গহীন পাহাড়ে টর্চার সেল, অপহরণের নিষ্ঠুর বাণিজ্য
- সংবাদ প্রকাশের সময় : ০১:২৮:৩৬ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৫ জানুয়ারী ২০২৫ ৫৩ বার পড়া হয়েছে
দেশের সর্ব দক্ষিণে সীমান্ত শহর কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলাটিতে সাড়ে তিন লাখ মানুষের বসতি হলেও রোহিঙ্গা বসবাস করছে ৭ লাখের বেশি। রোহিঙ্গা উদ্দেশ্যিত এলাকা হিসেবে সাধারণ মানুষ নিরাপত্তাহীনতায় বসবাস করছে। কখন কে কোন সময়ে অপহরণ হয়ে যায়, সেই ভয়ে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছে উপজেলার আশপাশের বাসিন্দারা। ১১ হাজার ৬১৫ হেক্টর গহীন পাহাড়-জঙ্গলে আস্তানা ও টর্চার সেল তৈরি করেছে। মুক্তিপণের জন্য হাত পা ভেঁধে অমানবিক নির্যাতন করা হয়। কেউ কেউ ফিরে এসে পঙ্গু অবস্থায় মানবেতর জীবনযাপন করতেছে। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগও রয়েছে মুক্তিপণ না পেয়ে হত্যার পর মরদেহ গুম করার।আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে অনেকবার গুঁড়িয়ে দিয়েছে পাহাড়ে গড়ে তুলা তাদের টর্চার সেল।
শুক্রবার (৩ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় পাহাড় থেকে নেমে অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীরা ফাঁকা গুলিবর্ষণ করে, বাড়িতে ঢুকে মাথায় অস্ত্র ঠেকিয়ে, টেকনাফের বাহারছড়া ইউনিয়নের বড়ডেইল এলাকায় মৃত আব্বাস মিয়া’র ছেলে রাজমিস্ত্রী ছৈয়দ হোছাইন অপহরণ করে নিয়ে যায়।
গত ৩০ ডিসেম্বর বন বিভাগের কাজে নিয়োজিত শ্রমিকসহ তিন দিনের ব্যবধানে ৩০ জন অপহরণের শিকার হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর যৌথ অভিযান ও ভুক্তভোগীর পরিবার মুক্তিপণ দিয়ে ২৬ জন ফিরে এলেও এখনো চারজন অপহরণ চক্রের কবলে রয়ে গেছে। এর মধ্যে মুদি দোকানদার জসীমের কাছ থেকে ১০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করছে বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে। এ নিয়ে স্থানীয়দের মাঝে চরম আতংক বিরাজ করছে এবং সাঁড়াশি অভিযানের দাবি জানিয়েছেন।
বাহারছড়ার ৮ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য নুরুল ইসলাম বলেন, সন্ধ্যায় ফাঁকা গুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটেছে, এরপর বাড়ি থেকে একজনকে তুলে নিয়ে যাওয়ার খবর শুনেছি, তার আগে দিনের বেলায় আরো দুইজনকে ডেকে নিয়ে পাহাড়ে আটকে রেখে মুক্তিপণ দাবি করতেছে বলে সংবাদ শুনেছি।
বাহারছড়া তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ পুলিশ পরিদর্শক শোভন কুমার সাহা জানিয়েছেন, ফাঁকা গুলিবর্ষণের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌছেছে, বিষয়টি গুরুত্বসহকারে সহকারে দেখছি, এছাড়া অপহৃত জসীমকে উদ্ধা অভিযান চলমান রয়েছে।
