মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন
কমলা’র জন্য ভাল নয়, ব্যবধান কমিয়েছেন ট্রাম্প
- সংবাদ প্রকাশের সময় : ১২:১৯:৫২ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৮ অক্টোবর ২০২৪ ৩৪ বার পড়া হয়েছে
মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন সামনের সপ্তাহে, অর্থাৎ মঙ্গলবার (৫ নভেম্বর)। প্রধান দুই প্রতিদ্ধন্ধী রিপাবলিকান সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড জে. ট্রাম্প ৭৮ এবং ক্ষমতাসীন ভাইস-প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস ৬০।
আরও দু’জন প্রার্থী আছেন, একজন গ্রীন পার্টির জিল ষ্টেন ৭৪ ও অন্যজন লিবারেটরিয়ান পার্টির চেজ অলিভার ৩৯। দু’জন পুরুষ, দু’জন মহিলা। ট্রাম্পের ভাইস-প্রেসিডেন্ট হচ্ছেন ওহাইও’র সিনেটর জেডি ভ্যান্স, ৩৯ এবং কমলা হ্যারিসের ভাইস-প্রেসিডেন্ট হচ্ছেন মিনেসোটার গভর্নর টিম ওয়ালজ, ৬০। নির্বাচনটি মূলত: ট্রাম্প-ভ্যান্স ভার্সেস হ্যারিস-ওয়ালজ।
নির্বাচন এলেই শোনা যায়, ব্যাটেলগ্রাউন্ড ষ্টেট-র কথা, মুখ্যতঃ হাতে গোনা ঐ ক’টি ষ্টেষ্টই নির্ধারণ করে কে হবেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। বলা হয়, ওহাইও না জিতলে প্রেসিডেন্সী মেলেনা, ভ্যান্স ওহাইও থেকে, ট্রাম্পের জয়ের সম্ভবনা উজ্জ্বল। এবছর ব্যাটেলগ্রাউন্ড ষ্টেটগুলোতে ট্রাম্প-কমলা হাড্ডাহাড্ডি লড়াই। জাতীয়ভাবে দুই প্রাথীর অবস্থা সমান-সমান। একমাস আগে কমলা হ্যারিস প্রায় ৫পয়েন্টে এগিয়ে ছিলেন। ব্যবধান কমছে, ডেমক্রেটরা চিন্তিত। কমলা হ্যারিস প্রার্থী হবার সাথে সাথে পার্টিতে প্রাণ-চাঞ্চল্য ফিরে এলেও এখন তা ফিকে হয়ে আসছে।
শুক্রবার হিল/ডিডিএইচকিউ জরিপ বলছে, ৭টি ব্যাটেলগ্রাউন্ড ষ্টেট-র ৬টি ট্রাম্প সামান্য এগিয়ে, মিশিগানে সমান-সমান। একই দিন নিউইয়র্ক টাইম্স/ সিয়েনা এবং এবিসি/ইপসস জরিপ বলেছে, ট্রাম্প-হ্যারিস ‘টাই’-এটি কমলা’র জন্যে ভাল নয়, কারণ তিনি এগিয়ে ছিলেন, ট্রাম্প ব্যবধান কমিয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন। আরিজোনা ও নর্থ ক্যারোলিনায় ট্রাম্প বেশি ব্যবধানে এগিয়ে, ফাইভথার্টিএইট/ নেটেসিলভার জরিপ ওই দুই ষ্টেট ট্রাম্পকে দিয়ে দিয়েছে। ইমার্সন কলেজ/ মারিস্ট জরিপ বলেছে, ট্রাম্প দুই পয়েন্টে এগিয়ে।
জর্জিয়া-মিশিগানে ট্রাম্প সামান্য এগিয়ে। জর্জিয়ায় বাইডেন জিতলেও সচরাচর রিপাবলিকানরা এখানে জয় পেয়ে থাকেন। তবে জর্জিয়াতে ৩৩% কৃষাঙ্গ, তাঁরা কমলার পক্ষে নেমে এলে ফলাফল অন্যরকম হতে পারে। সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা জর্জিয়ায় কমলা হ্যারিসের পক্ষে মাঠে নেমেছেন। মিশিগানে কমলা হ্যারিস এগিয়ে ছিলেন, কিন্তু এখন পিছিয়ে। ঐ ষ্টেট আরব-আমেরিকানদের ভোট হ্যারিসের পক্ষে নেই, কারণ মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধ বন্ধে বাইডেন-হ্যারিস ব্যর্থ। তদুপরি, শ্রমিক ইউনিয়ন হ্যারিসকে সমর্থন জানায়নি।
নেভাদা, পেনসিলভানিয়া ও উইস্কনসিনে কমলা হ্যারিসের অবস্থান কিছুটা ভালো। এই ৩টি-তে জিতলেও বাকি ৪টি’র ১টি-তে তাকে জিততে হবে। নেভাদা ২০০৪’র পর থেকে কোন ডেমোক্রেট জেতেনি। উইস্কনসিন কে জিতবেন বলা মুশকিল। এটি সচরাচর ডেমোক্রেট। শ্রমিক ইউনিয়ন শক্তিশালী। বিভিন্ন জরিপ এ ষ্টেটে একবার ট্রাম-একবার হ্যারিসকে সামান্য এগিয়ে দেখাচ্ছে। পেনসিলভানিয়া হারলে কমলার পক্ষে হোয়াইট-হাউসে যাওয়া অসম্ভব হয়ে যাবে। ট্রাম্প এ ষ্টেটে সামান্য এগিয়ে। এখানে তিনি গুলী খেয়েছেন। পেনসিলভানিয়া এবার নির্বাচনে ট্রাম্প-কার্ড।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন জাতীয়ভাবে হলেও প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হ’ন রাজ্যওয়ারী, এটিকে বলা হয় ইলেকটোরাল কলেজ ভোট। এটি কোন একটি প্রতিষ্ঠান নয়, বরং একটি চলমান ব্যবস্থা। ছোটবড় ষ্টেটগুলোর মধ্যে ভারসাম্য রক্ষার জন্যে সংবিধান প্রণেতারা এ ব্যবস্থাটি করে গেছেন। এরফলে দেখা গেছে, পপুলার ভোটে জিতেও হিলারি ক্লিন্টন ২০১৬-এ নির্বাচিত হননি, ট্রাম্প ইলেকটোরাল ভোটে বিজয়ী হ’ন। জর্জ বুশ জুনিয়র দ্বিতীয় টার্মে ২০২০ সালে একইভাবে আল-গোর পপুলার ভোটে জিতেও ইলেকটোরাল ভোট হেরে যান।
ইলেকটোরাল কলেজের সদস্য সংখ্যা ৫৩৮, এজন্যে ২৭০-কে ম্যাজিক নাম্বার বলা হয়, কারণ ওই সংখ্যাটি যিনি পেয়ে যান তিনি প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হ’ন। প্রতিটি ষ্টেটে যতজন কংগ্রেসম্যান ও সিনেটর থাকেন, সেই সংখ্যক ইলেকটোরাল ভোট থাকে। পার্টি এই ডেলিগেটদের নির্বাচন করে থাকে। ব্যতিক্রম আছে, ডিসি (ডিষ্ট্রিক্ট অফ কলম্বিয়া)-তে ৩জন ডেলিগেট। সচরাচর যে প্রার্থী যেই টেস্টে জয়ী হন, তিনি ওই ষ্টেটের সবগুলো ইলেকটোরাল ভোট পান, এটিকে বলা হয়, ‘উইনার টেক অল’। তবে ব্যতিক্রম আছে. মেইন ও নেব্রাস্কায় ভোটের অনুপাতে ডেলিগেট বন্টন হয়।
কে জিতবেন? এ নিয়ে ইতিমধ্যে তিন বিলিয়ন ডলার বাজি উঠেছে। এটি আরো বাড়বে। বিবিসি বলেছে, ট্রাম্প এগিয়ে। রয়টার বলেছে, হ্যারিস এগিয়ে। ট্রাম্প এখন ভাষণে কমলা হ্যারিসকে ‘ফায়ার’ করে দিচ্ছেন। কমলা হ্যারিস বলেছেন, ট্রাম্প ফ্যাসিষ্ট, তিনি প্রেসিডেন্ট হলে বিপদ। বাইডেন বলেছেন, ট্রাম্প বিপদজ্জনক, তাঁকে রাজনৈতিকভাবে বন্দী করা দরকার। এবার নির্বাচনে ধর্মের প্রভাব লক্ষ্য করা যাচ্ছে। ট্রাম্প বলেছেন, কমলা জিতলে ক্যাথলিকরা কোনঠাসা হয়ে পড়বে। এজন্যে কমলা চার্চে গেছেন। ট্রাম্প আগেও বলেছেন, কমলা নিজেকে কখনো কৃষ্ণাঙ্গ, কখনো ভারতীয় বলেন!
ট্রাম্প একমাত্র প্রার্থী যিনি দু’বার অভিশংসিত হয়েছেন। তিনি ফৌজদারি আইনে দণ্ডিত। একবার জিতে, একবার হারার পরও তিনি লড়ছেন এবং বলেছেন, এরপর আর তিনি নির্বাচন করবেন না। এবার তাঁর জয়ের সম্ভবনা উজ্জ্বল। ইতিমধ্যে দু’বার তাঁর ওপর আক্রমন হয়েছে, একবার কানে গুলি লেগেছে। মিডিয়া, এবং দলের অনেক বড় নেতা তার বিরুদ্ধে, ডেমক্রেটরা তো আছেই। কমলা হ্যারিসের কপাল ভাল, কোন প্রাইমারি ছাড়াই তিনি দলের প্রার্থী হয়ে যান। জিতলে তিনি আমেরিকার প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট হবেন। আদৌ কি তিনি জিতবেন?