠছে না, বাঁচব কী করে?
- সংবাদ প্রকাশের সময় : ০১:১৭:২৭ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪ ৮০ বার পড়া হয়েছে
এবার ফুলবাড়ীসহ দিনাজপুর জেলার অধিকাংশ উপজেলায় অধিক লাভের আশায় সুগন্ধি জিরা ধানের ব্যাপক আবাদ হয়েছে। ধানের দাম না থাকায় দুশ্চিন্তায় পড়েছেন কৃষকরা। উৎপাদন খরচ না ওঠার আশঙ্কা!
দিনাজপুরের ফুলবাড়ীসহ সব উপজেলায় এবার সুগন্ধি জিরা ধানের ব্যাপক আবাদ হয়েছে। অন্য বছরের তুলনায় আবাদে গুটি স্বর্ণা এবং স্বর্ণা -৫ এর স্থান দখল করেছে সুগন্ধি জিরা ধান। গুটি স্বর্ণা এবং স্বর্ণা-৫ ধান প্রতি বিঘায় (৪৯ শতাংশ) ফলন হয়েছে ৩০ থেকে ৩৫ মণ। এমনিতেই ফলন কম হয়,(বেশি দামে পুষে যায়) সেখানে সুগন্ধি জিরা ধান ফলন হয়েছে প্রতিবিঘায় ১৬ থেকে ১৮ মণ।
বৃহস্পতিবার (১৯ ডিসেম্বর) বারাই হাটসহ ফুলবাড়ীর আশপাশের ধানের বাজার ছিল স্বর্ণা-৫ ২হাজার ৭৫০ টাকা (৭৫ কেজিতে বস্তা) প্রতি বস্তা। গুটি স্বর্ণা ২হাজার ৫০০ টাকা প্রতি বস্তা। সুগন্ধি জিরা ধান প্রতি বস্তা ৪ হাজার টাকা। গত বছর এই মৌসুমে সুগন্ধী জিরা ধানের দাম ছিল ৫২ থেকে ৫৩শ’ টাকা। এবার সরকার ৩৩ টাকা কেজি দরে কৃষকদের কাছ থেকে ধান এবং মিল মালিকদের কাছ থেকে ৪৭ টাকা কেজি দরে চাল সংগ্রহ করবেন।
সুগন্ধি জিরা ধান উৎপাদন কম হলেও বেশি দাম থাকে তাই লাভের মুখ দেখতে পান কৃষক। কিন্তু এবার জিরা ধানের দাম আশাতীতভাবে কম হওয়ায় দুশ্চিন্তায় পড়েছেন কৃষকরা। কৃষকরা বলছেন, চাষের জন্য প্রয়োজনীয় কৃষি উপকরণ ও শ্রমিকের মজুরি বৃদ্ধি পাওয়ায় বর্তমানে বেড়েছে ধানের উৎপাদন খরচ। এমন অবস্থায় বাজারে ধানের দাম কম থাকায় উৎপাদন খরচই উঠছে না তাদের। এ নিয়ে দুশ্চিন্তায় তারা।
ফুলবাড়ীর অন্যতম বড় ধানের হাট বারাই হাট। বৃহস্পতিবার (১৯ ডিসেম্বর) সকালে গিয়ে দেখা যায়, নতুন সুগন্ধি জিরা ধানে আড়ত পরিপূর্ণ। ক’ সপ্তাহ আগে নতুন ধান ঘরে তোলার আনন্দ নিয়ে কৃষকরা নবান্ন উৎসব করলেও সেই নতুন ধান হাটে এনে বিমর্ষ তারা। কাঙ্খিত দাম না পাওয়ায় আমন আবাদে লাভ-ক্ষতির হিসাব কষতে গিয়ে ক্ষতির পাল্লা ভারী হওয়ায় হতাশ কৃষকরা।
বারাই হাটে ৫ বস্তা ধান বিক্রি করতে আসেন উপজেলার আলাদীপুর ইউপির নারায়ণপুর গ্রামের কৃষক জাকির হোসেন। হাটে ধান বিক্রি করার পর চোখে-মুখে দুশ্চিন্তার ছাপ তার।
তিনি বলেন, প্রতি বস্তা (৭৫ কেজি) সুগন্ধি জিরা ধান ৪ হাজার টাকা দরে বিক্রি করেছেন তিনি। এ দামে ধান বিক্রি করে উৎপাদন খরচ তুলতে হিমশিম খেতে হবে তাকে। তিনি বলেন, হালচাষ, ধান রোপণ, সার, কীটনাশক, খরার কারণে সেচসহ কাটা-মাড়াই করতে প্রতিবিঘা জমিতে আমন আবাদ করতে তার খরচ হয়েছে ৩০ হাজার টাকারও বেশি। এ দামে এক বিঘা জমির ধান বিক্রি করে তিনি পাচ্ছেন ৩২ হাজার, ধান ভালো হলে ৩৬ হাজার টাকা। এতে তার উৎপাদন খরচই ঠিকমতো উঠছে না। তিনি বলেন, এ দামে ধান বিক্রি করে বাঁচব কী করে?
একই হাটে ধান বিক্রি করতে আসা উপজেলার বাসুদবপুর গ্রামের কৃষক ইমরান হোসেন বলেন, গত বছর সুগন্ধিজিরা ধানের দাম ভালো পাওয়ায় এবার মাঠকে মাঠ সুগন্ধি জিরা ধান আবাদ হয়েছে। গুটি স্বর্ণ এবং স্বর্ণ -৫ ধান যতটা ফলন হয়, তার অর্ধেক ফলন হয় সুগন্ধি জিরা ধানের। অথচ গুটি স্বর্ণা এবং স্বর্ণা-৫ এর দাম এবার বেশি। সেই তুলনায় সুগন্ধি জিরা ধানের দাম একেবারেই নেই বললেই চলে। এই দাম দিয়ে কৃষকের খরচ উঠায় দায়।
বারইহাটের বড় ধান ব্যবসায়িক নিশাত ট্রেডার্সের মালিক গোলাম রব্বানী বলেন, নভেম্বরের শেষে এবং ডিসেম্বরের শুরুর দিকে গুটি স্বর্ণা ২২০০ টাকা এবং স্বর্ণা-৫ এর দাম ২৫০০ টাকা বস্তা ছিল ,এখন তা ২০০/২৫০ টাকা বেড়েছে প্রতি বস্তা (৭৫ কেজিতে বস্তা)। কদিন আগে সুগন্ধিজিরা ধানের দাম ছিল ৩৭০০ থেকে ৩৮০০ টাকা বস্তা। আজকের (১৯.১২.২৪) বাজার ৪০০০ থেকে ৪০৫০ টাকা। তবে মোটা ধানের তুলনায় জিরা ধানের দাম অনেক কম।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ রুম্মান আক্তার বলেন, উপজেলায় এবার ১৮ হাজার ১৯০ হেক্টর জমিতে আমন আবাদ হয়েছে। উপজেলায় এবার সুগন্ধি জিরার ভালো ফলন হয়েছে । দাম কিছুটা কম ,তবে দামের ব্যাপারটা তো আমরা দেখিনা।পরে হয়তো দাম উঠবে।