বিল বকেয়া: বিদ্যুৎ সরবরাহ কমিয়েছে আদানি
- সংবাদ প্রকাশের সময় : ১০:০৪:০১ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১ নভেম্বর ২০২৪ ২৫ বার পড়া হয়েছে
ভারতের ঝাড়খণ্ডের গড্ডায় দুটি পাওয়ার ইউনিটের একটি বন্ধ করে দিয়েছে ভারতের আদানি গ্রুপ। বাংলাদেশের কাছে বিদ্যুৎ সরবরাহ বাবদ প্রায় ১০ হাজার ৮৬ কোটি টাকা পাওনা থাকায় প্রতিষ্ঠানটি এরমধ্যে বিদ্যুৎ সরবরাহ অর্ধেক কমিয়ে দিয়েছে।
বিদ্যুকেন্দ্র থেকে জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ সঞ্চালনের একমাত্র রাষ্ট্রীয় সংস্থা পাওয়ার গ্রিড কম্পানি অব বাংলাদেশ (পিজিসিবি)।
জানা গেছে, শধু বাংলাদেশেই বিদ্যুৎ রপ্তানির জন্য নিবেদিত আদানির এক ইউনিট, যার বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা প্রায় ৭৫০ মেগাওয়াট। বৃহস্পতিবার (৩১ অক্টোবর) সেখান থেকে কোনো বিদ্যুতই উৎপাদন করা হয়নি।
বৃহস্পতিবার (৩১ অক্টোবর) দিনের বেলা আদানি গ্রুপের বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে গড়ে মাত্র ৫৩০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ করেছে। যদিও গত বুধবার পর্যন্ত দিনে গড়ে এক হাজার মেগাওয়াটের বেশি বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হতো।
এই প্রথম বকেয়া বিলের কারণে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করল আদানি। আগামী সপ্তাহের মধ্যে অর্থ পরিশোধ না করলে ৭ নভেম্বর থেকে ৭৫০ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতা সম্পন্ন অবশিষ্ট বিদ্যুৎ ইউনিট বন্ধ করে দেয়ার হুঁশিয়ারিও দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।
এদিকে, বর্তমানে দেশীয় কয়লাভিত্তিক তিন বিদ্যুৎকন্দ্র-এস আলম, রামপাল ও পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকেও বিদ্যুৎ উৎপাদন কমানো হয়েছে, ফলে বর্তমানে চাহিদার তুলনায় সরবরাহে এক হাজার মেগাওয়াটের বেশি ঘাটতি থাকছে।
সম্প্রতি আদানি পাওয়ার (ঝাড়খণ্ড) লিমিটেডের প্রতিনিধি ও যৌথ সমন্বয় কমিটির সভাপতি এম আর কৃষ্ণ রাও এক চিঠিতে উল্লেখ করেন, বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিসি) বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক থেকে ১৭০.০৩ মিলিয়ন ডলারের জন্য প্রয়োজনীয় এলসি প্রদান করেনি এবং ৮৪৬ মিলিয়ন ডলারের (১০,০৮৬ কোটি টাকা) বকেয়াও শোধ করেনি।
তিনি উল্লেখ করেন, সময়মতো এলসি না দেওয়া এবং বকেয়া পরিমাণ পরিশোধ না করার ফলে পাওয়ার পারচেজ অ্যাগ্রিমেন্টের আওতায় ম্যাটারিয়াল ডিফল্ট ঘটেছে, যা আদানি পাওয়ারের সরবরাহ বজায় রাখতে বাধা দিচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, বহু বকেয়া পরিশোধ ও এলসির অভাবে আমরা কয়লা সরবরাহকারী এবং অপারেশন ও রক্ষণাবেক্ষণ কন্ট্রাক্টরদের জন্য কাজের মূলধন নিরাপদে রাখতে পারছি না। আমাদের ঋণদাতারাও সহায়তা প্রত্যাহার করছে।
আদানি তাদের চিঠিতে বিপিডিসিকে ৩০ অক্টোবর ২০২৪ তারিখের মধ্যে এই ডিফল্টগুলো সমাধানের আহবান জানায়। অন্যথায় ৩১ অক্টোবর ২০২৪ থেকে সরবরাহ বন্ধ করা হতে পারে বলে জানিয়েছে।
জানা গেছে, বৃহস্পতিবার পর্যন্ত আদানির বকেয়া পরিশোধ করা হয়নি। এ কারণে কেন্দ্রটির কর্তৃপক্ষ বিদ্যুৎসরবরাহ কমিয়ে দিয়েছে।
এদিকে এস আলম গ্রুপের এক হাজার ২২৪ মেগাওয়াট সক্ষমতার বাঁশখালী পাওয়ার প্লান্ট কর্তৃপক্ষ বিদ্যুৎসরবরাহ বাবদ দুই হাজার কোটি টাকা পাবে বিপিডিবির কাছে। এসএস পাওয়ার ১-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক তান ঝেলিং একটি চিঠিতে বিপিডিসিকে জানিয়েছে, বকেয়া পরিশোধ দ্রুত করা হলে সরবরাহকারীদের জন্য এলসি জারি করা সম্ভব হবে, যা বিদ্যুৎকেন্দ্রটি চালু রাখার জন্য প্রয়োজনীয়।
বাংলাদেশ-ভারত যৌথ উদ্যোগে পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রও কয়লাসংকটের কারণে ইউনিট-২ বন্ধ করে দিয়েছে। যদিও ইউনিট-১ বর্তমানে ৫৩৯ মেগাওয়াট উৎপাদন করছে। পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রের ইউনিট-২ দুই মাসের জন্য মেরামতে যাচ্ছে। কম্পানিটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ এম খোরশেদুল আলম জানিয়েছেন, তারা পাঁচ হাজার ৮০০ কোটি টাকার বকেয়া পরিমাণের কারণে কার্যকর চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হচ্ছেন।
বর্তমানে বাংলাদেশের বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা ২৭ হাজার মেগাওয়াটের বেশি। যদিও এখন দেশে বিদ্যুতের চাহিদা গড়ে ১৩ হাজার থেকে ১৪ হাজার মেগাওয়াট।