ঢাকা ০২:৩৮ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৮ জানুয়ারী ২০২৫, ৪ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

জাতীয় নাগরিক কমিটি

হাইকমিশনে হামলা বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বের উপর আঘাত

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • সংবাদ প্রকাশের সময় : ১২:৫৯:০৪ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩ ডিসেম্বর ২০২৪ ৫২ বার পড়া হয়েছে
বাংলা টাইমস অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

ভারতের আগরতলায় বাংলাদেশ হাইকমিশনের উপর হামলা দেশের সার্ভভৌমত্বের উপর আঘাত বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় নাগরিক কমিটির আহবায়ক নাসির উদ্দিন পাটোয়ারী। এ সময় তারা ছয় দফা কর্মসূচি ঘোষণা করেন।

সোমবার সন্ধ্যায় সংগঠনটির কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি এই কথা বলেন।

নাসীরউদ্দিন বলেন, আমাদের আগরতলার যে হাইকমিশন রয়েছে, সেটি আমাদের অংশ। সেখানে হামলা করা এবং কর্মকর্তাদের উপর নিপীড়ন করা বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বের উপর আঘাত।

তিনি বলেন, এজন্য আমরা প্রতিবেশী দেশ, উগ্র হিন্দুত্ববাদী সংগঠন ও রাজনীতিবিদদের আহবান জানাব, বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে আপনারা অনধিকার চর্চা করবেন না। যদি চর্চা করেন, হয়তোবা দক্ষিণ এশিয়ার শান্তিপূর্ণ ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়তে পারে।

তিনি বলেন, ১৯৪৭ সালে ভারত উপমহাদেশ একটি বিশৃঙ্খলার মধ্য দিয়ে গিয়েছিল, সেরকম একটি বিশৃঙ্খল পরিবেশ সৃষ্টির পায়তারা চলছে। আমরা তাদেরকে শান্তি বজায় রাখার আহবান করব। যারা বাংলাদেশের অস্তিত্বের উপর হুমকি দিচ্ছেন, আমরা তাদের নিবৃত হওয়ার আহবান জানাচ্ছি।

সীমান্ত হত্যার বিষয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা সীমান্তে আর একটি হত্যাকান্ডও দেখতে চাই না। সেকারণে সরকারি প্রতিষ্ঠান দ্রুত উদ্যোগ নেবেন এবং শান্তিপূর্ণ উপায়ে ন্যায্য সমাধানে আসবেন বলে আহবান করছি।

এ সময় জাতীয় নাগরিক কমিটির পক্ষ থেকে মাসব্যাপী ছয় দফা কর্মসূচি দেওয়া হয়।

৬ দফা হলো- ১. ভারতের সাথে সকল চুক্তি উন্মোচন করতে হবে। অসম ও পরিবেশ বিরোধী সকল চুক্তি বাতিল করতে হবে; ২. ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে বহমান নদীর পানির ন্যায্য হিস্যার নিশ্চিত করতে হবে; ৩. দ্রব্যমূল্যে জনগণের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে নিয়ে আসতে হবে; ৪. গত ১৫ বছরে হিন্দু, বৌদ্ধসহ সকল সম্প্রদায়ের উপর হামলা ও ভূমি দখলের বিচার নিশ্চিত করতে হবে; ৫. পাচারকৃত অর্থ দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য স্পষ্ট ভূমিকা নিতে হবে; ৬. অবিলম্বে শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে নিয়ে এসে বিচারের মুখোমুখি করতে হবে।

সংবাদ সম্মেলনে জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্য সচিব আখতার হোসেন, মুখপাত্র সামান্তা শারমীন বক্তব্য রাখেন।

ঢাবিতে বিক্ষোভ-মশাল মিছিল : ভারতের কলকাতায় বাংলাদেশের উপ-হাইকমিশনে হামলার প্রতিবাদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে একাধিক বিক্ষোভ মিছিল করেছে একাধিক সংগঠন।

সোমবার রাত নয়টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীবৃন্দ ব্যানারে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ হয়। এ সময় দিল্লি না ঢাকা স্লোগানে জগন্নাথ হলের শিক্ষার্থীরাও মিছিল নিয়ে জড়ো হন।

এসময় ‘হাইকমিশনে হামলা কেন?, দিল্লি তুই জবাব দে’, গোলামি না আজাদী, আজাদী আজাদী’, দিল্লি না ঢাকা, ঢাকা ঢাকা’ ভারতীয় আগ্রাসন, রুখে দাও জনগণ স্লোগান দেন তারা।

