ঢাকা ০১:০১ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ০১ নভেম্বর ২০২৪, ১৬ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বললেন ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক

মাথায় আঘাতে মৃত্যুর প্রতিবেদন দিতে বলেছিলো প্রশাসন ও গোয়েন্দারা

রংপুর প্রতিনিধি
  • সংবাদ প্রকাশের সময় : ১২:৪৭:১৫ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১ নভেম্বর ২০২৪ ৩ বার পড়া হয়েছে
বাংলা টাইমস অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

রংপুর মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগের বিভাগীয় প্রধান সহকারী অধ্যাপক ডা. রাজিবুল ইসলাম অবশেষে মুখ খুললেন। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে নিহত বেরোবি শিক্ষার্থী আবু সাইদের ময়না তদন্ত প্রতিবেদন দিতে কত ভাবে তাকে প্রেসার, ক্ষমতার দাপট নগদ অর্থসহ সিঙ্গাপুরে পরিবার, প্রমোদ ভ্রমণে যাওয়ারও প্রস্তাব দেয়া হয়েছিলো।

বৃহস্পতিবার (৩১ অক্টোবর) সাংবাদিকের সাথে মতবিনিময়কালে তিনি এসব কথা বলেন।

এ সময় তিনি বলেন, ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন ৬ বার পরিবর্তন করাতে বাধ্য করেছিলো পুলিশ ও প্রশাসনের কর্মকর্তরা। শুধু তাই নয় পুলিশের গুলিতে নয় মাথায় আঘাত জনিত কারনে মৃত্যু হয়েছে মর্মে প্রতিবেদন দেবার জন্য ভীষন ভাবে চাপ সৃষ্টি করা হয়েছিলো।

ডা. রাজিবুল ইসলাম বলেন পুলিশের গুলিতে নিহত বেরোবি শিক্ষার্থী আবু সাইদের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হওয়ার পর রংপুর মেট্রোপলিটান পুলিশের ৪/৫ জন উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা আর গোয়েন্দা ডিজিএফআই এর লোকজন আমাকে প্রেসারে রেখে ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন টেম্পারিং করার চেষ্টা করেছিলো। তিনি বলেন, ওই সময় মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. সরোয়ার জাহান ছুটিতে ঢাকায় ছিলেন। কলেজের ভাইস প্রিন্সিপাল দুদিন আগে অধ্যাক্ষ হিসেবে নিয়োগ পাওয়া অধ্যাপক ডা. মাহফুজ আহাম্মেদ অধ্যাক্ষের দায়িত্বে ছিলেন। রংপুর মেট্রোপলিটান পুলিশের উচ্চপদস্থ কয়েকজন কর্মকর্তা সার্বক্ষনিক তার রুমে এসে বসে থেকে নানানভাবে আমাবে চাপ সৃষ্টি করছিলো। আমি তখন রিপোর্ট তৈরী করছিলাম আমি আমার নৈতিকতা থেকে বিচ্যুত হইনি। পুলিশ ও প্রশাসন আমাকে আবু সাইদের মৃত্যু হেড ইনজুরির কারনে হয়েছে দেবার জন্য প্রচন্ড চাপ দিচ্ছিলো। কিন্তু আমি ওনাদের চাপের কাছে মাথা নত করি নাই। তারা আমাকে নগদ অর্থ ও সিঙ্গাপুরে পরিবার নিয়ে প্রমোদ ভবনে যাবার জন্য বার বার বলছিলো সব টাকা প্রশাসন বহন করবে বলেও জানিয়েছিলো। কিন্তু আমি তাদের প্রস্তাবে রাজি হই নাই। আমি তার মরদেহের ময়না তদন্ত করে নিশ্চিত ছিলাম আবু সাইদ আসলে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেছে এই কথা রিপোর্টে উল্লেখ করেছি।

