আড়াই মাসে ১৮ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থ
‘জিরো টলারেন্সে’ নীতিতে বিএনপি, শৃঙ্খলা ভঙ্গ করলেই সাংগঠনিক ব্যবস্থা
- সংবাদ প্রকাশের সময় : ১২:০৬:২৭ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৩০ অক্টোবর ২০২৪ ১৭ বার পড়া হয়েছে
চট্টগ্রাম মহানগর, উত্তর ও দক্ষিণ জেলা বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতা কর্মীদের শৃংখলা ভঙ্গের অভিযোগে ব্যবস্থা নিচ্ছে দলটি। মূলত চাঁদাবাজি, দখল, হামলা, ভয়ভীতি প্রদর্শন, এমনকি হত্যার অভিযোগ পর্যন্ত এসেছে কারও কারও বিরুদ্ধে। এ কারণে গত প্রায় আড়াই মাসে দলের শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে চট্টগ্রাম মহানগর, উত্তর ও দক্ষিণ জেলা বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের ১৮ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিতে হয়েছে দলটিকে। সর্বশেষ এ তালিকায় যুক্ত হয়েছেন নগর বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহবায়ক এস কে খোদা তোতন।
এদিকে, বিএনপির একটি সূত্র জানায়, দলের শীর্ষ পর্যায়ের ‘জিরো টলারেন্সে’র কারণে তৃণমূলের নেতাকর্মীদের মধ্যে এক ধরনের আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। কারণ অপকর্ম ও বিরোধে জড়িয়ে এরমধ্যে অনেক ত্যাগী নেতাকর্মী দল থেকে বাদ পড়েছেন। একইসাথে অভ্যন্তরীণ কোন্দল থাকলেও প্রকাশ্যে বিরোধে জড়াতে ভয় পাচ্ছেন কেউ কেউ।
জানতে চাইলে বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম বলেন, বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের কেউ দলের শৃঙ্খলা ভঙ্গ করলে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। ব্যক্তির দায় দল নেবে না। ব্যক্তি অন্যায় করলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। দলের হাইকমান্ড কোনো অন্যায়ের সাথে জড়িত কাউকে ছাড়ছে না।
জানা গেছে, আড়াই মাসে শুধু চট্টগ্রাম মহানগর, উত্তর ও দক্ষিণ জেলা বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের ১৮ নেতাকর্মীকে বহিষ্কারসহ নানা সাংগঠনিক শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিয়েও লাগাম টানা যাচ্ছে না। বিভিন্ন স্থানে কতিপয় নেতাকর্মী দলের কঠোর অবস্থানকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে অপকর্মে জড়িয়ে পড়ছেন। এ পরিস্থিতিতে কিছুটা বিব্রতকর অবস্থায় পড়ছে দলটির হাইকমান্ড। তবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নানামুখী পদক্ষেপ নিয়ে লাগাম টানার চেষ্টা করছে বিএনপি। চট্টগ্রামে বহিষ্কৃত নেতাকর্মীর মধ্যে সর্বোচ্চ ৮ জন বিএনপির। এর বাইরে দলটির সহযোগী সংগঠন যুবদলের ৫ জন, স্বেচ্ছাসেবক দলের ৩জন, ছাত্রদল ও কৃষকদলের একজন করে রয়েছেন। সর্বশেষ নগর বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহবায়ক এস কে খোদা তোতন আছেন তালিকায়। গত ২৭ অক্টোবর তাকে দলটির প্রাথমিক সদস্যসহ সব পর্যায়ের পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব এডভোকেট রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত চিঠিতে এই তথ্য জানানো হয়। তার বিরুদ্ধে দখল, সন্ত্রাস, ভয়ভীতি প্রদর্শন এবং দলের নীতি ও আদর্শ পরিপন্থী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার সুস্পষ্ট অভিযোগ রয়েছে। এ কারণে তাকে বহিষ্কার করা হয়েছে। এর আগে গত ২৬ অক্টোবর বহিষ্কার করা হয় নগরীর খুলশী থানা স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহবায়ক শাহ আলমকে।
বিএনপির কয়েকজন নেতা জানান, গত ৫ আগস্টের পর পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে দল ও নেতাদের ভাবমূর্তি আরও বাড়িয়ে আগামী নির্বাচনে ক্ষমতায় যেতে চায় বিএনপি। তবে দলের হাইকমান্ডের এ আশা পূরণে ‘পথে কাঁটা’ হয়ে দাঁড়িয়েছেন মাঠপর্যায়ের কিছু নেতাকর্মী। তাদের দখলদারিত্ব ও চাঁদাবাজিসহ নানা অপকর্মে কিছুটা হলেও ক্ষুন্ন হচ্ছে দলের ভাবমূর্তি। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিয়েও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না দলটি।
বহিষ্কৃত নেতাকর্মীরা হলো-৮ আগস্ট মহানগর যুবদলের দুই সহ-সভাপতি নাছির উদ্দীন চৌধুরী নাসিম, জাহিদ হাসান বাবু, পহেলা সেপ্টেম্বর দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাবেক আহবায়ক আবু সুফিয়ান, ১ম যুগ্ম আহবায়ক এনামুল হক এনাম ও আহবায়ক কমিটির সদস্য এস এম মামুন মিয়া, ২ সেপ্টেম্বর স্বেচ্ছাসেবক দল মহানগর শাখার সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক আলী মুর্তজা খান, ৫ সেপ্টেম্বর উত্তর জেলা যুবদলের সহ দপ্তর সম্পাদক নাজিম উদ্দীন, ২১ সেপ্টেম্বর মহানগর যুবদলের ১ নং যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোশাররফ হোসাইন ও কৃষি বিষয়ক সম্পাদক নুরুল আমিন, ১৩ অক্টোবর নগরের পাঁচলাইশ থানা স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহবায়ক মোহাম্মদ সবুজ, তার ভাই নগর ছাত্রদলের সাবেক সহ-সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম এবং কৃষক দল নগর শাখার যুগ্ম আহবায়ক শাহ আলম, ১৯ অক্টোবর মহানগর বিএনপির সাবেক সদস্য মামুন আলী ওরফে কিং আলী ও পাঁচলাইশ থানা বিএনপির গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক হাফিজ উদ্দিন ঝন্টু, ২০ অক্টোবর কর্ণফুলী উপজেলার চরলক্ষ্যা ইউনিয়ন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মো. জসিম উদ্দিন জুয়েল, ২৫ অক্টোবর আনোয়ারা উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন, ২৬ অক্টোবর খুলশী থানা স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহবায়ক শাহ আলম এবং ২৭ অক্টোবর নগর বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহবায়ক এস কে খোদা তোতন।
পুলিশ ও বিএনপি সূত্র জানায়, গত ২৬ অক্টোবর সন্ধ্যায় নগরীর খুলশী থানাধীন সেগুনবাগান এলাকায় বিএনপির দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় ছয়জন আহত হন। এলাকার চাঁদাবাজি, দখল ও আধিপত্য বিস্তারের জেরে সংঘর্ষে জড়িয়েছেন খুলশী থানা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. ওমর ফারুক ও থানা স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহবায়ক শাহ আলমের অনুসারীরা। ওমর ফারুক নগর বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহবায়ক এস কে খোদা তোতনের অনুসারী। দুই পক্ষের মধ্যে কয়েক দফায় সংঘর্ষ হয়। এ ঘটনার এক দিন পর ২৭ অক্টোবর এস কে খোদা তোতনকে দলটির প্রাথমিক সদস্যসহ সব পর্যায়ের পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।