ঢাকা ১১:৩৬ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

তিলে তিলে ক্ষয় হচ্ছে বাবলু রায়ের জীবন

আজিজুল হক সরকার, ফুলবাড়ী (দিনাজপুর)
  • সংবাদ প্রকাশের সময় : ০১:০৩:২৮ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৬ অগাস্ট ২০২৪ ২৬ বার পড়া হয়েছে
বাংলা টাইমস অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

‘তুমি কি দেখেছো কভু জীবনের পরাজয়/ দুখের দহনে করুন রোদনে তিলে তিলে তার ক্ষয়, তিলে তিলে তার ক্ষয়… ।’ জনপ্রিয় এই গানের মর্মকথার সাথে কয়লাখনি বিরোধী আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ বাবলু রায়ের (৫৩) জীবন এখন দুখের দহনে করুন রোদনে তিলে তিলে ক্ষয়ের দিকে।

২০০৬ সালের ২৬ আগস্ট (আজকের) এই দিনে উন্মুক্ত পদ্ধতিতে কয়লাখনি বিরোধী আন্দোলন করতে গিয়ে তৎকালীন বিডিআর-পুলিশের ছোঁড়া গুলিতে গুলিবিদ্ধ হন ফুলবাড়ী উপজেলার পৌর শহরের সুজাপুর গ্রামের রিকশাভ্যান চালক বাবলু রায়। এখন পঙ্গুত্ব জীবনে শরীরের অর্ধেক অংশ অবশ হয়ে গেছে ,নিচের অংশে ঘা দেখা দিয়েছে ; হারিয়ে গেছে তার কর্মক্ষমতা। স্ত্রী সন্ধ্যা রানীসহ তাঁর ৩ সন্তান -দীপ্ত,দিপু আর দিপঙ্কর।আছেন বৃদ্ধা মা-ও সংসারে।

স্ত্রী সন্ধ্যা রানী (৪৮)স্বামীর সেই দুঃসহ স্মৃতির কথা এভাবে বলেন, ‘আমি তখন ছিলাম ৬ মাসের অন্তঃসত্ত¡া। আমার স্বামী প্রতিদিনের ন্যায় সেদিন আর রিকশা-ভ্যান বের করেন নি। সকালে বাড়ি থেকে খাবার খেয়ে তেল-গ্যাস জাতীয় কমিটির ডাক দেওয়া এশিয়া এনার্জির অফিস ঘেরাও মিছিলে অংশ নেন। মিছিলে পুলিশ-বিডিআর ব্যাপক লাঠিচার্জসহ গুলিবর্ষণ করে। হটাৎ একটি গুলি বাবলু রায়ের(স্বামী) পিঠে এসে লাগে। সে রাস্তায় লুটিয়ে পড়ে। এরপর আর কিছু বলতে পারে না। এরপর রংপুর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল, রংপুর থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল, পিজি হাসপাতাল, ক্রমা সেন্টার ও গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রে দীর্ঘ ১১মাস চিকিৎসা শেষে হুইল চেয়ারে বাড়ি ফেরেন।

সন্ধ্যা রানী আরো বলেন, ২৬ আগস্ট এলে মনের মধ্যে কষ্টের ক্ষতগুলো স্মরণ করিয়ে দেয়।আবার বুঝি জীবনের উপর টর্ণেডো বয়ে যায়,আতকে উঠি! প্রত্যেকের স্বপ্ন থাকে সন্তানদের মানুষ করার। আমাদের সে স্বপ্ন দেখা তো দূরের কথা,এখন জীবন চালানোয় দায় হয়ে পড়েছে ভাই! আজ ১৭ বছর ধরে পঙ্গু স্বামীকে নিয়ে তার-ই সেবা শুশ্রƒষা করে আসছি। নিজে আয়-রোজগার করতে না পারায় তার ২ ছেলে রাজমিস্ত্রি জোগাড়ির কাজ করে; যা আয় হয় তা দিয়ে অনেক কষ্টের মধ্যে পরিবার চলছে। ছোট ছেলে আগামীতে এসএসসি পরীক্ষা দেবে।তার পড়ালেখার খরচ জোগাতে পারিনা। দুঃসহ জীবন নিয়ে দুর্দিনের মুখোমুখি আজ।

পঙ্গুত্ববরণকারী-শয্যাশায়ী বাবলু রায় সমকালকে জানান, বর্তমানে তিনি অসুস্থ হয়ে বিছানায় পড়ে আছেন। কোমরে ঘা হয়েছে। প্রতিদিন স্ত্রী সেই ক্ষতগুলো ধুয়ে দেয়।টাকার অভাবে চিকিৎসা করাতে পারেন না। করোনা পজিটিভ হওয়ার পর বর্তমানে একেবারেই শয্যাশায়ী হয়ে গেছেন। বিছানায় এখন তার নিত্য সঙ্গী। আন্দোলনকারীরা মাঝেমধ্যে খোঁজখবর নেন এবং সাধ্যমত সাহায্যও করেন। তেল গ্যাস জাতীয় কমিটির নেতা অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ স্যার সবচেয়ে বেশি খোঁজখবর নেন এবং আর্থিক সহায়তা দিয়ে থাকেন।

তিনি আরো বলেন, আমি তো মারাই যাচ্ছি! তবে মরার আগেও যদি ৬ দফা চুক্তি বাস্তবায়ন দেখে যেতে পারতাম, তাহলে মরেও শান্তি পেতাম। তা নাহলে পঙ্গুত্ববরণকরে আমি মানুষের কোনো কাজেই আসতে পারলাম না! ফুলবাড়ী কয়লাখনি থেকে এক টুকরো কয়লাও যেন কোন বহুজাতিক কোম্পানী তাদের স্বার্থে না নিতে না পারে ,এ ব্যাপারে সজাগ থাকুন।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

