ঢাকা ০৬:৩৯ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৩১ মার্চ ২০২৫, ১৭ চৈত্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

গৃহযুদ্ধে বিপর্যস্ত মিয়ানমারে ‘মৃত্যু উপত্যকা’, দেখুন ছবিতে

বাংলা টাইমস ডেস্ক
  • সংবাদ প্রকাশের সময় : ১১:১৭:৩০ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৮ মার্চ ২০২৫ ১৮ বার পড়া হয়েছে
বাংলা টাইমস অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

এক দিনে পর পর ছ’বার কেঁপে উঠেছে মিয়ানমার। শুক্রবার (২৮ মার্চ) প্রতিবেশী সেই দেশে সবচেয়ে জোরালো ভূমিকম্পটির মাত্রা ছিল রিখটার স্কেলে ৭.৭। আর তার জেরেই প্রায় দুমড়েমুচড়ে গেছে দেশের বড় অংশ। সেখানে মৃতের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে ১৪৪। আহত হয়েছেন অন্তত ৭৩২ জন।

দেশটির প্রশাসন জানিয়েছে, মৃতের সংখ্যা আরও বৃদ্ধি পেতে পারে। দেশে ‘জরুরি অবস্থা’ ঘোষণা করেছেন জুন্টা প্রধান মিন আং হলাইং। সকল দেশ, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের কাছে সাহায্য চাইছেন তিনি। কম্পনের আঁচ পড়েছে তাইল্যান্ডেও। সেখানে একটি নির্মীয়মাণ বহুতল ভেঙে আটকে পড়েন ১১৭ জন। মৃত্যু হয়েছে আট জনের। তবে মায়ানমারে বিপর্যয় অনেক বেশি।

গৃহযুদ্ধে বিপর্যস্ত মিয়ানমার। তার মধ্যে এই ভূমিকম্প বিপত্তি বৃদ্ধি করেছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে রাজধানী নেপিদ। ন্যাশনাল সেন্টার ফর সিসমোলজি জানিয়েছে, প্রথম কম্পনটি হয় শুক্রবার সময় সকাল ১১টা ৫০ মিনিটে। প্রথমটির উৎস মিয়ানমারের বর্মার ১২ কিলোমিটার উত্তরে অবস্থিত।

তারপর আরও পাঁচটি ভূমিকম্প হয়েছে মিয়ানমারে। চলেছে আফটারশক। তার জেরে তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়েছে মিয়ানমারের বিস্তৃত এলাকার বাড়িঘর, স্মৃতিসৌধ, এমনকি, মসজিদও। উপড়ে গেছে শয়ে শয়ে গাছ। ফাটল ধরেছে রাস্তায়, সেতুতে। হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়েছে বিদ্যুতের খুঁটি, মোবাইলের টাওয়ার। বহু এলাকা যোগাযোগবিচ্ছিন্ন। তবে গৃহযুদ্ধে বিধ্বস্ত মিয়ানমারে ক্ষয়ক্ষতির ছবি এখনও স্পষ্ট নয় বলেই মনে করা হচ্ছে। বহু এলাকায় কম্পনের প্রভাব কতটা পড়েছে, সে বিষয়ে কোনও খবরই নেই প্রশাসনের কাছে।

আমেরিকার সরকারি সংস্থার হুঁশিয়ারি, মিয়ানমারে মৃত্যুর সংখ্যা হাজার ছাড়িয়ে যেতে পারে। কম্পনের মাত্রা দেখেই এমনটা মনে করছে তারা। আর্থিক ক্ষতির পরিমাণও হতে চলেছে বিপুল। স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন রেড ক্রসের আশঙ্কা, মিয়ানমারের বড় বাঁধগুলিতেও কম্পনের জেরে ফাটল ধরতে পারে। সে ক্ষেত্রে বন্যার আশঙ্কাও থাকবে।

