ঢাকা ০৩:২৩ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

দেশ ও দেশের সম্পদ রক্ষায় অবিচল বাংলাদেশ সেনাবাহিনী

সাজ্জাদ হোসেন চিশতী
  • সংবাদ প্রকাশের সময় : ১২:০১:৫৯ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২ অগাস্ট ২০২৪ ১৪১ বার পড়া হয়েছে
বাংলা টাইমস অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

একটি দেশের স্বাধীনতা- সার্বভৌমত্ব রক্ষায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করে সেনাবাহিনী । দেশের অখণ্ডতা রক্ষা ও বহিঃশত্রুর হাত থেকে দেশের সুরক্ষা করা সেনাবাহিনীর কাজ । বাংলাদেশেরও রয়েছে একটি সুশৃঙ্খল সেনাবাহিনী । দেশমাতৃকা রক্ষায় অভাবনীয় ভূমিকা পালন করছে বাহিনীটি । এ ছাড়া মানবতার খাতিরে হেন কাজ নেই যা করছে না বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ।
সময়ে সময়ে দেশ ও দেশের মানুষের জরুরি প্রয়োজনে অকুতোভয় সংগ্রামীর মতো সেনাবাহিনীর প্রতিটি সদস্য ঝাপিয়ে পড়েছেন । সর্বশেষ কোটা সংস্কার আন্দোলনে অস্থির দেশের হাল ধরেছে বাহিনীটি । মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় কোনো রক্তপাত ও গুলি ছাড়া দেশকে শান্ত করেছে সেনাবাহিনী । দেশের পরিস্থিতি ভালো করার জন্য ত্বরিত কাজ করেছে সেনাবাহিনী । এর জন্য রাস্তায় বা জনসমাজে একটি লাঠিপেটাও করতে হয়নি বাহিনীর কোনো সদস্যকে ।

অতীতে নানা সময় এমন মহান দায়িত্ব পালন করেছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী । এ বাহিনীর সুনাম দেশের গণ্ডি পেরিয়ে পুরো বিশ্বে ছড়িয়ে । বিশ্বের অনেক দেশের সামাজিক সুরক্ষায় কাজ করেছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী । বিশ্বের বুকে শান্তির প্রতীক হিসেবে প্রশংসিত বাংলাদেশ সেনাবাহিনী । জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী মিশনে বাংলাদেশের সেনা সদস্যদের ভূমিকা সুনাম কুড়িয়েছে বিশ্বজুড়ে । বাংলাদেশ বর্তমানে শান্তিরক্ষী বাহিনীতে সর্বোচ্চ সংখ্যক সেনা প্রেরণকারী দেশ । ‘ শান্তিতে সংগ্রামে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী’- স্লোগানের মর্ম কাজেই প্রতিফলিত ।

বাংলাদেশের সৃষ্টিলগ্নের কথা স্মরণ করা যেতে পারে । মহান মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকার কথা এক অনন্য ইতিহাস । পরে দেশের সব প্রাকৃতিক দুর্যোগে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে । বাংলাদেশের গর্ব বলা চলে সুগঠিত ও সুশৃঙ্খল এই বাহিনীটি । দেশ ও জাতির কল্যাণে ভোটার তালিকা প্রণয়ন, জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরি ও বিতরণ, ভিজিডি কার্ড বিতরণ, টিআর- কাবিখার অর্থ সঠিক বণ্টন, পাহাড় ধস, দুর্যোগে কালভার্ট- সেতু- রাস্তা নির্মাণ, জলোচ্ছ্বাস- টর্নেডোর তাণ্ডব পরবর্তী সহায়তাসহ অনেক জরুরি প্রয়োজনে এগিয়ে এসেছে সেনাবাহিনী । এ ছাড়া দেশ গড়ার কাজে সেনাবাহিনীর অবদান অপরিসীম । বিভিন্ন জনগুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প যেমন- পদ্মাসেতু রেল সংযোগ, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, হাতিরঝিল উন্নয়ন প্রকল্প, মহিপাল ফ্লাইওভার, কক্সবাজার টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ, সীমান্ত সড়ক প্রকল্প, খুরুশকুল আশ্রয়ণ প্রকল্প বাস্তবায়ন করে দেশের উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখছে সেনাবাহিনী । কোভিড- ১৯ মহামারির সময়েও মানুষের জন্য কাজ করেছে সেনাবাহিনী ।

