ঢাকা ০৫:৪৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৫ জানুয়ারী ২০২৫, ২ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

নিজ দেশে ফিরতে চান রোহিঙ্গারা

চট্টগ্রাম ব্যুরো
  • সংবাদ প্রকাশের সময় : ১২:৪২:২৩ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪ ৪৩ বার পড়া হয়েছে
বাংলা টাইমস অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

বাংলাদেশে পালিয়ে এসে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গারা নিজ দেশ মিয়ানমারে ফিরে যেতে সমাবেশ করেছে। সমাবেশের মাধ্যমে তারা বাংলাদেশসহ বিশ্ববাসীর দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করেছে।

বুধবার (২৫ ডিসেম্বর) কক্সবাজারের উখিয়ার কুতুপালং ১ নম্বর ইস্ট রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অনুষ্ঠিত হয় এই গণসমাবেশ। যেখানে সমবেত হয়েছিল লক্ষাধিক বিভিন্ন বয়সী মানুষ।

এসময় রোহিঙ্গা নেতারা বলেন, নিমর্ম নির্যাতন ও গণহত্যা থেকে রক্ষা পেতে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া ক্যাম্পের শরণার্থী জীবনকে বন্দি খাঁচার পাখির জীবন। এ জীবন আমরা চাই না।

রোহিঙ্গারা বলেন, মিয়ানমার থেকে বাস্তুচ্যুত শরণার্থী জীবন খুবই কষ্টের। এই জীবন থেকে মুক্তি পেতে নাগরিক অধিকার ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য নিজ দেশে ফিরে যাওয়ার কোন বিকল্প নেই বলে মন্তব্য করেন।

কুতুপালং এক নাম্বার ক্যাম্পের মাঠে রোহিঙ্গা যুবকদের সংগঠন ‘ইসলামি মাহাসা’ নামের একটি সংগঠনের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত গণসমাবেশটি চলে সকাল ১০টা থেকে থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত। যেখানে সমবেত হয়েছিল লক্ষাধিক বিভিন্ন বয়সী মানুষ। এসব রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারের তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের জোরালো ভূমিকা দাবি করে নিজ দেশে দ্রুত সময়ের মধ্যে ফিরে যেতে নানা ধরনের স্লোগান দিয়েছেন।

সমাবেশে রোহিঙ্গা নেতা ডা. মোহাম্মদ জোবায়ের বলেন, রোহিঙ্গারা নিজেদের দেশ মিয়ানমারের রাখাইন (আরাকান) রাজ্যে ফিরে যেতে প্রস্তুত। জাতিসংঘ ও বাংলাদেশ সরকার সহযোগিতা করলে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া সহজ হবে রোহিঙ্গাদের দাবিসমূহ মিয়ানমার সরকার মেনে নিলে আমরা ফিরে যাব।

ডা. জোবায়ের তার বক্তব্যে বলেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্পের শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখা রোহিঙ্গাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য। সম্প্রতি মিয়ানমারের রাখাইন (আরাকান) রাজ্যে আরাকান আর্মির শক্তিশালী অবস্থানের কারণে ফিরতে আরও জটিলতা তৈরি হয়েছে। আরাকান আর্মিও রোহিঙ্গাদের নির্যাতন ও হত্যা করে যাচ্ছে। এর আগে মিয়ানমারের জান্তা সরকার রোহিঙ্গাদের ওপর যে গণহত্যা চালিয়েছিল তার সঠিক ও ন্যায় বিচারে এখনও হয়নি। রোহিঙ্গা নাগরিক অধিকার ও নিরাপত্তা এবং মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসনের ব্যবস্থা দ্রুত করার জন্য জাতিসংঘসহ বিশ্ব সম্প্রদায়কে এগিয়ে আসতে হবে।

তিনি বলেন, রোহিঙ্গাদের দাবিগুলো নিশ্চিত করা হলে আমরা স্বেচ্ছায় মিয়ানমার চলে যাব। রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে সারাজীবন থাকার জন্য আসেনি। বাংলাদেশ সরকার রোহিঙ্গাদের দায়িত্ব নিয়েছে, থাকার জন্য জমি দিয়েছে, ঘর দিয়েছে, খাবারের ব্যবস্থা করেছে। নিরাপত্তার জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা কাজ করছে। আমরা (রোহিঙ্গারা) বাংলাদেশের মানুষ ও সরকারের কাছে সারাজীবন ঋণী হয়ে থাকবো।

