Congratulations D. Yunus !
- সংবাদ প্রকাশের সময় : ০৬:২২:৫৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৮ অগাস্ট ২০২৪ ১২৯ বার পড়া হয়েছে
অভিনন্দন শান্তিতে নোবেল বিজয়ী। ড. মুহাম্মদ ইউনূস আপনাকে হৃদয় থেকে অভিনন্দন। অভিনন্দন আপনাকে আন্তবর্তীকালীন সরকার প্রধান হওয়ার জন্য! বড় অসময়ে আপনি দেশ ও জনগণের দায়িত্ব নিয়েছেন। আপনিই একমাত্র ব্যক্তি যিনি জাতির জন্য শান্তি নিশ্চিত করতে পারেন। আপনিই আমাদের জাতিকে রক্ষা করতে পারেন বিপদ থেকে. আমরা আছি আপনার সাথে।
ড. মুহাম্মদ ইউনূস অর্থনীতির ছাত্র ও অধ্যাপক। গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা। অথচ ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও তার প্রতিষ্ঠিত গ্রামীণ ব্যাংক যৌথভাবে ২০০৬ সালে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার লাভ করে। তিনি প্রথম এবং একমাত্র বাংলাদেশি এই পুরস্কার লাভ করেন। বিষয়টা স্বাভাবিকভাবেই ভাবনার অর্থনীতির একজন ছাত্র ও শিক্ষক হয়ে শান্তিতে তাকে কেন নোবেল দেয়া হলো। দেশে-বিদেশে একই প্রশ্ন।
পেশায় একজন অর্থনীতিবিদ এবং ব্যাংকার, ইউনূস দরিদ্র মানুষদের, বিশেষ করে মহিলাদের সাহায্য করার জন্য ক্ষুদ্রঋণ ব্যবহারে অগ্রণী ভূমিকার জন্য ২০০৬ সালে নোবেল শান্তি পুরস্কারে ভূষিত হন।
ইউনূস হলেন একজন সামাজিক উদ্যোক্তা এবং ব্যাংকার যিনি তার অগ্রণী ক্ষুদ্রঋণ কাজের জন্য ২০০৬ সালের নোবেল শান্তি পুরস্কার জিতেছিলেন যা বাংলাদেশে দারিদ্র্য দূরীকরণে সহায়তা করেছিল এবং সারা বিশ্বে ব্যাপকভাবে গৃহীত হয়েছিল।
বাংলাদেশে এখন এক অস্থির সময় চলছে। চারদিকে ধ্বংস আর ধ্বংস। মানুষের রক্তে লাল রাজপথ। হাসপাতালে হাজার হাজার মানুষের আহাজারি। ছাত্র-জনতার আন্দোলনে সর্বচ্চো চেষ্টা করেও গদি রক্ষা করতে পারেননি শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে ০৫ আগস্ট শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে ভারতে পালিয়ে যান। সঙ্গে ছিলেন তার বোন শেখ রেহেনা। বাংলাদেশের ইতিহাসে এরআগে আর কোন প্রধানমন্ত্রী এভাবে পালিয়ে যাননি।
বাংলাদেশর এক অস্থির এক সময়ে দেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হিসেব দায়িত্ব পেয়েছেন শান্তিতে নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তার প্রতি মানুষের প্রত্যাশার সীমা নেই।
বর্তমানে দেশের ব্যাংকিং ব্যবস্থা অত্যন্ত নাজুক। দৈনন্দিন কার্যক্রম চালাতে ব্যাংকগুলো হিমশিম খাচ্ছে। কোটি কোটি টাকা দেশ থেকে পাচার হয়ে গেছে। দৈনিক বণিক বার্তায় গত ০৭ আগস্ট প্রকাশিত খবর অনুযায়ী ১৮ লাখ ৩৫ হাজার কোটি টাকার সরকারি ঋণ রেখে দেশ থেকে পালিয়ে যান সদ্য সােবক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দেশী ও বিদেশী উৎস থেকে এ ঋণ নেয়া হয়েছে। অথচ ২০০৯ সালে শেখ হাসিনা যখন ক্ষমতা গ্রহণ করেন, তখন সরকারের ঋণ স্থিতি ছিল মাত্র ২ লাখ ৭৬ হাজার ৮৩০ কোটি টাকা। সে হিসাবে আওয়ামী লীগের দেড় দশকের শাসনামলেই সরকারের ঋণ স্থিতি ১৫ লাখ ৫৮ হাজার ২০৬ কোটি টাকা বেড়েছে, যা সরকারের মোট ঋণের প্রায় ৮৫ শতাংশ।
শেখ হাসিনার দেড় দশকের শাসনামলে দেশ থেকে অন্তত ১৪ হাজার ৯২০ কোটি বা ১৪৯ দশমিক ২০ বিলিয়ন ডলার পাচার হয়েছে। বাংলাদেশী মুদ্রায় পাচারকৃত অর্থের পরিমাণ দাঁড়ায় অন্তত ১৭ লাখ ৬০ হাজার কোটি টাকা (বর্তমান বিনিময় হার অনুযায়ী প্রতি ডলারে ১১৮ টাকা ধরে)। যদিও বর্তমানে বাংলাদেশের ব্যবহারযোগ্য নিট রিজার্ভ রয়েছে মাত্র ১৬ বিলিয়ন ডলারেরও কম।
নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয়ের পর শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেন ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি। ওই বছরের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্তও দেশের ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল মাত্র ২২ হাজার ৪৮২ কোটি টাকা। চলতি বছরের মার্চে এসে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ১ লাখ ৮২ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যায়।
শেখ হাসিনার শাসনামলে নতুন নতুন ব্যাংকের মালিকানা পেয়েছে শাসক দলের লোকজন। দলীয় লোকজন অনেক ভালো ব্যাংক দখল করে সব টাকা লুটপাট করে ওইসব ব্যাংকগুলোকে ধ্বসিয়ে দিয়েছে।
অর্থনীতির ভঙ্গুর অবস্থা ও অস্থির এক সময়ে ড. মুহাম্মদ ইউনূস দেশ পরিচালনার দায়িত্ব পেয়েছেন। তার প্রতি মানুষের প্রত্যাশার শেষ নেই। ড. মুহাম্মদ ইউনূস কি পারবেন দেশের অর্থনীতির চাকা সচল করতে ? দেশের অস্থিরতা কমানো ?
