অটোরিকশা বন্ধ: বেকার হবে ২৫ লাখ মানুষ
- সংবাদ প্রকাশের সময় : ০৫:৫৮:১৪ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪ ৫২ বার পড়া হয়েছে
রাজধানীতে ১২ লাখেরও বেশি ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চলছে। যা বেশিরভাগই চালকদের জীবন-জীবিকার অন্যতম প্রধান উৎস। সম্প্রতি এসব রিকশা চলাচল বন্ধে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা এসেছে। আদালতের এমন নির্দেশে বিরুদ্ধে রিকশাচালকরা বিক্ষোভ করেছেন।
এদিকে, বিশেষজ্ঞরা বলছেন-অটোরিকশার অতিরিক্ত গতি এবং দুর্ঘটনার ঝুঁকি যে সমস্যাগুলো তৈরি করছে, সেগুলোর সমাধান প্রয়োজন। তবে, ঢাকার যাতায়াত ব্যবস্থা এবং অটোরিকশার ব্যাপক উপস্থিতি বিষয়টিকে আরও জটিল করে তুলছে। এছাড়া প্রতিটি অটোরিকশা দু’বেলায় দু’জন চালক ভাড়া নেন। এতে রয়েছে বিপুল সংখ্যাক মানুষের বেকার হয়ে পড়ার আশঙ্কা। এর ফলে, পুরোপুরি অটোরিকশা বন্ধ করা কি আদৌ সম্ভব হবে?
উচ্চ আদালতের নির্দেশের প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার (২১ নভেম্বর) রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় বিক্ষোভ করেছে রিকশাচালকরা। তােতে করে গুলশান, হাতিরঝিল, বাড্ডা, বনশ্রী ও মগবাজারসহ অন্যান্য এলাকায় সড়কে অটোরিকশার সংখ্যা তুলনামূলকভাবে কম দেখা গেছে। এর কারণ, অধিকাংশ চালকই সড়ক ও রেলপথ অবরোধে অংশ নেয়ার জন্য বের হয়নি। তবে, বিভিন্ন মোড়ে প্যাডেল চালিত রিকশার সংখ্যা ছিল বেশি।
রিকশা চালকরা জানান, ছাত্র আন্দোলনে ৮০ শতাংশ রিকশাচালক শিক্ষার্থীদের পক্ষে ছিল। অথচ আজ তাদেরই এমন দিন দেখতে হলো।
রিকশাচালক মো. মুসা জানান, বৃহস্পতিবার (২১ নভেম্বর) তিনি রিকশা চালাতে পারেননি এবং মাত্র ৭০০ টাকা উপার্জন করেছেন, এরমধ্যে ৬০০ টাকা জমা দিতে হবে। আমার বাবা-মাকে টাকা না দিলে, সংসার কীভাবে চলবে?
অটোরিকশার চলাচলে সবচেয়ে বড় আপত্তি হচ্ছে এর ‘নিয়ন্ত্রণহীন গতি’। এ বিষয়ে ভোলার মো. আব্দুল হক বলেন, কেউ কেউ দ্রুত চালায়, তবে যখন রাস্তায় জ্যাম থাকে, তখন সবাই একই গতিতে চলে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন-শুধু প্রধান সড়কেই নয়, দীর্ঘমেয়াদে শাখা সড়কেও অটোরিকশা চলা উচিত নয়, কারণ তাদের নিয়ন্ত্রণহীন গতি বিভিন্ন দুর্ঘটনার কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অ্যাকসিডেন্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউটের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত দেশে ৯০০টি দুর্ঘটনা ঘটেছে। যার মধ্যে ৫৮২টি মারাত্মক ছিল।
অটোরিকশার বন্ধ করা সহজ নয়, তবে আপাতত মূল সড়কে বন্ধ করা উচিত। শাখা সড়কে চলতে দিলে, তা সড়কের সক্ষমতার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ থাকতে হবে। রিকশার জন্য একটি স্পেসিফিকেশন বা স্ট্যান্ডার্ড তৈরি করা প্রয়োজন। স্থানীয় গ্যারেজগুলোতে রিকশা পরিবর্তন করার কারণে অটোরিকশার সংখ্যা বেড়ে গেছে। আপনি যত রিকশা সরাবেন, তত বেশি রিকশা তৈরি হবে, কারণ নিয়ন্ত্রণ নেই।
অধ্যাপক মো. হাদিউজ্জামান বলেন, এই বাহনের স্ট্যাবিলিটি তার সেন্টার অব গ্রাভিটির উপর নির্ভর করে, কিন্তু প্যাডেল চালিত রিকশায় ব্যাটারি যোগ করলে তার গ্রাভিটি বদলে যায়, ফলে দ্রুত গতিতে বাঁক নিলে অটোরিকশা উল্টে যেতে পারে। অটোরিকশা চলাচল পুরোপুরি বন্ধ করা সহজ নয়, কারণ ঢাকা শহরে আনুমানিক ১২ লাখ অটোরিকশা চলাচল করছে।
ঢাকায় অটোরিকশার চলাচল বন্ধ করা পুলিশ বিভাগের জন্যও বড় চ্যালেঞ্জ। একাধিক ট্রাফিক পুলিশ সদস্য বলেন, পাবলিক সহযোগিতা না থাকলে অটোরিকশা বন্ধ করা সম্ভব নয়। পুলিশ মাত্র দুজন, আর এক সিগন্যালে অটোরিকশার সংখ্যা ৫০টা।