যশোরে বললেন জামায়াতের আমিরের
দেশে একটা সুশাসন কায়েম করতে চাই
- সংবাদ প্রকাশের সময় : ০২:৪৮:২৬ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪ ১১৯ বার পড়া হয়েছে
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, আমরা যদি দেশের জন্যে কাজ করি- আপনাদের কাছে চারটি জিনিস প্রত্যাশা করি। প্রথমত আমরা আপনাদের ভালোবাসার কাঙ্গাল, একটু ভালোবাসা উপহার দেন। ভালেঅবাসার সাথে সাথে একটু সমর্থন ও সহযোগিতা চাই। এর পাশাপাশি জাতীয় চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আপনাদের যেন পাশে পাই আর এই জাতিকে বদলে ফেলার জন্যে আপনাদের অন্তরে যেন জায়গা পাই। এই চারটি জিনিস দেশবাসী যদি আমাদের উপহার দেয়, তাহলে আমরা চিরকাল কৃতজ্ঞ থাকবো। ক্ষমতায় যাওয়ার উদ্দেশ্য আমাদের নয়, দেশে একটা সুশাসন কায়েম করতে চাই।
শুক্রবার (২৭ ডিসেম্বর) বেলা ১২ টার দিকে যশোর শহরের কেন্দ্রীয় ঈদগাহে জেলা জামায়াতে ইসলামী আয়োজিত বিশাল ‘কর্মী সম্মেলনে’ প্রধানঅতিথির বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন।
দলীয় নেতাকর্মীদের উদ্দেশ করে জামায়াতের আমির বলেন, এই সংগঠন (জামায়াতে ইসলামী) বাদ দিয়ে একটি দুর্নীতিমুক্ত দেশ গড়ার স্বপ্ন আর কাদের নিয়ে দেখবে। চাঁদাবাজমুক্ত দেশ, দুঃশাসনমুক্ত দেশ হবে- মানুষ আপনাদের দিকে চেয়ে আছে। সেকারণে আমাদের এগিয়ে আসতে হবে; আরও কোরবানির জন্যে তৈরি হতে হবে।
সকাল থেকেই দলের নেতাকর্মীরা শহরের কেন্দ্রীয় ঈদগাহ, আশপাশের সড়ক এবং পাশের ঐতিহাসিক টাউন হল মাঠে অবস্থান নেয়। বিশাল এই কর্মী সম্মেলন মূলত জনসভায় রূপ নেয়। বেলা ১১টার দিকে প্রধানঅতিথি মঞ্চে আসেন।
জামায়াত ক্ষমতায় গেলে নারীদের বাড়ির বাইরে বের হতে দেবে না- এমন কথা উল্লেখ করে জামায়াতের আমির বলেন, আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা প্রচারণা চালানো হয়। দেশে ১৮ কোটি মানুষের ধরেন ৬ কোটি ঘর আছে অথবা তিন কোটির মতো। ভাবটা এমন, যেন আমরা তিন কোটি তালা কিনে রেখেছি। ক্ষমতায় গেলে আমরা সব ঘরে একটা করে তালা লাগিয়ে দেবো। এটি আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ।
তিনি ওহুদের যুদ্ধের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেন, যুদ্ধের সেই কঠিন সময়ে পুরুষরা তখন নবীজীর (সা.) পাশে ছিলেন না। তখন আমাদের গর্বিত মা হজরত মুসাইবা (রা.) রাসুলের (সা.) চারিপাশ ঘুরে ঘুরে তাকে নিরাপত্তা দিয়েছেন। তিনি যখন বারণ করেননি, তাহলে আমরা মহিলাদের ঘরবন্দী করে রাখার কে! বরং মায়েরা দেশের উন্নয়নে অবদান রাখতে পারেন তাদের দক্ষতা ও যোগ্যতা দিয়ে। এখন তো তাদের কোনও নিরাপত্তা নেই, মর্যাদাও দেয়া হয় না। বিভিন্ন জায়গায় লাঞ্ছিত হচ্ছেন। কোরআনি সমাজ কায়েম হলে তারা সম্মান ও মর্যাদা ভোগ করবেন। বলতে পারবেন, আমি এদেশের একজন গর্বিত মা।
বিগত সরকারকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, আপনারা ৫৩ টা বছর এ জাতির কপাল থেকে ছিনিয়ে নিয়েছেন। এ জাতিকে আপনারা দাসে পরিণত করেছেন। আমরা আর কোনও দাস হবো না।
১৬ ডিসেম্বর ভারতের প্রধানমন্ত্রী সেই দেশের বিজয় দিবস দাবি করলে আপনাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা কোথায় যায় উল্লেখ করে জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেন, বাংলাদেশের পক্ষে যখন একটা কথা ভারত উচ্চারণ করে না, তখন আপনাদের মুখে কোনও বুলি দেখি না। আমরা প্রতিবাদ করেছি, যারা দেশকে ভালবাসে- তারা প্রতিবাদ করেছে। যার চেতনা বিক্রি করে তাদের মুখে সেদিন কোনও বুলি আমরা দেখিনি। আপনাদের এই চেতনা, এই ভালোবাসা আপনাদের কাছেই রাখেন। গত সাড়ে ৫৩ বছর আমরা দেখেছি।। এখন দেশকে সামনের দিকে নিয়ে যাওয়ার সময়, সেই সুযোগটা দেন। রাস্তা পরিস্কার করে দেন।