ডা. রাজিবুল ইসলাম আরো বলেন, পুলিশের উর্ধতন কর্মকর্তারা ডিজিএফআই এনএসআই, স্বাচিব নেতা ডা. চন্দন ও স্বাচিবের দুই নেতা আমাকে চাপে রেখেছিলো। মেডিকেল কলেজের অধ্যাক্ষ অধ্যাপক সরোয়ার জাহানের নাম উল্লেখ করে তিনি বলেন, উনি দিনে -রাতে এমনকি গভীর রাতেও ফোন করে বলেছিলেন আবু সাইদের মৃত্যুর সঠিক প্রতিবেদন দেবার জন্য। কারো চাপে নতি স্বীকার না করারও পরামর্ম ছিলো তার। সে কারনে ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন তাদের চাপে আমাকে ৬ বার পরিবর্তন করতে হয়েছিলো তারপরও তাদের মনোপুত হয়নি। তারা চেয়েছিলো আমি হেড ইনজুরি দেখিয়ে দেই। নিউরোজেনিক শক দেখিয়ে দেই। কিন্তু এত চাপের পরেও আমি ময়না তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছি ”ডড ওয়াচ ডিউ টু এভাব ইনজুরীস , হুইচ ওয়াজ এনটি মরটেম এন্ড হোমিসাইডাল”।

ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক ডা. রাজিবুল ইসলাম আরও বলেন, হোমিসাইডালের আর একটা ব্যাপার আছে তা হলো হেড ইনজুরী হলে মস্তিস্কে রক্তক্ষরন থাকে যাকে ইন্টার পেনিডিল হেমারেজ থাকে এমনকি কি স্কাল্প বোনে ফ্রাকচার থাকে আবু সাইদের ক্ষেত্রে এসবের কোনটাই ছিলো না। আমি মানসিকভাবে প্রচন্ড চাপে ছিলাম। আমাকে এটাও বলা হয়েছে আমার নামে নাকি গোয়েন্দা রিপোর্ট হয়ে গেছে। ঢাকা থেকে আমাকে হুমকি দেয়া হয়েছে সরকারী চাকুরী করে কিভাবে সরকারের বিপক্ষে রিপোর্ট দিচ্ছেন?।

তিনি বলেন, আবু সাইদ পুলিশের গুলিতেই মারা গেছেন । তার মাথায় কোন আঘাত ছিলো না আমি দেখিও নাই। প্রশাসন চাচ্ছিলো মাথায় আঘাতের কারনে আবু সাইদ মারা গেছে মর্মে প্রতিবেদন দিলে তারা বেঁচে যাবে। কিন্ত আমি তাদের প্রস্তাবে রাজি হইনি। আসলে গুলিতে আবু সাইদের বুক ঝাঝড়া হয়ে গিয়েছিলো এটাই সত্যি। কোন কোন পুলিশ কর্মকর্তা তাকে হুমকি দিয়েছিলো তাদের নাম জানতে চাইলে তিনি নাম বলেননি।

তবে তার সঙ্গে ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন তৈরীতে সহায়তা করা নাম প্রকাশে অনিশ্চুক একজন চিকিৎসক এবং অধ্যাক্ষের কার্যালয়ের কর্মচারীরা নাম প্রকাশ না করে বলেন, আবু সাইদ নিহত হবার পর তার ময়না তদন্ত প্রতিবেদন পরিবর্তন করার জন্য প্রচন্ড চাপ সৃষ্টি করা হয়েছিলো পুলিশ ও প্রশাসনের পক্ষ থেকে। এর মধ্যে তারা কয়েকজনকে চিনতে পেরেছেন তারা হলেন সাবেক মেট্রোপলিটান পুলিশের ডিসি ক্রাইম আবু মারুফ হোসেন , সহকারী কমিশনার আরিফ হোসেন এক এস আই সহ দাঁড়িওয়ালা একজন উচ্চ পদস্থ পুলিশ কর্মকর্তা নাম জানেন না তারা। তবে ডিসি ক্রাইম আবু মারুফ হোসেন ও সহকারী পুলিশ কমিশনার আরিফ হোসেন আবু সাইদ হত্যা মামলার এজাহার নামীয় আসামী বলে পুলিশ নিশ্চিত করেছে।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