‘গত ২৫ নবেম্বর চকরিয়া থেকে টেকনাফের রফিক নামক এক ব্যক্তির কাছে গরু কেনার জন্য আসি। টেকনাফের জিরো পয়েন্ট থেকে আমাকে সিএনজি করে নিয়ে যায় সদরের লেঙ্গুরবিল রোড দিয়ে নতুন পল্লানপাড়ার একটি বাড়িতে নিয়ে যায়। পরবর্তীতে ৮-১০ জন অস্ত্রসস্ত্র নিয়ে মাথায় অস্ত্র ঠেকিয়ে পাহাড়ে নিয়ে গিয়ে মারধর করে মুক্তিপণ দাবি করে। পড়ে প্রাণ ভিক্ষা চেয়ে ৬ লাখা টাকা মুক্তিপণ দিয়ে ফিরে আসি’। এসব কথা বলছেন কক্সবাজারের চকরিয়ার দিনের পান খালি ২ নং ওয়ার্ডের শামসুল হুদার ছেলে আবুল হাসেম ও চকরিয়ার ইয়ামসা এলাকার নিজাম।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, অপহরণের অভিযোগ প্রশাসনের কাছে জানানো হলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সুরাহা হচ্ছে না। অভিযোগ দিতে গিয়ে মাঝেমধ্যে ঘন্টার পর ঘন্টা থানার বারান্দায় দাঁড়িয়ে থাকতে হয়।আবার অপরাধীদের হুমকি-ধমকির কারণে অনেক ভুক্তভোগী বা তাদের স্বজনরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে অভিযোগ জানাতেইও সাহস পাচ্ছেন না। অনেক স্বজনরা র্যাব-পুলিশকে না জানিয়ে অপহরণকারীদের হাতে মুক্তিপণ দিয়ে ছেড়ে নিচ্ছে। যা সরকারি খাতায় এসব ঘটনা লিপিবদ্ধ হচ্ছে না। সেজন্য অধিকাংশ অপহরণকারী চক্রের সদস্যরা থেকে যাচ্ছে অধরা।
অপহরণকারীদের গ্রেপ্তার করা হলেও, জামিনে মুক্তি পেয়ে বেরিয়ে এসে আবারও অপহরণের মতো অপরাধে ফিরে যাচ্ছে। ভুক্তভোগী পরিবারের অনেকেরই অভিযোগ,পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে হলে অবশ্যই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে আরও সক্রিয় হতে হবে। অপহরণকারীদের জন্য কঠোর শান্তি ব্যবস্থা করতে হবে।
রোহিঙ্গা নিধন ও তাদের অভ্যন্তরীণ সমস্যার কারণে ২০১৭ সালে বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গা মিয়ানমার থেকে পালিয়ে এসে উখিয়া টেকনাফে আশ্রয় নেয় প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গা। ২০২৪ এর প্রথম থেকে নবেম্বর পর্যন্ত মিয়ানমারের মংডু দখলে নিতে জান্তা সরকার ও আরাকান আর্মির সাথে যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে বাংলাদেশে নতুন করে আশ্রয় নেয় প্রায় ৫০ হাজার রোহিঙ্গা। ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে উপজেলার প্রত্যেক শহর ও গ্রাম অঞ্চলের বিটে বাড়ি ও ভাড়া বাসায়। স্থানীয়রা এমনিতেই নানান সংকটে পড়েছেন। তার ওপর এখন যুক্ত হয়েছে অপহরণ বাণিজ্য।
মৃত্যুপথ থেকে মুক্তিপণ দিয়ে ফিরে আসা ভুক্তভোগী নুরুল মোস্তফা ও ফরিদ আলম লোমহর্ষক বর্ণনা দিলেন, অপহরণ করার সময় তারা দেখেনা রোহিঙ্গা নাকি বাংলাদেশী। আমাকে অপহরণ করে আমার মাকে ফোন করে ১০ লাখ টাকা মুক্তিপন চাই। মুক্তিপণ দিতে দেরি হওয়ায় আমাকে এমন ভাবে মারতে থাকে এক পর্যায়ে আমি বেহুশ হয়ে মাটিতে পড়ে যায়। আমার জ্ঞান ফেরার পরে আবার চোখ আর মুখ বেঁধে, গাছের ঢালে লটকায়ে পা উপরে দিয়ে মাথা নিচু করে হাত ও পায়ের হাড়ের মধ্যে সমান তালে মারতে থাকে।মাইর আর সহ্য করতে না পেরে বাড়িতে ফোন করে ৭০ হাজার টাকা দিয়ে প্রাণ রক্ষা করে চলে আসি।
