ঢাকা ০৩:২৫ অপরাহ্ন, সোমবার, ৩১ মার্চ ২০২৫, ১৭ চৈত্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::

হঠাৎ মৃত্যু হতে পারে যেসব কারণে

বাংলা টাইমস ডেস্ক
  • সংবাদ প্রকাশের সময় : ১১:৩৭:৩৫ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৩ মার্চ ২০২৫ ২৬ বার পড়া হয়েছে
বাংলা টাইমস অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

প্রায়ই আমরা শুনি কেউ হঠাৎ করে মারা গেছেন। অথবা ঘুমের মধ্যে মৃত্যু হয়েছে। এ ধরনের ঘটনা আমাদের কাছে অবাক করা হলেও, চিকিৎসা বিজ্ঞানের মতে এর পেছনে রয়েছে কিছু সুনির্দিষ্ট কারণ। মানুষের হঠাৎ মৃত্যু সাধারণত শারীরবৃত্তীয় নানান সমস্যার কারণে ঘটে, এবং এতে প্রধান ভূমিকা পালন করে হৃদপিণ্ড, মস্তিষ্ক, এবং শ্বাসযন্ত্রের সমস্যা।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে হৃদরোগেই সবচেয়ে বেশি মানুষের মৃত্যু ঘটে। বিবিসির এক প্রতিবেদনে কিছু সাধারণ শারীরিক সমস্যার কথা উঠে এসেছে, যা হঠাৎ মৃত্যুর কারণ হতে পারে।

হৃদরোগের কারণে হঠাৎ মৃত্যু

হৃদরোগ হলো হঠাৎ মৃত্যুর একটি প্রধান কারণ। হৃদপিণ্ডে রক্ত সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেলে, হার্ট অ্যাটাক বা কার্ডিয়াক অ্যারেস্টের মতো সমস্যা তৈরি হয়।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অধ্যাপক ডা. খান আবুল কালাম আজাদ বলেন, হৃৎপিণ্ডের পেশি অকার্যকর হয়ে গেলে অথবা ধমনীর ব্লক হয়ে গেলে হঠাৎ মৃত্যু ঘটতে পারে। হৃদযন্ত্রের কর্মক্ষমতা হারালে, বিশেষ করে যদি তা দ্রুত চিকিৎসা না পায়, মৃত্যু নিশ্চিত হতে পারে।

এ ক্ষেত্রে দ্রুত সিপিআর (কার্ডিওপালমোনারি রিসাসিটেশন) দিলে জীবন বাঁচানোর সম্ভাবনা থাকে। হৃদরোগের কিছু সাধারণ লক্ষণ হলো- বুকের মাঝ বরাবর তীব্র ব্যথা, শ্বাসকষ্ট, কাশি এবং বমি বমি ভাব।

শ্বাসযন্ত্রের সমস্যা

ক্লিভল্যান্ড ক্লিনিক বলছে শ্বাসযন্ত্রের সমস্যা বা রেস্পিরেটরি ফেইলিউরের কারণে হঠাৎ মৃত্যু হতে পারে। যখন শ্বাসযন্ত্র অক্সিজেন গ্রহণে ব্যর্থ হয়, তখন শরীর পর্যাপ্ত অক্সিজেন পায় না এবং বিপজ্জনক পরিস্থিতি তৈরি হয়। ক্লিভল্যান্ড ক্লিনিকের তথ্যমতে, শ্বাসকষ্ট, দ্রুত শ্বাস নেওয়া, এবং ঠোঁট বা আঙুলের ডগা নীল হয়ে যাওয়ার মতো লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসা নিতে হবে। না হলে এটি প্রাণঘাতী হতে পারে।

পালমোনারি এম্বোলিজম

পালমোনারি এম্বোলিজম বা ফুসফুসে রক্তজমাট বাঁধার কারণে হঠাৎ মৃত্যু ঘটতে পারে। এটি সাধারণত ফুসফুসের রক্তনালী ব্লক হয়ে যায় এবং দ্রুত চিকিৎসা না পেলে মৃত্যু হতে পারে। বিশেষ করে যাদের অতিরিক্ত ওজন বা ডায়াবেটিসের সমস্যা রয়েছে, তারা এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে থাকে। এটি লক্ষণগুলি যেমন— হঠাৎ শ্বাসকষ্ট, তীব্র ব্যথা, প্রচুর ঘাম, এবং অজ্ঞান হয়ে যাওয়া।

