ঢাকা ০৮:৪৮ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ০১ এপ্রিল ২০২৫, ১৮ চৈত্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কথিত ‘ধর্ষণ চেষ্টা’র অভিযোগে মারধরে আহত সিরাজুল মারা গেছে

শহিদুল ইসলাম দইচ, যশোর
  • সংবাদ প্রকাশের সময় : ১১:৩০:০০ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৯ মার্চ ২০২৫ ৬১ বার পড়া হয়েছে
বাংলা টাইমস অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

যশোরের পল্লীতে কথিত ‘ধর্ষণ চেষ্টা’র অভিযোগে মারধর ও চোখ উৎপাটনের শিকার সিরাজুল ইসলাম কুটি (৪৫) নামে এক ব্যক্তি ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। নিহতের ছেলে কলেজছাত্র মোহাম্মদ হাসান শনিবার (২৯ মার্চ) রাত ১০ টার দিকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

শনিবার দুপুরে যশোর সদরের বাহাদুরপুর জেস গার্ডেন পার্ক এলাকায় এ ঘটনা ঘটেছে। পুলিশ বলছে, এই ঘটনার পক্ষে- বিপক্ষে নানা কথাবার্তা চলছে। বিষয়টি পুলিশ তদন্ত করছে, প্রকৃত কারণ উদঘাটন ছাড়া কোনও বক্তব্য দেয়া যাচ্ছে না।

গুরুতর আহত সিরাজুল ইসলাম কুটিকে (৪৫) উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় রেফার করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইফতারের পর তিনি মারা যান।

সিরাজুল ইসলাম কুটি যশোর শহরের বারান্দীপাড়া কদমতলা এলাকার রবিউল ইসলামের ছেলে।

ঘটনার সাথে জড়িত হাসি বেগম সম্পর্কে সিরাজুল ইসলাম কুটির বেয়াইন। তিনি হাসি বেগমের মেঝ মেয়ের শ্বশুর। মারধর ও হামলার বিষয়ে উভয়ের পরিবার ভিন্ন ভিন্ন বক্তব্য দিয়েছেন। এ ঘটনায় বেয়াইন হাসি বেগমকে পুলিশি হেফাজতে নেয়া হয়েছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, শনিবার দুপুরে সিরাজুল তার বেয়াইন হাসি বেগমের বাড়িতে যান। এরপর হঠাৎ ওই বাড়ি থেকে মারামারি ও কান্নাকাটির শব্দ পাওয়া যায়। পরে প্রতিবেশীরা সেখানে গিয়ে দেখেন, একে অন্যকে লোহার পাইপ দিয়ে মারপিট করছে। এর মধ্যে সিরাজুলের এক চোখ ক্ষতবিক্ষত দেখতে পান। এছাড়া হাসির শরীরের বিভিন্ন স্থানেও জখমের দাগ দেখা যায়। পরে স্থানীয়রা তাদের নিবৃত করেন এবং গুরুতর অবস্থায় সিরাজুলকে উদ্ধার করে যশোর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করে দেয়। সেখানে শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক নিজাম উদ্দিন উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ঢাকায় রেফার করেন। আর হাসি বেগম নিজেই পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করেন।

এদিকে, হাসপাতালে সিরাজুল ও তার স্বজনরা জানান, পূর্বশত্রুতার জের ধরে হাসি বেগম, তার মেয়ে মনিকা এবং তার আরেক জামাতা মনিরুল মিলে সিরাজুলকে শাবল দিয়ে মারপিট করেন। এছাড়া চোখেও গুরুতর জখম করেন।

অন্যদিকে, হাসি বেগমের অভিযোগ, সিরাজুল দীর্ঘদিন ধরে তাকে কুপ্রস্তাব দিয়ে আসছিলেন। তার প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় ক্ষিপ্ত হয়ে তাকে ধর্ষণ চেষ্টা করেন। এ সময় তিনি আত্মরক্ষা করতে গেলে তার হাত সিরাজুলের চোখে লাগে। এছাড়া তাকেও মারপিট করা হয়েছে বলে তিনি পাল্টা অভিযোগ করেন।

এ বিষয়ে হাসপাতালে চক্ষু বিশেষজ্ঞ ডাক্তার হিমাদ্রী শেখর সরকার জানিয়েছেন, আহতের দুটি চোখ আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছে। যা এখানে সেবা দেওয়া সম্ভব না। তাই উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় রেফার করা হয়েছে।

যশোর কোতোয়ালি থানার ওসি আবুল হাসনাত বাংলা টাইমসকে বলেন, মারামারির খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। কী কারণে মারামারির ঘটনা ঘটেছে, পুলিশ সেই বিষয়টি তদন্ত করছে।‌ এখন (রাত ৯টা) পর্যন্ত ঘটনার কোনও কারণ বের করা যায়নি। সেকারণে কোনও বক্তব্য দেয়া যাচ্ছে না। হাসি বেগমকে পুলিশি হেফাজতে নেওয়া হয়েছে।

নিহতের ছোট ভাই মফিজুল ইসলাম ইমন বলেন, আমার ভাইকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। আগামীকাল রবিবার সকালে প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে মূল ঘটনা সাংবাদিকদের জানানো হবে।

এদিকে, যশোর কোতোয়ালি থানার ওসিকে উদ্ধৃত করে জেলা পুলিশের মুখপাত্র অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নূর-ই আলম সিদ্দিকী রাতে আহত সিরাজুল ইসলাম কুটির মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

