সিলেটের বাজারে লাফিয়ে বাড়ছে চালের দাম
- সংবাদ প্রকাশের সময় : ১২:০৯:০৮ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৫ জুলাই ২০২৪ ৭২ বার পড়া হয়েছে
সিলেটে চালের বাজার লাগামহীন। লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে পাইকারি ও খুচরা বাজারে চালের দাম। বৃহত্তর সিলেটে ‘মরার উপর খাঁড়ার ঘা দেখা দিয়েছে। একদিকে লাখ লাখ মানুষ পানি বন্ধী, অন্যদিকে চালের দাম বৃদ্ধিতে সাধারণ মানুষ দিশেহার হয়ে পড়েছে।
কিন্তু কয়েক মৌসুমে দেশে চালের বাম্পার উৎপাদন হয়েছে। ২০২২-২৩ অর্থবছরে সর্বকালের রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে চালের উৎপাদন। সরকারের গুদামেও রেকর্ড পরিমাণ খাদ্য মজুত, আমদানি পরিস্থিতিও সন্তোষজনক। ডলার সংকটসহ নানা অর্থনৈতিক সমস্যার মধ্যে খাদ্য পরিস্থিতি নিয়ে কিছুটা হলেও স্বস্তিতে বাংলাদেশ। তবে ক্রেতাদের অতটা স্বস্তি মিলছে না। এত উৎপাদন ও মজুত থাকার পরও বাজারে চালের দাম কমছে না, বরং বাড়ছে। এতে চরম সংকটে পড়েছে সাধারণ মানুষ।
টিসিবির তথ্যমতে, সবশেষ বৃহস্পতিবার (৪ জুলাই) বাজারে মোটা চালের দাম কেজি প্রতি ২ টাকা বেড়েছে। তবে বাজারের চিত্র বলছে ভিন্ন তথ্য। টিসিবির এ দাম থেকেও চড়া দামে চাল বিক্রি হচ্ছে। খুচরা বাজারে প্রতি কেজি মোটা চাল এখন ৫৫ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। গত কয়েক মাস ধরে এ বাড়তি দামেই আটকে আছে মোটা চালের বাজার। এছাড়া প্রতি কেজি সরু চাল কিনতে গুনতে হচ্ছে ৭০ থেকে ৮৫ টাকা পর্যন্ত। চালের এই দাম নিম্নবিত্ত থেকে শুরু করে কারও জন্যই স্বস্তিদায়ক নয়। ফলে দেশে খাদ্যশস্য উৎপাদনে বাম্পার ফলনের সুফল সরাসরি পাচ্ছে না জনগণ।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের তথ্য বলছে, বাংলাদেশে সদ্য সমাপ্ত ২০২২-২৩ অর্থবছরে প্রায় ৪ কোটি ৯ লাখ টন চাল উৎপাদন হয়েছে। এর মধ্যে সবশেষ বোরো মৌসুমে উৎপাদন হয়েছে দুই কোটি ১০ লাখ টন। যা দেড় যুগের মধ্যে সর্বোচ্চ। বাংলাদেশে চাল উৎপাদনের এ ধারাবাহিকতা ধরে রাখারও পূর্বাভাস উঠে এসেছে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) গ্লোবাল ফুড আউটলুক প্রতিবেদনে।
সংস্থার সর্বশেষ প্রতিবেদন বলছে, এক বছরে বিশ্বে সবচেয়ে বেশি হারে চালের উৎপাদন বাড়তে যাচ্ছে বাংলাদেশে। বিদায়ী বছরের (২০২২-২৩) তুলনায় নতুন বছরে (২০২৩-২৪) উৎপাদন বাড়তে পারে এক দশমিক ৮ শতাংশ। পাশাপাশি মোট চাল উৎপাদনে চীন ও ভারতের পর তৃতীয় অবস্থান ধরে রেখেছে বাংলাদেশ।
এদিকে, খাদ্য মন্ত্রণালয় বলছে, বর্তমানে সরকারি গুদামে খাদ্যশস্য মজুতের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৯ লাখ ৪৬ হাজার ৪০৯ টন। এর মধ্যে চালের মজুত ১৬ লাখ ৮ হাজার ২৩৩ টন এবং ধান এক লাখ ২১ হাজার ৯২ টন, যা গত বছরের চেয়ে বেশি।
চলতি বছর বোরো মৌসুমে অভ্যন্তরীণ বাজার থেকে ১৬ লাখ ৫০ হাজার টন ধান-চাল কিনছে সরকার। এরমধ্যে ৯ লাখ ৮৬ হাজার ১২৪ টন ধান-চাল সংগ্রহ হয়েছে। (২০২১-২২) তুলনায় এবার ধানের ক্রয়মূল্য কেজিতে ৩ টাকা এবং সেদ্ধ চাল ৪ টাকা বেশি হওয়ায় সংগ্রহ কার্যক্রম ভালো চলছে।
গত ৭ মে ধান-চাল সংগ্রহ অভিযান শুরু হয়েছে। যা চলবে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত। এই সময়ের মধ্যে লক্ষ্যমাত্রার শতভাগ সফল হবে বলে আশা করছে খাদ্য অধিদপ্তর।
খাদ্য অধিদপ্তরের পরিচালক তপন কুমার দাস বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে দেশের উৎপাদন, সংগ্রহ ও মজুত রেকর্ড ছুঁয়েছে। ফলে চাল নিয়ে কোনো শঙ্কার কারণ নেই। বরং সবচেয়ে সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছি আমরা। নানা অর্থনৈতিক সমস্যার মধ্যে বাংলাদেশ এখন কিছুটা হলেও খাদ্য পরিস্থিতি নিয়ে স্বস্তিতে আছে।
রেকর্ড উৎপাদনের পর আরও ৫ লাখ টন চাল আমদানির প্রক্রিয়াও চালু রেখেছে সরকার। যা শিগগির দেশে এসে পৌঁছাবে। তাতে সরকারের মজুত পরিস্থিতি সর্বকালের রেকর্ড ভঙ্গ করবে। দুই বছর আগেও ২৬ লাখ ৫০ হাজার টন চাল আমদানি করতে হয়েছিল। কিন্তু এ বছর উৎপাদন ভালো হওয়ায় বাংলাদেশের আমদানির পরিমাণ কমে নেমেছে আট লাখ টনে। এতে কমেছে আমদানি নিভর্রতা, সাশ্রয় হচ্ছে বৈদেশিক মুদ্রা।
চাল নিয়ে সরকারের দেওয়া তথ্য-উপাত্তের সঙ্গে একমত নন চালকল মালিক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক লায়েক আলী। তিনি বলেন, চাহিদা ও সরবরাহে ঘাটতি থাকে বলেই অনেক সময় আমাদের (ব্যবসায়ীদের) চাল আমদানি করতে হচ্ছে। উদ্বৃত্ত থাকলে সেসব চাল যায় কোথায়? চড়া মূল্যের এ বাজারে নিশ্চয় কেউ বছরের পর বছর চাল মজুত রাখে না।
কিন্তু বিশেষ করে সিলেটের বাজারে ক্রেতাদের প্রশ্ন হচ্ছে যদি উৎপাদন এতো মজুত থাকে, দুর্গত এলাকায় অসহায় মানুষের জন্য চালের দাম কমার কথা, সেই জায়গায় বন্যার অজুহাত দেখিয়ে সিন্ডিকেট চক্র চালের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। প্রতি বার বন্যা ও বর্ষার মৌসুমে এ চক্র চালের দাম বাড়িয়ে লাখ লাখ মালিক হয়ে উঠে।