অবহেলায় নষ্ট সংরক্ষণে রাখা শতাধিক গাছের গোলাই
- সংবাদ প্রকাশের সময় : ০৯:১১:০০ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৩ জুলাই ২০২৪ ৯৫ বার পড়া হয়েছে
দিনাজপুরের ফুলবাড়ী জেলা পরিষদ ডাকবাংলো চত্বরে দীর্ঘদিন ধরে স্তুপাকারে রাখা নানা ধরনের গাছের গোলাই নষ্ট হচ্ছে। অবহেলা অযত্নে বৃষ্টিতে পঁচে পোকা মাকড় খেয়ে নষ্ট করছে গাছের গুঁড়িগুলো। সংরক্ষণে নেই কোন পদক্ষেপ, উদাসীনতায় সরকারি লাখ লাখ টাকার রাজস্ব গচ্ছা যাচ্ছে। এমনি অভিযোগ উঠেছে জেলা পরিষদ ডাকবাংলোর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে। তবে পরিত্যক্ত অবস্থায় থাকা গাছের গুঁড়ি গুলো টেন্ডারের মাধ্যমে বিক্রয় করার কথা থাকলেও কর্তৃপক্ষের কোন গুরুত্ব না দেওয়ায় এমন হচ্ছে বলে মনে করছেন সচেতন মহলের অনেকেই।
সরেজমিনে দিনাজপুরের ফুলবাড়ী জেলা পরিষদ ডাকবাংলোয় গিয়ে দেখা যায়, এ সসব গাছের গুঁড়িগুলো সম্প্রতি এবং অন্তত ২ বছর আগের ঝড়ে উপজেলার বিভিন্ন রাস্তা/এলাকায় ভেঙে গিয়েছিল কিংবা কেটে আনা হয়েছিল। পরে জেলা পরিষদ ডাকবাংলোয় সংরক্ষণের জন্য সংগ্রহ করে। খোলা আকাশের নিচে বাংলোর চত্বরজুড়ে ছড়িয়ে আছে গাছের গুড়ির ৭০/৮০টি লট,তারও বেশি হতে পারে। সেগুলোর উপর দিয়ে কোন প্রকার টিনের সেডও নেই। লতাপাতায় ছেয়ে আছে সংরক্ষণ করে রাখা লট (গুড়ি) গুলো। গাছের অনেক গুল বা গুঁড়িগুলো বৃষ্টির পানিতে পঁচে গেছে। ঝড়ে বা উপজেলার বিভিন্ন এলাকার রাস্তায় গাছ পড়ে ছিল সেই গাছগুলো গুল করে ফুলবাড়ী জেলা পরিষদ ডাকবাংলো চত্বরে সংরক্ষণ করে। এসকল গাছ নষ্ট যেন না হয় এজন্য টিনসেড করার কথা থাকলেও আছে খোলা আকাশের নিচে।
এনিয়ে জেলা পরিষদ ডাকবাংলো ফুলবাড়ীর কেয়ারটেকার মো. ইস্রাফিল হোসেন বলেন, এখানে উপজেলার এনট্রি কড়াই,শিশু, মেহগনি, আকাশমনি,আম, ইউক্যালিপটাসসহ বিভিন্ন জাতের গাছের ডুম রয়েছে। কেটে রাখা গাছের সংখ্যা কত তা তার জানা নেই। গাছের গুল এ বছর থেকে তিনবছর আগের কাটা। উপজেলার বিভিন্ন সড়কে এসব গাছ ছিল। গাছগুলো ঝড়ে ভেঙে পড়ে কিংবা রাস্তার প্রয়োজনে গাছগুলো কেটে এখানে রাখা হয়েছে। ১ শ’য়ের কিছু কম গুড়ি এখন আছে বলে তিনি জানান।টেন্ডার দিয়ে কিছু কাঠ বিক্রি করে দিয়েছে শফিকুল ইসলাম বাবু স্যার প্রথমে আসার পর।
স্থানীয় ফরহাদ হোসেন,বদরুজ্জামান, উত্তম দাস বলেন, চলতি বছরের ২০ এপ্রিল আনু মুহাম্মদ স্যারের একটি আনুষ্ঠান এখানে হয়েছিল ,তাতে করে দেখেছিলাম পরিষদের ডাকবাংলো চত্বরে শতাধিক গাছের গুড়ি রাখা আছে।এখন দেখি অনেক কমে গেছে।পঁচে নষ্ট হচ্ছে! দেখার কেউ নেই। কয়েক লাখ টাকার কাঠ পঁচে এভাবে নষ্ট হচ্ছে। অথচ কেউ একটি ডাল/গুড়ি সরাইয়ে ফেললে মামলা-হামলার অন্ত থাকতো না।এতো দেখছি ‘বজ্র আঁটুনি ফস্কা গেরো’। প্রশাসনের সংরক্ষতি চত্বরে গাছের গুল গুলো পঁচে এভাবে নষ্ট হচ্ছে, সেই খোঁজ কেউ রাখেনা দুঃকজনক!
