ঢাকা ০৮:৫২ অপরাহ্ন, সোমবার, ৩১ মার্চ ২০২৫, ১৭ চৈত্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

জাকাত দিতে হবে না যেসব সম্পদে

মাওলানা সাখাওয়াত উল্লাহ
  • সংবাদ প্রকাশের সময় : ১২:৫৪:০৯ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৮ মার্চ ২০২৫ ১৭ বার পড়া হয়েছে

প্রতিকী ছবি

বাংলা টাইমস অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

ইসলামী শরিয়ত মোতাবেক চার ধরনের সম্পদে জাকাত ফরজ।

এক. ভূমি থেকে উত্পাদিত শস্য ও ফল-ফলাদিতে নির্দিষ্ট হারে জাকাত দিয়েত হয়।

দুই. নির্দিষ্ট প্রাণী যেমন উট, গরু, ছাগল, ভেড়া ও মহিষের ওপর নির্দিষ্ট হারে জাকাত ফরজ।

তিন. স্বর্ণ-রৌপ্যের ওপর (নিসাব পরিমাণ হলে) জাকাত ফরজ।

চার. ব্যবসায়ী পণ্য বা এমন যাবতীয় বস্তু, যা দ্বারা মুনাফা অর্জন কিংবা ব্যবসার উদ্দেশ্য নির্ধারণ করে রাখা হয়েছে। যেমন-ব্যবসার উদ্দেশ্যে কেনা জমি, জীব-জন্তু, খাবার, পানীয় ও গাড়ি ইত্যাদি সব ধরনের সম্পদে জাকাত ফরজ।

এছাড়াও বহু সম্পদে জাকাত ফরজ নয়। যেসব সম্পদকে জাকাত থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে, সেগুলোর তালিকা নিম্নরূপ :

১. কৃষিবহির্ভূত জমি।

২. দালানকোঠা (যেগুলো কলকারখানা, দোকান হিসেবে ব্যবহূত হয়)।

৩. দোকানপাট।

৪. দোকানে ব্যবহূত জিনিস যেমন : আলমারি, র্যাক, পাল্লা, বাটখারা ইত্যাদি যা ব্যবসায়ের সহায়ক হিসেবে ব্যবহূত হয়।

৫. বসতবাড়ি-আশ্রয়-বসবাসের ঘর।

৬. কাপড়-চোপড়-বস্ত্র ব্যবহারের পোশাক-পরিচ্ছেদ।

৭. নারীদের ব্যবহার্য কাপড়, তা যতই মূল্যবান হোক না কেন।

৮. গৃহস্থালির তৈজসপত্র, হাঁড়ি-পাতিল, বাসন-কোসন ও সরঞ্জামাদি ও আসবাবপত্র যেমন—খাট, আলমারি, চেয়ার-টেবিল (ব্যবহার করা হোক বা না হোক)।

৯. বই, পত্র-পত্রিকা, খাতা-কাগজ ও মুদ্রিত সামগ্রী-ব্যবহারের শিক্ষা উপকরণ।

১০. অস্ত্রশস্ত্র ও গোলাবারুদ।

১১. হিসাসের বছরের মধ্যেই অর্জিত ও ব্যয়িত সম্পদ।

১২. দাতব্য সংস্থাসমূহের মালিকানায় দাতব্য কাজে ওয়াকফকৃত সম্পত্তি।

১৩. সরকারের হাতে ও মালিকানায় থাকা নগদ অর্থ, স্বর্ণ, রৌপ্য ও অন্যান্য সম্পদ।

১৪. এক বছর বয়সের নিচের গবাদিপশু।

১৫. পোষাপাখি ও হাঁস-মুরগি।

১৬. আরামদায়ক সামগ্রী।

১৭. যন্ত্রপাতি ও সাজসরঞ্জাম।

১৮. চলাচলের জন্তু যেমন—গরু, গাধা, ঘোড়া, হাতি, খচ্চর, উট ইত্যাদি।

১৯. মিল, ফ্যাক্টরি, ওয়্যার হাউজ, গুদাম ইত্যাদি।

২০. অফিসের যাবতীয় আসবাবপত্র, যন্ত্রপাতি, কম্পিউটার, ফ্যান, মেশিন, ক্যালকুলেটর ইত্যাদি সরঞ্জাম।