ট্যাগস :

কথিত ‘ধর্ষণ চেষ্টা’র অভিযোগে মারধরে আহত সিরাজুল মারা গেছে

সংবাদ প্রকাশের সময় : ১১:৩০:০০ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৯ মার্চ ২০২৫

যশোরের পল্লীতে কথিত ‘ধর্ষণ চেষ্টা’র অভিযোগে মারধর ও চোখ উৎপাটনের শিকার সিরাজুল ইসলাম কুটি (৪৫) নামে এক ব্যক্তি ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। নিহতের ছেলে কলেজছাত্র মোহাম্মদ হাসান শনিবার (২৯ মার্চ) রাত ১০ টার দিকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

শনিবার দুপুরে যশোর সদরের বাহাদুরপুর জেস গার্ডেন পার্ক এলাকায় এ ঘটনা ঘটেছে। পুলিশ বলছে, এই ঘটনার পক্ষে- বিপক্ষে নানা কথাবার্তা চলছে। বিষয়টি পুলিশ তদন্ত করছে, প্রকৃত কারণ উদঘাটন ছাড়া কোনও বক্তব্য দেয়া যাচ্ছে না।

গুরুতর আহত সিরাজুল ইসলাম কুটিকে (৪৫) উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় রেফার করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইফতারের পর তিনি মারা যান।

সিরাজুল ইসলাম কুটি যশোর শহরের বারান্দীপাড়া কদমতলা এলাকার রবিউল ইসলামের ছেলে।

ঘটনার সাথে জড়িত হাসি বেগম সম্পর্কে সিরাজুল ইসলাম কুটির বেয়াইন। তিনি হাসি বেগমের মেঝ মেয়ের শ্বশুর। মারধর ও হামলার বিষয়ে উভয়ের পরিবার ভিন্ন ভিন্ন বক্তব্য দিয়েছেন। এ ঘটনায় বেয়াইন হাসি বেগমকে পুলিশি হেফাজতে নেয়া হয়েছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, শনিবার দুপুরে সিরাজুল তার বেয়াইন হাসি বেগমের বাড়িতে যান। এরপর হঠাৎ ওই বাড়ি থেকে মারামারি ও কান্নাকাটির শব্দ পাওয়া যায়। পরে প্রতিবেশীরা সেখানে গিয়ে দেখেন, একে অন্যকে লোহার পাইপ দিয়ে মারপিট করছে। এর মধ্যে সিরাজুলের এক চোখ ক্ষতবিক্ষত দেখতে পান। এছাড়া হাসির শরীরের বিভিন্ন স্থানেও জখমের দাগ দেখা যায়। পরে স্থানীয়রা তাদের নিবৃত করেন এবং গুরুতর অবস্থায় সিরাজুলকে উদ্ধার করে যশোর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করে দেয়। সেখানে শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক নিজাম উদ্দিন উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ঢাকায় রেফার করেন। আর হাসি বেগম নিজেই পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করেন।

এদিকে, হাসপাতালে সিরাজুল ও তার স্বজনরা জানান, পূর্বশত্রুতার জের ধরে হাসি বেগম, তার মেয়ে মনিকা এবং তার আরেক জামাতা মনিরুল মিলে সিরাজুলকে শাবল দিয়ে মারপিট করেন। এছাড়া চোখেও গুরুতর জখম করেন।

অন্যদিকে, হাসি বেগমের অভিযোগ, সিরাজুল দীর্ঘদিন ধরে তাকে কুপ্রস্তাব দিয়ে আসছিলেন। তার প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় ক্ষিপ্ত হয়ে তাকে ধর্ষণ চেষ্টা করেন। এ সময় তিনি আত্মরক্ষা করতে গেলে তার হাত সিরাজুলের চোখে লাগে। এছাড়া তাকেও মারপিট করা হয়েছে বলে তিনি পাল্টা অভিযোগ করেন।

এ বিষয়ে হাসপাতালে চক্ষু বিশেষজ্ঞ ডাক্তার হিমাদ্রী শেখর সরকার জানিয়েছেন, আহতের দুটি চোখ আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছে। যা এখানে সেবা দেওয়া সম্ভব না। তাই উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় রেফার করা হয়েছে।

যশোর কোতোয়ালি থানার ওসি আবুল হাসনাত বাংলা টাইমসকে বলেন, মারামারির খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। কী কারণে মারামারির ঘটনা ঘটেছে, পুলিশ সেই বিষয়টি তদন্ত করছে।‌ এখন (রাত ৯টা) পর্যন্ত ঘটনার কোনও কারণ বের করা যায়নি। সেকারণে কোনও বক্তব্য দেয়া যাচ্ছে না। হাসি বেগমকে পুলিশি হেফাজতে নেওয়া হয়েছে।

নিহতের ছোট ভাই মফিজুল ইসলাম ইমন বলেন, আমার ভাইকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। আগামীকাল রবিবার সকালে প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে মূল ঘটনা সাংবাদিকদের জানানো হবে।

এদিকে, যশোর কোতোয়ালি থানার ওসিকে উদ্ধৃত করে জেলা পুলিশের মুখপাত্র অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নূর-ই আলম সিদ্দিকী রাতে আহত সিরাজুল ইসলাম কুটির মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।