সেন্ট মার্টিন দ্বীপে ক্ষয় হচ্ছে না, বাড়ছে
- সংবাদ প্রকাশের সময় : ১১:৫৯:০০ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪ ২৯ বার পড়া হয়েছে
সেন্টমার্টিনে প্রাণচাঞ্চল্য কমে গেলে দ্বীপটাই হাতছাড়া হয়ে যেতে পারে মন্তব্য করে স্টুডেন্টস ফর সভারেন্টির সদস্যরা বলেন, দ্বীপের ক্ষয় হচ্ছে না; বরং আয়তন দিন দিন আরও বৃদ্ধি পাচ্ছে সার্বভৌমত্ব রক্ষায় প্রতিষ্ঠিত ঢাবি শিক্ষার্থীদের সংগঠন ‘স্টুডেন্টস ফর সভারেন্টি। নারিকেল জিঞ্জিরা দ্বীপে যাতায়াত ও অবস্থানে সরকারি বাধা দেশের সার্বভৌমত্বের জন্য হুমকী হয়ে দাঁড়াবে। কখনো এমন হলে দায় দায়িত্ব নিতে হবে পরিবেশ উপদেষ্টাকে।
শুক্রবার (১৫ নভেম্বর) বিকেল সাড়ে ৪টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসির রাজু চত্বরে বিক্ষোভ সমাবেশে সদস্যরা এমন মন্তব্য করেন।
আহ্বায়ক জিয়াউল হক বলেন, দ্বীপবাসী ও আশপাশের কক্সবাজারের বাসিন্দাদের বক্তব্য হচ্ছে- “আমরা ছোটবেলা থেকে দ্বীপ যেমন দেখেছি, এখনও দ্বীপটি তেমনই দেখছি। বলা হচ্ছে যে, দ্বীপ ক্ষয় হয়ে যাচ্ছে ’– প্রকৃতপক্ষে এরকম কিছুই হচ্ছে না, বরং দিন দিন দ্বীপের পরিধি বৃদ্ধি পাচ্ছে। সাগরের ঢেউয়ে কিংবা প্রাকৃতিক কারণে দ্বীপের এক অংশ ভাঙলে দ্বীপের আরেক অংশে চর জেগে ওঠে। দশকের পর দশক এভাবেই আমরা দেখছি এবং এটাই হচ্ছে দ্বীপের বাস্তবতা।” অথচ এই বাস্তবতাকে বাদ দিয়ে দু’একটি বিদেশী জার্নালের কল্পনাপ্রসূত ও কন্সপিরেসি থিউরিমূলক গবেষণার রেফারেন্সে সরকারিভাবে দেশীয় শিল্প ও দেশের জনগণের আয়-রোজগারের পথ বন্ধ করে দিয়ে দ্বীপবাসীর মৌলিক ও মানবাধিকার চরমভাবে লঙ্ঘন করা হচ্ছে। পরিবেশ উপদেষ্টা দেশের মানুষের পরামর্শ ও দাবী-দাওয়াকে পাত্তা না দিয়ে বিদেশী জার্নালের পরামর্শে তিনি নিজ দেশের পর্যটন শিল্প ও দ্বীপবাসীকে একটা মারাত্বক ভয়াবহ পরিস্থিতির দিকে ঠেলে দিচ্ছেন। যেটা কোনো দায়িত্বশীল ও দেশপ্রেমিকের কাজ হতে পারে না।
সংগঠনটির মূখ্য সংগঠক শাকিল মিয়া বলেন, আমাদের দ্বীপটি ভৌগলিক অবস্থানগতভাবে অত্যন্ত স্পর্শকাতর একটি অবস্থানে রয়েছে। দ্বীপে ভ্রমণ বন্ধ রাখলে এক সময় দ্বীপ জনশূণ্য হয়ে যাবে। পার্শ্ববর্তী মিয়ানমারের মগ, আরাকানী ও ভারতের জেলেরা একসময় দ্বীপটি দখলে নেয়ার চেষ্টা চালাবে। ইতিমধ্যেই মিয়ানমার ও আরাকান আর্মি দ্বীপটিকে একাধিকবার তাদের বলে দাবিও করেছে। অর্থাৎ দেশের অখণ্ডতা রক্ষার তাগিদেই নারিকেল জিঞ্জিরা দ্বীপকে সবসময় জনবান্ধব ও জনগণের আসা যাওয়াকে উৎসাহিত করতে হবে। পরিবেশবাদসহ কোনো কিছু্র অজুহাতেই দ্বীপ ভ্রমণে বাধা দিলে দ্বীপটি আমাদের হাত ছাড়া হয়ে যেতে পারে। তাই নারিকেল জিঞ্জিরা দ্বীপ ভ্রমণে সব ধরণের সরকারি বাধা তুলে নিতে হবে।
জিয়াউল বলেন, বিদেশী জার্নালের রেফারেন্স টেনে পরিবেশ উপদেষ্টা বলেছেন, পর্যটকরা কোরাল তুলে নিয়ে যাচ্ছে, তাই ২০৪৫ সালের মধ্যে নাকি সকল কোরাল ক্ষয় হয়ে সেন্ট মার্টিন দ্বীপ (নারিকেল জিঞ্জিরা দ্বীপ) ডুবে যাবে! পরিবেশ উপদেষ্টার রেফারকৃত এই কথা সম্পূর্ণ অবাস্তব ও অবৈজ্ঞানিক। উপদেষ্টা মহোদয় কখনও দ্বীপে গিয়েছেন কি না, অথবা গিয়ে কখনও কথিত জার্নালের দেয়া তথ্যসমূহের সত্যতা যাচাই করার চেষ্টা করেছেন কি না- আমরা তা জানি না। তবে গিয়ে থাকলে এমন অবাস্তব কথা তিনি বলতে পারতেন না। কারণ বিজ্ঞান ও বাস্তবতা হচ্ছে, কোরাল ক্ষয় হয় না, বরং প্রতি বছর গড়ে প্রায় ০.৫-২.৮ সেমি হারে বৃদ্ধি পায়। দ্বীপে সরেজমিনে দেখা যায়, মৃত কোরাল জমে দ্বীপের আয়তন বৃদ্ধি পাচ্ছে। কিন্তু পরিবেশ উপদেষ্টা বলছেন, কোরাল ক্ষয়ে নাকি দ্বীপ হারিয়ে যাচ্ছে! পরিবেশ উপদেষ্টার বক্তব্যের সাথে বিজ্ঞান ও বাস্তবতার মিল পাওয়া যায় না।
জিয়াউল আরও বলেন, দ্বীপের কোরালগুলো অনেক বড়, অনেক ওজন, অনেক ধারালো এবং পানির অনেক নিচে থাকে যেগুলো পর্যটকদের পক্ষে তুলে আনা সম্ভব নয়। কোরাল নিয়ে আসা দূরের কথা, জীবন্ত কোরালে হাত দিলেই হাত কেটে যায়। তাই কথিত বিদেশী জার্নাল কিংবা কোরাল নিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে যে প্রচারণা সেটি অসত্য। মূলত প্রাকৃতিক কারণেই কিছু কোরাল মারা যায়। আবার নতুন কোরাল জন্মায়। পর্যটকদের কেউ কেউ সাগরে ভেসে ওঠা সেই মৃত কোরাল অনেক সময় নিয়ে আসেন যেটাতে দ্বীপ কিংবা পরিবেশের ক্ষতি নয় বরং উপকার হয়, সাগর পরিচ্ছন্ন থাকে। তারপরেও সেসব মৃত কোরাল আনার ব্যাপারে যদি নিষেধাজ্ঞা থাকে সেটা সরকারিভাবে বাস্তবায়ন করলেই সমাধান হয়ে যায়। কিন্তু মিথ্যা অজুহাতে দ্বীপে যাওয়া ও অবস্থানের উপর নিষেধাজ্ঞা দেয়ার রহস্য জনগণ জানতে চায়।
আরো বাস্তবতা হচ্ছে- নারিকেল জিঞ্জিরা দ্বীপ শুধু কোরাল দিয়েই তৈরী নয়, শক্ত পাথর দিয়েও তৈরী। কোরাল নয়, শক্ত পাথরই এর মূল ভিত্তি। তাই কোরাল যদি তুলেও নেয়া হয়, তবুও পাথরের ভিত্তির উপর দ্বীপ টিকে থাকবে। কাজেই ২০৪৫ সালের মধ্যে দ্বীপ হারিয়ে যাবে’ বিদেশী জার্নালের এই বক্তব্য সম্পূর্ণ অযৌক্তিক, অবৈজ্ঞানিক, কল্পনাপ্রসূত এবং এটাকে কন্সপিরেসি থিউরি (ষড়যন্ত্র তত্ত্ব) বললে অত্যুক্তি হবে না।
দ্বিতীয় বিষয় হচ্ছে- অনিয়ন্ত্রিত পর্যটনের কারণে নারিকেল দ্বীপ ২০৪৫ সালের মধ্যে তলিয়ে যাবে মর্মে কথিত বিদেশী জার্নালের যেই বক্তব্য প্রচার হচ্ছে সেটিরও বাস্তব কোনো ভিত্তি নেই। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকেই এমন উদ্ভট বক্তব্য দেশে প্রচার হয়ে আসছে! বাংলাদেশ মরুভূমি হয়ে যাবে, তলিয়ে যাবে -এমন উদ্ভট ও অবাস্তব গবেষণা প্রচারণার পেছনে বৈদেশিক স্বার্থ রয়েছে।