স্থানীয় কয়েকজন ‘ছ’ মিল মালিক জানান, ডাকবাংলো চত্বরে অনেক মূল্যবান গাছের ডুম পঁচে গেছে। যা দিয়ে জ্বালানি খড়ি ছাড়া কাঠ বের হবে না আর। এগুলোর মূল্য এখন অর্ধেকও হবে কিনা সন্দেহ আছে।
সাবেক জেলা পরিষদ সদস্য কামরুজ্জামান শাহ কামরু বলেন, আমার আমলের কোনো কাঠ নেই ,সব টেন্ডারের মাধ্যমে বিক্রি করে দেয়া হয়েছে।
জেলা পরিষদ সদস্য শফিকুল ইসলাম বাবু বলেন, যে সব কাঠ নষ্ট হওয়ায় কথা বলছেন, তা আমার আমলের এসব কাঠ নয়।তবে কাঠ বিক্রির জন্য আমরা প্রথমে বন বিভাগকে চিঠি দেই। বন বিভাগের চিঠির জবাব পেলে জেলা প্রশাসককে টেন্ডারের জন্য চিঠি দেয়া হয়।চিঠির জবাব পেলে জেলা পরিষদ টেন্ডারের মাধ্যমে কাঠ বিক্রি করতে পারে।এই দীর্ঘ আমলাতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার জটিরতার কারণে অনেক সময় কাঠ নষ্ট হয় এবং অযথা সময় অতিবাহিত হয়। অনেক সময় কাঠ খোয়াও যায়।
বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মো. রফিকুজ্জামান শাহ বলেন, কাঠের মালিক যদি জেলা পরিষদ হয়ে থাকে, তাহলে তারাই রক্ষণাবেক্ষণ করবে। তারা যদি চায় গাছ কাটার সময় মূল্য নির্ধারণ করে দেয়ার জন্য, তাহলে সে কাজটি আমরা করে দেই।
ইউএনও মীর মো. আল কামাহ তমাল বলেন, এটা সম্পূর্ণ জেলা পরিষদের বিষয়। তারা যখন যেভাবে টেন্ডার দিবেন,সে অনুযায়ী কাঠ বিক্রি হবে। আমার এখানে কোনো কিছু করার নেই।তবে আমি দেখেছি অনেক কাঠ নষ্ট হচ্ছে।জেলা পরিষদকে জানানোর চেষ্টা করবো।
জেলা পরিষদ দিনাজপুরের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মোখলেছুর রহমান বাংলা টাইমসকে বলেন, ফুলবাড়ী জেলা পরিষদ ডাকবাংলোতে রাখা কাঠ বিক্রির জন্য কখনোই টেন্ডার করা হয়নি। কাঠ নষ্ট হওয়ার জন্য আমার পূর্ববর্তী কর্মকর্তারাই দায়ী।তবে আমি আসার পর টেন্ডার করার আগে মূল্য নির্ধারণের জন্য বন বিভাগকে চিঠি দেয়া হয়েছে।