ঢাকা ০৯:৩৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৫ জানুয়ারী ২০২৫, ২ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বীজ আলুর কৃত্রিম সংকট দেখিয়ে সিন্ডিকেট

সুজন কুমার মন্ডল, জয়পুরহাট
  • সংবাদ প্রকাশের সময় : ১২:১২:০২ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪ ৫৩ বার পড়া হয়েছে
বাংলা টাইমস অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

জয়পুরহাট জেলায় চলতি মৌসুমে ৪০ হাজার হেক্টর জমিতে আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। এর বিপরীতে বীজের চাহিদা রয়েছে প্রায় ৬০ হাজার মেট্রিক টন। অসাধু ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেটের কারনে বাজার থেকে বেশি দামে খাবার আলু কিনতে হচ্ছে কৃষকদের। জয়পুরহাট আলু উৎপাদনে বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম জেলা।

সরেজমিন দেখা গেছে, কৃত্রিম সংকট দেখিয়ে সিন্ডিকেট করে নির্ধারিত দামের চেয়ে প্রতি বস্তা সার ও বীজ আলুতে কৃষকদের কাছ থেকে অতিরিক্ত অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছেন কিছু অসাধু ব্যবসায়ী। ফলে বেড়ে যাচ্ছে উৎপাদন খরচ এতে দিশেহারা হচ্ছেন কৃষকেরা।

অন্যদিকে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কোন সঙ্কট নেই। এখানকার উৎপাদিত আলু স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে সারাদেশে সরবরাহ করা হয়। পাশাপাশি জেলার ১৯টি হিমাগারে সংরক্ষণ করা হয় খাবার ও বীজ আলু। এবার জাতভেদে ব্র্যাক সীডের ৪০ কেজির প্রতি বস্তা বীজের আলু ২৯২০ টাকা থেকে ৩২০০ টাকা দাম নির্ধারণ করা হলেও বেকায়দায় ফেলে কৃষকদের কাছ থেকে ৪০০০ থেকে ৪৫০০ টাকা দাম নিচ্ছেন কিছু অসাধু ব্যবসায়ী। এছাড়া অন্যান্য বীজের দাম ও চাহিদা কম থাকলেও বিক্রি হচ্ছে বেশি দামেই। ইতোমধ্যেই জেলার বিভিন্ন এলাকায় আলু চাষাবাদ শুরু হওয়ায় অতিরিক্ত মুনাফালোভী কিছু অসাধু ব্যবসায়ী কৃত্রিম সংকট সৃষ্টির মাধ্যমে সিন্ডিকেট করে নির্ধারিত দামের চাইতে বেশি দামে বীজ আলু ও সার কিনতে বাধ্য করছেন কৃষকদের। এসব সিন্ডিকেট ভেঙে ন্যায্যমূল্যে প্রাপ্তির দাবির সাথে জেলা প্রশাসনের অভিযান আরো জোরদার করতে হবে বলে জানিয়েছেন কৃষকেরা।

সদর উপজেলার আমদই ইউনিয়নের গ্রা কৃষক হাফিজুল বলেন, আমি ১০ বস্তা বিআরডিসি অ্যাস্টরিক আলু বীজ কিনেছি প্রতি ৪০ কেজি বস্তার নিতে মূল্য ছিল ২৪০০ থেকে ২৫০০ টাকা কিন্তু আমার কাছ থেকে নিয়েছে প্রতি ৪০ কেজি আলুর বীজ নিয়েছে ৪০০০ টাকা চার হাজার টাকা। অন্যদিকে ক্ষেতলাল উপজেলার দা তালশন গ্রামের কৃষক রফিকুল ইসলাম বলেন আমি বটতলী বাজার থেকে ১০ বস্তা কারেজ আলুর বীজ ব্রাক কোম্পানি থেকে নিয়েছি প্রতি ৪০ কেজি নির্ধারিত মূল্য ছিল ৩০৪০ টাকা আমাকে নিতে হয়েছে ৪০০০ টাকা বস্তা। আলু লাগানোর জন্য এছাড়া কোন উপায় ছিল না।

আক্কেলপুর উপজেলার জাফরপুর গ্রামের কৃষক নিরেন মন্ডল বলেন আমি ২০ বস্তা সানসাইন ব্রাক কোম্পানির প্রতি মন ৪০০০ হাজার টাকা দিয়ে কিনেছি কিন্তু এর নির্ধারিত মূল্য ৩০০০ টাকা এখন কি করবো ৪০০০ টাকা ছাড়া আরো পাওয়া যাচ্ছে না আলু তো লাগাতেই হবে।

জয়পুরহাটের জেলার ক্ষেতলাল উপজেলার চৌমুনী বাজারের সবচেয়ে বড় ব্র্যাক ডিলার জামান তালুকদারের কাছে ব্রাক আলু বীজের দাম বৃদ্ধির কারণ জানতে চাইলে তিনি অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমরা কোন আলু বীজের দাম নির্ধারিত মূলের চেয়ে বেশি দাম নিচ্ছিনা না। অনেক কৃষক পাচ্ছে না এর কারণ জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, আমার কাছে অধিকাংশ কৃষক অগ্রিম আলু বুকিং দিয়েছে তাদেরকেই আলু বীজ আগে দিতে হবে।