সংবাদ সংস্থা এএফপি জানিয়েছে, মিয়ানমারের রাজধানী নেপিদের হাসপাতালগুলিতে উপচে পড়েছে ভিড়। একটি ভিডিওতে দেখা গেছে, এক হাসপাতালের জরুরি বিভাগই ভূমিকম্পের জেরে ভেঙে পড়েছে ( বাংলা টাইমস ডটকম সেই ভিডিয়োর সত্যতা যাচাই করেনি)। চিকিৎসকেরা হাসপাতালের বাইরে এসে রোগীদের চিকিৎসা করছেন।

মিয়ানমারে ভূমিকম্পের উৎসস্থল থেকে মান্দালয় শহরের দূরত্ব মাত্র ১৭.২ কিলোমিটার। ওই শহরে ভেঙে পড়েছে একের পর এক বাড়ি। সেখানে এখনও আটকে রয়েছেন বহু মানুষ। ইর্‌রাওয়াড্ডি নদীর উপর ভেঙে পড়েছে ৯০ বছরের পুরনো আভা সেতু। ইয়াঙ্গন-মান্দালয় এক্সপ্রেসওয়েতেও একটি সেতু এবং একটি রেল সেতু ভেঙে পড়েছে। মান্দালয়ের ঐতিহাসিক প্রাসাদও ভেঙে পড়েছে।

রেড ক্রসের আধিকারিক মারি মানরিক জানিয়েছেন, মিয়ানমারে ভূমিকম্পে সড়ক, সেতু, সরকারি ভবনের মতো পরিকাঠামো ভেঙে পড়েছে। তাদের উদ্বেগ এখন মিয়নামারের বাঁধগুলি নিয়ে। সেগুলি ভেঙে পড়লে বিপর্যয় আরও বৃদ্ধি পেতে পারে। সে দেশের সরকার সব দেশের কাছে সাহায্য প্রার্থনা করেছে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী জানিয়েছেন, প্রয়োজনে যে কোনও রকম সাহায্য করতে প্রস্তত নয়াদিল্লি।

শুক্রবার কম্পন অনুভূত হয়েছে উত্তর তাইল্যান্ডেও। রাজধানী ব্যাঙ্ককে মেট্রো এবং রেল পরিষেবা বন্ধ রাখা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী পায়েটংটার্ন শিনাবাত্রার শুক্রবার ফুকেতে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সেই সরকারি সফর তিনি বাতিল করে প্রশাসনিক কর্তাদের নিয়ে জরুরি বৈঠকে বসেন। তার পরেই তাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাঙ্ককে ‘জরুরি অবস্থা’ ঘোষণা করা হয়। ওই শহরে একটি নির্মীয়মান বাড়ি ভেঙে পড়ে আট জনের মৃত্যু হয়েছে।

চিনের ইউনান প্রদেশেও অনুভূত হয়েছে কম্পন। চিনের ভূমিকম্প পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র জানিয়েছে, কম্পনের মাত্রা ছিল ৭.৯। তবে চিনে কেউ হতাহত হননি। শুক্রবার কম্পন অনুভূত হয়েছে কলকাতা, মণিপুরের একাংশে। সেখানে কম্পনের মাত্রা ছিল ৪.৪। বাংলাদেশের ঢাকা, চট্টগ্রামও ভূমিকম্পে কেঁপেছে। আফটারশকের জেরে কেঁপেছে ভিয়েতনামও।

ভূমিকম্প অবশ্য মায়ানমারে নতুন নয়। ১৯৩০ থেকে ১৯৫৬ সালের মধ্যে সে দেশে সাত বা তার বেশি মাত্রার ছ’টি ভূমিকম্প হয়েছিল। মিয়ানমারের উত্তর থেকে দক্ষিণে বিস্তৃত রয়েছে সাগাইং চ্যুতিরেখা। প্রায়ই ভূ-আন্দোলনের কারণে ভূমিকম্প হয় ভারতের এই পড়শি দেশে।

শুক্রবারের (২৮ মার্চ) এই ভূমিকম্প প্রসঙ্গে ভারতের ন্যাশনাল সেন্টার ফর সিসমোলজি (এনসিএস) এর পরিচালক ডঃ ওপি মিশ্র বলেন, সাগাইং ফল্ট মিয়ানমারের দীর্ঘতম ফল্ট। অতীতেও একইমাত্রার ভূমিকম্প বহুবার হয়েছে এই অঞ্চলে।

