ঢাকা ০৩:১১ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

গ্রেপ্তার আতঙ্কে জাপা নেতারা

বিশেষ প্রতিবেদক
  • সংবাদ প্রকাশের সময় : ০১:৫৯:১১ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৩ নভেম্বর ২০২৪ ২২ বার পড়া হয়েছে
বাংলা টাইমস অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

সিলেটে এবার গ্রেপ্তার আতঙ্কে রয়েছে জাতীয় পার্টি। টানা ৩ মেয়াদে ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগের বড় সহযোগী দল হিসেবে জাতীয় পার্টি পরিচিতি পায়। তাই ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পতনের পর আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলার পাশাপাশি জাতীয় পার্টির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের বিরুদ্ধেও মামলা হচ্ছে এবং গ্রেপ্তারও হচ্ছেন তারা।

সিলেটে একদিনে জাতীয় পার্টি থেকে অব্যাহতি পাওয়া কেন্দ্রীয় এক নেতা ও জেলা জাপা’র এক নেতাকে গ্রেপ্তার করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

জানা যায়, জাতীয় পার্টির সাবেক (অব্যাহতিপ্রাপ্ত) ভাইস চেয়ারম্যান ও সিলেট-২ আসনের সাবেক এমপি ইয়াহিয়া চৌধুরী এহিয়াকে সোমবার (১১ নভেম্বর) দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে ঢাকা উত্তরার একটি বাসা থেকে গ্রেপ্তার করে র‍‍্যাব। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চলাকালে ছাত্র-জনতার উপর হামলার অভিযোগে গত ২ অক্টোবর সিলেট কোতোয়ালি মডেল থানায় মামলা হয় সাবেক এই সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে।

গ্রেপ্তারের পর মঙ্গলবার দুপুরে তাকে আদালতে সোপর্দ করা হলে বিচারক জেলহাজতে প্রেরণের নির্দেশ দেন।

ইয়াহিয়া চৌধুরী ২০১৪ সালে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোটের প্রার্থী হিসেবে লাঙল প্রতীক নিয়ে সিলেট-২ আসনের এমপি নির্বাচিত হন। ওই সময় তিনি পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে গণফোরামের প্রার্থী মোকাব্বির খানের কাছে তিনি পরাজিত হন।

তিনি গত সংসদের বিরোধী দলীয় নেত্রী রওশন এরশাদের ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত। এছাড়া গত সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীর প্রকাশ্য সমর্থন করেন তিনি। এসময় তাকে কারণ দর্শানো নোটিশ দেয় দল। পরবর্তীতে ঢাকায় একটি অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে খোদ দলেরই সমালোচনা করেন বসেন ইয়াহিয়া। পরে তাকে দল থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।

এছাড়া সোমবার বিকালে র‍‍্যাব-৯ এর একটি টিম সিলেটের গোলাপগঞ্জের ৭ নং লক্ষনাবন্দ ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. খলকুর রহমান (৪৫)-কে উপজেলা কার্যালয় এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে। তিনি জেলা জাতীয় পার্টি নেতা। দলীয় প্রতীকে তিনি গত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে লক্ষনাবন্দে চেয়ারম্যান পদে নির্বাচিত হন।

৫ আগস্টের আগে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় আন্দোলনকারীদের উপর হামলা ও নাশকতা সৃষ্টির অভিযোগে খলকুর রহমানের বিরুদ্ধে সিলেটের কোতোয়ালি ও দক্ষিণ সুরমা থানায় দুটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।

পরে মঙ্গলবার তাকে আদালতে প্রেরণ করা হলে বিজ্ঞ বিচারক জেলহাজতে প্রেরণের নির্দেশ দেন।

সিলেট জেলা ও মহানগর জাতীয় পার্টির বিভিন্ন স্তরের কয়েকজন নেতা জানান, এই দুজনের গ্রেপ্তারের পর তাদের মাঝে আতঙ্ক বিরাজ করছে। অনেকেই বাড়িছাড়া। আছেন আত্মগোপনে। তবে এ বিষয়ে জেলা ও মহানগর জাতীয় পার্টির শীর্ষ কোনো নেতার বক্তব্য মিলেনি, তাদের সবারই ফোন নাম্বার বন্ধ পাওয়া গেছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে জেলার এক নেতা বলেন, ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গণহত্যায় মদদ দেওয়ার অভিযোগে ৫ আগস্টের পরে সারা দেশে জাপার বেশ নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে হত্যা ও নাশকতা মামলা দায়ের করা হয়েছে। তবে এসব মামলা মিথ্যা এবং ষড়যন্ত্রমূলক। কারণ- আমাদের নেতাকর্মীরা বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে যোগ দেওয়ার কারণে গ্রেপ্তার পর্যন্ত হয়েছেন। ছাত্র-আন্দোলনে যখন গুলি চালানো হলো, জাতীয় পার্টি এর প্রতিবাদ করেছে। কিন্তু এরপরও ৫ আগস্টের পর আমাদের অনেকের বিরুদ্ধে মামলা হচ্ছে। বিষয়টি খুবই দুঃখজনক।’

