ঢাকা ১০:৫২ অপরাহ্ন, বুধবার, ২২ জানুয়ারী ২০২৫, ৯ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

যশোর থেকে ঢাকায় চারটি ট্রেন চলাচলের দাবি

শহিদুল ইসলাম দইচ, যশোর
  • সংবাদ প্রকাশের সময় : ১২:২১:৪৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ৩০ নভেম্বর ২০২৪ ৯২ বার পড়া হয়েছে
বাংলা টাইমস অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

তিন থেকে সাড়ে তিন ঘণ্টায় যশোরের মানুষের পদ্মা সেতু হয়ে ট্রেনে ঢাকায় যাওয়ার জন্যে চারটি ট্রেনের দাবিতে আন্দোলন সংগ্রাম করে আসছে বৃহত্তর যশোর রেল যোগাযোগ উন্নয়ন সংগ্রাম কমিটি। এরই ধারাবাহিকতায় শনিবার (৩০ নভেম্বর) বেলা সাড়ে ১১টায় যশোর রেল স্টেশনে সাংবাদিক সম্মেলন করেন সংগ্রাম কমিটির নেতৃবৃন্দ।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বৃহত্তর যশোর রেল যোগাযোগ উন্নয়ন সংগ্রাম কমিটির সদস্য সচিব ইঞ্জিনিয়ার রুহুল আমিন বলেন, যশোর-ঢাকা পদ্মা সেতু লিংক প্রজেক্ট শুরু হলে দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের মানুষের সামনে যোগাযোগের নতুন সম্ভাবনা হাতছানি দেয়। আমরা অল্প সময়ে ঢাকায় যাওয়ার স্বপ্নে বিভোর হলেও প্রকল্পের উদ্বোধনের দিন যত ঘণিয়ে আসছে, আমাদের স্বপ্ন তত দূরে সরে যাচ্ছে।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, প্রকল্প শুরুর হওয়ার আগে ঢাকার সাথে যোগাযোগের জন্য আমরা যশোর, মোবারকগঞ্জ ও কোটচাঁদপুর এলাকার মানুষ প্রতিদিন তিনটি ট্রেন পেতাম। ওই ট্রেনগুলো যমুনা সেতু হয়ে চলাচল করতো। বিগত সরকারের সময়কালে ওই রুট থেকে দুইটি ট্রেন রাজবাড়ি-ভাঙ্গা পদ্মা সেতু হয়ে চলাচল করছে। গত মে- জুন মাসে আমরা জানতে পারি, যশোর- ঢাকা পদ্মা সেতু লিংক প্রজেক্ট শুরু হলে খুলনার ট্রেনগুলো যশোরে আসবে না। খুলনা থেকে সিঙ্গিয়া স্টেশনের পর ট্রেনগুলো গতিপথ পরিবর্তন করে ঘুনি, রাধানগরের (পদ্মবিলা স্টেশন) উপর দিয়ে নড়াইল পদ্মা সেতু হয়ে ঢাকায় যাওয়া আসা করবে। যশোর দিয়ে মাত্র একটি ট্রেন (বেনাপোল এক্সপ্রেস) যাতায়াত করবে। মোবারকগঞ্জ-কোটচাঁদপুরবাসী ঢাকায় যাতায়াতের জন্য একটি ট্রেনও পাবে না। আর যশোরবাসীকে ১৯ কিমি দূরে বাঘারপাড়া উপজেলার রাধানগরে গিয়ে ঢাকার ট্রেন ধরতে হবে।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, বিষয়টি জানতে পেরে চলতি বছরের ২ জুন আমরা যশোর রেলস্টেশনে মানববন্ধন করি। একই দিন রেলমন্ত্রীর কাছে স্মারকলিপি প্রদান করা হয়। ওই মাসেই রেল সচিব হুমায়ুন কবির ও রেলের মহাপরিচালক সরদার শাহাদাত আলীর সাথে আমাদের এক প্রতিনিধি দল সাক্ষাৎ করে দাবির পক্ষে যুক্তি তুলে ধরেন। তারা আমাদের দাবির যৌক্তিকতা মেনে বলেন, যশোর-ঢাকা পদ্মা সেতুর লিংক প্রজেক্টের উদ্বোধনীতে বেনাপোল-নড়াইল ঢাকা রুটে অন্তত দুইটি ট্রেন দেয়ার সর্বোচ্চ চেষ্টা করবেন। এছাড়া ২০২৫ সালের মার্চ মাসের মধ্যে নতুন বগী এলে দর্শনা থেকে যশোর-নড়াইল রুট দিয়ে ট্রেন চলবে বলে তিনি আশ্বস্ত করেন।

