ঢাকা ১০:২৪ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৪ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বললেন শ্রম সচিব

এখন আমাদের ঘুরে দাঁড়ানোর পালা

নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি
  • সংবাদ প্রকাশের সময় : ০৭:৫২:৩৩ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৩ বার পড়া হয়েছে
বাংলা টাইমস অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালযয়ের নবনিযুক্ত সচিব এএইচএম শফিকুজ্জামান বলেছেন, এখন আমাদের ঘুরে দাঁড়ানোর পালা। ইউরোপ, আমেরিকার ক্রেতারা (বায়ার) আমাদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। তারা চায় বাংলাদেশকে সাপোর্ট দিতে।

সোমবার (১৬ সেপ্টেম্বর) দুপুরে নারায়ণগঞ্জের চাষাঢ়া বিকেএমইএ ভবনে সংগঠনের কর্মকর্তাদের সাথে আয়োজিত মতবিনিময় সভায় তিনি এ কথা বলেন।

এ সময় তিনি বলেন, যে কোনো মূল্যে ইন্ডাস্ট্রির চাকা চালু রাখতে হবে। ইন্ডাস্ট্রি বন্ধ হয়ে গেলে মালিকদের যেমন লোকসান হবে তেমনি শ্রমিকরাও বেকার হয়ে যাবে। শুধু গার্মেন্টস সেক্টর থেকে ৪৭ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি হয়। ইতোমধ্যে আমাদের দেশ থেকে অনেক অর্ডার চলে গেছে, নিউ ইয়ার, ক্রিসমাসের অর্ডার বেশিরভাগই চলে গেছে। জুন-জুলাইয়ের আন্দোলনের সময় অনেকদিন ইন্ডাস্ট্রি বন্ধ ছিল। সাপ্লাই চেন ডিস্টার্ব হয়েছে, পর্যপ্ত গ্যাস ও বিদ্যুতের সমস্যা রয়েছে। এগুলো আমাদের বাস্তবতা। এগুলো মেনে নিয়েই আমাদের এগোতে হবে।

তিনি আরও বলেন, আইএলও কনভেনশন শ্রম আইনের যে বিষয়গুলো রয়েছে গত ১৮ বছরেও সে অধিকারগুলো নিশ্চিত করা যায়নি। গ্যাপ রয়েছে, তাই এই পরিবর্তনের কথা আসছে। আমাদের উপদেষ্টা এই গ্যাপগুলো দ্রæত নিষ্পত্তি করার প্রতি জোড় দিয়েছেন। এরই মধ্যে অসন্তোষ দানা বাধে। আমি চেয়েছিলাম, ৯ তারিখে আমি আশুলিয়াতে যাবো কিন্তু পারমিট দেয়া হলো না। শ্রম সচিব শ্রমিকদের সাথে কথা বলতে পারবে না, সে অবস্থা তৈরী করা হয়েছিল।

সচিব বলেন, আমি বিশ্বাস করি শ্রমিকরা তাদের কর্মক্ষেত্রের একটি সুতাও নষ্ট করবে না। তাহলে এতোগুলো ঘটনা কেন ঘটলো! সবার মধ্যে চেতনা হয়েছে যে, পরিবর্তন, নতুন সবকিছু এখনই করতে হবে। দাবি আদায়ের এই প্রক্রিয়া শ্রম মন্ত্রণালয়ের আইনের সাথে যায় না। যতগুলো ঘটনা ঘটেছে সেখানে শিল্প পুলিশ কাজ করতে পারেনি। রেবাবার প্রচÐ বৃষ্টি, রাস্তা খারাপের মধ্যে সেনা বাহিনীরর সদস্যরা দায়িত্ব পালন করেছে। সেনা বাহিনী দিয়ে কি আমরা প্রতিটি কারখানা পাহাড়া দেবো! এই দায়িত্ব মালিক, শ্রমিক নেতাদের নিতে হবে।

শিল্প খাতে আঘাত করতে পারে আমাদের অর্থনীতি ধসে পরবে মন্তব্য করে তিনি বলেন, দাবি বেতন দ্বিগুন বাড়ানোর। এটি কাঠামোগত বিষয়, এখানে মজুরি বোর্ড আছে। কিন্তু রাস্তা বন্ধ করে যদি বলেন, কালই বেতন দ্বিগুণ করতে হবে এটাতো সমাধানের পথ না। এখানে মেরিটের ওপর ভিত্তি করে চাকরিতে নিয়োগ দেওয়া হবে। জেন্ডার ইস্যু বায়ারদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এখানে পিছিয়ে পড়া নারীরা কাজ করছে। শ্রমঘন এলাকাগুলোতে আমরা টিসিবির সঙ্গে কথা বলে এই এলাকাগুলোতে পণ্য বিক্রি বাড়ানোসহ প্রণোদনার মতো ব্যবস্থা করছি। এখানে অনেক দাবি এসেছে; ২৫ দফার মধ্যে অনেকগুলো যৌক্তিক আবার অনেকগুলো অযৈৗক্তিক। আমরা এগুলো প্রক্রিয়া অনুযায়ী নিষ্পত্তি করবো।

তিনি আরও বলেন, ৫ আগষ্টের পর অনেক বড় বড় মালিক পালিয়ে গেছে, আইনের আওতায় চলে এসেছে। সেখানে বেতন নিয়ে সমস্যা হচ্ছে। প্রথমে বেক্সিমকো ফার্মা থেকে এ সমস্যা শুরু হয়। এসব বিষয় সমাধানে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। সরকার ইতোমধ্যে একটি ফান্ড তৈরি করে সমাধান করেতে। আমি মনে করি এগুলো বড় কোনো সমস্যা না। আমাদের একটি কমিটি রয়েছে। আপনাদের যত আবেদন সেখানে দেন। ইতোমধ্যে আমার কাছে ১৩৮টি অভিযোগ এসেছে। প্রতিটি অভিযোগ আমরা খতিয়ে দেখবো। যারা এ ঘটনাগুলো ঘটিয়েছেন, আমি শ্রমিক নেতাদের বলব, ফৌজদারি অপরাধীকে অবশ্যই আইনের আওতায় আনা হবে। যারা আগুন দিয়েছে, তাদের ধরলে আপনারা ব্যারিকেড দিয়ে আবার বলবেন, ছেড়ে দিতে; সেটা করা যাবে না। অনেক কমিটি পলিটিসাইজ হয়ে গেছে। আমরা এগুলো সংস্কার করবো।

শফিকুজ্জামান বলেন, প্রধান উপদেষ্টা থেকে নির্দেশনা পেয়েছি, অনেক কমিটি একটিভ না। শ্রমিকদের জন্য কেন্দ্রীয় ফান্ড আছে, ইউরোপ ইউনিয়ন ফান্ড দেয় কিন্তু তা অলস পড়ে আছে দপ্তরগুলোতে। ফান্ড যথাযথভাবে হ্যান্ডেল করতে পারিনি, এটা হয়তো আমাদের অধিদপ্তরের ব্যর্থতা। ফান্ড শ্রমিকদের কাছে পৌছে দেয়ার ব্যবস্থা করবো। আমি অফিসারদের সাথে কথা বলেছি, তাদের অ্যাটিটিউট ছিল ১৫ বছর তাদের মস্তিষ্কে যা আছে। আমি বলেছি, এটি ডিলিট করে রিসাইকেল বিন থেকে সরিয়ে নিতে হবে। নতুনভাবে ভাবতে হবে। অনেক অভিযোগ রয়েছে। আমাদের অধিদপ্তরের পাবলিক পারসেপশন প্রচন্ড খারাপ। শ্রমিকদের যথাযথভাবে এডড্রেস করতে হবে।

বিকেএমইএর সভাপতি মোহাম্মদ হাতেমের সভাপতিত্বে উপস্থিত ছিলেন শিল্প পুলিশ সদর সপ্তরের জেপুটি ইন্সপেক্টর জেনারেল সিবগাত উল্লাহ, শিল্প পুলিশ-৪ অতিরিক্ত ডেপুটি ইন্সপেক্টর জেনারেল মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান, জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মাহমুদুল হক, জেলা পুলিশ সুপার প্রত্যুষ কুমার মজুমদার, জেলা কমান্ডিং অফিসার লেফটেন্যান্ট কর্নেল আতিক, বিজিএমইএ সভাপতি খন্দকার রফিকুল ইসলাম, নারায়ণগঞ্জ চেম্বারের সভাপতি মাসুদুজ্জামান মাসুদ প্রমুখ।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

বললেন শ্রম সচিব

এখন আমাদের ঘুরে দাঁড়ানোর পালা

সংবাদ প্রকাশের সময় : ০৭:৫২:৩৩ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪

শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালযয়ের নবনিযুক্ত সচিব এএইচএম শফিকুজ্জামান বলেছেন, এখন আমাদের ঘুরে দাঁড়ানোর পালা। ইউরোপ, আমেরিকার ক্রেতারা (বায়ার) আমাদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। তারা চায় বাংলাদেশকে সাপোর্ট দিতে।

সোমবার (১৬ সেপ্টেম্বর) দুপুরে নারায়ণগঞ্জের চাষাঢ়া বিকেএমইএ ভবনে সংগঠনের কর্মকর্তাদের সাথে আয়োজিত মতবিনিময় সভায় তিনি এ কথা বলেন।

এ সময় তিনি বলেন, যে কোনো মূল্যে ইন্ডাস্ট্রির চাকা চালু রাখতে হবে। ইন্ডাস্ট্রি বন্ধ হয়ে গেলে মালিকদের যেমন লোকসান হবে তেমনি শ্রমিকরাও বেকার হয়ে যাবে। শুধু গার্মেন্টস সেক্টর থেকে ৪৭ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি হয়। ইতোমধ্যে আমাদের দেশ থেকে অনেক অর্ডার চলে গেছে, নিউ ইয়ার, ক্রিসমাসের অর্ডার বেশিরভাগই চলে গেছে। জুন-জুলাইয়ের আন্দোলনের সময় অনেকদিন ইন্ডাস্ট্রি বন্ধ ছিল। সাপ্লাই চেন ডিস্টার্ব হয়েছে, পর্যপ্ত গ্যাস ও বিদ্যুতের সমস্যা রয়েছে। এগুলো আমাদের বাস্তবতা। এগুলো মেনে নিয়েই আমাদের এগোতে হবে।

তিনি আরও বলেন, আইএলও কনভেনশন শ্রম আইনের যে বিষয়গুলো রয়েছে গত ১৮ বছরেও সে অধিকারগুলো নিশ্চিত করা যায়নি। গ্যাপ রয়েছে, তাই এই পরিবর্তনের কথা আসছে। আমাদের উপদেষ্টা এই গ্যাপগুলো দ্রæত নিষ্পত্তি করার প্রতি জোড় দিয়েছেন। এরই মধ্যে অসন্তোষ দানা বাধে। আমি চেয়েছিলাম, ৯ তারিখে আমি আশুলিয়াতে যাবো কিন্তু পারমিট দেয়া হলো না। শ্রম সচিব শ্রমিকদের সাথে কথা বলতে পারবে না, সে অবস্থা তৈরী করা হয়েছিল।

সচিব বলেন, আমি বিশ্বাস করি শ্রমিকরা তাদের কর্মক্ষেত্রের একটি সুতাও নষ্ট করবে না। তাহলে এতোগুলো ঘটনা কেন ঘটলো! সবার মধ্যে চেতনা হয়েছে যে, পরিবর্তন, নতুন সবকিছু এখনই করতে হবে। দাবি আদায়ের এই প্রক্রিয়া শ্রম মন্ত্রণালয়ের আইনের সাথে যায় না। যতগুলো ঘটনা ঘটেছে সেখানে শিল্প পুলিশ কাজ করতে পারেনি। রেবাবার প্রচÐ বৃষ্টি, রাস্তা খারাপের মধ্যে সেনা বাহিনীরর সদস্যরা দায়িত্ব পালন করেছে। সেনা বাহিনী দিয়ে কি আমরা প্রতিটি কারখানা পাহাড়া দেবো! এই দায়িত্ব মালিক, শ্রমিক নেতাদের নিতে হবে।

শিল্প খাতে আঘাত করতে পারে আমাদের অর্থনীতি ধসে পরবে মন্তব্য করে তিনি বলেন, দাবি বেতন দ্বিগুন বাড়ানোর। এটি কাঠামোগত বিষয়, এখানে মজুরি বোর্ড আছে। কিন্তু রাস্তা বন্ধ করে যদি বলেন, কালই বেতন দ্বিগুণ করতে হবে এটাতো সমাধানের পথ না। এখানে মেরিটের ওপর ভিত্তি করে চাকরিতে নিয়োগ দেওয়া হবে। জেন্ডার ইস্যু বায়ারদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এখানে পিছিয়ে পড়া নারীরা কাজ করছে। শ্রমঘন এলাকাগুলোতে আমরা টিসিবির সঙ্গে কথা বলে এই এলাকাগুলোতে পণ্য বিক্রি বাড়ানোসহ প্রণোদনার মতো ব্যবস্থা করছি। এখানে অনেক দাবি এসেছে; ২৫ দফার মধ্যে অনেকগুলো যৌক্তিক আবার অনেকগুলো অযৈৗক্তিক। আমরা এগুলো প্রক্রিয়া অনুযায়ী নিষ্পত্তি করবো।

তিনি আরও বলেন, ৫ আগষ্টের পর অনেক বড় বড় মালিক পালিয়ে গেছে, আইনের আওতায় চলে এসেছে। সেখানে বেতন নিয়ে সমস্যা হচ্ছে। প্রথমে বেক্সিমকো ফার্মা থেকে এ সমস্যা শুরু হয়। এসব বিষয় সমাধানে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। সরকার ইতোমধ্যে একটি ফান্ড তৈরি করে সমাধান করেতে। আমি মনে করি এগুলো বড় কোনো সমস্যা না। আমাদের একটি কমিটি রয়েছে। আপনাদের যত আবেদন সেখানে দেন। ইতোমধ্যে আমার কাছে ১৩৮টি অভিযোগ এসেছে। প্রতিটি অভিযোগ আমরা খতিয়ে দেখবো। যারা এ ঘটনাগুলো ঘটিয়েছেন, আমি শ্রমিক নেতাদের বলব, ফৌজদারি অপরাধীকে অবশ্যই আইনের আওতায় আনা হবে। যারা আগুন দিয়েছে, তাদের ধরলে আপনারা ব্যারিকেড দিয়ে আবার বলবেন, ছেড়ে দিতে; সেটা করা যাবে না। অনেক কমিটি পলিটিসাইজ হয়ে গেছে। আমরা এগুলো সংস্কার করবো।

শফিকুজ্জামান বলেন, প্রধান উপদেষ্টা থেকে নির্দেশনা পেয়েছি, অনেক কমিটি একটিভ না। শ্রমিকদের জন্য কেন্দ্রীয় ফান্ড আছে, ইউরোপ ইউনিয়ন ফান্ড দেয় কিন্তু তা অলস পড়ে আছে দপ্তরগুলোতে। ফান্ড যথাযথভাবে হ্যান্ডেল করতে পারিনি, এটা হয়তো আমাদের অধিদপ্তরের ব্যর্থতা। ফান্ড শ্রমিকদের কাছে পৌছে দেয়ার ব্যবস্থা করবো। আমি অফিসারদের সাথে কথা বলেছি, তাদের অ্যাটিটিউট ছিল ১৫ বছর তাদের মস্তিষ্কে যা আছে। আমি বলেছি, এটি ডিলিট করে রিসাইকেল বিন থেকে সরিয়ে নিতে হবে। নতুনভাবে ভাবতে হবে। অনেক অভিযোগ রয়েছে। আমাদের অধিদপ্তরের পাবলিক পারসেপশন প্রচন্ড খারাপ। শ্রমিকদের যথাযথভাবে এডড্রেস করতে হবে।

বিকেএমইএর সভাপতি মোহাম্মদ হাতেমের সভাপতিত্বে উপস্থিত ছিলেন শিল্প পুলিশ সদর সপ্তরের জেপুটি ইন্সপেক্টর জেনারেল সিবগাত উল্লাহ, শিল্প পুলিশ-৪ অতিরিক্ত ডেপুটি ইন্সপেক্টর জেনারেল মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান, জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মাহমুদুল হক, জেলা পুলিশ সুপার প্রত্যুষ কুমার মজুমদার, জেলা কমান্ডিং অফিসার লেফটেন্যান্ট কর্নেল আতিক, বিজিএমইএ সভাপতি খন্দকার রফিকুল ইসলাম, নারায়ণগঞ্জ চেম্বারের সভাপতি মাসুদুজ্জামান মাসুদ প্রমুখ।