আশেপাশের পরিস্থিতি নিয়ে আরও বলেন, আমাকে ধরে নিয়ে যাওয়ার একদিন আগে, মুক্তিপন দিতে দেরি হওয়াই মোচনী গ্রামের একটা ছেলেকে ধরে নিয়ে গিয়ে হাত পা গাছের সাথে রশি দিয়ে বেঁধে,হাতের কব্জিটা কেটে ফেলে। ছেলেটার চিৎকারে শব্দ শুনতে পাই, আমাকে টাকা দিয়ে ছেড়ে নেয়ার মতো কেউই নেই। মুক্তিপণ না দিলে বিভিন্ন ধরনের অত্যাচার করে থাকে। ওখান থেকে প্রাণ নিয়ে বেঁচে ফিরতে হলে মুক্তিপণ দিয়ে আসতে হবে। তাদের চেনার কোন উপায় নেই। কারণ তারা মুখ ঢেকে রাখে। স্থানীয় ও রোহিঙ্গারা মিলে অপহরণ গুলো করে থাকে।
স্থানীয় ভুক্তভোগিরা জানান, সন্ধ্যা নামলে পাহাড়ি জনপদগুলো যেনো অন্যরকম পরিবেশ তৈরি হয়। মুখোশ পরা দুর্বৃত্তের দল অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে সাধারণ মানুষকে অপহরণ করে গহীন পাহাড়ে নিয়ে যায়। পরে স্বজনদের ফোনে প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে বলা হয় ‘বিষয়টি কাউকে না’ জানাতে। তাদের দেয়া সময় সীমার মধ্যে মুক্তিপণ দিতে না পাড়লে অমানবিক নির্যাতন করতে থাকে। এভাবেই চলছে টেকনাফের পাহাড়ি আশেপাশের জনগণের জীবনযাত্রা।
স্থানীয় ও রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীদের কয়েকটি তালিকা তৈরি করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তা হলো- রবিউল হাসান রবি গ্রুপ, এ চক্রের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে ডাকাতি, অপহরণ ও মানবপাচারের ৭ থেকে ১০টি করে মামলা রয়েছে। তারা হলো-পশ্চিম লেদা গ্রামের মো. হাসিমের ছেলে মো. রাসেল (২২), একই গ্রামের আবুল হোসেনের ছেলে আবদুর রহমান (৩৩), মো. নুরের ছেলে রবিউল হাসান রবি (২৩), তার ভাই ছৈয়দ নূর, রেদোয়ানোর ছেলে প্রকাশ রবুইয়া, মো. নুর প্রকাশ ইমান ওরফে ডাকাত ইমানের ছেলে ইমান হোসন (২৯), মৃত মকতুল হোসেনের ছেলে প্রকাশ ইমান হোসেন, হ্নীলা ইউপির রঙ্গীখালীর রহুল আমিনের ছেলে আনোয়ার হোসেন প্রকাশ।
মৌলভীবাজার হ্নীলা ইউপি বাদশাহ প্রকাশ ওরফে গরু বাদশাহ, ২২ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্প হোয়াইক্যংয়ের উনচিপ্রাংয়ের আবু শামার ছেলে তৈয়ব, হ্নীলা ইউপির রঙ্গীখালীর মিজানুর রহমান প্রকাশ ওরফে বাঘাইস্যা ডাকাত, গোরা মিয়ার ছেলে রেজাউল করিম (২৮), উলচামরী কোনার পাড়ার আবুল কালামের ছেলে মিজান (৩২), দক্ষিণ আলী খালির গবি সুলতানের ছেলে জমিল আহমদ (৩৬), আবুল মঞ্জুরের ছেলে আবদুল্লাহ (৩৪), জুম্মাপাড়ার মৃত সুলতান আহমেদের ছেলের ফরিদ আহমেদ (৩৩) ও লামার পাড়ার ইদ্রিসের ছেলে মনির (২৪)।
