আয়কর দিতে হবে রাজনৈতিক দলগুলোকে

- সংবাদ প্রকাশের সময় : ১১:০৩:০৩ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩ এপ্রিল ২০২৫ ২১ বার পড়া হয়েছে
দেশের নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলো করের আওতায় আসছে। নতুন আয়কর আইনে নিবন্ধিত দলগুলোকে আয়করের আওতায় আনার প্রস্তাব করেছে আয়কর আইন সংশোধনে গঠিত টাস্কফোর্স কমিটি। ফলে দলগুলোকে কারা অর্থায়ন করছে, অর্থের উৎস কী- এমন অনেক তথ্য যাচাই করা সম্ভব হবে।
রাজনৈতিক দলগুলোতে যারা ফান্ডিং করে থাকে তাদের বিষয়টি কখনো জনসম্মুখে প্রকাশ করা হয় না। এ নিয়ে নানা ধরনের আলোচনা-সমালোচনা রয়েছে। অনেকের ধারণা, রাজনৈতিক দলগুলোকে দেয়া ফান্ডের একটি বড় অংশই জোগান দেয় কালো টাকার মালিকরা।
২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পরে ২০১১ সালের অক্টোবর মাসে সরকারের নির্দেশে দেশের নিবন্ধিত দলগুলোকে শর্তহীনভাবে কর অব্যাহতি দেওয়া হয়। করের আওতামুক্ত হওয়ায় দলগুলোর আয়ের উৎস নিয়ে অন্ধকারে রয়েছে সরকারে রাজস্ব আদায়কারী প্রতিষ্ঠান জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের সব আয়কে শর্তহীনভাবে আয়কর থেকে অব্যাহতি দিয়ে একটি এসআরও জারি করে এনবিআর। সেই এসআরও রহিত করার পক্ষে মত দিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকারের গঠিত টাস্কফোর্স।
একই সঙ্গে টাস্কফোর্সের মতামতকে গ্রহণযোগ্য বলে মত প্রকাশ করেন দেশের অর্থনীতিবিদরাও। এতে করে দলগুলোর জবাবদিহিতার পথ উন্মুক্ত হবে।
বর্তমানে বাংলাদেশে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল এখন ৫৪টি। তার মধে ১০টি নিবন্ধন পেয়েছে ২০২৩, ২০২৪ ও ২০২৫ সালে।
তবে এক রিটে ২০১৩ সালের আগস্টে জামায়াতে ইসলামীর প্রতীক ও নিবন্ধন বাতিল করে আদালত। ২০১৮ সালের ৭ ডিসেম্বর নির্বাচন কশিমন এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপনও জারি করে।
এ বিষয়ে টাস্কফোর্সের এক সদস্য বলেন, আয়কর অব্যাহতি দেওয়ার কারণে রাজনৈতিক দলগুলোর আয়কর রিটার্ন জমা দিলেও সেগুলো যাচাই করার কোনো সুযোগ নেই। যেহেতু তাদের কোনো ধরনের আয়কর দিতে হয় না, সেজন্য আয়কর রিটার্নের তথ্যগুলো সঠিক কি না, সেটা যাচাইয়ের বাধ্যবাধকতা থাকে না। কিন্ত আয়কর অব্যাহতি না থাকলে সেটা এনবিআরের যাচাই-বাচাই করার সুযোগ তৈরি হবে।
গত বছরের ২৩ সেপ্টেম্বর আয়কর আইন, ২০২৩ সংস্কার নিয়ে সাত সদস্যের টাস্কফোর্স গঠন করা হয়। কর অঞ্চল-৬ এর কর কমিশনার ইখতিয়ার উদ্দিন মোহাম্মদ মামুনকে টাস্কফোর্সের আহ্বায়ক এবং কর অঞ্চল-১৪ এর পরিদর্শী রেঞ্জের যুগ্ম কর কমিশনার অমিত কুমার দাসকে সদস্য সচিব করা হয়।
অন্য সদস্যরা হলেন- এনবিআরের প্রথম সচিব (করবিধি) এম এম জিল্লুর রহমান, কর অঞ্চল-১৯ এর কর কমিশনার (চলতি দায়িত্ব) ড. লুৎফুর নাহার বেগম, বিসিএস কর একাডেমির পরিচালক হাফিজ আল আসাদ, কর আপিল অঞ্চল-২ এর যুগ্ম কর কমিশনার তাপস কুমার চন্দ এবং কর অঞ্চল-১৪ এর পরিদর্শী রেঞ্জের যুগ্ম কর কমিশনার মহিদুল ইসলাম চৌধুরী।
টাস্কফোর্স ইতোমধ্যে তাদের প্রস্তাব সুপারিশ আকারে এনবিআরের চেয়ারম্যানের কাছে জমা দিয়েছে। আয়কর অব্যাহতির সুযোগে আরও সুবিদা পাচ্ছে দলগুলো। বিশেষত নাগরিকের কাছে জবাবদিহিতা নেই। জনগণের কাছে রাজনৈতিক দলগুলোর জবাবদিহির রুদ্ধপথ উন্মুক্ত হবে।
একই সঙ্গে বৈষম্য কমাতে প্রধানমন্ত্রী, স্পিকার, মন্ত্রী, সংসদ সদস্য, প্রধান বিচারপতিসহ সুপ্রিম কোর্টের বিচারকদের আয়ের ক্ষেত্রে বিদ্যমান কর অব্যাহতির সুবিধা কমানোর সুপারিশ করেছে আয়কর সংস্কারে গঠিত টাস্কফোর্স কমিটি।
বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন সংবাদমাধ্যমকে লেন, রাজনৈতিক দলগুলোকে কে অনুদান দিচ্ছে, কত অনুদান দিচ্ছে তার কোনো স্বচ্ছতা নেই। রাজনৈতিক দলগুলো সুশাসন, জবাবদিহির কথা বলে। সে কারণে দলগুলোর আয়-ব্যয়ের মধ্যে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা জরুরি।
উল্লেখ্য, আগামী ২০ এপ্রিল নতুন রাজনৈতিক দল নিবন্ধনের শেষ সময় বেঁধে দেয়া হয়েছে। এবার নতুন দল হিসেবে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নিবন্ধনের বিষয়টি আলোচনার কেন্দ্রে রয়েছে।