আটঘরিয়ার ছিঁড়া জুতা সেলাই করে সংসার চালান
- সংবাদ প্রকাশের সময় : ০৬:১৫:১২ অপরাহ্ন, শনিবার, ৩০ নভেম্বর ২০২৪ ২৬ বার পড়া হয়েছে
স্বাধীনতার পর থেকে বাবার সাথে ছিঁড়া জুতা সেলাই করে পরিবার পরিজন নিয়ে সংসার চালাতেন শ্রী কোকিল চন্দ্র দাস। বাপদাদার পৈত্রিক পেশা ধরে রাখতে মরিয়া হয়ে মুচি
সম্প্রদায়ের মানুষ কষ্টে দিনাতিপাত করছে এর শেষ কোথায় বলে জানালেন জুতার মিস্ত্রি সিরাজগঞ্জ জেলার উল্লাপাড়া থানার পঞ্চপসি গ্রামের মৃত রবি দাসের ছেলে শ্রী কোকিল চন্দ্র দাস।
স্বাধীনতার পর থেকে বাবা রবি দাসের সাথে ৯ ভাই বোনের চিন্তা মাথার উপর সংসার। ভাই বোনের মধ্যে কোকিল সবার বড়। সংসার চালানো সহ ভাই বোনের পড়া লেখার খরচ চালাতে নিজে পড়া শুনার সুযোগ পাননি।
নদী ভাঙ্গনে বাড়ি ঘর বিলীন হয়ে গেলে ১৯৯০ সালে পাবনার আটঘরিয়া উপজেলার দেবোত্তর বাজারে এসে বাসা ভাড়া নিয়ে বসবাস করতে শুরু করেন।
এর পর বর্তমানে আটঘরিয়া পৌরসভার ৭ নং ওয়াডের বরুরিয়া গ্রামে বসবাস করেন। তার এক ছেলে এক মেয়ে। মেয়েকে বিবাহ দিয়েছেন। ছেলে ঢাকায় একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে সামান্য বেতনে চাকরি করেন।
সারা দেশের মতোই পাবনার আটঘরিয়া
উপজেলার দেবোত্তর বাজারে ডা.হোসেন আলী বিশ্বাসএ এর দোকানের পিছনে ছোট একটা দোকান ঘর ভাড়া নিয়ে জীবন সংগ্রাম শুরু করেন।
জুতা মেরামতকারীরা জুতা সেলাই করে জন্য ব্রাশ, ফার্মা, আলপিন, সুতা, পেরেক, বাটাল, হাতুর, কাচি, পঞ্চ, মাততুল, রানার, কৌটায় রং, বাক্সের একটি অংশে আছে চামড়াসহ কাজ করার জন্য যাবতীয় সরঞ্জাম।
যা সাজিয়ে নিয়ে বসে আছে কোকিল। আবার কেউ সকল সরঞ্জামগুলো বাক্সে সাজিয়ে কাঁধে নিয়ে ছুটে চলে শহরের অলিগলিতে।
এ জেলায় জুতা সেলাইকারীর সংখ্যা প্রায় শতাধিক জন। হঠাৎ কেউ তাদের পাশ দিয়ে হেটে তাকিয়ে থাকে পায়ের জুতার দিকে।
কখন এসে বলবে মামা কিংবা দাদা আমার জুতাটা একটু পালিশ কিংবা মেরামত করে দেন। এমন কাঙ্ক্ষিত কথা শোনার জন্য যেন অপেক্ষার প্রহর গুনে থাকেন।
কেমন কাটছে জীবন জানতে চাইলে কোকিল দা আরও বলেন, আমি ছোটকাল থেকে জুতা সেলাই কাজ করি। স্বাধীনতার পর থেকে বাবা হাত ধরে বাপদাদার পৈত্রিক পেশা শিখেছি।
আমরা এই কাজের সাথে তিন ভাই জড়িত আছি। আমি কোকিল চন্দ্র দাস, সচিন টেন্ডুলকার ও সন্তেষ চন্দ্র দাস।
এ টাকা দিয়ে তার পরিবারের সংসার চালানো কি সম্ভব। বর্তমান বাজার ঘাটে জিনিসপত্র যে মূল্য বৃদ্ধির কারণে দৈনিক জুতা সেলাই করে রোজগারের টাকা দিয়ে সংসার চালান কঠিন হয়ে উঠেছে তার।
আর প্রতিদিন ছিড়া জুতা সেলাই করে প্রতিদিন কাজ করে ৪০০থেকে ৩০০টাকা পাই। সেই টাকা নিয়ে বাজারে গেলে বাজার খরচ করতে না করতেই টাকা শেষ হয়ে যায়। আমরা বাঁচব কি ভাবে?
কলেজ রোডে বসা সচিন টেন্ডুলকার বলেন, “সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত ৪০০-৫০০টাকা ইনকাম করেছি। এ টাকা দিয়ে বাজারে যে কি কিনব? সেই চিন্তায় মাথা ঘুরে।
তাই ছেলে সন্তানকে শিশু শ্রমে পাঠিয়ে দিতে হবে। আমরাও মানুষ আমাদেরও বেঁচে থাকার অধিকার আছে কিন্তু এভাবে আর কত দিন?
কিন্তু আমাদের ভাগ্যের কোনো পরিবর্তন নেই। বরং যত দিন যাচ্ছে ততই যেন জীবন সংকটের মধ্যে যাচ্ছে।
বর্তমান এই টাকা ইনকাম করে তো সংসার চালানো যায় না। মুচি সম্প্রদায়ের মানুষ কষ্টে দিনাতিপাত করছে এর শেষ কোথায়’।
এ পেশা থেকে যে টাকা আসে তা নিয়ে সংসার চালানো সম্ভব নয়। সরকারের উচিত আমাদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা করা।