সেনাবাহিনী বরাবরই গণতন্ত্রের পক্ষে সাহসী ও তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে । বাংলাদেশের সেনাবাাহিনী অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে পেশাদার ও বিশ্বমানের । সেনাবাহিনীর প্রতিটি কাজ অর্থনৈতিক মূল্য রাখে । তা ছাড়া শান্তিরক্ষা মিশন থেকে অর্জিত আয় বাংলাদেশের তৃতীয় আয়ের খাত । তারপরও সেনাবাহিনী থেমে নেই । উদ্দাম এগিয়ে চলছে বাহিনীর প্রতিটি সদস্য নির্লোভ হয়ে । তাদের বিরুদ্ধেও অপপ্রচার হয় । দেশকে ও দেশের মানুষকে বিপথে ঠেলে দেওয়ার নীল নকশা এসব । সেনাবাহিনী কোনো লোভের বশবর্তী হয়ে কাজ করে না । দেশের প্রয়োজনে এবং কল্যাণে নির্ভীক সেনাবাহিনী । মনে রাখা প্রয়োজন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একটি ক্ষুধা- দারিদ্র্যমুক্ত উন্নত- সমৃদ্ধ রাষ্ট্র গঠনের পাশাপাশি একটি সুশৃঙ্খল, পেশাদার এবং শক্তিশালী সামরিকবাহিনী গড়ে তোলার স্বপ্ন দেখেছিলেন । তিনি ১৯৭৪ সালে একটি প্রতিরক্ষা নীতি প্রণয়ন করেছিলেন । তারপর পেরিয়েছে অনেক সময় । সেনাবাহিনী ইতোমধ্যে দেশের সব শাখা উন্নত ও সমৃদ্ধ করতে নিরলস কাজ করে যাচ্ছে ।
বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী শেখ হাসিনা একাধিকবার দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার পাশাপাশি দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নে সেনাবাহিনী গুরুত্বপূর্ণ অবদানের উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেছেন ।

কিন্তু তারাপরও থেমে নেই প্রোপাগান্ডা । কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে নতুন করে গর্বিত বাহিনীটির বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানো হয় । এরই প্রেক্ষিতে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিও প্রকাশ করে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর( আইএসপিআর) । গত ২৮ জুলাই গণমাধ্যমে পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, দেশব্যাপী ক্রম অবনতিশীল নিরাপত্তা পরিস্থিতিতে জনসাধারণের জানমাল ও সরকারি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোর সার্বিক নিরাপত্তা প্রদানে গত ২০ জুলাই ভোর থেকে নিজ নিজ দায়িত্বপূর্ণ এলাকায় সেনাবাহিনী মোতায়েন রয়েছে । আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে অন্যান্য বাহিনীর পাশাপাশি সেনাবাহিনীর উপস্থিতি দ্রুত নৈরাজ্য প্রশমন করতে সাহায্য করে । এতে আরো বলা হয়, কিছু স্বার্থান্বেষী মহল কর্তৃক বিভিন্ন বিদেশি গণমাধ্যম ও সোশ্যাল মিডিয়াগুলোতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে মিথ্যা ও বিভ্রান্তিমূলক অপপ্রচার চালানো হচ্ছে । এর মূল উদ্দেশ্য দেশে ও বিদেশে সেনাবাহিনীর ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করা বলে অনুমিত । স্বার্থান্বেষী মহলের এ জাতীয় বিভ্রান্তিকর তথ্য ও সংবাদে বিভ্রান্ত না হওয়ার জন্য বাংলাদেশ সেনাবাহিনী দেশবাসীর সহযোগিতা কামনা করছে । জনগণের স্বার্থে ও রাষ্ট্রের যেকোনো প্রয়োজনে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী সবসময় জনগণের পাশে আছে এবং থাকবে । আইএসপিআর জানায়, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী দেশের সংবিধান সমুন্নত রেখে প্রচলিত আইনের আওতায় আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ, দেশবাসীর জানমালের নিরাপত্তা ও জনজীবনে স্বস্তি ফিরিয়ে আনতে অসামরিক প্রশাসনকে সহায়তায় কার্যক্রম পরিচালনা করছে ।

