ঢাকা ০৫:৩৬ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৭ জানুয়ারী ২০২৫, ৩ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বললেন ডা. শফিকুর রহমান

মৌলিক সংস্কার শেষে যৌক্তিক সময় নির্বাচন দিতে হবে

কুমিল্লা প্রতিনিধি
  • সংবাদ প্রকাশের সময় : ০৬:০৬:৩৪ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৬ ডিসেম্বর ২০২৪ ৪৭ বার পড়া হয়েছে
বাংলা টাইমস অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, প্রশাসনের সর্বস্তরে সংস্কারের জন্য আমরা সরকারকে সময় দিয়েছি। প্রয়োজনে আরও দেবো। তবে মৌলিক সংস্কার করে যৌক্তিক সময় নির্বাচন দিতে হবে। ২০২৪ সালের জুলাই গণহত্যার বিচার করতে হবে। তবে আমরা আইন হাতে তুলে নিতে চাই না। পরাজিত শক্তি এখনও বিদেশে বসে দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে।

তিনি বলেন, ভারতীয় মিডিয়ায় মিথ্যাচার চালিয়ে বাংলাদেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করতে করতে চেয়েছিলো। কিন্ত এদেশের মানুষ তাদের সে পাতা ফাঁদে পা দেয়নি। দেশের প্রশ্নে সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে সে ষড়যন্ত্র রুখে দিয়েছে। আমরা কোনো আগ্রাসন সহ্য করবো না, দেশের এক ইঞ্চি মাটিও কাউকে ছাড় দেব না।

তিনি আরও বলেন, আমরা কাউকে ধর্মের ভিত্তিতে ভাগ করতে চাই না। সবার পরিচয় হবে আমরা বাংলাদেশি। কুমিল্লা নামে বিভাগ না দেয়ায় বিগত সরকারের সমালোচনা করে তিনি বলেন, নামের কারণে বিভাগ না দিয়ে একটি জেলার মানুষের প্রতি জুলুম করা হয়েছে। তিনি কুমিল্লা নামে বিভাগ বাস্তবায়নের দাবি জানান। এছাড়াও কুমিল্লা বিমানবন্দর সচলের যৌক্তিকতাও তুলে ধরেন তিনি।

শুক্রবার (৬ ডিসেম্বর) সকালে কুমিল্লা টাউন হল মাঠে অনুষ্ঠিত মহানগর জামায়াতের কর্মী সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে জামায়াতের আমীর এসব কথা বলেন।

পিলখানায় ৫৭ জন সেনাকর্মকর্তা হত্যার প্রসঙ্গে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, পিলখানা হত্যার সুষ্ঠু তদন্ত করে বিচার করতে হবে। তিনি বলেন, মাইনরিটি শব্দ ব্যবহার করে একটি গোষ্ঠি দেশের বাইরে থেকে নিজেদের স্বার্থ হাসিল করতে চায়।

জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে তিনি বলেন, জনগণ অতীত বর্তমান ভবিষ্যৎ বিচার করে সিদ্ধান্ত নিবে কাকে বেছে নিবে। অতি দ্রুত যৌক্তিক সময়ে নির্বাচন দেয়ার আহবান জানান। তিনি বলেন, জনগণের রায়ে জামায়াত ক্ষমতায় গেলে দুর্নীতি করবো না, দুর্নীতি করতেও দিবো না। দুর্নীতির মৃত্যু হবে সুনীতির জয় হবে। সকল ধর্মের মানুষ তার ধর্মপালন করবে। ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি করা যাবে না।