সমাবেশে রোহিঙ্গা নেতা রাহমত করিম বলেন, ক্যাম্পের এমন জরাজর্ণী বন্দি জীবন মানুষের জন্য না। এখানে বাংলাদেশ যে উদারতা দেখিয়েছে তার জন্য রোহিঙ্গারা কৃতজ্ঞ। এখন সারা বিশ্ববাসিকে রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ন্যায় সঙ্গত ফেরতে ব্যস্ত নেয়া জরুরি।

রোহিঙ্গা ক্যাম্পের আইন শৃঙ্খলায় নিয়োজিত ১৪ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন) অধিনায়ক অতিরিক্ত ডিআইজি সিরাজ আমিন রোহিঙ্গাদের সমাবেশের সত্যতা নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, কোন ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়া শান্তিপূর্ণভাবে রোহিঙ্গাদের গণসমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। তারা নিজদেশে ফিরে যেতে এ সমাবেশ করেছেন বলেন জানান এপিবিএনের এ কর্মকর্তা।

ক্যাম্পে রোহিঙ্গারা নিজেদের মধ্যে হানাহানি ও বিভিন্ন অপরাধ প্রবণতা বন্ধসহ শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের লক্ষ্যে এই সমাবেশ আয়োজন করেছে বলে জানিয়েছেন কক্সবাজারের শরাণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মদ মিজানুর রহমান। তিনি বলেন, এই সমাবেশটি গত পরশু (সোমবার) আয়োজনের জন্য অনুমতি গ্রহণ করেছে। বুধবার শান্তিপূর্ণ সমাবেশটি শেষ হয়েছে।

উল্লেখ্য, ২০১৭ সালে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে বিতাড়িত হয়ে ১২ লাখের বেশি রোহিঙ্গা কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের ৩৩টি ক্যাম্পে এবং নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলার ভাসান চরে রয়েছে। সাম্প্রতিক সময় মিয়ানমারের সশস্ত্র বিদ্রোহী সংগঠন আরাকান আর্মি সাথে জান্তা বাহিনীর সংঘাত ও সহিংসতার জেরে আরো ৬০ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের বিভিন্ন ক্যাম্পে আশ্রয় নিয়েছে। সীমান্তে অনুপ্রবেশের চেষ্টা করছেন অনেক রোহিঙ্গাও।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

ট্যাগস :

নিজ দেশে ফিরতে চান রোহিঙ্গারা

সংবাদ প্রকাশের সময় : ১২:৪২:২৩ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪

বাংলাদেশে পালিয়ে এসে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গারা নিজ দেশ মিয়ানমারে ফিরে যেতে সমাবেশ করেছে। সমাবেশের মাধ্যমে তারা বাংলাদেশসহ বিশ্ববাসীর দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করেছে।

বুধবার (২৫ ডিসেম্বর) কক্সবাজারের উখিয়ার কুতুপালং ১ নম্বর ইস্ট রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অনুষ্ঠিত হয় এই গণসমাবেশ। যেখানে সমবেত হয়েছিল লক্ষাধিক বিভিন্ন বয়সী মানুষ।

এসময় রোহিঙ্গা নেতারা বলেন, নিমর্ম নির্যাতন ও গণহত্যা থেকে রক্ষা পেতে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া ক্যাম্পের শরণার্থী জীবনকে বন্দি খাঁচার পাখির জীবন। এ জীবন আমরা চাই না।

রোহিঙ্গারা বলেন, মিয়ানমার থেকে বাস্তুচ্যুত শরণার্থী জীবন খুবই কষ্টের। এই জীবন থেকে মুক্তি পেতে নাগরিক অধিকার ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য নিজ দেশে ফিরে যাওয়ার কোন বিকল্প নেই বলে মন্তব্য করেন।

কুতুপালং এক নাম্বার ক্যাম্পের মাঠে রোহিঙ্গা যুবকদের সংগঠন ‘ইসলামি মাহাসা’ নামের একটি সংগঠনের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত গণসমাবেশটি চলে সকাল ১০টা থেকে থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত। যেখানে সমবেত হয়েছিল লক্ষাধিক বিভিন্ন বয়সী মানুষ। এসব রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারের তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের জোরালো ভূমিকা দাবি করে নিজ দেশে দ্রুত সময়ের মধ্যে ফিরে যেতে নানা ধরনের স্লোগান দিয়েছেন।

সমাবেশে রোহিঙ্গা নেতা ডা. মোহাম্মদ জোবায়ের বলেন, রোহিঙ্গারা নিজেদের দেশ মিয়ানমারের রাখাইন (আরাকান) রাজ্যে ফিরে যেতে প্রস্তুত। জাতিসংঘ ও বাংলাদেশ সরকার সহযোগিতা করলে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া সহজ হবে রোহিঙ্গাদের দাবিসমূহ মিয়ানমার সরকার মেনে নিলে আমরা ফিরে যাব।

ডা. জোবায়ের তার বক্তব্যে বলেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্পের শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখা রোহিঙ্গাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য। সম্প্রতি মিয়ানমারের রাখাইন (আরাকান) রাজ্যে আরাকান আর্মির শক্তিশালী অবস্থানের কারণে ফিরতে আরও জটিলতা তৈরি হয়েছে। আরাকান আর্মিও রোহিঙ্গাদের নির্যাতন ও হত্যা করে যাচ্ছে। এর আগে মিয়ানমারের জান্তা সরকার রোহিঙ্গাদের ওপর যে গণহত্যা চালিয়েছিল তার সঠিক ও ন্যায় বিচারে এখনও হয়নি। রোহিঙ্গা নাগরিক অধিকার ও নিরাপত্তা এবং মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসনের ব্যবস্থা দ্রুত করার জন্য জাতিসংঘসহ বিশ্ব সম্প্রদায়কে এগিয়ে আসতে হবে।

তিনি বলেন, রোহিঙ্গাদের দাবিগুলো নিশ্চিত করা হলে আমরা স্বেচ্ছায় মিয়ানমার চলে যাব। রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে সারাজীবন থাকার জন্য আসেনি। বাংলাদেশ সরকার রোহিঙ্গাদের দায়িত্ব নিয়েছে, থাকার জন্য জমি দিয়েছে, ঘর দিয়েছে, খাবারের ব্যবস্থা করেছে। নিরাপত্তার জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা কাজ করছে। আমরা (রোহিঙ্গারা) বাংলাদেশের মানুষ ও সরকারের কাছে সারাজীবন ঋণী হয়ে থাকবো।

সমাবেশে রোহিঙ্গা নেতা রাহমত করিম বলেন, ক্যাম্পের এমন জরাজর্ণী বন্দি জীবন মানুষের জন্য না। এখানে বাংলাদেশ যে উদারতা দেখিয়েছে তার জন্য রোহিঙ্গারা কৃতজ্ঞ। এখন সারা বিশ্ববাসিকে রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ন্যায় সঙ্গত ফেরতে ব্যস্ত নেয়া জরুরি।

রোহিঙ্গা ক্যাম্পের আইন শৃঙ্খলায় নিয়োজিত ১৪ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন) অধিনায়ক অতিরিক্ত ডিআইজি সিরাজ আমিন রোহিঙ্গাদের সমাবেশের সত্যতা নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, কোন ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়া শান্তিপূর্ণভাবে রোহিঙ্গাদের গণসমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। তারা নিজদেশে ফিরে যেতে এ সমাবেশ করেছেন বলেন জানান এপিবিএনের এ কর্মকর্তা।

ক্যাম্পে রোহিঙ্গারা নিজেদের মধ্যে হানাহানি ও বিভিন্ন অপরাধ প্রবণতা বন্ধসহ শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের লক্ষ্যে এই সমাবেশ আয়োজন করেছে বলে জানিয়েছেন কক্সবাজারের শরাণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মদ মিজানুর রহমান। তিনি বলেন, এই সমাবেশটি গত পরশু (সোমবার) আয়োজনের জন্য অনুমতি গ্রহণ করেছে। বুধবার শান্তিপূর্ণ সমাবেশটি শেষ হয়েছে।

উল্লেখ্য, ২০১৭ সালে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে বিতাড়িত হয়ে ১২ লাখের বেশি রোহিঙ্গা কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের ৩৩টি ক্যাম্পে এবং নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলার ভাসান চরে রয়েছে। সাম্প্রতিক সময় মিয়ানমারের সশস্ত্র বিদ্রোহী সংগঠন আরাকান আর্মি সাথে জান্তা বাহিনীর সংঘাত ও সহিংসতার জেরে আরো ৬০ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের বিভিন্ন ক্যাম্পে আশ্রয় নিয়েছে। সীমান্তে অনুপ্রবেশের চেষ্টা করছেন অনেক রোহিঙ্গাও।