আদতে হয়েছেও তাই । কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে রক্তাক্ত দেশকে খুব সহজেই শান্ত করেছে সেনাবাহিনী । জনগণের জান- মালের রক্ষা হয়েছে । গণমাধ্যমে অনেক প্রতিবেদন হয়েছে যেখানে জনসাধারণ স্বস্তি প্রকাশ করেছে সেনাবাহিনীর প্রতি । সব সময়ই দেশের সাধারণ মানুষ সেনাবাহিনীর কার্যকলাপে খুশি । কিন্তু কিছু নাশকতাকারী গোষ্ঠী সেনাবাহিনীর সার্বিক কর্মকাণ্ডে নাখোশ । তারা দেশ ও দেশের জনগণের শত্রু । তারাই সর্বশেষ অপপ্রচার চালিয়েছে সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে । তাদের ইচ্ছা ছিল কোটা আন্দোলনের কোমলমতি শিক্ষার্থীর আড়ালে দেশকে অস্থির করে তোলা । তাই করেছে তারা । অনেক অনিশ্চয়তা ও রক্তপাত হয়েছে । তাদের আরো ইচ্ছা ছিল একটি গণতান্ত্রিক সরকার পড়ে যাক । সেনাবাহিনী ক্ষমতা নিয়ে নিক । তাই হয়নি । খুব বিচক্ষণতার সঙ্গে দেশপ্রেমের অনন্য নজির স্থাপন করে অতি অল্প সময়ে দেশ ও দেশের সম্পদ রক্ষা করে সেনাবাহিনী ।

তারপরও থেমে নেই অপতৎপরতা । সেনাবাহিনীর ইমেজকে হেয় করতে সাইবার দুনিয়ায় নিত্য নতুন ফন্দি আঁটা হচ্ছে । দুর্বৃত্তরা ফেসবুক, টুইটার( এক্স), ইউটিউবের মতো মাধ্যম ব্যবহার করছে সেনাবাহিনীর সুনাম ক্ষুণ্ন করতে । এসব কার্মকাণ্ডকে সরকারবিরোধী দেশি- বিদেশি ষড়যন্ত্রের ধারাবাহিকতা বলেই প্রতীয়মান হয় । এইসব দুর্বৃত্তরা স্বাধীনতাবিরোধী একটি চক্রের ঘনিষ্ট । তারা এখন বড়ই বেজার । কোনো অপপ্রচার কিংবা গুজবেই সেনাবাহিনীকে টলানো গেল না! আসলে সেনাবাহিনী কোনো ব্যাক্তি, গোষ্ঠী ও দলের নয় । তাই সেনাবাহিনীর ব্যাক্তি, গোষ্ঠী বা দলের জন্য কাজ করার কথাও না । সেনাবাহিনীর প্রতিটি সদস্য এদেশেরই নাগরিক । তারা জীবনের বিনিময়ে হলেও দেশ রক্ষার মহান ব্রতে দীপ্ত । রাষ্ট্রের গর্বিত সন্তান ।

বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর স্থল শাখা হচ্ছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী । এটি বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর সর্ববৃহৎ শাখা । প্রাথমিকভাবে সেনাবাহিনীর দায়িত্ব হচ্ছে দেশের ভূখণ্ডের অখণ্ডতা রক্ষাসহ সব ধরনের নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা সহায়তায় প্রয়োজনীয় শক্তি ও জনবল সরবরাহ করা । পাশাপাশি যে কোনো জাতীয় জরুরি অবস্থায় বেসামরিক প্রশাসনের সহায়তায় এগিয়ে আসতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী সাংবিধানিকভাবে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ।

লাল- সবুজ বাংলা গড়ার মহান ব্রত পালন করা সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে যেকোনো ষড়যন্ত্র দেশপ্রেমিক মাত্রই আঘাত করে । ওইসব ষড়যন্ত্র দেশপ্রেমিক জনতাকেই রুখতে হবে । বয়কট করতে হবে দেশকে অন্ধকারে নিয়ে যাওয়া গোষ্ঠীকে । এখনই সময় নতুন করে দেশপ্রেমে বলীয়ান হওয়ার । বাংলার মানুষ তাই হবে ।