স্থানীয় ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী এবং জনপ্রতিনিধিদের ভাষ্য-এই চক্রটি বারবার গ্রেফতার হলেও জামিনে বেরিয়ে ফের অপহরণ, খুনসহ নানা অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছে।
গিয়াস গ্রুপের গিয়াস ডাকাত, আলম গ্রুপের শাহ আলম, ছলেহ গ্রুপের ছলেহ ও আলমগীর, জাহেদ গ্রুপের জাহেদ হোসেন, শফি উল্লাহ গ্রুপের শফি ও আবু হুরাইরাহ গ্রুপের আবু। তালিকায় অপহরণ চক্রের সদস্য হিসেবে নাম আছে-আবুল বশর, মকবুল আহম্মদ, মো. রুবেল, আব্দুর রহমান, মো. ফিরোজ, আবু ছিদ্দিক, মো. হোসেন ওরফে মাছন, আয়াতুল তমজিদ, সিরাজুল মাঝি ওরফে বার্মাইয়া সিরাজ, মো. ইসমাইল, জয়নাল, ফরিদ আহমদ, ওসমান, ফরিদ আহমদ, মো. হাছন, শহিদ উল্লাহ, মো. রয়াজ, মিজানুর রহমান, নুর মোহাম্মদ, মনির আহাম্মদ ও মোহাম্মদ আলী। বাহারছড়া এলাকার,স্থানীয় ডাকাত আব্দুল আমিন, জাকের হোসেন, ইমাম হোসেন ও নুরুল মোস্তফা অপহরণের সাথে যারা জড়িত তারা হলেন-ফদুইল্ল্যা গ্রুপ।
নরুল হোদা-প্রকাশ ফদুইল্ল্যা,চাবের আহমদের ছেলে-নরুল আবছার ও আব্বুইয়া,আব্দুল মজিদের ছেলে -আবুল কালাম ও শাহ আলম,নরুল হুদার ছেলে-কামরুল ইসলাম,প্রকাশ আব্বুইয়া,চব্বির আহমেদের ছেলে দেলোয়ার ও আনোয়ার,এঁরা আবার দেশীয় অস্ত্র বানানোর কারিগর,পাহাড়ে এমন স্থানা রয়েছে তাদের।নরুল আমিন ডাকাতের ছেলে-আব্দুল্লাহ ও আব্দুল খালেক,মৃত্যু নাজির হোসেনের ছেলে- মোহাম্মদ নূর,মোহাম্মদ এনামের ছেলে-মোহাম্মদ মোজাহেদ,সাইফুল ইসলাম বাঘুর ছেলে-কামরুল ইসলাম,আমির হামজার ছেলে-মিজানুর রহমান। আব্দুল হাকিমের ছেলে-চব্বির আহমদ,চাবের আহদের ছেলে-নরুল আমিন,মৃত্যু নবী হোসেনের ছেলে-খাইর হোসেন ডাকাত,মোহাম্মদ হোসেনের ছেলে -বশির আহমদ,উত্তর আলী খালীর মোহাম্মদ হোসেনের ছেলে ইব্রাহিম,দুদু মিয়ার ছেলে জাকির হোসেন,সবাই রঙ্গিখালী গাজীপাড়ার।অপহরণ কারিদের আশ্রয়স্থল হলো গাজী পাড়ার গাজী পাহাড়ে।গাজী পাড়ার সাথে লাগোয়া গাজী পাহাড় হওয়ায়,যার কারণে অপকর্ম করে আশ্রয় নেয় এ পাহাড়ে।
স্থানীয় ইউপি সদস্য জামাল হোসেন বলেন, পাহাড়ি এলাকার সন্ত্রাসীও অপহরণ কারিদের বিষয় অবগত আছি। আমার এলাকায় কিছু স্থানীয় অপহরণকারী রয়েছে,তাদের বিরুদ্ধে মুখ খুললে তুলে নিয়ে যাবে। আমার আগের সাবেক এক ইউপি সদস্যকে উক্ত সন্ত্রাসীরা গুলি করে হত্যা করে।তাই আমরা নানাভাবে অপহরণে আতংকে আছি।
এ বিষয়ে হ্নীলা ইউনিয়ন চেয়ারম্যান রাশেদ মোহাম্মদ আলী বলেন, রঙ্গীখালী এলাকায় কিছু অপরাধী রয়েছে। তাদের সঙ্গে রোহিঙ্গাও জড়িত। এসব অপরাধীদের আইনের আওতায় আনা গেলে অপহরণসহ সব ধরনের অপরাধ কমে আসবে । এজন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে আরও কঠোর হতে হবে। পাহাড়ি সন্ত্রাসীদের ভয়ভীতির কারণে,এলাকার মানুষ যদি জনস্বার্থে কাজ না করে তা হলে অপহরণ বানিজ্য রোধকরা সম্ভব না। আমার নির্বাচনীয় এলাকার খেটে-খাওয়া মানুষ মুক্তিপণ দিতে দিতে নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছে।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপর ক্ষোভ করে যা বলছেন স্বজনরা-অপহৃতদের এক স্বজন (নাম প্রকাশ না করার শর্তে)