স্ট্রোক

স্ট্রোক মূলত মস্তিষ্কে রক্ত সঞ্চালন বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে ঘটে। যদি মস্তিষ্কে রক্ত প্রবাহ ব্যাহত হয়, তবে স্ট্রোক হতে পারে এবং এর পরিণতি হতে পারে মৃত্যু। স্ট্রোকের লক্ষণগুলো হলো- শরীরের একপাশ অবশ হয়ে যাওয়া, কথা বলায় সমস্যা, কিংবা তীব্র মাথাব্যথা।

প্রতিরোধের উপায়

হঠাৎ মৃত্যু অনেক কারণে হতে পারে এবং একেক কারণের জন্য সমাধানও একেক রকম। ডা. আজাদ জানান, সামগ্রিকভাবে সুস্থ থাকতে সুশৃঙ্খল জীবন করতে হবে।

তিনি বলেন, যেগুলোর কথা বলা হলো, এই অবস্থাগুলো একবার হলে বার বার হয়। তাই, ধরা পড়ার পর সতর্কতা হতে হবে। ডাক্তাররা এই হঠাৎ মৃত্যুর বিষয়গুলো নিয়ে সচেতন হতে হবে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এইসব সমস্যা হলে রোগীর আর্টিফিশিয়াল লাইফ সাপোর্ট প্রয়োজন হয়। কিন্তু বেশিরভাগ রোগীই সেই সুবিধাটা পায় না। ফলে, অপ্রত্যাশিত মৃত্যু নেমে আসে। তবে এই পরিস্থিতি যেন তৈরি না হয়, সেজন্য তিনি সুশৃঙ্খল জীবনাচরণের প্রতি জোর দিতে হবে।

ডা. আজাদ বলেন, সুস্থ থাকতে রোগভেদে নিজের যত্ন নিতে হবে। নিয়ম সবার জন্য সমান। যার ডায়াবেটিস আছে, তার জন্যও যা নিয়ম, হার্টের রোগীর জন্যও একই নিয়ম। তা হলো– ডিসিপ্লিনড লাইফস্টাইল, ব্যালেন্সড ডায়েট এবং এক্সারসাইজ। সেইসঙ্গে, ধূমপান ও মদ্যপান পরিহার করতে হবে। পাশাপাশি মানসিক স্বাস্থ্যও ঠিক রাখতে হবে।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

ট্যাগস :

হঠাৎ মৃত্যু হতে পারে যেসব কারণে

সংবাদ প্রকাশের সময় : ১১:৩৭:৩৫ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৩ মার্চ ২০২৫

প্রায়ই আমরা শুনি কেউ হঠাৎ করে মারা গেছেন। অথবা ঘুমের মধ্যে মৃত্যু হয়েছে। এ ধরনের ঘটনা আমাদের কাছে অবাক করা হলেও, চিকিৎসা বিজ্ঞানের মতে এর পেছনে রয়েছে কিছু সুনির্দিষ্ট কারণ। মানুষের হঠাৎ মৃত্যু সাধারণত শারীরবৃত্তীয় নানান সমস্যার কারণে ঘটে, এবং এতে প্রধান ভূমিকা পালন করে হৃদপিণ্ড, মস্তিষ্ক, এবং শ্বাসযন্ত্রের সমস্যা।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে হৃদরোগেই সবচেয়ে বেশি মানুষের মৃত্যু ঘটে। বিবিসির এক প্রতিবেদনে কিছু সাধারণ শারীরিক সমস্যার কথা উঠে এসেছে, যা হঠাৎ মৃত্যুর কারণ হতে পারে।

হৃদরোগের কারণে হঠাৎ মৃত্যু

হৃদরোগ হলো হঠাৎ মৃত্যুর একটি প্রধান কারণ। হৃদপিণ্ডে রক্ত সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেলে, হার্ট অ্যাটাক বা কার্ডিয়াক অ্যারেস্টের মতো সমস্যা তৈরি হয়।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অধ্যাপক ডা. খান আবুল কালাম আজাদ বলেন, হৃৎপিণ্ডের পেশি অকার্যকর হয়ে গেলে অথবা ধমনীর ব্লক হয়ে গেলে হঠাৎ মৃত্যু ঘটতে পারে। হৃদযন্ত্রের কর্মক্ষমতা হারালে, বিশেষ করে যদি তা দ্রুত চিকিৎসা না পায়, মৃত্যু নিশ্চিত হতে পারে।