কর্মসূচিতে জগন্নাথ হলের শিক্ষার্থী জয়পাল বলেন, আমরা বাংলাদেশী এটা আমাদের পরিচয়৷ ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে আমরা সবাই বাংলাদেশী। বিভিন্ন সময় বাংলাদেশকে নিয়ে ষড়যন্ত্র হচ্ছে। এই ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে। সকলের একটাই পরিচয় সার্বভৌমত্বে আমরা এক।

তিনি বলেন, যেভাবে ভারতে বাংলাদেশের হাইকমিশনে হামলা হয়েছে, প্রত্যেক নাগরিকদের এতে উদ্বেগ জানাতে হবে। বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় আমরা একতাবদ্ধ থাকব।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্য সচিব আরিফ সোহেল বলেন, আজকে আমাদের সার্বভোমত্ব বিপন্ন। তবে আমরা হতাশ নই। বাংলাদেশের প্রশ্নে আমরা এক।

বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সমন্বয়ক মাহিন সরকার বলেন, সকল শহীদদের রক্তের উপর ভারত যদি সার্বভৌমত্বের উপর রক্তচক্ষু দেখায়, আমরা চুপ থাকব না। এখানে বারবার সংখ্যালঘু কার্ড খেলা চলবে না। ভারতে হাসিনাকে আশ্রয় দিয়ে মোদী সরকার তার লেজিটেমেসি হারিয়েছে। তারা কলকাতা হাইকমিশনে পতাকা পুড়িয়েছে। হাইকমিশনে ভেতরে ঢুকে তারা পিটিয়েছে। আমাদের তরফ থেকে স্পষ্ট বার্তা, আপনারা নিজেদের ব্যাপারে ভাবুন। আমরা দেখেছি, কীভাবে কাশ্মীরে, মনিপুরে হামলা হয়েছে, বাবরী মসজিদ ভাঙা হয়েছে। ঐতিহাসিকভাবে বাংলাদেশ দিল্লির আধিপত্য কখনও মানেনি৷ বিপ্লব কীভাবে রক্ষা করতে হয় আমাদেরকে আবু সাইদ শিখিয়ে গিয়েছে।

কর্মসূচিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী ও অ্যাক্টিভিস্ট জাহিদ আহসান বলেন, আগরতলায় হাইকমিশনে হামলার তীব্র নিন্দা জানাই। আমরা স্পষ্ট জানিয়ে দিতে চাই, ভারতের সঙ্গে খেলা হবে সমানে সমান। কোনো রাজা প্রজার সম্পর্ক থাকবে না। শরীরে একবিন্দু রক্ত থাকতে আমরা ভারতের আধপত্য মেনে নিব না।

আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ছাত্রী আশরেফা খাতুন বলেন, আওয়ামী লীগের সময় আমরা দেখেছি তারা সবসময় দালালী করেছে। আওয়ামী লীগ সরকার দিল্লির দাবার গুটি ছিল।

তিনি আরও বলেন, দিল্লির ক্ষমতা এতো বেশি ছিল যে ভারতের সঙ্গে অসম সম্পর্কের বলি হয়েছে আবরার ফাহাদ। এখন নতুন বাংলাদেশ। আমরা কারো আধিপত্য চায় না। বাংলাদেশের মানুষ শরীরে রক্ত থাকতে ভারতের আধিপত্য মেনে নিবে না।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নির্বাহী কমিটির সদস্য তরিকুল ইসলাম বলেন, ভারত সম্প্রীতি বজায় রাখার পরিবর্তে দ্বন্দ্ব তৈরি করেছে। ভারত যেভাবে সংখ্যালঘু কার্ড খেলে হিন্দু মুসলিম বিভেদ তৈরি করা যাবে না। আমাদের শেষ রক্তবিন্দু থাকা পর্যন্ত আমরা ভারতের আধিপত্যের বিরুদ্ধে লড়ে যাব।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নির্বাহী কমিটির সদস্য ইব্রাহীম নীরব বলেন, হাইকমিশনে হামলার মাধ্যমে আমাদের উপর হামলা করেছে ভারত। অবিলম্বে এই ঘটনার দ্রুত বিচার নিশ্চিত করতে হবে।

সমন্বয়ক তাহমিদ আল মুদাসসীর বলেন, ভারত তাদের মানুষদেরকে সভ্য হওয়া শেখাতে হবে। পিন্ডির গোলামি মানিনি, দিল্লির গোলামী মানবো না।

ছাত্র অধিকার পরিষদের মশাল মিছিল : একই ঘটনায় মশাল মিছিল করেছে ছাত্র অধিকার পরিষদ৷ সোমবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনের সামনে থেকে শুরু হয়ে মিছিলটি রাজু ভাস্কর্যে এসে শেষ হয়। মিছিলে ‘ভারতীয় আগ্রাসন, রুখে দাও জনগণ’, দিল্লি না ঢাকা? ঢাকা, ঢাকা’সহ একাধিক স্লোগান দেওয়া হয়।

ছাত্র অধিকার পরিষদের সভাপতি বিন ইয়ামিন মোল্লা বলেন, নির্বাচনে আগে ভারত আওয়ামীলীগের পক্ষ নিয়েছিল। এখন তারা শেখ হাসিনাসহ তারা সাথী-সঙ্গীদের জায়গা দিয়েছে। তিনি বলেন, আমাদেরক এখন দুই ফ্রন্টে যুদ্ধ করতে হবে। একদিকে আওয়ামীলীগের দোসরদের বিরুদ্ধে অন্যদিকে ভারতের উগ্রবাদী হিন্দুত্ববাদীদের বিরুদ্ধে। আমরা বারবার বলেছি, আওয়ামীলীগকে নিষিদ্ধ করেন। কিন্তু সরকার তা করেননি।

মমতা ব্যানার্জীকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, নিজের চরকায় তেল দেন। আপনার দেশে সগখ্যালঘু নির্যাতন করা হচ্ছে। তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারেন না। বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নাক গলাবেন না। আপনারা জাতিগতভাবে ঐক্যবদ্ধ কী না, তা নিয়েও আমি প্রশ্ন তুলে রাখতে চাই।

সরকারের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আমরা তো বিপ্লবী সরকার চেয়েছিলাম, তাহলে কীভাবে এরকম একটি সরকার গঠিত হলো। আমরা দেখতে পাচ্ছি, যারা আন্দোলনের সামনের সারিতে থেকে যারা নেতা হয়ে উঠেছেন এবং উপদেষ্টাদের কথায় মিল পাওয়া যাচ্ছে না।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

ট্যাগস :

জাতীয় নাগরিক কমিটি

হাইকমিশনে হামলা বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বের উপর আঘাত

সংবাদ প্রকাশের সময় : ১২:৫৯:০৪ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩ ডিসেম্বর ২০২৪

ভারতের আগরতলায় বাংলাদেশ হাইকমিশনের উপর হামলা দেশের সার্ভভৌমত্বের উপর আঘাত বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় নাগরিক কমিটির আহবায়ক নাসির উদ্দিন পাটোয়ারী। এ সময় তারা ছয় দফা কর্মসূচি ঘোষণা করেন।

সোমবার সন্ধ্যায় সংগঠনটির কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি এই কথা বলেন।

নাসীরউদ্দিন বলেন, আমাদের আগরতলার যে হাইকমিশন রয়েছে, সেটি আমাদের অংশ। সেখানে হামলা করা এবং কর্মকর্তাদের উপর নিপীড়ন করা বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বের উপর আঘাত।

তিনি বলেন, এজন্য আমরা প্রতিবেশী দেশ, উগ্র হিন্দুত্ববাদী সংগঠন ও রাজনীতিবিদদের আহবান জানাব, বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে আপনারা অনধিকার চর্চা করবেন না। যদি চর্চা করেন, হয়তোবা দক্ষিণ এশিয়ার শান্তিপূর্ণ ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়তে পারে।

তিনি বলেন, ১৯৪৭ সালে ভারত উপমহাদেশ একটি বিশৃঙ্খলার মধ্য দিয়ে গিয়েছিল, সেরকম একটি বিশৃঙ্খল পরিবেশ সৃষ্টির পায়তারা চলছে। আমরা তাদেরকে শান্তি বজায় রাখার আহবান করব। যারা বাংলাদেশের অস্তিত্বের উপর হুমকি দিচ্ছেন, আমরা তাদের নিবৃত হওয়ার আহবান জানাচ্ছি।

সীমান্ত হত্যার বিষয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা সীমান্তে আর একটি হত্যাকান্ডও দেখতে চাই না। সেকারণে সরকারি প্রতিষ্ঠান দ্রুত উদ্যোগ নেবেন এবং শান্তিপূর্ণ উপায়ে ন্যায্য সমাধানে আসবেন বলে আহবান করছি।

এ সময় জাতীয় নাগরিক কমিটির পক্ষ থেকে মাসব্যাপী ছয় দফা কর্মসূচি দেওয়া হয়।

৬ দফা হলো- ১. ভারতের সাথে সকল চুক্তি উন্মোচন করতে হবে। অসম ও পরিবেশ বিরোধী সকল চুক্তি বাতিল করতে হবে; ২. ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে বহমান নদীর পানির ন্যায্য হিস্যার নিশ্চিত করতে হবে; ৩. দ্রব্যমূল্যে জনগণের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে নিয়ে আসতে হবে; ৪. গত ১৫ বছরে হিন্দু, বৌদ্ধসহ সকল সম্প্রদায়ের উপর হামলা ও ভূমি দখলের বিচার নিশ্চিত করতে হবে; ৫. পাচারকৃত অর্থ দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য স্পষ্ট ভূমিকা নিতে হবে; ৬. অবিলম্বে শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে নিয়ে এসে বিচারের মুখোমুখি করতে হবে।

সংবাদ সম্মেলনে জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্য সচিব আখতার হোসেন, মুখপাত্র সামান্তা শারমীন বক্তব্য রাখেন।

ঢাবিতে বিক্ষোভ-মশাল মিছিল : ভারতের কলকাতায় বাংলাদেশের উপ-হাইকমিশনে হামলার প্রতিবাদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে একাধিক বিক্ষোভ মিছিল করেছে একাধিক সংগঠন।

সোমবার রাত নয়টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীবৃন্দ ব্যানারে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ হয়। এ সময় দিল্লি না ঢাকা স্লোগানে জগন্নাথ হলের শিক্ষার্থীরাও মিছিল নিয়ে জড়ো হন।

এসময় ‘হাইকমিশনে হামলা কেন?, দিল্লি তুই জবাব দে’, গোলামি না আজাদী, আজাদী আজাদী’, দিল্লি না ঢাকা, ঢাকা ঢাকা’ ভারতীয় আগ্রাসন, রুখে দাও জনগণ স্লোগান দেন তারা।

কর্মসূচিতে জগন্নাথ হলের শিক্ষার্থী জয়পাল বলেন, আমরা বাংলাদেশী এটা আমাদের পরিচয়৷ ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে আমরা সবাই বাংলাদেশী। বিভিন্ন সময় বাংলাদেশকে নিয়ে ষড়যন্ত্র হচ্ছে। এই ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে। সকলের একটাই পরিচয় সার্বভৌমত্বে আমরা এক।

তিনি বলেন, যেভাবে ভারতে বাংলাদেশের হাইকমিশনে হামলা হয়েছে, প্রত্যেক নাগরিকদের এতে উদ্বেগ জানাতে হবে। বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় আমরা একতাবদ্ধ থাকব।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্য সচিব আরিফ সোহেল বলেন, আজকে আমাদের সার্বভোমত্ব বিপন্ন। তবে আমরা হতাশ নই। বাংলাদেশের প্রশ্নে আমরা এক।

বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সমন্বয়ক মাহিন সরকার বলেন, সকল শহীদদের রক্তের উপর ভারত যদি সার্বভৌমত্বের উপর রক্তচক্ষু দেখায়, আমরা চুপ থাকব না। এখানে বারবার সংখ্যালঘু কার্ড খেলা চলবে না। ভারতে হাসিনাকে আশ্রয় দিয়ে মোদী সরকার তার লেজিটেমেসি হারিয়েছে। তারা কলকাতা হাইকমিশনে পতাকা পুড়িয়েছে। হাইকমিশনে ভেতরে ঢুকে তারা পিটিয়েছে। আমাদের তরফ থেকে স্পষ্ট বার্তা, আপনারা নিজেদের ব্যাপারে ভাবুন। আমরা দেখেছি, কীভাবে কাশ্মীরে, মনিপুরে হামলা হয়েছে, বাবরী মসজিদ ভাঙা হয়েছে। ঐতিহাসিকভাবে বাংলাদেশ দিল্লির আধিপত্য কখনও মানেনি৷ বিপ্লব কীভাবে রক্ষা করতে হয় আমাদেরকে আবু সাইদ শিখিয়ে গিয়েছে।

কর্মসূচিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী ও অ্যাক্টিভিস্ট জাহিদ আহসান বলেন, আগরতলায় হাইকমিশনে হামলার তীব্র নিন্দা জানাই। আমরা স্পষ্ট জানিয়ে দিতে চাই, ভারতের সঙ্গে খেলা হবে সমানে সমান। কোনো রাজা প্রজার সম্পর্ক থাকবে না। শরীরে একবিন্দু রক্ত থাকতে আমরা ভারতের আধপত্য মেনে নিব না।

আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ছাত্রী আশরেফা খাতুন বলেন, আওয়ামী লীগের সময় আমরা দেখেছি তারা সবসময় দালালী করেছে। আওয়ামী লীগ সরকার দিল্লির দাবার গুটি ছিল।

তিনি আরও বলেন, দিল্লির ক্ষমতা এতো বেশি ছিল যে ভারতের সঙ্গে অসম সম্পর্কের বলি হয়েছে আবরার ফাহাদ। এখন নতুন বাংলাদেশ। আমরা কারো আধিপত্য চায় না। বাংলাদেশের মানুষ শরীরে রক্ত থাকতে ভারতের আধিপত্য মেনে নিবে না।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নির্বাহী কমিটির সদস্য তরিকুল ইসলাম বলেন, ভারত সম্প্রীতি বজায় রাখার পরিবর্তে দ্বন্দ্ব তৈরি করেছে। ভারত যেভাবে সংখ্যালঘু কার্ড খেলে হিন্দু মুসলিম বিভেদ তৈরি করা যাবে না। আমাদের শেষ রক্তবিন্দু থাকা পর্যন্ত আমরা ভারতের আধিপত্যের বিরুদ্ধে লড়ে যাব।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নির্বাহী কমিটির সদস্য ইব্রাহীম নীরব বলেন, হাইকমিশনে হামলার মাধ্যমে আমাদের উপর হামলা করেছে ভারত। অবিলম্বে এই ঘটনার দ্রুত বিচার নিশ্চিত করতে হবে।

সমন্বয়ক তাহমিদ আল মুদাসসীর বলেন, ভারত তাদের মানুষদেরকে সভ্য হওয়া শেখাতে হবে। পিন্ডির গোলামি মানিনি, দিল্লির গোলামী মানবো না।

ছাত্র অধিকার পরিষদের মশাল মিছিল : একই ঘটনায় মশাল মিছিল করেছে ছাত্র অধিকার পরিষদ৷ সোমবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনের সামনে থেকে শুরু হয়ে মিছিলটি রাজু ভাস্কর্যে এসে শেষ হয়। মিছিলে ‘ভারতীয় আগ্রাসন, রুখে দাও জনগণ’, দিল্লি না ঢাকা? ঢাকা, ঢাকা’সহ একাধিক স্লোগান দেওয়া হয়।

ছাত্র অধিকার পরিষদের সভাপতি বিন ইয়ামিন মোল্লা বলেন, নির্বাচনে আগে ভারত আওয়ামীলীগের পক্ষ নিয়েছিল। এখন তারা শেখ হাসিনাসহ তারা সাথী-সঙ্গীদের জায়গা দিয়েছে। তিনি বলেন, আমাদেরক এখন দুই ফ্রন্টে যুদ্ধ করতে হবে। একদিকে আওয়ামীলীগের দোসরদের বিরুদ্ধে অন্যদিকে ভারতের উগ্রবাদী হিন্দুত্ববাদীদের বিরুদ্ধে। আমরা বারবার বলেছি, আওয়ামীলীগকে নিষিদ্ধ করেন। কিন্তু সরকার তা করেননি।

মমতা ব্যানার্জীকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, নিজের চরকায় তেল দেন। আপনার দেশে সগখ্যালঘু নির্যাতন করা হচ্ছে। তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারেন না। বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নাক গলাবেন না। আপনারা জাতিগতভাবে ঐক্যবদ্ধ কী না, তা নিয়েও আমি প্রশ্ন তুলে রাখতে চাই।

সরকারের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আমরা তো বিপ্লবী সরকার চেয়েছিলাম, তাহলে কীভাবে এরকম একটি সরকার গঠিত হলো। আমরা দেখতে পাচ্ছি, যারা আন্দোলনের সামনের সারিতে থেকে যারা নেতা হয়ে উঠেছেন এবং উপদেষ্টাদের কথায় মিল পাওয়া যাচ্ছে না।