ট্যাগস :

বললেন ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক

মাথায় আঘাতে মৃত্যুর প্রতিবেদন দিতে বলেছিলো প্রশাসন ও গোয়েন্দারা

সংবাদ প্রকাশের সময় : ১২:৪৭:১৫ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১ নভেম্বর ২০২৪

রংপুর মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগের বিভাগীয় প্রধান সহকারী অধ্যাপক ডা. রাজিবুল ইসলাম অবশেষে মুখ খুললেন। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে নিহত বেরোবি শিক্ষার্থী আবু সাইদের ময়না তদন্ত প্রতিবেদন দিতে কত ভাবে তাকে প্রেসার, ক্ষমতার দাপট নগদ অর্থসহ সিঙ্গাপুরে পরিবার, প্রমোদ ভ্রমণে যাওয়ারও প্রস্তাব দেয়া হয়েছিলো।

বৃহস্পতিবার (৩১ অক্টোবর) সাংবাদিকের সাথে মতবিনিময়কালে তিনি এসব কথা বলেন।

এ সময় তিনি বলেন, ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন ৬ বার পরিবর্তন করাতে বাধ্য করেছিলো পুলিশ ও প্রশাসনের কর্মকর্তরা। শুধু তাই নয় পুলিশের গুলিতে নয় মাথায় আঘাত জনিত কারনে মৃত্যু হয়েছে মর্মে প্রতিবেদন দেবার জন্য ভীষন ভাবে চাপ সৃষ্টি করা হয়েছিলো।

ডা. রাজিবুল ইসলাম বলেন পুলিশের গুলিতে নিহত বেরোবি শিক্ষার্থী আবু সাইদের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হওয়ার পর রংপুর মেট্রোপলিটান পুলিশের ৪/৫ জন উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা আর গোয়েন্দা ডিজিএফআই এর লোকজন আমাকে প্রেসারে রেখে ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন টেম্পারিং করার চেষ্টা করেছিলো। তিনি বলেন, ওই সময় মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. সরোয়ার জাহান ছুটিতে ঢাকায় ছিলেন। কলেজের ভাইস প্রিন্সিপাল দুদিন আগে অধ্যাক্ষ হিসেবে নিয়োগ পাওয়া অধ্যাপক ডা. মাহফুজ আহাম্মেদ অধ্যাক্ষের দায়িত্বে ছিলেন। রংপুর মেট্রোপলিটান পুলিশের উচ্চপদস্থ কয়েকজন কর্মকর্তা সার্বক্ষনিক তার রুমে এসে বসে থেকে নানানভাবে আমাবে চাপ সৃষ্টি করছিলো। আমি তখন রিপোর্ট তৈরী করছিলাম আমি আমার নৈতিকতা থেকে বিচ্যুত হইনি। পুলিশ ও প্রশাসন আমাকে আবু সাইদের মৃত্যু হেড ইনজুরির কারনে হয়েছে দেবার জন্য প্রচন্ড চাপ দিচ্ছিলো। কিন্তু আমি ওনাদের চাপের কাছে মাথা নত করি নাই। তারা আমাকে নগদ অর্থ ও সিঙ্গাপুরে পরিবার নিয়ে প্রমোদ ভবনে যাবার জন্য বার বার বলছিলো সব টাকা প্রশাসন বহন করবে বলেও জানিয়েছিলো। কিন্তু আমি তাদের প্রস্তাবে রাজি হই নাই। আমি তার মরদেহের ময়না তদন্ত করে নিশ্চিত ছিলাম আবু সাইদ আসলে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেছে এই কথা রিপোর্টে উল্লেখ করেছি।

