মোকামে বেড়েই চলছে চালের দাম

- সংবাদ প্রকাশের সময় : ১২:৪০:৫৫ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৯ মার্চ ২০২৫ ১৯ বার পড়া হয়েছে
সরু চালের জন্য সর্ববৃহৎ ও প্রসিদ্ধ মোকাম কুষ্টিয়া খাজানগরে চালের মোকামে মিনিকেট চালের দাম ১৪ দিনের ব্যবধানে কেজি প্রতি মিনিকেট চালের দাম বেড়েছে ৭ টাকা। গত কয়েক দিন ধরে মিলগেটে মিনিকেট চাল বিক্রি করছে কেজি প্রতি ৮৪ টাকা দরে। যা গত ১ মার্চ ছিল ৭৭ টাকা। তবে বাজারে ধানের দাম উর্দ্বমূখী। আর বাজারে ধানও নাই। এজন্য চালের দাম বাড়ছে।
মিল মালিকরা বলছেন চালের দাম তুলনামূলকভাবে কমই বাড়ানো হয়েছে। দাম কেজি প্রতি ১৫ থেকে ১৭ টাকা বাড়ানো উচিত। তারপরও কম বাড়ানো হয়েছে। বাজারে ধান নাই। যা পাওয়া যাচ্ছে তার দাম গড়ে মণ প্রতি বাড়তি ৩০০ টাকা বেশি দিয়ে কিনতে হচ্ছে।’জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক আল্ ওয়াজিউর রহমান এ কথা স্বীকার করে বলেন,চালের দাম বেড়েছে।
খাজানগর এলাকায় মিলমালিক ও খাদ্য সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় বর্তমানে কুষ্টিয়ার খাজানগর মোকামে ধান ও চালের মজুদ অর্ধেকেরও নিচে নেমেছে। বিশেষ করে সরু ধান ও চালের মজুদ তলানিতে। কিছু মিলে মোটা ও মাঝারি মানের ধান ও চালের মজুদ আছে। সেটাও অন্য সময়ের তুলনায় অনেক কম বলে জানিয়েছেন মিল মালিকরা।
এদিকে গত কয়েকদিনের তুলনায় সরু ধানের দাম নতুন করে প্রতি মণে ১০০ থেকে ৩০০ টাকা বেড়েছে। এতে করে চালের দাম গত দুই সপ্তাহের ব্যবধানে কেজি প্রতি ৭ টাকা বাড়িয়েছে। মিলগেটে বর্তমানে সরু চাল ৮৪ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। চলতি মাসে ১ থেকে ১৪ তারিখ পর্যন্ত ৫ দফায় দাম বেড়েছে।
খাদ্য বিভাগ সুত্রে জানা গেছে, খাজানগরে অটো রাইসমিলের সংখ্যা ৬৪টি। তবে এর মধ্যে অর্ধেক মিল প্রায় বন্ধ। এসব মিলে কি পরিমান ধান মজুদ তার প্রতিদিনের একটি হিসাব মিল মালিকরা অফিসে প্রেরণ করে। সেই হিসাব ঠিক আছে কি-না তা খতিয়ে দেখতে খাদ্য পরিদর্শকরা নিয়মিত মিল পরিদর্শন করেন।
উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক আব্দুল খালেক বলেন, এখন আমন মৌসুম শেষের দিকে। বোরো ধান বাজারে আসতে আর মাস খানেক সময় লাগবে। এ সময়ে ধান ও চালের মজুদ সাধারনত কম থাকে। বাজারে ধান নেই। এজন্য অর্ধেকেরও বেশি মিল বন্ধ রয়েছে।
মিল মালিক ও খাদ্য অফিসের তথ্য মতে, ৩ ডায়ারের একটি অটো রাইসমিলে ২৪ ঘন্টায় কমপক্ষে ৩ হাজার ৬০০ মণ ধানের প্রয়োজন পড়ে। ১টি ডায়ার চালাতে ২৪ ঘন্টায় ৬০০মণ ধানের প্রয়োজন পড়ে। ৩ হাজার ৬০০ মণ ধান থেকে চাল উৎপাদন হয় ২ হাজার ৩৪০ মণ। অর্থাৎ ৩৬ টন চালে ২৩ টন চাল উৎপাদন হয়। স্বাভাবিক সময়ে একটি মিলে ৩ হাজার টন থেকে ৪ হাজার ৫০০ টন পর্যন্ত চাল মজুদ থাকে। এখন সেখানে মজুদ আছে ৩৬০ টন থেকে ৪০০ টন পর্যন্ত।
এ মিল মালিক বলেন, তার মিলে প্রতিদিন কমপক্ষে ৬০ ট্রাক ধান লাগে। সেখানে সোমবার ধান পেয়েছি মাত্র এক ট্রাক। মিল বন্ধ করে দেওয়া ছাড়া কোন উপায় নাই।’ খাজানগরের অন্যতম চাল উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান দাদা রাইস মিল। এই মিলের ৬টি ডায়ার আছে। স্বাভাবিক সময়ে এই প্রতিষ্ঠান গড়ে প্রতিদিন ৪৬টন চাউল উৎপাদন করতো। এখন ধানের অভাবে বেশির ভাগ সময় ৪ থেকে ৫টি ডায়ার বন্ধ থাকছে।
মিল মালিকরা আরো বলেন- দেশে ধান ও চালের মজুদের সঠিক পরিসংখ্যান নেই। আর বাইরে থেকে যে এলসির চাল আসছে সেটা দিয়ে বাজার নিয়ন্ত্রণ কোন ভাবেই সম্ভব হচ্ছে না। এবার অভ্যন্তরীন সংকট প্রকট হওয়ার পেছনে ধানের সংকট ও দাম বৃদ্ধি অন্যতম কারন।
বাংলাদেশ অটোর মেজর অ্যান্ড হাসকিং মিলমালিক সমিতির কুষ্টিয়া শাখার সাধারণ সম্পাদক জয়নাল আবেদিন প্রধান বলেন, খাজানগর মোকামে স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় ধান ও চালের মজুদ একেবারেই কম। মিলে ধান ও চালের মজুদ থাকলে বাজার স্বাভাবিক থাকে। এখন অর্ডার নিয়েও চাল দিতে পারছেন না বেশির ভাগ মিল মালিক।
জেলা প্রশাসক তৌফিকুর রহমান বলেন, খাজানগরে প্রশাসনের পক্ষে তদারকি করা হচ্ছে, মিনিকেট চালের দাম কমানোর বিষয়ে সর্বোচ্চ চেষ্টা চলছে।