অন্যদিকে, আক্কেলপুর উপজেলার জামালগঞ্জ বাজারে বেশ কিছু কৃষকের সাথে কথা বলে জানা গেছে, টিএসপি, ডিএপি সার চাহিদার তুলনায় কম পাচ্ছেন। জামালগঞ্জ বাজারের মহব্বতপুর গ্রামের কৃষক আবু ছালেহ বলেন,আমার ১০ বস্তা টিএসপি সার দরকার আমি ৫ বস্তা পেয়েছি।

বিসিআইসি ডিলার মো. সাইফুর আলম বলেন, বর্তমান সারের তেমন কোন সংকট নেই। জয়পুরহাট সদর উপজেলার খুচরা সার বিক্রেতা আব্দুল হাদি বলেন, আমি সীমিত পরিমাণ সার পেয়েছি শুধুমাত্র ইউরিয়া সারটা বেশি পেয়েছি। টিএসপি এমওপি ও ডিএপি তেমন পাইনি।

কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অফ বাংলাদেশ (ক্যাব) জয়পুরহাট জেলা শাখার সভাপতি মো. আব্দুস সালাম সরদার বলেন, কৃষকদের স্যার ও আলুর বীজ ন্যায্যমূল্যে পাওয়ার জন্য জেলা প্রশাসনের সাথে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।

জয়পুরহাট জেলার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক রাহেলা পারভিন বলেন, সার আলু বীজের কোন সংকট নেই। আমরা আশা করছি আলুর লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়েও কিছু বেশি হতে পারে।

এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক আফরোজা আকতার বাংলা টাইমসকে বলেন, যেহেতু জয়পুরহাট জেলা আলু চাষে সারা বাংলাদেশে দ্বিতীয় বৃহত্তম জেলা এজন্য আলু বীজ ও স্যারের আলাদা একটা চাহিদা থাকে। এ জেলার কৃষক যেন ন্যায্য মূল্যে আলু বীজ এবং সার কিনতে পারে এটি নিশ্চিত করার জন্য আমাদের জয়পুরহাট জেলা প্রশাসন থেকে নিয়মিত বাজার মনিটরিং ও মোবাইল কোর্ট অব্যাহত আছে। এমনকি কোন ডিলারের দোকান বন্ধ থাকলে কৃষক আলু চাইলে আমরা সে ব্যবস্থাও করি। আলু বীজ ও সারের নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে কোনভাবেই বেশি নেওয়া যাবে না, নির্ধারিত মূল্যের বাইরে কেউ নিলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

ট্যাগস :

বীজ আলুর কৃত্রিম সংকট দেখিয়ে সিন্ডিকেট

সংবাদ প্রকাশের সময় : ১২:১২:০২ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪

জয়পুরহাট জেলায় চলতি মৌসুমে ৪০ হাজার হেক্টর জমিতে আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। এর বিপরীতে বীজের চাহিদা রয়েছে প্রায় ৬০ হাজার মেট্রিক টন। অসাধু ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেটের কারনে বাজার থেকে বেশি দামে খাবার আলু কিনতে হচ্ছে কৃষকদের। জয়পুরহাট আলু উৎপাদনে বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম জেলা।

সরেজমিন দেখা গেছে, কৃত্রিম সংকট দেখিয়ে সিন্ডিকেট করে নির্ধারিত দামের চেয়ে প্রতি বস্তা সার ও বীজ আলুতে কৃষকদের কাছ থেকে অতিরিক্ত অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছেন কিছু অসাধু ব্যবসায়ী। ফলে বেড়ে যাচ্ছে উৎপাদন খরচ এতে দিশেহারা হচ্ছেন কৃষকেরা।

অন্যদিকে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কোন সঙ্কট নেই। এখানকার উৎপাদিত আলু স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে সারাদেশে সরবরাহ করা হয়। পাশাপাশি জেলার ১৯টি হিমাগারে সংরক্ষণ করা হয় খাবার ও বীজ আলু। এবার জাতভেদে ব্র্যাক সীডের ৪০ কেজির প্রতি বস্তা বীজের আলু ২৯২০ টাকা থেকে ৩২০০ টাকা দাম নির্ধারণ করা হলেও বেকায়দায় ফেলে কৃষকদের কাছ থেকে ৪০০০ থেকে ৪৫০০ টাকা দাম নিচ্ছেন কিছু অসাধু ব্যবসায়ী। এছাড়া অন্যান্য বীজের দাম ও চাহিদা কম থাকলেও বিক্রি হচ্ছে বেশি দামেই। ইতোমধ্যেই জেলার বিভিন্ন এলাকায় আলু চাষাবাদ শুরু হওয়ায় অতিরিক্ত মুনাফালোভী কিছু অসাধু ব্যবসায়ী কৃত্রিম সংকট সৃষ্টির মাধ্যমে সিন্ডিকেট করে নির্ধারিত দামের চাইতে বেশি দামে বীজ আলু ও সার কিনতে বাধ্য করছেন কৃষকদের। এসব সিন্ডিকেট ভেঙে ন্যায্যমূল্যে প্রাপ্তির দাবির সাথে জেলা প্রশাসনের অভিযান আরো জোরদার করতে হবে বলে জানিয়েছেন কৃষকেরা।