লেখক : সাজ্জাদ হোসেন চিশতী,গণমাধ্যম কর্মী ও বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

ট্যাগস :

দেশ ও দেশের সম্পদ রক্ষায় অবিচল বাংলাদেশ সেনাবাহিনী

সংবাদ প্রকাশের সময় : ১২:০১:৫৯ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২ অগাস্ট ২০২৪

একটি দেশের স্বাধীনতা- সার্বভৌমত্ব রক্ষায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করে সেনাবাহিনী । দেশের অখণ্ডতা রক্ষা ও বহিঃশত্রুর হাত থেকে দেশের সুরক্ষা করা সেনাবাহিনীর কাজ । বাংলাদেশেরও রয়েছে একটি সুশৃঙ্খল সেনাবাহিনী । দেশমাতৃকা রক্ষায় অভাবনীয় ভূমিকা পালন করছে বাহিনীটি । এ ছাড়া মানবতার খাতিরে হেন কাজ নেই যা করছে না বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ।
সময়ে সময়ে দেশ ও দেশের মানুষের জরুরি প্রয়োজনে অকুতোভয় সংগ্রামীর মতো সেনাবাহিনীর প্রতিটি সদস্য ঝাপিয়ে পড়েছেন । সর্বশেষ কোটা সংস্কার আন্দোলনে অস্থির দেশের হাল ধরেছে বাহিনীটি । মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় কোনো রক্তপাত ও গুলি ছাড়া দেশকে শান্ত করেছে সেনাবাহিনী । দেশের পরিস্থিতি ভালো করার জন্য ত্বরিত কাজ করেছে সেনাবাহিনী । এর জন্য রাস্তায় বা জনসমাজে একটি লাঠিপেটাও করতে হয়নি বাহিনীর কোনো সদস্যকে ।

অতীতে নানা সময় এমন মহান দায়িত্ব পালন করেছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী । এ বাহিনীর সুনাম দেশের গণ্ডি পেরিয়ে পুরো বিশ্বে ছড়িয়ে । বিশ্বের অনেক দেশের সামাজিক সুরক্ষায় কাজ করেছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী । বিশ্বের বুকে শান্তির প্রতীক হিসেবে প্রশংসিত বাংলাদেশ সেনাবাহিনী । জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী মিশনে বাংলাদেশের সেনা সদস্যদের ভূমিকা সুনাম কুড়িয়েছে বিশ্বজুড়ে । বাংলাদেশ বর্তমানে শান্তিরক্ষী বাহিনীতে সর্বোচ্চ সংখ্যক সেনা প্রেরণকারী দেশ । ‘ শান্তিতে সংগ্রামে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী’- স্লোগানের মর্ম কাজেই প্রতিফলিত ।

বাংলাদেশের সৃষ্টিলগ্নের কথা স্মরণ করা যেতে পারে । মহান মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকার কথা এক অনন্য ইতিহাস । পরে দেশের সব প্রাকৃতিক দুর্যোগে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে । বাংলাদেশের গর্ব বলা চলে সুগঠিত ও সুশৃঙ্খল এই বাহিনীটি । দেশ ও জাতির কল্যাণে ভোটার তালিকা প্রণয়ন, জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরি ও বিতরণ, ভিজিডি কার্ড বিতরণ, টিআর- কাবিখার অর্থ সঠিক বণ্টন, পাহাড় ধস, দুর্যোগে কালভার্ট- সেতু- রাস্তা নির্মাণ, জলোচ্ছ্বাস- টর্নেডোর তাণ্ডব পরবর্তী সহায়তাসহ অনেক জরুরি প্রয়োজনে এগিয়ে এসেছে সেনাবাহিনী । এ ছাড়া দেশ গড়ার কাজে সেনাবাহিনীর অবদান অপরিসীম । বিভিন্ন জনগুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প যেমন- পদ্মাসেতু রেল সংযোগ, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, হাতিরঝিল উন্নয়ন প্রকল্প, মহিপাল ফ্লাইওভার, কক্সবাজার টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ, সীমান্ত সড়ক প্রকল্প, খুরুশকুল আশ্রয়ণ প্রকল্প বাস্তবায়ন করে দেশের উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখছে সেনাবাহিনী । কোভিড- ১৯ মহামারির সময়েও মানুষের জন্য কাজ করেছে সেনাবাহিনী ।