জামায়াত আমীর আরও বলেন, গত সাড়ে ১৫ বছর আদালত আঙ্গিনা ছিল বিরোধী দলীয় নেতাকর্মীদের দখলে। মূলত পিলখানায় হত্যাকাÐের মাধ্যমে দেশের অস্তিত্ব ধ্বংস করার মিশন শুরু হয়। এরপর ধাপে ধাপে মানুষের মৌলিক অধিকার হরণ করা হয়। বিরোধী দলের গণতান্ত্রিক অধিকার ছিলো না। বিশেষ করে জামায়াতের ওপর সবচেয়ে বেশি অবিচার করা হয়। আমাদের শীর্ষ নেতাদের একে একে মিথ্যা মামলায় ফাঁসি দেয়া হয়। অনেক বয়োজ্যেষ্ঠ নেতাদের কারাগারে রেখে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়া হয়। আমাদের কার্যালয়গুলো অন্যায়ভাবে বন্ধ রাখা হয়। তবে এতো নির্যাতনের পরও আল্লাহর রহমত ও নেতাকর্মীদের ত্যাগের বিনিময়ে আমরা টিকে আছি।

শেখ হাসিনাকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, বিদেশে বসে ষড়যন্ত্র করে কোনো লাভ নেই। দেশের প্রশ্নে জাতি এখন ঐক্যবদ্ধ। তিনি শিক্ষা ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানোর দাবি জানিয়ে বলেন, বাস্তবভিত্তিক শিক্ষা কারিকুলাম প্রণয়ণ করতে হবে।

কুমিল্লা মহানগর জামায়াতের আমির কাজী দ্বীন মোহাম্মদের সভাপতিত্বে এবং নায়েবে আমির অধ্যাপক এ কে এম এমদাদুল হক মামুন ও সেক্রেটারি মাহবুবুর রহমানের যৌথ পরিচালনায় প্রধান বক্তার বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির সাবেক এমপি ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মু. তাহের।

বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এটিএম মাছুম, মাওলানা আব্দুল হালিম, অ্যাডভোকেট জসীম উদ্দিন সরকার, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য মু. আবদুর রব, মোবারক হোসেন, অ্যাডভোকেট মু. শাহজাহান, অধ্যাপক আবদুল মতিন কামারুজ্জামান সোহেল। সম্মেলনে দলের নেতৃবৃন্দের মধ্যে আরও বক্তব্য রাখেন অধ্যাপক লিয়াকত ভ‚ঞা, মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস সাত্তার, ইয়াসির আরাফাত, ড. মোবারক হোসেন, মোছলেহ উদ্দিন, ড. সৈয়দ সরোয়ার উদ্দিন সিদ্দিকী, সাইফুল ইসলাম শহীদ, নোমান হোসেন নয়ন, হাফেজ ইউসুফ ইসলাহী, মোশাররফ হোসেন, নাছির আহমেদ মোল্লা প্রমুখ।

এদিকে, দীর্ঘ ১৯ বছর পর অনুষ্ঠিত সমাবেশ উপলক্ষে গত কয়েকদিন থেকে ব্যাপক প্রচারণা চালায় জামায়াত। দলীয় আমিরকে স্বাগত জানিয়ে ব্যানার-ফেস্টুন ও তোরণ দিয়ে বর্ণিল সাজে সাজানো হয় পুরো নগরী। শুক্রবার সকাল সাড়ে ৮টায় সম্মেলন শুরুর কথা থাকলেও ভোর থেকেই নগরীর ২৭টি ওয়ার্ড ও ৬টি ইউনিয়ন থেকে খন্ড খন্ড মিছিল নিয়ে সম্মেলনে যোগ দেন নেতাকর্মীরা। নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণে পুরুষদের জন্য টাউনহল মাঠ ও নারীদের জন্য নির্ধারিত কুমিল্লা কেন্দ্রীয় ঈদগাহ মাঠে তিল ধারনের ঠাঁই ছিলো না। এক পর্যায়ে কর্মী সমাবেশ জনসমাবেশে রূপ নেয়। পুরুষদের প্যান্ডেল টাউনহল মাঠের আশপাশের এলাকা পূবালী চত্বর, লিবার্টি মোড়, জিলা স্কুলের সামনের রাস্তা, মনোহরপুর, বাদুড়তলা ও লাকসাম রোডের পুরো রাস্তাই লোকে লোকারণ্য হয়ে যায়। অপরদিকে নারীদের জন্য নির্ধারিত ঈদগাহ মাঠেও স্থান সংকুলান না হওয়ায় সিটি পার্ক মোড় ও প্রেস ক্লাবসহ আশাপাশের এলাকাও নারী কর্মীদের ব্যাপক উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

ট্যাগস :

বললেন ডা. শফিকুর রহমান

মৌলিক সংস্কার শেষে যৌক্তিক সময় নির্বাচন দিতে হবে

সংবাদ প্রকাশের সময় : ০৬:০৬:৩৪ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৬ ডিসেম্বর ২০২৪

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, প্রশাসনের সর্বস্তরে সংস্কারের জন্য আমরা সরকারকে সময় দিয়েছি। প্রয়োজনে আরও দেবো। তবে মৌলিক সংস্কার করে যৌক্তিক সময় নির্বাচন দিতে হবে। ২০২৪ সালের জুলাই গণহত্যার বিচার করতে হবে। তবে আমরা আইন হাতে তুলে নিতে চাই না। পরাজিত শক্তি এখনও বিদেশে বসে দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে।

তিনি বলেন, ভারতীয় মিডিয়ায় মিথ্যাচার চালিয়ে বাংলাদেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করতে করতে চেয়েছিলো। কিন্ত এদেশের মানুষ তাদের সে পাতা ফাঁদে পা দেয়নি। দেশের প্রশ্নে সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে সে ষড়যন্ত্র রুখে দিয়েছে। আমরা কোনো আগ্রাসন সহ্য করবো না, দেশের এক ইঞ্চি মাটিও কাউকে ছাড় দেব না।

তিনি আরও বলেন, আমরা কাউকে ধর্মের ভিত্তিতে ভাগ করতে চাই না। সবার পরিচয় হবে আমরা বাংলাদেশি। কুমিল্লা নামে বিভাগ না দেয়ায় বিগত সরকারের সমালোচনা করে তিনি বলেন, নামের কারণে বিভাগ না দিয়ে একটি জেলার মানুষের প্রতি জুলুম করা হয়েছে। তিনি কুমিল্লা নামে বিভাগ বাস্তবায়নের দাবি জানান। এছাড়াও কুমিল্লা বিমানবন্দর সচলের যৌক্তিকতাও তুলে ধরেন তিনি।

শুক্রবার (৬ ডিসেম্বর) সকালে কুমিল্লা টাউন হল মাঠে অনুষ্ঠিত মহানগর জামায়াতের কর্মী সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে জামায়াতের আমীর এসব কথা বলেন।

পিলখানায় ৫৭ জন সেনাকর্মকর্তা হত্যার প্রসঙ্গে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, পিলখানা হত্যার সুষ্ঠু তদন্ত করে বিচার করতে হবে। তিনি বলেন, মাইনরিটি শব্দ ব্যবহার করে একটি গোষ্ঠি দেশের বাইরে থেকে নিজেদের স্বার্থ হাসিল করতে চায়।

জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে তিনি বলেন, জনগণ অতীত বর্তমান ভবিষ্যৎ বিচার করে সিদ্ধান্ত নিবে কাকে বেছে নিবে। অতি দ্রুত যৌক্তিক সময়ে নির্বাচন দেয়ার আহবান জানান। তিনি বলেন, জনগণের রায়ে জামায়াত ক্ষমতায় গেলে দুর্নীতি করবো না, দুর্নীতি করতেও দিবো না। দুর্নীতির মৃত্যু হবে সুনীতির জয় হবে। সকল ধর্মের মানুষ তার ধর্মপালন করবে। ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি করা যাবে না।

জামায়াত আমীর আরও বলেন, গত সাড়ে ১৫ বছর আদালত আঙ্গিনা ছিল বিরোধী দলীয় নেতাকর্মীদের দখলে। মূলত পিলখানায় হত্যাকাÐের মাধ্যমে দেশের অস্তিত্ব ধ্বংস করার মিশন শুরু হয়। এরপর ধাপে ধাপে মানুষের মৌলিক অধিকার হরণ করা হয়। বিরোধী দলের গণতান্ত্রিক অধিকার ছিলো না। বিশেষ করে জামায়াতের ওপর সবচেয়ে বেশি অবিচার করা হয়। আমাদের শীর্ষ নেতাদের একে একে মিথ্যা মামলায় ফাঁসি দেয়া হয়। অনেক বয়োজ্যেষ্ঠ নেতাদের কারাগারে রেখে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়া হয়। আমাদের কার্যালয়গুলো অন্যায়ভাবে বন্ধ রাখা হয়। তবে এতো নির্যাতনের পরও আল্লাহর রহমত ও নেতাকর্মীদের ত্যাগের বিনিময়ে আমরা টিকে আছি।