সদর উপজেলার আমদই ইউনিয়নের গ্রা কৃষক হাফিজুল বলেন, আমি ১০ বস্তা বিআরডিসি অ্যাস্টরিক আলু বীজ কিনেছি প্রতি ৪০ কেজি বস্তার নিতে মূল্য ছিল ২৪০০ থেকে ২৫০০ টাকা কিন্তু আমার কাছ থেকে নিয়েছে প্রতি ৪০ কেজি আলুর বীজ নিয়েছে ৪০০০ টাকা চার হাজার টাকা। অন্যদিকে ক্ষেতলাল উপজেলার দা তালশন গ্রামের কৃষক রফিকুল ইসলাম বলেন আমি বটতলী বাজার থেকে ১০ বস্তা কারেজ আলুর বীজ ব্রাক কোম্পানি থেকে নিয়েছি প্রতি ৪০ কেজি নির্ধারিত মূল্য ছিল ৩০৪০ টাকা আমাকে নিতে হয়েছে ৪০০০ টাকা বস্তা। আলু লাগানোর জন্য এছাড়া কোন উপায় ছিল না।

আক্কেলপুর উপজেলার জাফরপুর গ্রামের কৃষক নিরেন মন্ডল বলেন আমি ২০ বস্তা সানসাইন ব্রাক কোম্পানির প্রতি মন ৪০০০ হাজার টাকা দিয়ে কিনেছি কিন্তু এর নির্ধারিত মূল্য ৩০০০ টাকা এখন কি করবো ৪০০০ টাকা ছাড়া আরো পাওয়া যাচ্ছে না আলু তো লাগাতেই হবে।

জয়পুরহাটের জেলার ক্ষেতলাল উপজেলার চৌমুনী বাজারের সবচেয়ে বড় ব্র্যাক ডিলার জামান তালুকদারের কাছে ব্রাক আলু বীজের দাম বৃদ্ধির কারণ জানতে চাইলে তিনি অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমরা কোন আলু বীজের দাম নির্ধারিত মূলের চেয়ে বেশি দাম নিচ্ছিনা না। অনেক কৃষক পাচ্ছে না এর কারণ জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, আমার কাছে অধিকাংশ কৃষক অগ্রিম আলু বুকিং দিয়েছে তাদেরকেই আলু বীজ আগে দিতে হবে।

অন্যদিকে, আক্কেলপুর উপজেলার জামালগঞ্জ বাজারে বেশ কিছু কৃষকের সাথে কথা বলে জানা গেছে, টিএসপি, ডিএপি সার চাহিদার তুলনায় কম পাচ্ছেন। জামালগঞ্জ বাজারের মহব্বতপুর গ্রামের কৃষক আবু ছালেহ বলেন,আমার ১০ বস্তা টিএসপি সার দরকার আমি ৫ বস্তা পেয়েছি।

বিসিআইসি ডিলার মো. সাইফুর আলম বলেন, বর্তমান সারের তেমন কোন সংকট নেই। জয়পুরহাট সদর উপজেলার খুচরা সার বিক্রেতা আব্দুল হাদি বলেন, আমি সীমিত পরিমাণ সার পেয়েছি শুধুমাত্র ইউরিয়া সারটা বেশি পেয়েছি। টিএসপি এমওপি ও ডিএপি তেমন পাইনি।

কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অফ বাংলাদেশ (ক্যাব) জয়পুরহাট জেলা শাখার সভাপতি মো. আব্দুস সালাম সরদার বলেন, কৃষকদের স্যার ও আলুর বীজ ন্যায্যমূল্যে পাওয়ার জন্য জেলা প্রশাসনের সাথে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।

জয়পুরহাট জেলার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক রাহেলা পারভিন বলেন, সার আলু বীজের কোন সংকট নেই। আমরা আশা করছি আলুর লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়েও কিছু বেশি হতে পারে।

এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক আফরোজা আকতার বাংলা টাইমসকে বলেন, যেহেতু জয়পুরহাট জেলা আলু চাষে সারা বাংলাদেশে দ্বিতীয় বৃহত্তম জেলা এজন্য আলু বীজ ও স্যারের আলাদা একটা চাহিদা থাকে। এ জেলার কৃষক যেন ন্যায্য মূল্যে আলু বীজ এবং সার কিনতে পারে এটি নিশ্চিত করার জন্য আমাদের জয়পুরহাট জেলা প্রশাসন থেকে নিয়মিত বাজার মনিটরিং ও মোবাইল কোর্ট অব্যাহত আছে। এমনকি কোন ডিলারের দোকান বন্ধ থাকলে কৃষক আলু চাইলে আমরা সে ব্যবস্থাও করি। আলু বীজ ও সারের নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে কোনভাবেই বেশি নেওয়া যাবে না, নির্ধারিত মূল্যের বাইরে কেউ নিলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।