তিলে তিলে ক্ষয় হচ্ছে বাবলু রায়ের জীবন

সংবাদ প্রকাশের সময় : ০১:০৩:২৮ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৬ অগাস্ট ২০২৪

‘তুমি কি দেখেছো কভু জীবনের পরাজয়/ দুখের দহনে করুন রোদনে তিলে তিলে তার ক্ষয়, তিলে তিলে তার ক্ষয়… ।’ জনপ্রিয় এই গানের মর্মকথার সাথে কয়লাখনি বিরোধী আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ বাবলু রায়ের (৫৩) জীবন এখন দুখের দহনে করুন রোদনে তিলে তিলে ক্ষয়ের দিকে।

২০০৬ সালের ২৬ আগস্ট (আজকের) এই দিনে উন্মুক্ত পদ্ধতিতে কয়লাখনি বিরোধী আন্দোলন করতে গিয়ে তৎকালীন বিডিআর-পুলিশের ছোঁড়া গুলিতে গুলিবিদ্ধ হন ফুলবাড়ী উপজেলার পৌর শহরের সুজাপুর গ্রামের রিকশাভ্যান চালক বাবলু রায়। এখন পঙ্গুত্ব জীবনে শরীরের অর্ধেক অংশ অবশ হয়ে গেছে ,নিচের অংশে ঘা দেখা দিয়েছে ; হারিয়ে গেছে তার কর্মক্ষমতা। স্ত্রী সন্ধ্যা রানীসহ তাঁর ৩ সন্তান -দীপ্ত,দিপু আর দিপঙ্কর।আছেন বৃদ্ধা মা-ও সংসারে।

স্ত্রী সন্ধ্যা রানী (৪৮)স্বামীর সেই দুঃসহ স্মৃতির কথা এভাবে বলেন, ‘আমি তখন ছিলাম ৬ মাসের অন্তঃসত্ত¡া। আমার স্বামী প্রতিদিনের ন্যায় সেদিন আর রিকশা-ভ্যান বের করেন নি। সকালে বাড়ি থেকে খাবার খেয়ে তেল-গ্যাস জাতীয় কমিটির ডাক দেওয়া এশিয়া এনার্জির অফিস ঘেরাও মিছিলে অংশ নেন। মিছিলে পুলিশ-বিডিআর ব্যাপক লাঠিচার্জসহ গুলিবর্ষণ করে। হটাৎ একটি গুলি বাবলু রায়ের(স্বামী) পিঠে এসে লাগে। সে রাস্তায় লুটিয়ে পড়ে। এরপর আর কিছু বলতে পারে না। এরপর রংপুর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল, রংপুর থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল, পিজি হাসপাতাল, ক্রমা সেন্টার ও গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রে দীর্ঘ ১১মাস চিকিৎসা শেষে হুইল চেয়ারে বাড়ি ফেরেন।

সন্ধ্যা রানী আরো বলেন, ২৬ আগস্ট এলে মনের মধ্যে কষ্টের ক্ষতগুলো স্মরণ করিয়ে দেয়।আবার বুঝি জীবনের উপর টর্ণেডো বয়ে যায়,আতকে উঠি! প্রত্যেকের স্বপ্ন থাকে সন্তানদের মানুষ করার। আমাদের সে স্বপ্ন দেখা তো দূরের কথা,এখন জীবন চালানোয় দায় হয়ে পড়েছে ভাই! আজ ১৭ বছর ধরে পঙ্গু স্বামীকে নিয়ে তার-ই সেবা শুশ্রƒষা করে আসছি। নিজে আয়-রোজগার করতে না পারায় তার ২ ছেলে রাজমিস্ত্রি জোগাড়ির কাজ করে; যা আয় হয় তা দিয়ে অনেক কষ্টের মধ্যে পরিবার চলছে। ছোট ছেলে আগামীতে এসএসসি পরীক্ষা দেবে।তার পড়ালেখার খরচ জোগাতে পারিনা। দুঃসহ জীবন নিয়ে দুর্দিনের মুখোমুখি আজ।

পঙ্গুত্ববরণকারী-শয্যাশায়ী বাবলু রায় সমকালকে জানান, বর্তমানে তিনি অসুস্থ হয়ে বিছানায় পড়ে আছেন। কোমরে ঘা হয়েছে। প্রতিদিন স্ত্রী সেই ক্ষতগুলো ধুয়ে দেয়।টাকার অভাবে চিকিৎসা করাতে পারেন না। করোনা পজিটিভ হওয়ার পর বর্তমানে একেবারেই শয্যাশায়ী হয়ে গেছেন। বিছানায় এখন তার নিত্য সঙ্গী। আন্দোলনকারীরা মাঝেমধ্যে খোঁজখবর নেন এবং সাধ্যমত সাহায্যও করেন। তেল গ্যাস জাতীয় কমিটির নেতা অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ স্যার সবচেয়ে বেশি খোঁজখবর নেন এবং আর্থিক সহায়তা দিয়ে থাকেন।

তিনি আরো বলেন, আমি তো মারাই যাচ্ছি! তবে মরার আগেও যদি ৬ দফা চুক্তি বাস্তবায়ন দেখে যেতে পারতাম, তাহলে মরেও শান্তি পেতাম। তা নাহলে পঙ্গুত্ববরণকরে আমি মানুষের কোনো কাজেই আসতে পারলাম না! ফুলবাড়ী কয়লাখনি থেকে এক টুকরো কয়লাও যেন কোন বহুজাতিক কোম্পানী তাদের স্বার্থে না নিতে না পারে ,এ ব্যাপারে সজাগ থাকুন।