নিউ ইয়র্ক টাইমসের তথ্য অনুযায়ী মাত্র ২০ মার্কিন ডলার বা সমপরিমাণ টাকা দিয়ে গ্রামীণ ব্যাংক প্রকল্পের যাত্রা শুরু করেছিলেন নোবেল বিজয়ী।
চাল নেই, চুলা নেই এমন ছিন্নমূল মানুষকে গ্রামীণ ব্যাংক ঋণ প্রদান করে। ঋণের টাকা দিয়ে কেউ ঘর বানায়, কেউবা রিকশা কিনে জীবিকা নির্বাহ করেন। ক্ষুদ্রঋণের পাশাপাশি গ্রামীণ ব্যাংক গৃহঋণ, মৎস্য খামার এবং সেচ প্রকল্পসহ অন্যান্য খাতে ঋণ দিয়ে থাকে। তার প্রতিষ্ঠিত গ্রামীণ ব্যাংকের কারণে গরিব মানুষ চড়া মহাজনি সুদ থেকে রক্ষা পেয়েছে। অনেক নিঃস্ব মানুষ একটি ঘরের মালিক হয়েছে।
১৯৭৬ সালে গ্রামীণ ব্যাংক প্রতিষ্ঠা থেকে আজ পর্যন্ত ড. ইউনূসকে নানা পথ পাড়ি দিতে হয়েছে। গরিব মানুষের গাইড হিসেবে কাজ করে যাচ্ছেন তিনি। একজন শেরপা রাতের আঁধারে দুর্গম পথ পাড়ি দিয়ে পর্বতারোহীদের পর্বত জয়ে সহায়তা করেন। ড. ইউনূস ও গরিবদের দরিদ্রতা দূরীকরণে শেরপা হিসেবে কাজ করছেন। এ যাত্রায় তিনি নিতান্তই নিঃসঙ্গ। তিনি নিঃসঙ্গ হলেও সফল।
জোবরা গ্রামে প্রতিষ্ঠিত ব্যাংকটি বিশ্বব্যাপী এখন পরিচিতি পেয়েছে। বিশ্বের অন্যান্য দেশেও গ্রামীণ ব্যাংকের মডেল ব্যবহার করা হচ্ছে। দেশের অস্থির সময়ে ড. মুহাম্মদ ইউনূসই একমাত্র যোগ্য ব্যক্তি। তার দ্বারাই দেশের দ্বিতীয় স্বাধীনতা রক্ষা। তার রয়েছে বিশ্বব্যাপী গ্রহণযোগ্যতা। সারা বিশ্বের মানুষ তাকে সম্মানের চোখে দেখেন। তিনি একটি ভঙ্গুর অর্থনীতির দেশকে রক্ষা করবেন। অস্থিরতা থামিয়ে দেশে শান্তি-শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনবেন শান্তিতে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী। এটাই তার কাছে জাতির প্রত্যাশা। এজন্য দলমত নির্বিশেষে ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে সাহায্য-সহযোগিতা করতে হবে। বিদেশের বন্ধু রাষ্ট্রগুলোর এগিয়ে আসতে হবে বাংলাদেশর দ্বিতীয় স্বাধীনতা রক্ষায় ও উন্নয়নে। আর দেশর ছাত্র-জনতাকে সজাগ থাকতে হবে ষড়যন্ত্রকারীদের রুখে দিতে। শান্তিতে নোবেল বিজয়ীর কাছে শান্তির প্রতিষ্ঠার প্রত্যাশা সময়ের দাবি। এ দাবি সবার। ছাত্র-জনতার। দেশের ১৮ কোটি মানুষের।
ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে অন্তবর্তীকালীন সরকার প্রধান হওয়ার প্রস্তাব করায় বিজয়ী ছাত্র-জনতার প্রতি রইল হৃদয় থেকে ভালোবসা। বাংলাদেশ দীর্ঘজীবী হোক। Congratulations D. Yunus !
লেখক : সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ও আন্তর্জাতিক আইনের গবেষক।