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপর ক্ষোভ করে বলেন, অপহরণের শিকার এক যুবকের মা বলেন,ফেইসবুকে দেখলাম পুলিশ নাকি উদ্ধার করেছে। অথচ ডাকাতদের টাকা দিয়ে ছেলেকে ফিরিয়ে এনেছি।’ পুলিশের উদ্ধার করার কৃতিত্ব নিয়ে ক্ষোভ জানালেন টেকনাফের পাহাড়ি এলাকার বাসিন্দারা।
পানখালি এলাকার এক দোকানদার বলেন, পাহাড়ে তেমন কোনো অভিযান চালায় না আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।অপহরণের পর দুই এক মাইল হেঁটেই চলে আসেন তারা । অথচ তারা চাইলেই ড্রোন কিংবা আধুনিক প্রযুক্তি দিয়ে অভিযান চালাতে পারতেন।গরীব মানুষ গুলো মুক্তিপন দিতে গিয়ে নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছে।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সূত্র বলছে, গত এক বছরে টেকনাফে অন্তত ১৯১ জন অপহরণের শিকার হয়েছেন। তাদের মধ্যে দেড় শতাধিক মুক্তিপণ দিয়ে ফিরে এসেছে । গত বছরের জানুয়ারি থেকে ২০২৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত ১৩৮ অপহৃতকে উদ্ধার করেছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। ২০২৪ সালের ১৮ আগস্ট থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত টেকনাফ থানায় মামলা হয়েছে ২০ টি।
এ বিষয়ে বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের পরিদর্শক শোভন কুমার শাহা বলেন, ক্রাইম জোন এলাকায় যেতে আমাদের দূরত্ব বেশি। যেহেতু শামলাপুর তদন্ত কেন্দ্র থেকে নোয়াখালী পাড়া যেতে ২৫ কিলোমিটার আর কচ্চপিয়া এলাকায় যেতে সময় লাগে ২০ কিলোমিটার। এ ক্রাইম জোন এলাকায় অপরাধ নিয়ন্ত্রণের জন্য বিভিন্ন চেকপোস্টে টহল জোরদার কারা হয়েছে। ওই ক্রাইম জোন এলাকায় আমাদের পুলিশ টহল রয়েছে। বাকী ৪ জন অপহৃতদের উদ্ধার অভিযান চলমান। তিনি আরো বলেন ভিক্টিমের পরিবার যদি আমাদের সাথে যোগাযোগ করতো উদ্ধার অভিযান টা আমাদের জন্য সহজ হয়তো।
টেকনাফ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. গিয়াস উদ্দিন বলেন, অপহরণ রোধে অস্ত্রধারীদের ধরতে অভিযান চলমান রয়েছে। এ বছরের জানুয়ারি থেকে ২৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত ১৩৮ অপহৃতকে উদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছি। এসব ঘটনায় ২০টি মামলায় বেশ কয়েকজন অপহরণকারীকে আটক করতে সক্ষম হয়েছিল।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বলেন, যতগুলা অপহরণ হয়েছে তাদের উদ্ধার করা হয়। এছাড়া ছাড়া ক্রাইম জোন এলাকায় নতুন করে পুলিশ ফাঁড়ি বা চেকপোস্ট বসানোর জন্য আগামী দু’একদিনের মধ্যে আইনশৃঙ্খলা মিটিং হবে বিষয় টা নিয়ে ওখানে আলোচনা করা হবে।