নেতৃবৃন্দ বলেন, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী সরকারের পতন হয়েছে। প্রকল্পটি এখন উদ্বোধনের দিন গুণছে, যেকোনও দিন উদ্বোধন হতে পারে। এখন আমরা শুনছি, যশোর-নড়াইল-ঢাকা রুটে বা খুলনা-নড়াইল-ঢাকার রুটে কোনও ট্রেন চলবে না।

নেতৃবৃন্দ আরও বলেন, গত ২০ নভেম্বর রেল ভবনে রেলসচিব আব্দুল বাকী ও রেলের মহাপরিচালক সরদার শাহাদত আলীর সাথে আমাদের এক প্রতিনিধি দল আবারও সাক্ষাৎ করেন। তখন রেলের মহাপরিচালক বলেন, বগী সঙ্কটের কারণে নড়াইল রুটে এই মুহূর্তে ট্রেন দেওয়া যাচ্ছে না। রেল কর্তৃপক্ষ চেষ্টা করছে, একটি ট্রেন খুলনা-নড়াইল- ঢাকা ও ঢাকা-নড়াইল- যশোর রুটে চালানো যায় কি না। ইতোমধ্যে ঢাকা-খুলনা রুটে পরীক্ষামূলক ট্রেন চালানো হয়েছে। সেক্ষেত্রে যশোর আবারও বাইরে থাকলো, যা যশোরের মানুষকে অধিক ক্ষুব্ধ করে তুলেছে।

নেতৃবৃন্দ যশোর-ঢাকা পদ্মা সেতু লিংক প্রজেক্টের উদ্বোধনী দিনে বেনাপোল-যশোর-নড়াইল-ঢাকা রুটে দুইটি ট্রেন চালুসহ দর্শনা-যশোর-নড়াইল-ঢাকা রুটে দুইটি ট্রেন চালু, ট্রেনের সময়সূচি ঘোষণা, আন্তঃনগর ট্রেনে সুলভ বগী যুক্ত, টিকিট প্রাপ্তির সহজ পদ্ধতি চালুর দাবিতে আগামী ৩ ডিসেম্বর আমরা প্রতীকী রেলপথ অবরোধের ঘোষণা করেন।

সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে সমাবেশে সদস্য সচিব ইঞ্জিনিয়ার রুহুল আমিন, যুগ্ম আহ্বায়ক জিল্লুর রহমান ভিটু, অ্যাডভোকেট আমিনুর রহমান হিরু, হাবিবুর রহমান মিলন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

প্রসঙ্গত, দেশের বৃহত্তম পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পটি সম্পন্ন করতে মোট ৩৯ হাজার ২৪৬ কোটি ৮০ লাখ টাকা খরচ হচ্ছে।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

ট্যাগস :

যশোর থেকে ঢাকায় চারটি ট্রেন চলাচলের দাবি

সংবাদ প্রকাশের সময় : ১২:২১:৪৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ৩০ নভেম্বর ২০২৪

