পাটশিল্প ধ্বংসে শেষ পেরেকটি ঠুকেন সাবেক মন্ত্রী গাজী
- সংবাদ প্রকাশের সময় : ০৫:৫৪:৪০ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৪ নভেম্বর ২০২৪ ৪৫ বার পড়া হয়েছে
আওয়ামী লীগ সরকারের পাট ও বস্ত্রমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী পাটশিল্প ধ্বংসে শেষ পেরেকটি ঠুকে দেন। দেশীয় শিল্প ধ্বংস করে পাটের কাঁচামাল ভারতে রপ্তানি করে। সর্বশেষ সরকারি সব পাটকলের উৎপাদন কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করে দেন। সরকার সীমিত আকারে চালু রাখার আশ্বাস দিয়ে মিল বন্ধ করেছিল। কিন্তু সেই আশ্বাস বাস্তবায়ন করেনি। পলিথিন নিরুৎসাহিত করতে হলে পাটশিল্প উজ্জীবিত করতে হবে।
এদিকে সংশ্লিষ্টদের দাবি, সীমিত আকারে পাটকল চালু করা হলেই সরকার ঘোষিত পলিথিন পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যাবে। একইসঙ্গে চাল, গম ও ধানে প্লাস্টিক ব্যাগের ব্যবহারও রোধ করা যাবে। পাটকল মিলের একাধিক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও শ্রমিক নেতারা এমনটি বলেছেন। তাদের দাবি, ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের তুঘলকি সিদ্ধান্তে দেশের সবকটি পাটকল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। দলের একটি গোষ্ঠীর স্বার্থ রক্ষায় সোনালি ঐতিহ্য পাটকল ধ্বংস করা হয়েছে।
শ্রমিক ও কর্মকর্তারা বলেন, পাকিস্তান আমলে স্থাপিত বেশিরভাগ মেশিনই পুরনো। দীর্ঘদিন উৎপাদন বন্ধ থাকার পর অনেক মেশিন ও যন্ত্রণাংশ মরিচা ধরে নষ্ট হয়ে গেছে। তারপরও জোড়াতালি দিয়ে কিছু মেশিন চালু করা যাবে। এতে সরকার ও শ্রমিক উভয়ই লাভবান হবে। জুট মিলে উৎপাদিত কার্পেট, জায়নামাজ, চটের বস্তা বিখ্যাত ছিল। বড় ক্রেতা ছিল ইরান। ইরাক-ইরান যুদ্ধের পর সেই বাজার হারিয়ে যায়। নতুন কোন বাজার আর সৃষ্টি করা যায়নি। কম্বল, কাপড়ও বিদেশে রপ্তানি করা হতো।
জানা গেছে, ২০২০ সালের ১ জুলাই সরকার দেশের পাটকলগুলো বন্ধ ঘোষণা করে। গোল্ডেন হ্যান্ডশেকের মাধ্যমে শ্রমিকদের অবসরে পাঠানো হয়। দেশের ২৬টি পাটকলের উৎপাদন কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া হয়। এর মধ্যে চট্টগ্রামের ৭টি পাটকলসহ সরকারের নয় মিল বন্ধ হয়ে যায়। এতে শত শত শ্রমিক বেকার হয়ে পড়েন।
এ বিষয়ে আমিন জুট মিল শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি আরিফুর রহমান বলেন, সরকার পলিথিন ব্যাগ বন্ধের ঘোষণা দিলেও পুরোপুরি বন্ধ করা যায়নি। আরও কয়েক দফায় এই ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু পলিথিনের বিকল্প চট বা কাপড়ের ব্যাগ বাজারজাত না করায় পুরোপুরি সফল হচ্ছে না। পলিথিনমুক্ত দেশ গড়ার জন্য সীমিত আকারে পাটকল চালু করা খুবই প্রয়োজন।
শ্রমিক নেতা আরিফুর রহমান দাবি করেন, দেশের খাদ্য ও কৃষি মন্ত্রণালয়ে বিপুল পরিমাণ চটের বস্তার প্রয়োজন হয়। বেসরকারি মিল থেকে উচ্চমূল্যে কিনে চাহিদা মেটাতে হয়। দেশের পাটকলগুলো সীমিত আকারে চালু করা হলে সরকারি ছাড়াও দেশের অভ্যন্তরীণ চাহিদা অনেকটা পূরণ হতো। এতে সরকারের অনেক টাকা সাশ্রয় হতো। ১০-১৫ বছর আগেও দেশীয় পাটকলে উৎপাদিত চটের থলে দেশীয় চাহিদার পাশাপাশি বিদেশেও রপ্তানি হতো। লিবিয়া, সুদান ও সিরিয়াসহ কয়েকটি দেশে দেশীয় চটের বস্তা রপ্তানি হতো। এতে প্রচুর পরিমাণ রপ্তানি আয় আসতো; এমনটা মন্তব্য করেন শ্রমিকেরা। পাটকল শ্রমিক ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা দাবি করেন, ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকার দলীয় গুটিকয়েক শিল্পপতি ও প্রতিবেশী দেশ ভারতের স্বার্থ রক্ষায় পাটশিল্প পুরোপুরি ধ্বংস করে দিয়েছে।
শিল্প দেশের মেরুদন্ড উল্লেখ করে শ্রমিক নেতা আরিফুর রহমান বলেন, একসময় ভারত বাংলাদেশ থেকে চটের বস্তা আমদানি করতো। এখন পাটের কাঁচামাল আমদানি করে ভারত। এতে দেশীয় শিল্প ক্রমান্বয়ে ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। একই কথা বললেন সীতাকুন্ডের হাফিজ জুটমিলের শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম।
এ বিষয়ে পাটকল মিলের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সঙ্গে কথা হয়। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি বলেন, বাজার নিয়ন্ত্রণ ও সরকারকে সহায়তা করার জন্য বিকল্প সহায়ক রাখতে হয়। সরকারের বিকল্প না থাকায় বেসরকারি পাটকলগুলো ইচ্ছেমতো দামে বস্তা সরবরাহ করছে। এছাড়া কাঁচা পাটের বাজার ভারত ও ফড়িয়া-মাফিয়া চক্রের হাতে চলে গেছে। ভরা মৌসুমে কম দামে পাটের কাঁচাপণ্য কিনে মজুত করে। পরবর্তীতে ইচ্ছেমতো দামে বিক্রি করে।
সূত্র জানায়, ২০১৮ সালে পাটের বস্তায় প্লাস্টিকের আবরণ (লেমিনেশন) করা শুরু হয়। বাজারে এই ধরনের বস্তার ভালো চাহিদা রয়েছে। রাষ্ট্রায়ত্ত জুটমিলগুলোর উৎপাদিত পণ্য বাজারজাত ও রপ্তানিতে যুগোপযোগী উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। এতে অটোমেশিনের বেসরকারি পাটকলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে টিকে থাকতে পারেনি সরকারি পাটকলগুলো।