মন্ত্রীত্ব ফিরে পেতে পারেন টিউলিপ!
- সংবাদ প্রকাশের সময় : ০৯:৩১:৩৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৫ জানুয়ারী ২০২৫ ২০ বার পড়া হয়েছে
নিজেকে নির্দোষ প্রমাণে স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেছেন যুক্তরাজ্যের ক্ষমতাসীন লেবার পার্টির মন্ত্রী টিউলিপ সিদ্দিক। পদত্যাগপত্রে টিউলিপ নিজেকে নির্দোষ দাবি করেন এবং মন্ত্রিত্বের মানদন্ডবিষয়ক স্বাধীন উপদেষ্টা লাউরি ম্যাগনাসও তার বিরুদ্ধে কোনো অনৈতিক কর্মকান্ডের প্রমাণ খুঁজে পাননি। আর এ কারণেই ফের মন্ত্রিত্ব ফিরে আসতে পারেন তিনি। ফ্লাটকাÐে দুর্নীতির অভিযোগে ব্যাপক সমালোচনার মুখে গত মঙ্গলবার পদত্যাগ করেন টিউলিপ সিদ্দিক।
দ্য গার্ডিয়ান জানায়, টিউলিপ মন্ত্রিত্বের নিয়ম ভঙ করেছেন কিনা তা শেষ পর্যন্ত ম্যাগনাস বুঝতে পারেননি। ম্যাগনাস তাকে অভিযুক্তও করেননি বা তার বিরুদ্ধে অনৈতিক কোনো কিছু করার প্রমাণ খুঁজে পাননি। তবে ম্যাগনাস টিউলিপকে সরাসরি নির্দোষ ঘোষণা না করে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ সম্পর্কে এখনো অনেক প্রশ্ন রয়েছে বলে মন্তব্য করেন। এরপর টিউলিপ সিদ্দিক স্বেচ্ছায় মন্ত্রীর পদ থেকে সরে দাঁড়ান। তিনি বরখাস্ত না হওয়াকে ফের মন্ত্রীর দায়িত্বে তার ফিরে আসার সম্ভাবনা রয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।
এর ইঙ্গিত মিলছে দেশটির প্রধানমন্ত্রী স্যার কিয়ার স্টারমারের মন্তব্যে। টিউলিপের পদত্যাগের প্রতিক্রিয়ায় তাকে চিঠি লিখেছেন স্টারমার। তাতে তিনি লিখেছেন, আপনি একটি কঠিন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। আমি স্পষ্ট করে বলতে চাই, আপনার জন্য ভবিষ্যতের দরজা খোলা রয়েছে।
স্টারমার দুঃখের সঙ্গে টিউলিপের পদত্যাগপত্র গ্রহণ করছেন জানিয়ে বলেন, লাউরি ম্যাগনাস আমাকে নিশ্চিত করেছেন যে তিনি আপনার দিক থেকে মিনিস্ট্রিয়াল কোড লঙ্ঘন এবং কোনো আর্থিক অনিয়মের প্রমাণ পাননি। টিউলিপের ফিরে আসার সম্ভাবনার বিশ্লেষণে গার্ডিয়ান আরও একটি প্রসঙ্গ টেনেছে বলছে, ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের সঙ্গে টিউলিপের রাজনীতির সখ্যতা বেশ পুরোনো। তাদের দুজনকে বন্ধু হিসেবেই জেনে আসছেন লেবার পার্টির নেতাকর্মীরা। বিভিন্ন সময় দুজন একে অপরকে দলের অভ্যন্তরে ও জাতীয় নির্বাচনে জিততে সহায়তা করেন। বিষয়টি স্বীকার করে একে অন্যের প্রতি কৃতজ্ঞতাও প্রকাশ করতে শোনা গেছে।
বিশেষ করে ২০২০ সালের একটি ঘটনা বারবার সামনে আসছে। তখন কিয়ার স্টারমার লেবার নেতা হন। তাকে সমর্থন ও বিজয়ী হতে সাহায্য করেন টিউলিপ। ওই সময় টিউলিপ সিদ্দিক স্থানীয় সংবাদপত্রে কিয়ার স্টারমারকে ‘দুঃখের মধ্যেও একজন ভালো বন্ধু’ হিসেবে বর্ণনা করেছিলেন।
উল্লেখ্য, টিউলিপ সিদ্দিক ব্রিটিশ পার্লামেন্টে লেবার পার্টির একজন সদস্য। তার দল এবার সরকার গঠন করলে তিনি যুক্তরাজ্যের অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থনীতিবিষয়ক মিনিস্টারেরও (ইকোনমিক সেক্রেটারি) দায়িত্ব পান। তিনি শেখ হাসিনার বোন শেখ রেহানার মেয়ে। যুক্তরাজ্যের অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থনীতিবিষয়ক মিনিস্টারের পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন টিউলিপ সিদ্দিক। বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ ও শেখ পরিবারের দুর্নীতির সঙ্গে তার নাম উঠে আসার প্রেক্ষাপটে তিনি পদত্যাগ করলেন। অভিযোগ ওঠে, তিনি তার খালা শেখ হাসিনার দুর্নীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত। এ নিয়ে আলোচনার মধ্যে টিউলিপের ভোগ-দখলে থাকা দুটি ফ্ল্যাটের তথ্য প্রকাশ্যে আসে। এ ছাড়া অন্তঃসত্ত¡া সাংবাদিককে হুমকি, ব্যারিস্টার আরমানের স্ত্রীকে হেনস্তা করানোসহ টিউলিপের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ প্রকাশ্যে আসায় দলের ভেতরে-বাইরে চাপে পড়েন তিনি।
