কৃষক নজিরের কান্না কে থামাবে?
- সংবাদ প্রকাশের সময় : ১২:৪৮:২২ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪ ৬১ বার পড়া হয়েছে
জীবনে কাউকে কোন দিন গালমন্দ করিনি। কারও সঙ্গে কোন বিরোধও নেই। শুধু কাজ করি আর খাই। এ বছর নিজের ১০ কাঠা জমিতে লাউ চাষ করেছিলাম। সপ্তাহ দু’য়েক হলো লাউ ধরা শুরু হয়েছে। এরমধ্যে প্রায় ১২ হাজার টাকার লাউ বিক্রিও করেছি। আর বানের সতেজ সব গাছগুলোতে ঝুলছে ছোট,বড়, মাঝারি বিভিন্ন আকারের অসংখ্য তরতাজা লাউ। এখন বাজারে সবজির দাম ভালো তাই আশা করেছিলাম দারদেনা মিটিয়ে লাউ বিক্রি করেই সংসার চালাতে পারবো। কিন্ত সবই শেষ হয়ে গেলো।
এ কথা বলতে বলতে কান্নায় ভেঙে পড়েন ঝিনাইদহ কালীগঞ্জের বাকুলিয়া গ্রামের কৃষক নজির আহম্মেদ। তিনি ওই গ্রামের মৃত তছের আলীর ছেলে। বৃহস্পতিবার (১৯ ডিসেম্বর) রাতে তার ধরন্ত ক্ষেতের সব লাউ গাছগুলো কে বা কারা কেটে সাবাড় করে দিয়েছে। এখন ক্ষেতে বসেই তিনি অঝোরে কাঁদছেন।
কৃষক নজির আহম্মেদ জানান, তার বসতবাড়ির পাশে মাঠের ১০ কাঠা জমিতে লাউয়ের চাষ করেছেন। এ পর্যন্ত দায়দেনার মাধ্যমে গাছের পরিচর্যা ও বান দিতে প্রায় ৫০ হাজারের কাছাকাছি খরচ করেছেন। অল্প কয়দিন আগে থেকে লাউ ধরা শুরু হয়েছে। গত ১০ দিনে বেশ কিছু টাকার লাউ বিক্রি করেছেন। এখন পুরোপুরি লাউ ধরা শুরু হয়েছে যা এক দিন পর পর ১২০/১৩০ টি করে লাউ তুলে প্রতিটা ৩৫/৪০ টাকায় বিক্রি করছেন। কিন্ত শুক্রবার ভোরেও ক্ষেতের লাউ তুলতে গিয়ে দেখলেন ক্ষেতের সবগাছ গোড়া থেকে কাটা।
তিনি বলেন, জীবনে তার সঙ্গে কারও কোনদিন গোলমাল হয়নি। তিনি কোন রাজনীতির সঙ্গে জড়িত নয়। কারও সঙ্গে কোনদিন ভূল বোঝাবুঝিরও ঘটনা ঘটেছে এমন কিছু তার মনে পড়ে না। এমনকি কারও কোনদিন ক্ষতি করেননি। কিন্ত কারা তার এতো বড় ক্ষতি করলো। বলতে বলতে কান্নায় ভেঙে পড়েন।
প্রতিবেশী মহিদুল ইসলাম জানান, তাদের গ্রামের মধ্যে নজির আহম্মেদ একজন নিরীহ ও শান্ত প্রকৃতির মানুষ। সে জীবনে কারও জোরে কথা বলেছে বা কারও কোন ক্ষতি করেছে এমন কোন নজির নেই। অথচ রাতের আধারে কে বা কারা তার ধরন্ত লাউ গাছগুলো কেটে দিয়ে বিরাট ধরনের ক্ষতি করে দিয়েছে।
তিনি বলেন, খবর শুনে সকালে তার লাউ ক্ষেতে গিয়েছিলেন। অসংখ্য লাউ বানে ঝুলছে। কিন্ত গাছগুলোর গোড়া থেকে কেটে দেয়া। ধরন্ত ক্ষেত কেটে দেয়াটা এক ধরনের পশুবৃত্তি ছাড়া আর কিছুই না। তিনি আরও বলেন, কোন কৃষকের ক্ষেত নষ্ট হলে সে ক্ষতি পুশিয়ে উঠা কষ্ট। বিষয়টি অমানবিক।
সুলতান আহম্মেদ জানান, কৃষকেরা ক্ষেতের ফসলটাকে নিজের সন্তানের মত করে বড় করে। মেধা শ্রম অর্থ সবই থাকে এর পেছনে। কিন্ত ধরন্ত ক্ষেত নষ্ট হয়ে গেলে ওই কৃষকের মনের কষ্ঠের সীমা থাকে না। তিনি বলেন, দুর্বৃত্তরা হয়তো গাছগুলো কেটে দিয়ে ক্ষেত মালিকের ক্ষতি করেছে ঠিকই কিন্ত এতে তাদের কি কোন লাভ হয়েছে ?
তিনি বলেন, তদন্তপূর্বক জড়িতদের শাস্তির আওতায় আনা জরুরী।
কালীগঞ্জ থানার অফিসার্স ইনচার্জ শহিদুল ইসলাম জানান, লাউ ক্ষেত কেটে দিয়েছে এমন অভিযোগ পেয়ে তিনি পুলিশ পাঠিয়েছিলেন। তদন্ত চলছে। তিনি বলেন, একজন কৃষকের ভরা ক্ষেত নষ্ট করাটা অত্যন্ত দুঃখজনক।