২১. বপন করার জন্য সংরক্ষিত বীজ।

২২. ব্যবসায়ের জন্য নয় এমন পুকুরের মাছ।

২৩. যুদ্ধে ব্যবহূত পশু।

২৪. চলাচলের বাহন—সাইকেল, মটরসাইকেল, ব্যবহারের গাড়ি প্রভৃতি যানবাহন।

২৫. মূল্যবান সুগন্ধি, মণিমুক্তা, লৌহিত বর্ণ প্রস্তর, শ্বেতপাথর এবং সমুদ্র থেকে আহরিত দ্রব্য সামগ্রীর ওপর জাকাত নেই।

২৬. নিসাবের কম পরিমাণ অর্থ-সম্পদ।

২৭. বাণজ্যিক দুধ উত্পাদন, কৃষি ও সেচ কাজ এবং বোঝা বহনের গরু মহিষ।

২৮. সব ধরনের ওয়াকফকৃত সম্পত্তি।

২৯. ব্যবসায়ে খাটানো না হলে মোতি, ইয়াকুত ও অন্যান্য মূল্যবান পাথরের ওপর জাকাত নেই। (আল ফিকহ আলাল মাজাহিবিল আরবায়া, প্রথম খণ্ড, পৃ. ৫৯৫)

৩০. সরকারি সম্পত্তির কোনো জাকাত হয় না, কেননা ধনী-গরিব নির্বিশেষে সমাজের সবাই সম্পত্তির মালিক।

৩১. দাতব্য সংস্থার সম্পদের ওপর জাকাত ধার্য হবে না, এগুলো নির্দিষ্ট ব্যক্তির মালিকানাধীন সম্পদ বলে বিবেচিত না হবে।

৩২. মানবজীবনের মৌলিক প্রয়োজন মিটানোর জন্য রক্ষিত টাকার জাকাত হবে না।

৩৩. মানুষের পরিশ্রম ছাড়াই জন্মে এমন সব উদ্ভিদ যেমন—বনজ বৃক্ষ, ঘাসু, নল-খাগড়া ইত্যাদির জাকাত হবে না।

৩৪. ব্যাংকঋণ, ধারকৃত টাকা, ব্যবসার জন্য বাকিতে আনা সামগ্রীতে জাকাত দিতে হবে না।

(সূত্র : ইসলামের অর্থনৈতিক ইতিহাস, ড. মুহাম্মাদ নূরুল ইসলাম)

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

ট্যাগস :

জাকাত দিতে হবে না যেসব সম্পদে

সংবাদ প্রকাশের সময় : ১২:৫৪:০৯ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৮ মার্চ ২০২৫

ইসলামী শরিয়ত মোতাবেক চার ধরনের সম্পদে জাকাত ফরজ।

এক. ভূমি থেকে উত্পাদিত শস্য ও ফল-ফলাদিতে নির্দিষ্ট হারে জাকাত দিয়েত হয়।

দুই. নির্দিষ্ট প্রাণী যেমন উট, গরু, ছাগল, ভেড়া ও মহিষের ওপর নির্দিষ্ট হারে জাকাত ফরজ।

তিন. স্বর্ণ-রৌপ্যের ওপর (নিসাব পরিমাণ হলে) জাকাত ফরজ।

চার. ব্যবসায়ী পণ্য বা এমন যাবতীয় বস্তু, যা দ্বারা মুনাফা অর্জন কিংবা ব্যবসার উদ্দেশ্য নির্ধারণ করে রাখা হয়েছে। যেমন-ব্যবসার উদ্দেশ্যে কেনা জমি, জীব-জন্তু, খাবার, পানীয় ও গাড়ি ইত্যাদি সব ধরনের সম্পদে জাকাত ফরজ।

এছাড়াও বহু সম্পদে জাকাত ফরজ নয়। যেসব সম্পদকে জাকাত থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে, সেগুলোর তালিকা নিম্নরূপ :

১. কৃষিবহির্ভূত জমি।

২. দালানকোঠা (যেগুলো কলকারখানা, দোকান হিসেবে ব্যবহূত হয়)।

৩. দোকানপাট।

৪. দোকানে ব্যবহূত জিনিস যেমন : আলমারি, র্যাক, পাল্লা, বাটখারা ইত্যাদি যা ব্যবসায়ের সহায়ক হিসেবে ব্যবহূত হয়।

৫. বসতবাড়ি-আশ্রয়-বসবাসের ঘর।

৬. কাপড়-চোপড়-বস্ত্র ব্যবহারের পোশাক-পরিচ্ছেদ।

৭. নারীদের ব্যবহার্য কাপড়, তা যতই মূল্যবান হোক না কেন।

৮. গৃহস্থালির তৈজসপত্র, হাঁড়ি-পাতিল, বাসন-কোসন ও সরঞ্জামাদি ও আসবাবপত্র যেমন—খাট, আলমারি, চেয়ার-টেবিল (ব্যবহার করা হোক বা না হোক)।

৯. বই, পত্র-পত্রিকা, খাতা-কাগজ ও মুদ্রিত সামগ্রী-ব্যবহারের শিক্ষা উপকরণ।

১০. অস্ত্রশস্ত্র ও গোলাবারুদ।

১১. হিসাসের বছরের মধ্যেই অর্জিত ও ব্যয়িত সম্পদ।

১২. দাতব্য সংস্থাসমূহের মালিকানায় দাতব্য কাজে ওয়াকফকৃত সম্পত্তি।

১৩. সরকারের হাতে ও মালিকানায় থাকা নগদ অর্থ, স্বর্ণ, রৌপ্য ও অন্যান্য সম্পদ।

১৪. এক বছর বয়সের নিচের গবাদিপশু।

১৫. পোষাপাখি ও হাঁস-মুরগি।

১৬. আরামদায়ক সামগ্রী।

১৭. যন্ত্রপাতি ও সাজসরঞ্জাম।

১৮. চলাচলের জন্তু যেমন—গরু, গাধা, ঘোড়া, হাতি, খচ্চর, উট ইত্যাদি।

১৯. মিল, ফ্যাক্টরি, ওয়্যার হাউজ, গুদাম ইত্যাদি।

২০. অফিসের যাবতীয় আসবাবপত্র, যন্ত্রপাতি, কম্পিউটার, ফ্যান, মেশিন, ক্যালকুলেটর ইত্যাদি সরঞ্জাম।

২১. বপন করার জন্য সংরক্ষিত বীজ।

২২. ব্যবসায়ের জন্য নয় এমন পুকুরের মাছ।

২৩. যুদ্ধে ব্যবহূত পশু।

২৪. চলাচলের বাহন—সাইকেল, মটরসাইকেল, ব্যবহারের গাড়ি প্রভৃতি যানবাহন।

২৫. মূল্যবান সুগন্ধি, মণিমুক্তা, লৌহিত বর্ণ প্রস্তর, শ্বেতপাথর এবং সমুদ্র থেকে আহরিত দ্রব্য সামগ্রীর ওপর জাকাত নেই।

২৬. নিসাবের কম পরিমাণ অর্থ-সম্পদ।

২৭. বাণজ্যিক দুধ উত্পাদন, কৃষি ও সেচ কাজ এবং বোঝা বহনের গরু মহিষ।

২৮. সব ধরনের ওয়াকফকৃত সম্পত্তি।

২৯. ব্যবসায়ে খাটানো না হলে মোতি, ইয়াকুত ও অন্যান্য মূল্যবান পাথরের ওপর জাকাত নেই। (আল ফিকহ আলাল মাজাহিবিল আরবায়া, প্রথম খণ্ড, পৃ. ৫৯৫)

৩০. সরকারি সম্পত্তির কোনো জাকাত হয় না, কেননা ধনী-গরিব নির্বিশেষে সমাজের সবাই সম্পত্তির মালিক।

৩১. দাতব্য সংস্থার সম্পদের ওপর জাকাত ধার্য হবে না, এগুলো নির্দিষ্ট ব্যক্তির মালিকানাধীন সম্পদ বলে বিবেচিত না হবে।

৩২. মানবজীবনের মৌলিক প্রয়োজন মিটানোর জন্য রক্ষিত টাকার জাকাত হবে না।

৩৩. মানুষের পরিশ্রম ছাড়াই জন্মে এমন সব উদ্ভিদ যেমন—বনজ বৃক্ষ, ঘাসু, নল-খাগড়া ইত্যাদির জাকাত হবে না।

৩৪. ব্যাংকঋণ, ধারকৃত টাকা, ব্যবসার জন্য বাকিতে আনা সামগ্রীতে জাকাত দিতে হবে না।

(সূত্র : ইসলামের অর্থনৈতিক ইতিহাস, ড. মুহাম্মাদ নূরুল ইসলাম)