ঢাকা ০৫:২৯ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৮ জানুয়ারী ২০২৫, ৪ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মুক্তি পেলেন না বাবুল

চট্টগ্রাম প্রতিনিধি
  • সংবাদ প্রকাশের সময় : ০৯:২০:০৪ অপরাহ্ন, রবিবার, ১ ডিসেম্বর ২০২৪ ৫২ বার পড়া হয়েছে
বাংলা টাইমস অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু হত্যা মামলায় সাবেক পুলিশ সুপার বাবুল আক্তার মুক্তি পাননি। হাই কোর্টের দেয়া জামিনের নথি শেষ বিকেলে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে পৌঁছালেও তার মুক্তি মেলেনি। কারণ বাবুল অঅক্তারের জামিন বাতিল চেয়ে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে আবেদন করেন নিহত মিতুর বাবা মোশাররফ হোসেন। এ বিষয়ে মঙ্গলবার শুনানি হতে পারে।

প্রায় ৩ বছর সাত মাস কারাগারে থাকার পর গত বুধবার হাই কোর্ট থেকে জামিন পান সাবেক পুলিশ সুপার বাবুল আক্তার। বিচারপতি মো. আতোয়ার রহমান ও বিচারপতি আলী রেজার হাই কোর্ট বেঞ্চ জামিনের আদেশ দিলে বাবুল আক্তারের মুক্তির পথ খোলে।

রোববার (১ ডিসেম্বর) সকালে জামিন আদেশের অনুলিপি মিতু হত্যা মামলার বিচারিক আদালত চট্টগ্রামের তৃতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতে জমা দেয়া হয়। বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে আদালত থেকে বেইল বন্ড ইস্যু করা হয় বলে জানান বাবুল আক্তারের আইনজীবী কফিল উদ্দিন চৌধুরী।

এরপর বাবুলের মুক্তি হতে পারে এমন খবরে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের মূল ফটকের বাইরে জড়ো হন স্থানীয় সংবাদকর্মীরা। সন্ধ্যার দিকে কারাগারের মূল ফটক দিয়ে ভিতরে যান তার বর্তমান স্ত্রী ইসরাত জাহান মুক্তা।

এর কিছুক্ষণ পর কারাগারের মূল ফটকের বাইরে বাবুল আক্তারের আরেক আইনজীবী মামুনুল হক চৌধুরী বলেন, কারা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে দেরিতে বেইল বন্ড পৌঁছানোর কারণে তাদের দাপ্তরিক সব কাজ শেষ করা সম্ভব হয়নি। তাই বাবুল আক্তার মুক্তি পাননি। সোমবার সকালে মুক্তি পেতে পারেন। তার কিছু সময় পর বাবুল আক্তারের স্ত্রী ইসরাত জাহান মুক্তা কারাগার থেকে বেরিয়ে আসেন।

এদিকে, মিতুর বাবা সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা মোশাররফ হোসেন জানান, বাবুলের জামিন বাতিল চেয়ে গত বৃহস্পতিবার তার আইনজীবীরা সুপ্রিম কোর্টের চেম্বার জজের আদালতে আবেদন করেছেন। মঙ্গলবার এ বিষয়ে শুনানি হতে পারে। তিনি বলেন, আমার আইনজীবীরা আদালতে বলেছেন, এই মামলায় ৫২ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ হয়ে গেছে। এখন প্রধান আসামি জামিনে মুক্তি পেলে সাক্ষীদের ক্ষতি হতে পারে।

উচ্চ আদালতে বাবুল আক্তারের আইনজীবী শিশির মনির বলেন, মোশাররফ হোসেনের করা আবেদনের বিষয়ে মঙ্গলবার শুনানি হবে। যেহেতু চেম্বার জজ আদালতে আবেদনটি অপেক্ষমাণ আছে তাই সেটির আদেশ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।

২০১৬ সালের ৫ জুন সকালে চট্টগ্রাম নগরীর জিইসি মোড়ে ছেলেকে স্কুলবাসে তুলে দিতে যাওয়ার সময় তৎকালীন চট্টগ্রামের পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারের স্ত্রী মিতুকে গুলি চালিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা করা হয়। ওই ঘটনার কিছুদিন আগেই চট্টগ্রাম থেকে বদলি হন এসপি বাবুল আক্তার। তিনি ঢাকায় কর্মস্থলে যোগ দিতে যাওয়ার পরপরই চট্টগ্রামে এ হত্যাকাÐ ঘটে।

ঘটনার পর টানা সাড়ে তিন বছর তদন্ত করেও ডিবি পুলিশ কোনো ক‚লকিনারা করতে না পারার পর ২০২০ সালের জানুয়ারিতে আদালতের নির্দেশে মামলার তদন্তভার পায় পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।

এরপর ২০২১ সালের মে মাসে পিবিআই জানায়, স্ত্রী মিতুকে হত্যা করা হয়েছিল বাবুল আক্তারের ‘পরিকল্পনায়’। আর এজন্য খুনিদের ‘লোক মারফত তিন লাখ টাকাও দিয়েছিলেন’ বাবুল।

পরে বাবুলের মামলায় চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেয়া হয় এবং মিতুর বাবা আরেকটি মামলা করেন। তবে মিতুর বাবার করা সেই মামলা আদালতে না টেকার পর বাবুলের মামলাটিই আবার পুনরুজ্জীবিত হয়। ২০২১ সালের মে মাসে পিবিআই এর হাতে গ্রেপ্তার হন বাবুল। ২০২২ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর সেই মামলায় আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয় পিবিআই। তাতে বাবুলসহ সাতজনকে আসামি করা হয়। এরপর ওই বছরের ১০ অক্টোবর সেই অভিযোগপত্র গ্রহণ করে চট্টগ্রামের অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিম আদালত।

গত বছরের ৯ এপ্রিল মিতুর বাবা সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা মোশাররফ হোসেনের সাক্ষ্যের মধ্যে দিয়ে মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়। মামলাটি বর্তমানে চট্টগ্রামের তৃতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ জসিম উদ্দিনের আদালতে বিচারাধীন। মামলার ৯৭ জন সাক্ষীর মধ্যে মিতুর মা শাহেদা মোশাররফসহ মোট ৫২ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে।
বাবুল আক্তার গত ১৪ অগাস্ট চট্টগ্রামের তৃতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতে জামিনের আবেদন করেছিলেন। বিচারক তা নাকচ করে দিলে তার আইনজীবীরা হাই কোর্টে যান।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

ট্যাগস :

মুক্তি পেলেন না বাবুল

সংবাদ প্রকাশের সময় : ০৯:২০:০৪ অপরাহ্ন, রবিবার, ১ ডিসেম্বর ২০২৪

স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু হত্যা মামলায় সাবেক পুলিশ সুপার বাবুল আক্তার মুক্তি পাননি। হাই কোর্টের দেয়া জামিনের নথি শেষ বিকেলে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে পৌঁছালেও তার মুক্তি মেলেনি। কারণ বাবুল অঅক্তারের জামিন বাতিল চেয়ে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে আবেদন করেন নিহত মিতুর বাবা মোশাররফ হোসেন। এ বিষয়ে মঙ্গলবার শুনানি হতে পারে।

প্রায় ৩ বছর সাত মাস কারাগারে থাকার পর গত বুধবার হাই কোর্ট থেকে জামিন পান সাবেক পুলিশ সুপার বাবুল আক্তার। বিচারপতি মো. আতোয়ার রহমান ও বিচারপতি আলী রেজার হাই কোর্ট বেঞ্চ জামিনের আদেশ দিলে বাবুল আক্তারের মুক্তির পথ খোলে।

রোববার (১ ডিসেম্বর) সকালে জামিন আদেশের অনুলিপি মিতু হত্যা মামলার বিচারিক আদালত চট্টগ্রামের তৃতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতে জমা দেয়া হয়। বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে আদালত থেকে বেইল বন্ড ইস্যু করা হয় বলে জানান বাবুল আক্তারের আইনজীবী কফিল উদ্দিন চৌধুরী।

এরপর বাবুলের মুক্তি হতে পারে এমন খবরে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের মূল ফটকের বাইরে জড়ো হন স্থানীয় সংবাদকর্মীরা। সন্ধ্যার দিকে কারাগারের মূল ফটক দিয়ে ভিতরে যান তার বর্তমান স্ত্রী ইসরাত জাহান মুক্তা।

এর কিছুক্ষণ পর কারাগারের মূল ফটকের বাইরে বাবুল আক্তারের আরেক আইনজীবী মামুনুল হক চৌধুরী বলেন, কারা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে দেরিতে বেইল বন্ড পৌঁছানোর কারণে তাদের দাপ্তরিক সব কাজ শেষ করা সম্ভব হয়নি। তাই বাবুল আক্তার মুক্তি পাননি। সোমবার সকালে মুক্তি পেতে পারেন। তার কিছু সময় পর বাবুল আক্তারের স্ত্রী ইসরাত জাহান মুক্তা কারাগার থেকে বেরিয়ে আসেন।

এদিকে, মিতুর বাবা সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা মোশাররফ হোসেন জানান, বাবুলের জামিন বাতিল চেয়ে গত বৃহস্পতিবার তার আইনজীবীরা সুপ্রিম কোর্টের চেম্বার জজের আদালতে আবেদন করেছেন। মঙ্গলবার এ বিষয়ে শুনানি হতে পারে। তিনি বলেন, আমার আইনজীবীরা আদালতে বলেছেন, এই মামলায় ৫২ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ হয়ে গেছে। এখন প্রধান আসামি জামিনে মুক্তি পেলে সাক্ষীদের ক্ষতি হতে পারে।

উচ্চ আদালতে বাবুল আক্তারের আইনজীবী শিশির মনির বলেন, মোশাররফ হোসেনের করা আবেদনের বিষয়ে মঙ্গলবার শুনানি হবে। যেহেতু চেম্বার জজ আদালতে আবেদনটি অপেক্ষমাণ আছে তাই সেটির আদেশ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।

২০১৬ সালের ৫ জুন সকালে চট্টগ্রাম নগরীর জিইসি মোড়ে ছেলেকে স্কুলবাসে তুলে দিতে যাওয়ার সময় তৎকালীন চট্টগ্রামের পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারের স্ত্রী মিতুকে গুলি চালিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা করা হয়। ওই ঘটনার কিছুদিন আগেই চট্টগ্রাম থেকে বদলি হন এসপি বাবুল আক্তার। তিনি ঢাকায় কর্মস্থলে যোগ দিতে যাওয়ার পরপরই চট্টগ্রামে এ হত্যাকাÐ ঘটে।

ঘটনার পর টানা সাড়ে তিন বছর তদন্ত করেও ডিবি পুলিশ কোনো ক‚লকিনারা করতে না পারার পর ২০২০ সালের জানুয়ারিতে আদালতের নির্দেশে মামলার তদন্তভার পায় পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।

এরপর ২০২১ সালের মে মাসে পিবিআই জানায়, স্ত্রী মিতুকে হত্যা করা হয়েছিল বাবুল আক্তারের ‘পরিকল্পনায়’। আর এজন্য খুনিদের ‘লোক মারফত তিন লাখ টাকাও দিয়েছিলেন’ বাবুল।

পরে বাবুলের মামলায় চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেয়া হয় এবং মিতুর বাবা আরেকটি মামলা করেন। তবে মিতুর বাবার করা সেই মামলা আদালতে না টেকার পর বাবুলের মামলাটিই আবার পুনরুজ্জীবিত হয়। ২০২১ সালের মে মাসে পিবিআই এর হাতে গ্রেপ্তার হন বাবুল। ২০২২ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর সেই মামলায় আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয় পিবিআই। তাতে বাবুলসহ সাতজনকে আসামি করা হয়। এরপর ওই বছরের ১০ অক্টোবর সেই অভিযোগপত্র গ্রহণ করে চট্টগ্রামের অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিম আদালত।

গত বছরের ৯ এপ্রিল মিতুর বাবা সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা মোশাররফ হোসেনের সাক্ষ্যের মধ্যে দিয়ে মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়। মামলাটি বর্তমানে চট্টগ্রামের তৃতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ জসিম উদ্দিনের আদালতে বিচারাধীন। মামলার ৯৭ জন সাক্ষীর মধ্যে মিতুর মা শাহেদা মোশাররফসহ মোট ৫২ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে।
বাবুল আক্তার গত ১৪ অগাস্ট চট্টগ্রামের তৃতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতে জামিনের আবেদন করেছিলেন। বিচারক তা নাকচ করে দিলে তার আইনজীবীরা হাই কোর্টে যান।