তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ফেরাতে রিভিউ শুনানি পিছিয়ে
- সংবাদ প্রকাশের সময় : ১১:৪৮:১৮ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৯ জানুয়ারী ২০২৫ ৩৩ বার পড়া হয়েছে
তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা-সংক্রান্ত সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিলের রায় পুনর্বিবেচনা (রিভিউ) শুনানি আবারও পেছানো হয়েছে। নতুন তারিখ ধার্য করা হয়েছে আগামী ৯ ফেব্রুয়ারি।
রোববার (১৯ জানুয়ারি) আপিল বিভাগের জ্যৈষ্ঠ বিচারপতি আশফাকুল ইসলামের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ এ আদেশ দেন। এদিন রিভিউ আবেদনটি শুনানির জন্য কার্যতালিকায় ১৩ নম্বর ক্রমিকে ছিল। এর আগে ১ ডিসেম্বর এ রিভিউটি শুনানির জন্য ১৯ জানুয়ারি দিন ধার্য করা হয়েছিল।
১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগসহ অন্য রাজনৈতিক দলগুলোর আন্দোলনের চাপে সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী আনে বিএনপি সরকার। ওই বছরের ২৭ মার্চ সংবিধানে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতির প্রবর্তন ঘটে। এই পদ্ধতির অধীনে ১৯৯৬ সালে সপ্তম, ২০০১ সালে অষ্টম এবং ২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচন হয়। ২০০৪ সালে বিএনপি-জামায়াতের চারদলীয় জোট সরকারের আমলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থাকে অগণতান্ত্রিক ও সংবিধানবহির্ভূত আখ্যা দিয়ে আইনজীবী এম. সলিমউল্যাহসহ তিন আইনজীবী হাইকোর্টে একটি রিট করেন। শুনানির পর তিন বিচারপতির বৃহত্তর বেঞ্চ ২০০৪ সালের ৪ আগস্ট রায় দেন।
রায়ে বলা হয়, ত্রয়োদশ সংশোধনী সংবিধানসম্মত ও বৈধ। এই সংশোধনী সংবিধানের কোনো মৌলিক কাঠামোকে ক্ষতিগ্রস্ত করেনি।
এরপর সংঘাতময় পরিস্থিতিতে ২০০৭ সালের ১১ জানয়ারি জরুরি অবস্থা জারি করা হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ফখরুদ্দীন আহমদের নেতৃত্বে সেনাবাহিনী সমর্থিত একটি নতুন তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন করা হয়।
সেনাবাহিনীর মদদপুষ্ট এই তত্ত্বাবধায়ক সরকার দুই বছর ক্ষমতায় থাকার পর তত্ত্বাবধায়ক পদ্ধতির দুর্বলতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। ২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে হয়। ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন জোট। ওই বছর রিট আবেদনকারীরা হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেন। ২০১০ সালে এর আপিল শুনানি শুরু হয়।
আপিল বিভাগ এই মামলায় অ্যামিকাস কিউরি (আদালতকে সহায়তাকারী) হিসেবে দেশের আটজন সংবিধান বিশেষজ্ঞের বক্তব্য শোনেন। তাঁরা তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বহাল রাখার পক্ষে মত দেন। তত্কালীন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলমও তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থার পক্ষে মত দেন। আপিল বিভাগের সাতজন সংখ্যাগরিষ্ঠ বিচারপতির মতামতের ভিত্তিতে রায়ের জন্য দিন ঠিক হলে ছয় বিচারপতির তিনজন অ্যামিকাস কিউরিদের পক্ষে একমত হন। অপর তিন বিচারপতি ভিন্নমত তুলে ধরেন। এমন পরিস্থিতিতে প্রধান বিচারপতি হিসেবে এ বি এম খায়রুল হকের হাতে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা ছিল। তিনি তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিল করে ২০১১ সালের ১০ মে রায় দেন। পরের বছর সেপ্টেম্বরে পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়। তখন সাবেক প্রধান বিচারপতি খায়রুল হকের বিরুদ্ধে রায় পরিবর্তনের অভিযোগ ওঠে। সর্বোচ্চ আদালতের এই রায়কে আশ্রয় করে দলীয় সরকারের অধীনে পর পর তিনটি নির্বাচন করে ক্ষমতায় ছিলেন শেখ হাসিনা।
আন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতন ঘটে। এরপর আপিল বিভাগের ওই রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে গত ২৭ আগস্ট রিভিউ (পুনর্বিবেচেনার) আবেদন করেন বদিউল আলম মজুমদারসহ পাঁচ ব্যক্তি।
অন্য চারজন হলেন তোফায়েল আহমেদ, এম হাফিজউদ্দিন খান, জোবাইরুল হক ভূঁইয়া ও জাহরা রহমান। এরপর এই রিভিউ আবেদনে ১৭ অক্টোবর ইন্টারভেনার (সহায়তাকারী) হিসেবে যুক্ত হয় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। পরে আরো দুটি আবেদন যুক্ত হয়। এর আগে তিনবার পেছানো হয়েছে আবেদনগুলোর শুনানি।