সেনাবাহিনী বরাবরই গণতন্ত্রের পক্ষে সাহসী ও তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে । বাংলাদেশের সেনাবাাহিনী অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে পেশাদার ও বিশ্বমানের । সেনাবাহিনীর প্রতিটি কাজ অর্থনৈতিক মূল্য রাখে । তা ছাড়া শান্তিরক্ষা মিশন থেকে অর্জিত আয় বাংলাদেশের তৃতীয় আয়ের খাত । তারপরও সেনাবাহিনী থেমে নেই । উদ্দাম এগিয়ে চলছে বাহিনীর প্রতিটি সদস্য নির্লোভ হয়ে । তাদের বিরুদ্ধেও অপপ্রচার হয় । দেশকে ও দেশের মানুষকে বিপথে ঠেলে দেওয়ার নীল নকশা এসব । সেনাবাহিনী কোনো লোভের বশবর্তী হয়ে কাজ করে না । দেশের প্রয়োজনে এবং কল্যাণে নির্ভীক সেনাবাহিনী । মনে রাখা প্রয়োজন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একটি ক্ষুধা- দারিদ্র্যমুক্ত উন্নত- সমৃদ্ধ রাষ্ট্র গঠনের পাশাপাশি একটি সুশৃঙ্খল, পেশাদার এবং শক্তিশালী সামরিকবাহিনী গড়ে তোলার স্বপ্ন দেখেছিলেন । তিনি ১৯৭৪ সালে একটি প্রতিরক্ষা নীতি প্রণয়ন করেছিলেন । তারপর পেরিয়েছে অনেক সময় । সেনাবাহিনী ইতোমধ্যে দেশের সব শাখা উন্নত ও সমৃদ্ধ করতে নিরলস কাজ করে যাচ্ছে ।
বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী শেখ হাসিনা একাধিকবার দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার পাশাপাশি দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নে সেনাবাহিনী গুরুত্বপূর্ণ অবদানের উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেছেন ।

কিন্তু তারাপরও থেমে নেই প্রোপাগান্ডা । কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে নতুন করে গর্বিত বাহিনীটির বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানো হয় । এরই প্রেক্ষিতে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিও প্রকাশ করে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর( আইএসপিআর) । গত ২৮ জুলাই গণমাধ্যমে পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, দেশব্যাপী ক্রম অবনতিশীল নিরাপত্তা পরিস্থিতিতে জনসাধারণের জানমাল ও সরকারি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোর সার্বিক নিরাপত্তা প্রদানে গত ২০ জুলাই ভোর থেকে নিজ নিজ দায়িত্বপূর্ণ এলাকায় সেনাবাহিনী মোতায়েন রয়েছে । আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে অন্যান্য বাহিনীর পাশাপাশি সেনাবাহিনীর উপস্থিতি দ্রুত নৈরাজ্য প্রশমন করতে সাহায্য করে । এতে আরো বলা হয়, কিছু স্বার্থান্বেষী মহল কর্তৃক বিভিন্ন বিদেশি গণমাধ্যম ও সোশ্যাল মিডিয়াগুলোতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে মিথ্যা ও বিভ্রান্তিমূলক অপপ্রচার চালানো হচ্ছে । এর মূল উদ্দেশ্য দেশে ও বিদেশে সেনাবাহিনীর ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করা বলে অনুমিত । স্বার্থান্বেষী মহলের এ জাতীয় বিভ্রান্তিকর তথ্য ও সংবাদে বিভ্রান্ত না হওয়ার জন্য বাংলাদেশ সেনাবাহিনী দেশবাসীর সহযোগিতা কামনা করছে । জনগণের স্বার্থে ও রাষ্ট্রের যেকোনো প্রয়োজনে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী সবসময় জনগণের পাশে আছে এবং থাকবে । আইএসপিআর জানায়, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী দেশের সংবিধান সমুন্নত রেখে প্রচলিত আইনের আওতায় আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ, দেশবাসীর জানমালের নিরাপত্তা ও জনজীবনে স্বস্তি ফিরিয়ে আনতে অসামরিক প্রশাসনকে সহায়তায় কার্যক্রম পরিচালনা করছে ।