তিন থেকে সাড়ে তিন ঘণ্টায় যশোরের মানুষের পদ্মা সেতু হয়ে ট্রেনে ঢাকায় যাওয়ার জন্যে চারটি ট্রেনের দাবিতে আন্দোলন সংগ্রাম করে আসছে বৃহত্তর যশোর রেল যোগাযোগ উন্নয়ন সংগ্রাম কমিটি। এরই ধারাবাহিকতায় শনিবার (৩০ নভেম্বর) বেলা সাড়ে ১১টায় যশোর রেল স্টেশনে সাংবাদিক সম্মেলন করেন সংগ্রাম কমিটির নেতৃবৃন্দ।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বৃহত্তর যশোর রেল যোগাযোগ উন্নয়ন সংগ্রাম কমিটির সদস্য সচিব ইঞ্জিনিয়ার রুহুল আমিন বলেন, যশোর-ঢাকা পদ্মা সেতু লিংক প্রজেক্ট শুরু হলে দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের মানুষের সামনে যোগাযোগের নতুন সম্ভাবনা হাতছানি দেয়। আমরা অল্প সময়ে ঢাকায় যাওয়ার স্বপ্নে বিভোর হলেও প্রকল্পের উদ্বোধনের দিন যত ঘণিয়ে আসছে, আমাদের স্বপ্ন তত দূরে সরে যাচ্ছে।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, প্রকল্প শুরুর হওয়ার আগে ঢাকার সাথে যোগাযোগের জন্য আমরা যশোর, মোবারকগঞ্জ ও কোটচাঁদপুর এলাকার মানুষ প্রতিদিন তিনটি ট্রেন পেতাম। ওই ট্রেনগুলো যমুনা সেতু হয়ে চলাচল করতো। বিগত সরকারের সময়কালে ওই রুট থেকে দুইটি ট্রেন রাজবাড়ি-ভাঙ্গা পদ্মা সেতু হয়ে চলাচল করছে। গত মে- জুন মাসে আমরা জানতে পারি, যশোর- ঢাকা পদ্মা সেতু লিংক প্রজেক্ট শুরু হলে খুলনার ট্রেনগুলো যশোরে আসবে না। খুলনা থেকে সিঙ্গিয়া স্টেশনের পর ট্রেনগুলো গতিপথ পরিবর্তন করে ঘুনি, রাধানগরের (পদ্মবিলা স্টেশন) উপর দিয়ে নড়াইল পদ্মা সেতু হয়ে ঢাকায় যাওয়া আসা করবে। যশোর দিয়ে মাত্র একটি ট্রেন (বেনাপোল এক্সপ্রেস) যাতায়াত করবে। মোবারকগঞ্জ-কোটচাঁদপুরবাসী ঢাকায় যাতায়াতের জন্য একটি ট্রেনও পাবে না। আর যশোরবাসীকে ১৯ কিমি দূরে বাঘারপাড়া উপজেলার রাধানগরে গিয়ে ঢাকার ট্রেন ধরতে হবে।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, বিষয়টি জানতে পেরে চলতি বছরের ২ জুন আমরা যশোর রেলস্টেশনে মানববন্ধন করি। একই দিন রেলমন্ত্রীর কাছে স্মারকলিপি প্রদান করা হয়। ওই মাসেই রেল সচিব হুমায়ুন কবির ও রেলের মহাপরিচালক সরদার শাহাদাত আলীর সাথে আমাদের এক প্রতিনিধি দল সাক্ষাৎ করে দাবির পক্ষে যুক্তি তুলে ধরেন। তারা আমাদের দাবির যৌক্তিকতা মেনে বলেন, যশোর-ঢাকা পদ্মা সেতুর লিংক প্রজেক্টের উদ্বোধনীতে বেনাপোল-নড়াইল ঢাকা রুটে অন্তত দুইটি ট্রেন দেয়ার সর্বোচ্চ চেষ্টা করবেন। এছাড়া ২০২৫ সালের মার্চ মাসের মধ্যে নতুন বগী এলে দর্শনা থেকে যশোর-নড়াইল রুট দিয়ে ট্রেন চলবে বলে তিনি আশ্বস্ত করেন।

নেতৃবৃন্দ বলেন, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী সরকারের পতন হয়েছে। প্রকল্পটি এখন উদ্বোধনের দিন গুণছে, যেকোনও দিন উদ্বোধন হতে পারে। এখন আমরা শুনছি, যশোর-নড়াইল-ঢাকা রুটে বা খুলনা-নড়াইল-ঢাকার রুটে কোনও ট্রেন চলবে না।

নেতৃবৃন্দ আরও বলেন, গত ২০ নভেম্বর রেল ভবনে রেলসচিব আব্দুল বাকী ও রেলের মহাপরিচালক সরদার শাহাদত আলীর সাথে আমাদের এক প্রতিনিধি দল আবারও সাক্ষাৎ করেন। তখন রেলের মহাপরিচালক বলেন, বগী সঙ্কটের কারণে নড়াইল রুটে এই মুহূর্তে ট্রেন দেওয়া যাচ্ছে না। রেল কর্তৃপক্ষ চেষ্টা করছে, একটি ট্রেন খুলনা-নড়াইল- ঢাকা ও ঢাকা-নড়াইল- যশোর রুটে চালানো যায় কি না। ইতোমধ্যে ঢাকা-খুলনা রুটে পরীক্ষামূলক ট্রেন চালানো হয়েছে। সেক্ষেত্রে যশোর আবারও বাইরে থাকলো, যা যশোরের মানুষকে অধিক ক্ষুব্ধ করে তুলেছে।

নেতৃবৃন্দ যশোর-ঢাকা পদ্মা সেতু লিংক প্রজেক্টের উদ্বোধনী দিনে বেনাপোল-যশোর-নড়াইল-ঢাকা রুটে দুইটি ট্রেন চালুসহ দর্শনা-যশোর-নড়াইল-ঢাকা রুটে দুইটি ট্রেন চালু, ট্রেনের সময়সূচি ঘোষণা, আন্তঃনগর ট্রেনে সুলভ বগী যুক্ত, টিকিট প্রাপ্তির সহজ পদ্ধতি চালুর দাবিতে আগামী ৩ ডিসেম্বর আমরা প্রতীকী রেলপথ অবরোধের ঘোষণা করেন।

সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে সমাবেশে সদস্য সচিব ইঞ্জিনিয়ার রুহুল আমিন, যুগ্ম আহ্বায়ক জিল্লুর রহমান ভিটু, অ্যাডভোকেট আমিনুর রহমান হিরু, হাবিবুর রহমান মিলন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

প্রসঙ্গত, দেশের বৃহত্তম পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পটি সম্পন্ন করতে মোট ৩৯ হাজার ২৪৬ কোটি ৮০ লাখ টাকা খরচ হচ্ছে।