ডা. রাজিবুল ইসলাম আরো বলেন, পুলিশের উর্ধতন কর্মকর্তারা ডিজিএফআই এনএসআই, স্বাচিব নেতা ডা. চন্দন ও স্বাচিবের দুই নেতা আমাকে চাপে রেখেছিলো। মেডিকেল কলেজের অধ্যাক্ষ অধ্যাপক সরোয়ার জাহানের নাম উল্লেখ করে তিনি বলেন, উনি দিনে -রাতে এমনকি গভীর রাতেও ফোন করে বলেছিলেন আবু সাইদের মৃত্যুর সঠিক প্রতিবেদন দেবার জন্য। কারো চাপে নতি স্বীকার না করারও পরামর্ম ছিলো তার। সে কারনে ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন তাদের চাপে আমাকে ৬ বার পরিবর্তন করতে হয়েছিলো তারপরও তাদের মনোপুত হয়নি। তারা চেয়েছিলো আমি হেড ইনজুরি দেখিয়ে দেই। নিউরোজেনিক শক দেখিয়ে দেই। কিন্তু এত চাপের পরেও আমি ময়না তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছি ”ডড ওয়াচ ডিউ টু এভাব ইনজুরীস , হুইচ ওয়াজ এনটি মরটেম এন্ড হোমিসাইডাল”।

ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক ডা. রাজিবুল ইসলাম আরও বলেন, হোমিসাইডালের আর একটা ব্যাপার আছে তা হলো হেড ইনজুরী হলে মস্তিস্কে রক্তক্ষরন থাকে যাকে ইন্টার পেনিডিল হেমারেজ থাকে এমনকি কি স্কাল্প বোনে ফ্রাকচার থাকে আবু সাইদের ক্ষেত্রে এসবের কোনটাই ছিলো না। আমি মানসিকভাবে প্রচন্ড চাপে ছিলাম। আমাকে এটাও বলা হয়েছে আমার নামে নাকি গোয়েন্দা রিপোর্ট হয়ে গেছে। ঢাকা থেকে আমাকে হুমকি দেয়া হয়েছে সরকারী চাকুরী করে কিভাবে সরকারের বিপক্ষে রিপোর্ট দিচ্ছেন?।

তিনি বলেন, আবু সাইদ পুলিশের গুলিতেই মারা গেছেন । তার মাথায় কোন আঘাত ছিলো না আমি দেখিও নাই। প্রশাসন চাচ্ছিলো মাথায় আঘাতের কারনে আবু সাইদ মারা গেছে মর্মে প্রতিবেদন দিলে তারা বেঁচে যাবে। কিন্ত আমি তাদের প্রস্তাবে রাজি হইনি। আসলে গুলিতে আবু সাইদের বুক ঝাঝড়া হয়ে গিয়েছিলো এটাই সত্যি। কোন কোন পুলিশ কর্মকর্তা তাকে হুমকি দিয়েছিলো তাদের নাম জানতে চাইলে তিনি নাম বলেননি।

তবে তার সঙ্গে ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন তৈরীতে সহায়তা করা নাম প্রকাশে অনিশ্চুক একজন চিকিৎসক এবং অধ্যাক্ষের কার্যালয়ের কর্মচারীরা নাম প্রকাশ না করে বলেন, আবু সাইদ নিহত হবার পর তার ময়না তদন্ত প্রতিবেদন পরিবর্তন করার জন্য প্রচন্ড চাপ সৃষ্টি করা হয়েছিলো পুলিশ ও প্রশাসনের পক্ষ থেকে। এর মধ্যে তারা কয়েকজনকে চিনতে পেরেছেন তারা হলেন সাবেক মেট্রোপলিটান পুলিশের ডিসি ক্রাইম আবু মারুফ হোসেন , সহকারী কমিশনার আরিফ হোসেন এক এস আই সহ দাঁড়িওয়ালা একজন উচ্চ পদস্থ পুলিশ কর্মকর্তা নাম জানেন না তারা। তবে ডিসি ক্রাইম আবু মারুফ হোসেন ও সহকারী পুলিশ কমিশনার আরিফ হোসেন আবু সাইদ হত্যা মামলার এজাহার নামীয় আসামী বলে পুলিশ নিশ্চিত করেছে।