মহারাষ্ট্রে এনডিএ, ঝাড়খণ্ডে ‘ইন্ডিয়া’
- সংবাদ প্রকাশের সময় : ১২:৪৮:০৯ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪ ৬ বার পড়া হয়েছে
লোকসভা ভোটের ৬ মাসের মধ্যে পর পর উত্তর এবং পশ্চিম ভারতের দুই রাজ্যে রাজনৈতিক আধিপত্য পুনঃপ্রতিষ্ঠা করে ফেলল বিজেপি। চলতি বছরের অক্টোবরে হরিয়ানার পর নভেম্বরে মহারাষ্ট্রের বিধানসভা ভোটে দুরমুশ করল বিরোধীদের। লোকসভা ভোটে ওই দুই রাজ্যেই বিরোধীদের কাছে ধাক্কা খেয়েছিল তারা। কিন্তু তাদের অশ্বমেধের ঘোড়া থেমে গিয়েছে পূর্ব ভারতে এসে। ঝাড়খণ্ডে ‘ইন্ডিয়া’র কাছে পর্যুদস্ত নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহের দল। অথচ লোকসভা ভোটে আদিবাসী প্রভাবিত ওই রাজ্যে জয় পেয়েছিল তারা।
অন্যদিক, এবার দুই রাজ্যের বিধানসভা ভোট বা বাংলা-সহ আরও ১৪টি রাজ্যের লোকসভা-বিধানসভা উপনির্বাচনেও ‘প্রতিষ্ঠান বিরোধিতার’ চিহ্ন দেখা যায়নি। মহারাষ্ট্রে কংগ্রেস-শিবসেনা-এনসিপি-র ‘মহাবিকাশ আঘাড়ী’কে ধরাশায়ী করে দুই-তৃতীয়াংশের বেশি সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায় ফিরেছে বিজেপি-শিবসেনা-এনসিপির জোট ‘মহাজুটি’। আবার ঝাড়খণ্ডে অঙ্ক কষে জেএমএমে ভাঙন ধরিয়ে চম্পই সোরেনকে দলে টেনে, বিদ্রোহী বাবুলাল মরান্ডিকে ফিরিয়ে এনে, সুদেশ মাহাতোর আজসুর সঙ্গে জোট গড়েও সুবিধা করতে পারেনি বিজেপি। কংগ্রেস-আরজেডি-নকশালপন্থীদের সঙ্গে নিয়ে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে রাঁচীর কুর্সি পুনর্দখল করে নতুন নজির গড়েছেন ঝাড়খণ্ড আন্দোলনের ‘গুরুজি’ শিবু সোরেনের পুত্র হেমন্ত। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে দু’রাজ্যেই আসন বেড়েছে শাসকের।
উপনির্বাচনেও বাংলায় তৃণমূল, পঞ্জাবে আপ, কর্নাটকে কংগ্রেস, উত্তরপ্রদেশে বিজেপি ‘শাসকদল সুলভ’ আধিপত্য বজায় রেখেছে। তবে পড়শি ঝাড়খণ্ডের মতোই বাংলাও জোরালো ধাক্কা দিয়েছে বিজেপিকে। ছ’টি বিধানসভা আসনেই বিপুল জয় পেয়েছে তৃণমূল। এর মধ্যে সিতাই এবং হাড়োয়া আসনে সব বিরোধী প্রার্থীরই জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছে।
ফেব্রুয়ারিতে দিল্লিতে বিধানসভা ভোট হওয়ার কথা। তার আগে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম রাজ্যে (জনসংখ্যার নিরিখে) জয় এবং সার্বিক ভাবে উপনির্বাচনের ফল বিজেপিকে কিছুটা স্বস্তি দিতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। পাশাপাশি, মহারাষ্ট্রের বিপুল জয় সোমবার থেকে শুরু হতে যাওয়া সংসদের শীতকালীন অধিবেশনে ‘আদানি ঘুষকাণ্ড’ নিয়ে বিরোধীদের সম্ভাব্য আক্রমণের মোকাবিলাতেও উজ্জীবিত হবেন মোদী-শাহের দলের সাংসদেরা।
মহারাষ্ট্রের ভোটে এ বার মহিলাদের সমর্থন ঢেলে এনডিএ দিকে গিয়েছে বলেই মনে করা হচ্ছে। যা গেরুয়া শিবিরের নিরঙ্কুশ জয়ের পথ প্রশস্ত করেছে। মুখ্যমন্ত্রী একনাথ শিন্ডের ‘লাডলি বহিন যোজনা’ সেখানে তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।
দিল্লিতে আম আদমি পার্টির সরকারের বিদ্যুৎ খাতে ভর্তুকিনীতির সমালোচনায় বিজেপি সরব হলেও মহারাষ্ট্রে কিন্তু কেজরীওয়ালের পথে হেঁটে বিদ্যুৎ বিলে ৩০ শতাংশ ভর্তুকি দেয়ার ঘোষণা করেছে তারা। এ ছাড়া, কৃষকদের ভোট পেতে কৃষক সম্মাননিধি যোজনায় ১২ হাজার টাকার পরিবর্তে ১৫ হাজার টাকা দেওয়ার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছে বিজেপি। ফসলের ন্যূনতম সহায়ক মূল্য অন্তত ২০ শতাংশ বাড়ানোর কথা ঘোষণা করা হয়েছে, যা মহারাষ্ট্রের মতো কৃষিপ্রধান রাজ্যে বিজেপিকে সুবিধা দিয়ে থাকতে পারে। ভোটের আগে পেঁয়াজ রফতানির উপর বিধিনিষেধ প্রত্যাহার করেও মোদী সরকার হাসি ফুটিয়েছিল কৃষকদের মুখে।
ছ’মাস আগের লোকসভা ভোটে মহারাষ্ট্রের ৪৮টি আসনের মধ্যে বিরোধী জোটের ঝুলিতে গিয়েছিল ৩০টি (কংগ্রেস ১৩, উদ্ধবসেনা ৯ এবং শরদপন্থী এনসিপি ৮)। পাশাপাশি, সাংলি আসনে জয়ী নির্দল প্রার্থী কংগ্রেস শিবিরে ভিড়ে গিয়েছিলেন। অন্য দিকে, লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি ৯টি এবং তার দুই শরিক শিবসেনা (শিন্ডে) এবং এনসিপির অজিত গোষ্ঠী যথাক্রমে ৭টি এবং ১টি আসনে জিতেছিল।
পাঁচ বছর আগের থেকে লোকসভায় প্রায় দু’ডজন আসন কম পেয়েছিল এনডিএ জোট। তার পরে বিধানসভাতেও ভাল ফলের আশা করেছিল ‘ইন্ডিয়া’। কিন্তু সেই প্রত্যাশা ধূলিসাৎ হয়ে গেল। বাবাসাহের অম্বেডকরের পুত্র তথা প্রাক্তন সাংসদ প্রকাশ অম্বেডকরের ‘বঞ্চিত বহুজন অঘাড়ী’র (ভিবিএ) সঙ্গে জোট না হওয়া মরাঠাভূমে ‘ইন্ডিয়া’র বিপর্যয়ের অন্যতম কারণ বলে মনে করা হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে প্রশ্ন উঠছে উদ্ধবের ‘অনমনীয় মনোভাব’ নিয়েও।
২০১৯ সালের বিধানসভার ভোটে বিজেপির হাত ছেড়ে কংগ্রেস এবং এনসিপির হাত ধরেছিল এনডিএ-র প্রবীণতম জোটসঙ্গী উদ্ধবের শিবসেনা। মতাদর্শের দিক থেকে বিপরীত প্রান্তে থাকা দুই দলের সমর্থন নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীও হন বালাসাহেব ঠাকরের পুত্র। একক বৃহত্তম দল হলেও বিরোধী আসনে বসতে হয় বিজেপিকে। পাঁচ বছর পরে তারই ‘মধুর’ প্রতিশোধ নিলেন দেবেন্দ্র ফডণবীসেরা।