তিনি আরও বলেন, শুক্রবার প্রথম ভূমিকম্পটির পর একাধিক আফটারশক হয়েছে। ঠিক কতমাত্রার কতগুলি আফটারশক হয়েছে তা ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই জানতে পারব আমরা।

মিয়ানমারের ভূমিকম্পের জেরে থাইল্যান্ডের ব্যাংককে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি প্রসঙ্গে মিশ্র বলেন, দুই প্লেটের মধ্যবর্তী সাগাইং ফল্টের ফাটল অগ্রসর হয়েছে মিয়ানমার থেকে ব্যাংককের দিকে। ব্যাংককে রয়েছে পলি বেল্ট। তুলনামূলক এখানকার মাটি দুর্বল হওয়ার কারণে বড় মাত্রার ভূমিকম্প সহ্য করতে পারেনি এখানকার ভবনগুলি।

সাগাইং ফল্টের কারণে এখানে এর আগেই যে বড়মাত্রার ভূমিকম্প হয়েছে সেকথা স্মরণ করিয়ে ডঃ মিশ্র বলেন, ১৯৪৬ সালে এই অঞ্চলে ৭.৭ মাত্রার একটি ভূমিকম্প হয়েছিল। ২০১২ সালেও ৬.৮ মাত্রার ভূমিকম্প হয়। ফলে এই অঞ্চল যে অত্যন্ত স্পর্শকাতর তা আলাদা করে বলার অপেক্ষা রাখে না।

বিজ্ঞানীদের দাবি অনুযায়ী, প্রতি বছর ১১ মিলিমিটার থেকে ১৮ মিলিমিটার পর্যন্ত স্থানান্তরিত হয় এই প্লেট দুটি। তাই সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মাটির গভীরে প্রবল চাপ তৈরি হয়। যার প্রভাবে কেঁপে ওঠে সাগাইং ফল্টের অঞ্চল। অদূর ভবিষ্যতে এই অঞ্চলে আরও বড় ভূমিকম্প হওয়ার সম্ভাবনাও এড়িয়ে যাচ্ছেন না বিজ্ঞানীরা।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

ট্যাগস :

গৃহযুদ্ধে বিপর্যস্ত মিয়ানমারে ‘মৃত্যু উপত্যকা’, দেখুন ছবিতে

সংবাদ প্রকাশের সময় : ১১:১৭:৩০ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৮ মার্চ ২০২৫

এক দিনে পর পর ছ’বার কেঁপে উঠেছে মিয়ানমার। শুক্রবার (২৮ মার্চ) প্রতিবেশী সেই দেশে সবচেয়ে জোরালো ভূমিকম্পটির মাত্রা ছিল রিখটার স্কেলে ৭.৭। আর তার জেরেই প্রায় দুমড়েমুচড়ে গেছে দেশের বড় অংশ। সেখানে মৃতের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে ১৪৪। আহত হয়েছেন অন্তত ৭৩২ জন।

দেশটির প্রশাসন জানিয়েছে, মৃতের সংখ্যা আরও বৃদ্ধি পেতে পারে। দেশে ‘জরুরি অবস্থা’ ঘোষণা করেছেন জুন্টা প্রধান মিন আং হলাইং। সকল দেশ, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের কাছে সাহায্য চাইছেন তিনি। কম্পনের আঁচ পড়েছে তাইল্যান্ডেও। সেখানে একটি নির্মীয়মাণ বহুতল ভেঙে আটকে পড়েন ১১৭ জন। মৃত্যু হয়েছে আট জনের। তবে মায়ানমারে বিপর্যয় অনেক বেশি।

গৃহযুদ্ধে বিপর্যস্ত মিয়ানমার। তার মধ্যে এই ভূমিকম্প বিপত্তি বৃদ্ধি করেছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে রাজধানী নেপিদ। ন্যাশনাল সেন্টার ফর সিসমোলজি জানিয়েছে, প্রথম কম্পনটি হয় শুক্রবার সময় সকাল ১১টা ৫০ মিনিটে। প্রথমটির উৎস মিয়ানমারের বর্মার ১২ কিলোমিটার উত্তরে অবস্থিত।

তারপর আরও পাঁচটি ভূমিকম্প হয়েছে মিয়ানমারে। চলেছে আফটারশক। তার জেরে তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়েছে মিয়ানমারের বিস্তৃত এলাকার বাড়িঘর, স্মৃতিসৌধ, এমনকি, মসজিদও। উপড়ে গেছে শয়ে শয়ে গাছ। ফাটল ধরেছে রাস্তায়, সেতুতে। হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়েছে বিদ্যুতের খুঁটি, মোবাইলের টাওয়ার। বহু এলাকা যোগাযোগবিচ্ছিন্ন। তবে গৃহযুদ্ধে বিধ্বস্ত মিয়ানমারে ক্ষয়ক্ষতির ছবি এখনও স্পষ্ট নয় বলেই মনে করা হচ্ছে। বহু এলাকায় কম্পনের প্রভাব কতটা পড়েছে, সে বিষয়ে কোনও খবরই নেই প্রশাসনের কাছে।

আমেরিকার সরকারি সংস্থার হুঁশিয়ারি, মিয়ানমারে মৃত্যুর সংখ্যা হাজার ছাড়িয়ে যেতে পারে। কম্পনের মাত্রা দেখেই এমনটা মনে করছে তারা। আর্থিক ক্ষতির পরিমাণও হতে চলেছে বিপুল। স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন রেড ক্রসের আশঙ্কা, মিয়ানমারের বড় বাঁধগুলিতেও কম্পনের জেরে ফাটল ধরতে পারে। সে ক্ষেত্রে বন্যার আশঙ্কাও থাকবে।

সংবাদ সংস্থা এএফপি জানিয়েছে, মিয়ানমারের রাজধানী নেপিদের হাসপাতালগুলিতে উপচে পড়েছে ভিড়। একটি ভিডিওতে দেখা গেছে, এক হাসপাতালের জরুরি বিভাগই ভূমিকম্পের জেরে ভেঙে পড়েছে ( বাংলা টাইমস ডটকম সেই ভিডিয়োর সত্যতা যাচাই করেনি)। চিকিৎসকেরা হাসপাতালের বাইরে এসে রোগীদের চিকিৎসা করছেন।

মিয়ানমারে ভূমিকম্পের উৎসস্থল থেকে মান্দালয় শহরের দূরত্ব মাত্র ১৭.২ কিলোমিটার। ওই শহরে ভেঙে পড়েছে একের পর এক বাড়ি। সেখানে এখনও আটকে রয়েছেন বহু মানুষ। ইর্‌রাওয়াড্ডি নদীর উপর ভেঙে পড়েছে ৯০ বছরের পুরনো আভা সেতু। ইয়াঙ্গন-মান্দালয় এক্সপ্রেসওয়েতেও একটি সেতু এবং একটি রেল সেতু ভেঙে পড়েছে। মান্দালয়ের ঐতিহাসিক প্রাসাদও ভেঙে পড়েছে।

রেড ক্রসের আধিকারিক মারি মানরিক জানিয়েছেন, মিয়ানমারে ভূমিকম্পে সড়ক, সেতু, সরকারি ভবনের মতো পরিকাঠামো ভেঙে পড়েছে। তাদের উদ্বেগ এখন মিয়নামারের বাঁধগুলি নিয়ে। সেগুলি ভেঙে পড়লে বিপর্যয় আরও বৃদ্ধি পেতে পারে। সে দেশের সরকার সব দেশের কাছে সাহায্য প্রার্থনা করেছে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী জানিয়েছেন, প্রয়োজনে যে কোনও রকম সাহায্য করতে প্রস্তত নয়াদিল্লি।

শুক্রবার কম্পন অনুভূত হয়েছে উত্তর তাইল্যান্ডেও। রাজধানী ব্যাঙ্ককে মেট্রো এবং রেল পরিষেবা বন্ধ রাখা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী পায়েটংটার্ন শিনাবাত্রার শুক্রবার ফুকেতে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সেই সরকারি সফর তিনি বাতিল করে প্রশাসনিক কর্তাদের নিয়ে জরুরি বৈঠকে বসেন। তার পরেই তাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাঙ্ককে ‘জরুরি অবস্থা’ ঘোষণা করা হয়। ওই শহরে একটি নির্মীয়মান বাড়ি ভেঙে পড়ে আট জনের মৃত্যু হয়েছে।

চিনের ইউনান প্রদেশেও অনুভূত হয়েছে কম্পন। চিনের ভূমিকম্প পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র জানিয়েছে, কম্পনের মাত্রা ছিল ৭.৯। তবে চিনে কেউ হতাহত হননি। শুক্রবার কম্পন অনুভূত হয়েছে কলকাতা, মণিপুরের একাংশে। সেখানে কম্পনের মাত্রা ছিল ৪.৪। বাংলাদেশের ঢাকা, চট্টগ্রামও ভূমিকম্পে কেঁপেছে। আফটারশকের জেরে কেঁপেছে ভিয়েতনামও।

ভূমিকম্প অবশ্য মায়ানমারে নতুন নয়। ১৯৩০ থেকে ১৯৫৬ সালের মধ্যে সে দেশে সাত বা তার বেশি মাত্রার ছ’টি ভূমিকম্প হয়েছিল। মিয়ানমারের উত্তর থেকে দক্ষিণে বিস্তৃত রয়েছে সাগাইং চ্যুতিরেখা। প্রায়ই ভূ-আন্দোলনের কারণে ভূমিকম্প হয় ভারতের এই পড়শি দেশে।

শুক্রবারের (২৮ মার্চ) এই ভূমিকম্প প্রসঙ্গে ভারতের ন্যাশনাল সেন্টার ফর সিসমোলজি (এনসিএস) এর পরিচালক ডঃ ওপি মিশ্র বলেন, সাগাইং ফল্ট মিয়ানমারের দীর্ঘতম ফল্ট। অতীতেও একইমাত্রার ভূমিকম্প বহুবার হয়েছে এই অঞ্চলে।

তিনি আরও বলেন, শুক্রবার প্রথম ভূমিকম্পটির পর একাধিক আফটারশক হয়েছে। ঠিক কতমাত্রার কতগুলি আফটারশক হয়েছে তা ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই জানতে পারব আমরা।

মিয়ানমারের ভূমিকম্পের জেরে থাইল্যান্ডের ব্যাংককে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি প্রসঙ্গে মিশ্র বলেন, দুই প্লেটের মধ্যবর্তী সাগাইং ফল্টের ফাটল অগ্রসর হয়েছে মিয়ানমার থেকে ব্যাংককের দিকে। ব্যাংককে রয়েছে পলি বেল্ট। তুলনামূলক এখানকার মাটি দুর্বল হওয়ার কারণে বড় মাত্রার ভূমিকম্প সহ্য করতে পারেনি এখানকার ভবনগুলি।

সাগাইং ফল্টের কারণে এখানে এর আগেই যে বড়মাত্রার ভূমিকম্প হয়েছে সেকথা স্মরণ করিয়ে ডঃ মিশ্র বলেন, ১৯৪৬ সালে এই অঞ্চলে ৭.৭ মাত্রার একটি ভূমিকম্প হয়েছিল। ২০১২ সালেও ৬.৮ মাত্রার ভূমিকম্প হয়। ফলে এই অঞ্চল যে অত্যন্ত স্পর্শকাতর তা আলাদা করে বলার অপেক্ষা রাখে না।

বিজ্ঞানীদের দাবি অনুযায়ী, প্রতি বছর ১১ মিলিমিটার থেকে ১৮ মিলিমিটার পর্যন্ত স্থানান্তরিত হয় এই প্লেট দুটি। তাই সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মাটির গভীরে প্রবল চাপ তৈরি হয়। যার প্রভাবে কেঁপে ওঠে সাগাইং ফল্টের অঞ্চল। অদূর ভবিষ্যতে এই অঞ্চলে আরও বড় ভূমিকম্প হওয়ার সম্ভাবনাও এড়িয়ে যাচ্ছেন না বিজ্ঞানীরা।