এ ক্ষেত্রে দ্রুত সিপিআর (কার্ডিওপালমোনারি রিসাসিটেশন) দিলে জীবন বাঁচানোর সম্ভাবনা থাকে। হৃদরোগের কিছু সাধারণ লক্ষণ হলো- বুকের মাঝ বরাবর তীব্র ব্যথা, শ্বাসকষ্ট, কাশি এবং বমি বমি ভাব।

শ্বাসযন্ত্রের সমস্যা

ক্লিভল্যান্ড ক্লিনিক বলছে শ্বাসযন্ত্রের সমস্যা বা রেস্পিরেটরি ফেইলিউরের কারণে হঠাৎ মৃত্যু হতে পারে। যখন শ্বাসযন্ত্র অক্সিজেন গ্রহণে ব্যর্থ হয়, তখন শরীর পর্যাপ্ত অক্সিজেন পায় না এবং বিপজ্জনক পরিস্থিতি তৈরি হয়। ক্লিভল্যান্ড ক্লিনিকের তথ্যমতে, শ্বাসকষ্ট, দ্রুত শ্বাস নেওয়া, এবং ঠোঁট বা আঙুলের ডগা নীল হয়ে যাওয়ার মতো লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসা নিতে হবে। না হলে এটি প্রাণঘাতী হতে পারে।

পালমোনারি এম্বোলিজম

পালমোনারি এম্বোলিজম বা ফুসফুসে রক্তজমাট বাঁধার কারণে হঠাৎ মৃত্যু ঘটতে পারে। এটি সাধারণত ফুসফুসের রক্তনালী ব্লক হয়ে যায় এবং দ্রুত চিকিৎসা না পেলে মৃত্যু হতে পারে। বিশেষ করে যাদের অতিরিক্ত ওজন বা ডায়াবেটিসের সমস্যা রয়েছে, তারা এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে থাকে। এটি লক্ষণগুলি যেমন— হঠাৎ শ্বাসকষ্ট, তীব্র ব্যথা, প্রচুর ঘাম, এবং অজ্ঞান হয়ে যাওয়া।

স্ট্রোক

স্ট্রোক মূলত মস্তিষ্কে রক্ত সঞ্চালন বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে ঘটে। যদি মস্তিষ্কে রক্ত প্রবাহ ব্যাহত হয়, তবে স্ট্রোক হতে পারে এবং এর পরিণতি হতে পারে মৃত্যু। স্ট্রোকের লক্ষণগুলো হলো- শরীরের একপাশ অবশ হয়ে যাওয়া, কথা বলায় সমস্যা, কিংবা তীব্র মাথাব্যথা।

প্রতিরোধের উপায়

হঠাৎ মৃত্যু অনেক কারণে হতে পারে এবং একেক কারণের জন্য সমাধানও একেক রকম। ডা. আজাদ জানান, সামগ্রিকভাবে সুস্থ থাকতে সুশৃঙ্খল জীবন করতে হবে।

তিনি বলেন, যেগুলোর কথা বলা হলো, এই অবস্থাগুলো একবার হলে বার বার হয়। তাই, ধরা পড়ার পর সতর্কতা হতে হবে। ডাক্তাররা এই হঠাৎ মৃত্যুর বিষয়গুলো নিয়ে সচেতন হতে হবে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এইসব সমস্যা হলে রোগীর আর্টিফিশিয়াল লাইফ সাপোর্ট প্রয়োজন হয়। কিন্তু বেশিরভাগ রোগীই সেই সুবিধাটা পায় না। ফলে, অপ্রত্যাশিত মৃত্যু নেমে আসে। তবে এই পরিস্থিতি যেন তৈরি না হয়, সেজন্য তিনি সুশৃঙ্খল জীবনাচরণের প্রতি জোর দিতে হবে।

ডা. আজাদ বলেন, সুস্থ থাকতে রোগভেদে নিজের যত্ন নিতে হবে। নিয়ম সবার জন্য সমান। যার ডায়াবেটিস আছে, তার জন্যও যা নিয়ম, হার্টের রোগীর জন্যও একই নিয়ম। তা হলো– ডিসিপ্লিনড লাইফস্টাইল, ব্যালেন্সড ডায়েট এবং এক্সারসাইজ। সেইসঙ্গে, ধূমপান ও মদ্যপান পরিহার করতে হবে। পাশাপাশি মানসিক স্বাস্থ্যও ঠিক রাখতে হবে।