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

ট্যাগস :

গ্রেপ্তার আতঙ্কে জাপা নেতারা

সংবাদ প্রকাশের সময় : ০১:৫৯:১১ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৩ নভেম্বর ২০২৪

সিলেটে এবার গ্রেপ্তার আতঙ্কে রয়েছে জাতীয় পার্টি। টানা ৩ মেয়াদে ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগের বড় সহযোগী দল হিসেবে জাতীয় পার্টি পরিচিতি পায়। তাই ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পতনের পর আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলার পাশাপাশি জাতীয় পার্টির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের বিরুদ্ধেও মামলা হচ্ছে এবং গ্রেপ্তারও হচ্ছেন তারা।

সিলেটে একদিনে জাতীয় পার্টি থেকে অব্যাহতি পাওয়া কেন্দ্রীয় এক নেতা ও জেলা জাপা’র এক নেতাকে গ্রেপ্তার করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

জানা যায়, জাতীয় পার্টির সাবেক (অব্যাহতিপ্রাপ্ত) ভাইস চেয়ারম্যান ও সিলেট-২ আসনের সাবেক এমপি ইয়াহিয়া চৌধুরী এহিয়াকে সোমবার (১১ নভেম্বর) দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে ঢাকা উত্তরার একটি বাসা থেকে গ্রেপ্তার করে র‍‍্যাব। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চলাকালে ছাত্র-জনতার উপর হামলার অভিযোগে গত ২ অক্টোবর সিলেট কোতোয়ালি মডেল থানায় মামলা হয় সাবেক এই সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে।

গ্রেপ্তারের পর মঙ্গলবার দুপুরে তাকে আদালতে সোপর্দ করা হলে বিচারক জেলহাজতে প্রেরণের নির্দেশ দেন।

ইয়াহিয়া চৌধুরী ২০১৪ সালে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোটের প্রার্থী হিসেবে লাঙল প্রতীক নিয়ে সিলেট-২ আসনের এমপি নির্বাচিত হন। ওই সময় তিনি পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে গণফোরামের প্রার্থী মোকাব্বির খানের কাছে তিনি পরাজিত হন।

তিনি গত সংসদের বিরোধী দলীয় নেত্রী রওশন এরশাদের ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত। এছাড়া গত সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীর প্রকাশ্য সমর্থন করেন তিনি। এসময় তাকে কারণ দর্শানো নোটিশ দেয় দল। পরবর্তীতে ঢাকায় একটি অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে খোদ দলেরই সমালোচনা করেন বসেন ইয়াহিয়া। পরে তাকে দল থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।

এছাড়া সোমবার বিকালে র‍‍্যাব-৯ এর একটি টিম সিলেটের গোলাপগঞ্জের ৭ নং লক্ষনাবন্দ ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. খলকুর রহমান (৪৫)-কে উপজেলা কার্যালয় এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে। তিনি জেলা জাতীয় পার্টি নেতা। দলীয় প্রতীকে তিনি গত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে লক্ষনাবন্দে চেয়ারম্যান পদে নির্বাচিত হন।

৫ আগস্টের আগে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় আন্দোলনকারীদের উপর হামলা ও নাশকতা সৃষ্টির অভিযোগে খলকুর রহমানের বিরুদ্ধে সিলেটের কোতোয়ালি ও দক্ষিণ সুরমা থানায় দুটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।

পরে মঙ্গলবার তাকে আদালতে প্রেরণ করা হলে বিজ্ঞ বিচারক জেলহাজতে প্রেরণের নির্দেশ দেন।

সিলেট জেলা ও মহানগর জাতীয় পার্টির বিভিন্ন স্তরের কয়েকজন নেতা জানান, এই দুজনের গ্রেপ্তারের পর তাদের মাঝে আতঙ্ক বিরাজ করছে। অনেকেই বাড়িছাড়া। আছেন আত্মগোপনে। তবে এ বিষয়ে জেলা ও মহানগর জাতীয় পার্টির শীর্ষ কোনো নেতার বক্তব্য মিলেনি, তাদের সবারই ফোন নাম্বার বন্ধ পাওয়া গেছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে জেলার এক নেতা বলেন, ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গণহত্যায় মদদ দেওয়ার অভিযোগে ৫ আগস্টের পরে সারা দেশে জাপার বেশ নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে হত্যা ও নাশকতা মামলা দায়ের করা হয়েছে। তবে এসব মামলা মিথ্যা এবং ষড়যন্ত্রমূলক। কারণ- আমাদের নেতাকর্মীরা বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে যোগ দেওয়ার কারণে গ্রেপ্তার পর্যন্ত হয়েছেন। ছাত্র-আন্দোলনে যখন গুলি চালানো হলো, জাতীয় পার্টি এর প্রতিবাদ করেছে। কিন্তু এরপরও ৫ আগস্টের পর আমাদের অনেকের বিরুদ্ধে মামলা হচ্ছে। বিষয়টি খুবই দুঃখজনক।’