বিশ্লেষকদের মতে, যদি টিউলিপের বিরুদ্ধে কোনো নতুন অভিযোগ ওঠে না, তবে ভবিষ্যতে তাকে মন্ত্রীর দায়িত্ব দেওয়া হতে পারে, তবে তার বিরুদ্ধে আরও তদন্তের প্রয়োজন থাকতে পারে।
বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ ও শেখ পরিবারের দুর্নীতির সঙ্গে তার নাম উঠে আসার প্রেক্ষাপটে তিনি পদত্যাগ করলেন। অভিযোগ ওঠে, তিনি তার খালা শেখ হাসিনার দুর্নীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত। এ নিয়ে আলোচনার মধ্যে টিউলিপের ভোগ-দখলে থাকা দুটি ফ্ল্যাটের তথ্য প্রকাশ্যে আসে। এ ছাড়া অন্তঃসত্ত্বা সাংবাদিককে হুমকি, ব্যারিস্টার আরমানের স্ত্রীকে হেনস্তা করানোসহ টিউলিপের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ প্রকাশ্যে আসায় দলের ভেতরে-বাইরে চাপে পড়েন তিনি।
ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে দেশ ছেড়ে পালিয়ে ভারতে আশ্রয় নেন টানা দেড় দশকের বেশি সময় ধরে দেশ শাসন করা শেখ হাসিনা। বাংলাদেশে হঠাৎ রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর সেই ধাক্কা লাগে সুদূর যুক্তরাজ্যে তার ভাগ্নির রাজনৈতিক জীবনে। লন্ডনে ক্ষমতার কেন্দ্র থেকে ছিটকে পড়লেন তার বোন শেখ রেহানার মেয়ে টিউলিপ সিদ্দিক। দুর্নীতির সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে গত কয়েক সপ্তাহ ধরে তোলপাড় চলছিল যুক্তরাজ্যে।
২০২৪ সালের আগস্টে ঢাকায় তার খালা, বাংলাদেশের টানা চারবারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তার দল আওয়ামী লীগও রাজনৈতিক বিপর্যয়ের মুখে পড়ে। ছাত্র-জনতার তুমুল গণ আন্দোলনে ‘ফ্যাসিবাদী’ শাসনের অভিযোগ নিয়ে শেখ হাসিনাকে ভারতে পালিয়ে যেতে হয়। এরপর থেকে ঢাকায় শতাধিক মামলা হয়েছে শেখ হাসিনার নামে। কখনও হত্যা মামলায় তার নাম এসেছে, কখনো আবার মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়েছে।
ঢাকায় এসব তদন্তের মধ্যেই হঠাৎ টিউলিপ সিদ্দিককে নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। রাশিয়ার অর্থায়নে নির্মাণাধীন রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পে ৫ বিলিয়ন ডলার দুর্নীতির অভিযোগে শেখ পরিবারের অন্য সদস্যদের সঙ্গে নাম আসে ব্রিটেনের আর্থিক সেবা বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী টিউলিপ সিদ্দিকের। বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশন ১৭ ডিসেম্বর শেখ হাসিনা, তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়, বোন শেখ রেহানা ও তার মেয়ে টিউলিপ সিদ্দিকের সম্পৃক্ততা খতিয়ে দেখার সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা জানায়। সেই থেকে যুক্তরাজ্যেও খবরের শিরোনামে আসতে থাকেন উত্তর-পশ্চিম লন্ডনের হ্যাম্পস্টেড অ্যান্ড হাইগেট আসনের এমপি টিউলিপ, যিনি যুক্তরাজ্যের লেবার সরকারের প্রধানমন্ত্রী স্যার কিয়ার স্টারমারের ‘ঘনিষ্ঠ বন্ধু’ হিসেবে পরিচিত।
ঢাকার পাশাপাশি যুক্তরাজ্যেও টিউলিপের ‘দুর্নীতি ও অনিয়মে’ জড়িত থাকার অভিযোগ নিয়ে একের পর এক প্রতিবেদন প্রকাশ হতে থাকে। এমনকি তার বিনা টিকেটে ক্রিকেট ম্যাচ দেখতে যাওয়ার খবরও আসতে থাকে সংবাদমাধ্যমে। পরিস্থিতি জটিল করে তোলে লন্ডনের কয়েকটি বাড়ি, যেগুলো টিউলিপ এবং তার পরিবারের সদস্যদের উপহার দেওয়া হয়েছে কিংবা বিনা পয়সায় থাকতে দেওয়া হয়েছে। আর সেগুলো তাদের দিয়েছেন ধনাঢ্য বাংলাদেশিরা, যাদের সঙ্গে আওয়ামী লীগ এবং শেখ হাসিনার যোগ আছে।
বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারপ্রধান মুহাম্মদ ইউনূসও তাকে পদত্যাগের আহবান জানান। তিনি বলেন, তদন্তে যদি প্রমাণ হয় যে টিউলিপ এসব ‘ডাকাতি’র সুবিধাভোগী, তাহলে সম্পত্তিগুলো ফিরিয়ে দেওয়া উচিত।
টিউলিপকে ক্ষমা চাইতে ও পদত্যাগ করার আহবান জানিয়ে তিনি সানডে টাইমসকে বলেছেন, তিনি দুর্নীতি দমনবিষয়ক মন্ত্রী হয়েছেন এবং নিজেকে এখন নির্দোষ দাবি করছেন। এ নিয়ে তর্ক-বির্তক আর সমালোচনার মধ্যে স্টারমারের মন্ত্রিসভা থেকে তার পদত্যাগের খবর এলো।