শেখ হাসিনাকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, বিদেশে বসে ষড়যন্ত্র করে কোনো লাভ নেই। দেশের প্রশ্নে জাতি এখন ঐক্যবদ্ধ। তিনি শিক্ষা ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানোর দাবি জানিয়ে বলেন, বাস্তবভিত্তিক শিক্ষা কারিকুলাম প্রণয়ণ করতে হবে।

কুমিল্লা মহানগর জামায়াতের আমির কাজী দ্বীন মোহাম্মদের সভাপতিত্বে এবং নায়েবে আমির অধ্যাপক এ কে এম এমদাদুল হক মামুন ও সেক্রেটারি মাহবুবুর রহমানের যৌথ পরিচালনায় প্রধান বক্তার বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির সাবেক এমপি ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মু. তাহের।

বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এটিএম মাছুম, মাওলানা আব্দুল হালিম, অ্যাডভোকেট জসীম উদ্দিন সরকার, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য মু. আবদুর রব, মোবারক হোসেন, অ্যাডভোকেট মু. শাহজাহান, অধ্যাপক আবদুল মতিন কামারুজ্জামান সোহেল। সম্মেলনে দলের নেতৃবৃন্দের মধ্যে আরও বক্তব্য রাখেন অধ্যাপক লিয়াকত ভ‚ঞা, মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস সাত্তার, ইয়াসির আরাফাত, ড. মোবারক হোসেন, মোছলেহ উদ্দিন, ড. সৈয়দ সরোয়ার উদ্দিন সিদ্দিকী, সাইফুল ইসলাম শহীদ, নোমান হোসেন নয়ন, হাফেজ ইউসুফ ইসলাহী, মোশাররফ হোসেন, নাছির আহমেদ মোল্লা প্রমুখ।

এদিকে, দীর্ঘ ১৯ বছর পর অনুষ্ঠিত সমাবেশ উপলক্ষে গত কয়েকদিন থেকে ব্যাপক প্রচারণা চালায় জামায়াত। দলীয় আমিরকে স্বাগত জানিয়ে ব্যানার-ফেস্টুন ও তোরণ দিয়ে বর্ণিল সাজে সাজানো হয় পুরো নগরী। শুক্রবার সকাল সাড়ে ৮টায় সম্মেলন শুরুর কথা থাকলেও ভোর থেকেই নগরীর ২৭টি ওয়ার্ড ও ৬টি ইউনিয়ন থেকে খন্ড খন্ড মিছিল নিয়ে সম্মেলনে যোগ দেন নেতাকর্মীরা। নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণে পুরুষদের জন্য টাউনহল মাঠ ও নারীদের জন্য নির্ধারিত কুমিল্লা কেন্দ্রীয় ঈদগাহ মাঠে তিল ধারনের ঠাঁই ছিলো না। এক পর্যায়ে কর্মী সমাবেশ জনসমাবেশে রূপ নেয়। পুরুষদের প্যান্ডেল টাউনহল মাঠের আশপাশের এলাকা পূবালী চত্বর, লিবার্টি মোড়, জিলা স্কুলের সামনের রাস্তা, মনোহরপুর, বাদুড়তলা ও লাকসাম রোডের পুরো রাস্তাই লোকে লোকারণ্য হয়ে যায়। অপরদিকে নারীদের জন্য নির্ধারিত ঈদগাহ মাঠেও স্থান সংকুলান না হওয়ায় সিটি পার্ক মোড় ও প্রেস ক্লাবসহ আশাপাশের এলাকাও নারী কর্মীদের ব্যাপক উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে।