বই পেলো না সব শিক্ষার্থী
- সংবাদ প্রকাশের সময় : ০৮:১৭:২৮ অপরাহ্ন, বুধবার, ১ জানুয়ারী ২০২৫ ৪৮ বার পড়া হয়েছে
নতুন বছরের প্রথম দিন বুধবার সারা দেশে বিনামূল্যের সরকারি পাঠ্যবই বিতরণ করা হলেও অনেক শিক্ষার্থী বই পায়নি। এর ফলে তারা হতাশ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছে। তবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বলছেন, শিগগিরই বঞ্চিত শিক্ষার্থীরা বই পাবে। এদিকে, বছরের প্রথম দিনে সব শিক্ষার্থীর হাতে নতুন বই তুলে দিতে না পেরে দু:খ প্রকাশ করেছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ।
বুধবার সকালে রাজধানীর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, নতুন বছরের প্রথম দিনে সারা দেশের সব শিক্ষার্থীর হাতে নতুন বই তুলে দিতে না পেরে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের কাছে আমরা আন্তরিক দুঃখিত।
জানা গেছে, সারা দেশের ন্যায় ফেনীতেও গতকাল বই বিতরণ করা হয়। এখানে প্রাথমিক শিক্ষার প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য শতভাগ বই বিতরণ সম্পন্ন হলেও চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির বই এখনও পুরোপুরি আসেনি। অন্যদিকে মাধ্যমিক পর্যায়ে বই সংকটের কারণে এখনো অধিকাংশ শিক্ষার্থীর হাতে নতুন বই পৌঁছায়নি। বই সংকটের কারণে অনেক শিক্ষার্থীকেই ফিরে যেতে হয়েছে মলিন মুখে।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, ২০২৫ শিক্ষাবর্ষে ফেনীর প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে মোট ৫ লাখ ৬৬ হাজার ৫৭৬টি বই বরাদ্দ করা হয়েছে। এর মধ্যে প্রথম তিন শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য প্রয়োজনীয় শতভাগ বই এসেছে। তবে চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির চাহিদার এখনও ৩ লাখ ১৬১টি বই আসেনি। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নাসির উদ্দিন আহমেদ বলেন, প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণির শতভাগ বই এসেছে। চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির বইও দ্রুত চলে আসবে। অন্যদিকে, মাধ্যমিক ও মাদ্রাসা পর্যায়ে বই পায়নি শিক্ষার্থীরা। জেলা শিক্ষা অফিসের তথ্যমতে, ফেনীতে মাধ্যমিক ও মাদ্রাসা পর্যায়ে মোট ৩ লাখ ৬৬ হাজার ৮৭৮ জন শিক্ষার্থীর জন্য ৩৭ লাখ ৩২ হাজার ৭৭৬টি বই প্রয়োজন। কিন্তু এখন পর্যন্ত মাত্র ৪৭ হাজার ৪০০টি বই এসেছে। যা চাহিদার মাত্র ১ দশমিক ২৬ শতাংশ।
এদিকে, রংপুরে বইয়ের পর্যাপ্ত সরবরাহ না থাকায় শিক্ষার্থীরা শতভাগ নতুন বই পায়নি। মাধ্যমিকে এখন পর্যন্ত ৬৫ শতাংশ বই আসেনি। প্রাথমিকে ৪৫ শতাংশ বই এলেও তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির সব বই আসেনি। এই তথ্য সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। এবছর অনেক শিক্ষার্থীই বছরের প্রথম দিনে নতুন বই স্পর্শ করতে পারেনি। পহেলা জানুয়ারি থেকে এসব বই শিক্ষার্থীদের হাতে পৌঁছে দেয়ার জন্য শিক্ষা অফিস কাজ করলেও বই সংকটের কারণে বিতরণ অনুষ্ঠানে ভাটা পড়েছে।
বুধবার সকাল দশটায় রংপুর নগরীর আশরতপুর এলাকার শহীদ শংকু সমজদার বিদ্যানিকেতনে শিশু শিক্ষার্থীদের মাঝে নতুন বই বিতরণ করা হয়। এ উপলক্ষ্যে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন তিস্তা ইউনিভার্সিটির বোর্ড অব ট্রাস্টিজ এর চেয়ারম্যান আশরাফুল আলম আল আমিন। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন শহিদ শংকু সমজদার বিদ্যানিকেতনের প্রধান শিক্ষক রওজাতুন নাহার প্রেমা। এদিন বিনামূল্যে প্রথম থেকে তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থীদের হাতে নতুন বই তুলে দেন অতিথিরা। সরবরাহ না থাকায় চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের বই দেওয়া হয়নি।
রংপুর বিভাগীয় প্রাথমিক শিক্ষা উপ-পরিচালকের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, রংপুর বিভাগে সাড়ে ৯ হাজার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ৩০ লাখ শিক্ষার্থী রয়েছে। এ বিভাগের আট জেলায় প্রায় ১ কোটি ১০ লাখ ৮০ হাজার বইয়ের প্রয়োজন হলেও গত মঙ্গলবার পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট জেলাগুলোতে প্রায় ৪৭ লাখ ৭৮ হাজার বই পাঠানো হয়। শতকরা ৫৬ শতাংশ বই এখনো আসেনি। রংপুরে ২১ লাখ ৮৫ হাজার ৯৯০ বইয়ের মধ্যে ১৬ লাখ ৫৮ হাজার ৪২৫, ঠাকুরগাঁওয়ে ১০ লাখ ৯৪ হাজার ৮১৯ মধ্যে ৫ লাখ ৭৮ হাজার ৪৭৬ ও পঞ্চগড়ে ৬ লাখ ১২ হাজার ৪০৪ মধ্যে ২০ হাজার ৫৪৮টি বই দেওয়া হয়েছে।
দিনাজপুরে ১৯ লাখ ৫৬ হাজার ২৩১ মধ্যে ৪ লাখ ৯৮ হাজার ২১০, নীলফামারীতে ১৮ লাখ ১১ হাজার ৮১৫ মধ্যে ৭ লাখ ৪৯ হাজার ৯৭৫, লালমনিরহাটে ৮ লাখ ৮৩ হাজার ৭৬২ বইয়ের মধ্যে ৮ লাখ ১০ হাজার ৩৭২, কুড়িগ্রামে ১৩ লাখ ৮৫ হাজার ৩৩৪ মধ্যে ৮২ হাজর ৩৮০ ও গাইবান্ধা ১৯ লাখ ৪৯ হাজার ৮০২টি বইয়ের মধ্যে ৭ লাখ ৭৯ হাজার ৬৮৪টি পেয়েছে। রংপুর বিভাগের আট জেলায় প্রাক-প্রাথমিক থেকে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত কিছু বই এলেও মঙ্গলবার পর্যন্ত চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির বেশির ভাগ বই আসেনি। তবে নতুন বই পৌঁছে দেওয়ার কার্যক্রম পর্যায়ক্রমে অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
নাম প্রকাশ না করে শর্তে একাধিক শিক্ষক বলেন, নতুন বইয়ের প্রতি শিক্ষার্থীদের খুব আগ্রহ থাকে। কিন্তু বছরের শুরুতে বই না পেলে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের মনে যে আনন্দ থাকে, সেটা কিছুটা ভাটা পড়বে। অনেকে ক্লাসমুখী হতে চাইবে না। সে ক্ষেত্রে আমাদের একটু অসুবিধায় পড়তে হবে। রংপুর সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের অভিভাবক লতা রাণী বলেন, আমার মেয়ে এবার পঞ্চম শ্রেণিতে উঠবে। সে রংপুর সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ে পড়াশোনা করে। নতুন বইয়ের প্রতি বরাবরই তার খুব আগ্রহ। কিন্তু এবার বই না পেলে তার যে আনন্দ সেটা থাকবে না। এ বিষয়ে আগে থেকেই পদক্ষেপ নেওয়া উচিত ছিল।
এদিকে, মাধ্যমিক উচ্চশিক্ষা বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, রংপুর বিভাগে ৩ হাজারে বেশি মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১৪ লাখের ওপর। বইয়ের প্রয়োজন ৩ কোটি দুই লাখ ২৪ হাজার। সেখানে মঙ্গলবার পর্যন্ত বই এসেছে ৩৫ শতাংশ।
রংপুর বিভাগীয় প্রাথমিক শিক্ষা উপ-পরিচালক আজিজুর রহমান বলেন, বই আসছে। আশা করি জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহের মধ্যে সব বই পেয়ে যাবো। এবার কোনো আনুষ্ঠানিকতা না থাকলে আমরা বিভিন্ন বিদ্যালয়ে বই বিতরণের জন্য আমাদের কর্মকর্তারা গিয়েছিলেন।
রংপুর মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগীয় উপ-পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) আব্দুর রশিদ বলেন, আশা করি জানুয়ারির ৫ তারিখের মধ্যে সব বই পেয়ে যাবো।