জাতিকে সংখ্যালঘু ও সংখ্যাগুরুর তকমা দিয়ে বিভাজন সৃষ্টি করা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, এদেশে আল্লাহ যাদের পয়দা করেছেন, তারা রস কলেই এদেশের গর্বিত নাগরিক। সকলেরই সাংবিধানিক অধিকার সমান। আমরা ধর্ম-বর্ণ সবাই মিলেমিশে এদেশে বসবাস করবো।
সনাতনীদের উপর হামলা নির্যাতনের বিষয়ে তিনি বলেন, যারা আপনাদের উপর নির্যাতন চালায়, তাদের প্রতি রূঢ় না হয়ে দোষারোপ করেন ইসলামপন্থীদের উপরে। এরফলে দেখা যায়, ডাকাতরা দ্বিগুণ উৎসাহ নিয়ে আবার আপনাদের ক্ষতি করে। ২০১৩ সালে আমি জাতিসংঘে চিঠি দিয়ে এসব ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত চেয়ে একটি কমিটির পাঠানোর আহ্বান জানাই। তাদের সহযোগিতা করতেও চেয়েছিলাম। তাদের তদন্তে যদি আমি দোষী হই, তবু আমার শাস্তি দাবি করি। সেই তদন্ত হলে জানা যেতো, কারা জমি জবর দখল করে, কারা আপনাদের যন্ত্রণা ও জ্বালা দেয়, কারা আপনাদের সম্ভ্রমহানি করে। হিন্দু, খ্রিস্টান বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী ভাইবোনদের স্পষ্ট বলতে চাই- আমরা যে দেশের নাগরিক, আপনারাও সেই দেশের নাগরিক। এখানে সংখ্যালঘু ও সংখ্যাগুরুর কথা যারা বলবে, তাদের মুখের পরে চিৎকার করে বলুন- আমরা সমান অধিকারের ভিত্তিতে এই দেশের নাগরিক; আমার নাগরিক অধিকার চাই।
ইনসাফ কায়েম হলে কাউকে অধিকার চাইতে হবে না উল্লেখ করে জামায়াতের আমির বলেন, আমরা এমন রাষ্ট্র চাই যেখানে আকাশ-পাতাল ব্যবধান থাকবে না। কেউ গাছতলায় আবার কেউ ২০ তলায়- এমন হবে না অবস্থান। সমতা নয়, ভারসাম্য থাকবে। দেশের বিচারবিভাগের মেরুদণ্ড সোজা থাকবে, যাতে কেউ দ্বিতীয় চোখে না দেখে। সবাইকে একই চোখে দেখবে।তিনি কে- সেটি বিবেচ্য হবে না, অপরাধ করলে তার বিচারের আওতায় আনা হবে।
শিক্ষাব্যবস্থার পরিবর্তন আনা হবে জানিয়ে তিনি বলেন, আমাদের যুবরা সার্টিফিকেট নিয়ে দুয়ারে দুয়ারে ঘোরে তাদের কাঙ্ক্ষিত চাকরির আশায়। তারা চাকরি পায়নি। কারণ- একটি গোষ্ঠীর কাছে সমস্ত জাতির কিসমত হাইজ্যাক হয়ে গিয়েছিল। বাংলাদেশকে তারা তাদের জমিদারি মনে করতো। তাদের আনুগত্য যারা করতো না, দেশে তাদের বেঁচে থাকার কোনও অধিকার ছিল না। শিক্ষা ব্যবস্থার বিধ্বস্ত অবস্থা। এর মান বিশেষ করে নৈতিক মান থাকা উচিৎ। আমরা শিক্ষা দিয়ে এই দেশ থেকে গোড়া থেকে শুরু করবো যাতেশিক্ষিত ও জ্ঞানী মানুষ তৈরি হয়। এ জাতি বিশ্বের দরবারে বুক উঁচু করে দাঁড়াবে।
তিনি চাঁদাবাজিকে ঘৃণিত কাজ উল্লেখ করে তিনি বলেন, দুঃশাসনের বিরুদ্ধে আমাদের সন্তানরা জীবন দিয়েছে। আমরা যেন তাদের রনক্তের সাথে বেইমানি না করি, গাদ্দারি না করি। আপনারা দয়া করে কেউ চাঁদাবাজি, বাজারের দোকানপাট দখল, বালুমহাল-জলমহাল জোর করে দখল করবেন না। এই সমস্ত ঘৃণিত কাজের মাধ্যমে কোনও রিজিকের দরকার নেই।
দলের জেলা আমির অধ্যাপক গোলাম রসুলের সভাপতিত্বে কর্মী সম্মেলনে কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য মোবারক হোসেন, মুহাদ্দিস আব্দুল খালেক, মাওলানা আজীজুর রহমান, ঝিনাইদ জেলা আমির আলী আযম, মাগুরা আমির এমবি বাকের , নড়াইল জেলা আমির আতাউর রহমান বাচ্চু, শহিদ আব্দুল্লাহর বাবা আব্দুল জব্বার, মাওলানা হাবিবুর রহমান, মাওলানা আব্দুল আজিজ, ড. আব্দুল মান্নান, অ্যাড. গাজী এনামুল হক, মাওলানা আরশাদুল আলম, আব্দুল কাদের, অধ্যাপক মুক্তার আলী, ইসলামী ছাত্রশিবিরের শহর সভাপতি মোস্তফা কামাল, পশ্চিম সভাপতি আব্দুল্লাহ আল মামুন, জেলা ছাত্র শিবিরের সাবেক সভাপতি আশিকুজ্জামান প্রমুখ বক্তৃতা করেন।