আদতে হয়েছেও তাই । কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে রক্তাক্ত দেশকে খুব সহজেই শান্ত করেছে সেনাবাহিনী । জনগণের জান- মালের রক্ষা হয়েছে । গণমাধ্যমে অনেক প্রতিবেদন হয়েছে যেখানে জনসাধারণ স্বস্তি প্রকাশ করেছে সেনাবাহিনীর প্রতি । সব সময়ই দেশের সাধারণ মানুষ সেনাবাহিনীর কার্যকলাপে খুশি । কিন্তু কিছু নাশকতাকারী গোষ্ঠী সেনাবাহিনীর সার্বিক কর্মকাণ্ডে নাখোশ । তারা দেশ ও দেশের জনগণের শত্রু । তারাই সর্বশেষ অপপ্রচার চালিয়েছে সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে । তাদের ইচ্ছা ছিল কোটা আন্দোলনের কোমলমতি শিক্ষার্থীর আড়ালে দেশকে অস্থির করে তোলা । তাই করেছে তারা । অনেক অনিশ্চয়তা ও রক্তপাত হয়েছে । তাদের আরো ইচ্ছা ছিল একটি গণতান্ত্রিক সরকার পড়ে যাক । সেনাবাহিনী ক্ষমতা নিয়ে নিক । তাই হয়নি । খুব বিচক্ষণতার সঙ্গে দেশপ্রেমের অনন্য নজির স্থাপন করে অতি অল্প সময়ে দেশ ও দেশের সম্পদ রক্ষা করে সেনাবাহিনী ।

তারপরও থেমে নেই অপতৎপরতা । সেনাবাহিনীর ইমেজকে হেয় করতে সাইবার দুনিয়ায় নিত্য নতুন ফন্দি আঁটা হচ্ছে । দুর্বৃত্তরা ফেসবুক, টুইটার( এক্স), ইউটিউবের মতো মাধ্যম ব্যবহার করছে সেনাবাহিনীর সুনাম ক্ষুণ্ন করতে । এসব কার্মকাণ্ডকে সরকারবিরোধী দেশি- বিদেশি ষড়যন্ত্রের ধারাবাহিকতা বলেই প্রতীয়মান হয় । এইসব দুর্বৃত্তরা স্বাধীনতাবিরোধী একটি চক্রের ঘনিষ্ট । তারা এখন বড়ই বেজার । কোনো অপপ্রচার কিংবা গুজবেই সেনাবাহিনীকে টলানো গেল না! আসলে সেনাবাহিনী কোনো ব্যাক্তি, গোষ্ঠী ও দলের নয় । তাই সেনাবাহিনীর ব্যাক্তি, গোষ্ঠী বা দলের জন্য কাজ করার কথাও না । সেনাবাহিনীর প্রতিটি সদস্য এদেশেরই নাগরিক । তারা জীবনের বিনিময়ে হলেও দেশ রক্ষার মহান ব্রতে দীপ্ত । রাষ্ট্রের গর্বিত সন্তান ।

বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর স্থল শাখা হচ্ছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী । এটি বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর সর্ববৃহৎ শাখা । প্রাথমিকভাবে সেনাবাহিনীর দায়িত্ব হচ্ছে দেশের ভূখণ্ডের অখণ্ডতা রক্ষাসহ সব ধরনের নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা সহায়তায় প্রয়োজনীয় শক্তি ও জনবল সরবরাহ করা । পাশাপাশি যে কোনো জাতীয় জরুরি অবস্থায় বেসামরিক প্রশাসনের সহায়তায় এগিয়ে আসতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী সাংবিধানিকভাবে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ।

লাল- সবুজ বাংলা গড়ার মহান ব্রত পালন করা সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে যেকোনো ষড়যন্ত্র দেশপ্রেমিক মাত্রই আঘাত করে । ওইসব ষড়যন্ত্র দেশপ্রেমিক জনতাকেই রুখতে হবে । বয়কট করতে হবে দেশকে অন্ধকারে নিয়ে যাওয়া গোষ্ঠীকে । এখনই সময় নতুন করে দেশপ্রেমে বলীয়ান হওয়ার । বাংলার মানুষ তাই হবে ।

লেখক : সাজ্জাদ হোসেন চিশতী,গণমাধ্যম কর্মী ও বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান