ঢাকা ০৫:১৭ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

দুবলারচরের জেলেদের স্বপ্ন-কান্না

আবু হানিফ, বাগেরহাট
  • সংবাদ প্রকাশের সময় : ১২:৩৮:১০ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪ ১২ বার পড়া হয়েছে
বাংলা টাইমস অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

খুলনার সুন্দরবন সংলগ্ন বঙ্গোপসাগরের তীরে জেগে ওঠা দুবলারচরে এখন চলছে শুঁটকির ভরা মৌসুম। টানা ৬ মাসের জন্য কয়েক হাজার মৎস্যজীবীর পচারণায় মুখর দুলারচরের বিস্তীর্ণ জনপদ। পুরোদমে শুরু হয়েছে সাগর থেকে মাছ ধরে শুঁটকি প্রক্রিয়াজাতকরণ। নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহ থেকে ১০ হাজার জেলে মাছ ধরা ও শুকানোর কাজে নেমে পড়েছে।

টানা ৫ মাস এই চরে কাজ করেন তারা। প্রতি মৌসুমে এই পল্লীতে শত কোটি টাকার বিনিয়োগ হলেও শুঁটকি শিল্পে নেই সরকারি কোনো বড় উদ্যোগ। অস্থায়ী ঘর ও মাচা করতে হয় মহাজন ও জেলেরে উদ্যোগে।

ছয় মাসের বাণিজ্যে মহাজনদের কেউ হচ্ছেন কোটিপতি, আবার কেউ টানাপড়েনে নিঃস্ব হচ্ছেন। বিভিন্ন এনজিও থেকে চড়া সুদে ঋণ নিয়ে মহাজনরা দুবলারচরে ব্যবসা করলেও ‘সাহেবরে’ তারা আশীর্বাদ মনে করেন। সাহেবরা বড় অঙ্কের টাকা বিনিয়োগ করে মাথাবিহীন কাঁচা চিংড়িমাছ সংগ্রহ করেন। তারাই মূলত বন বিভাগ থেকে সাগরে জেলেদের মাছ ধরার অনুমতির ব্যবস্থা করে আসছেন যুগ যুগ ধরে। এবারও এই চরে শুটকি প্রক্রিয়াজাতকরনে ১৫ জনের নামে লাইসেন্সের অনুমতি দিয়েছে বন বিভাগ। সেই ঘুরে ফিরে এখনও ফ্যাসিবাদের খলেই রয়ে গেছে দেশের অন্যতম শুটকিপল্লী হিসেবে খ্যাত ‘দুবলার চর’।

এখানে নেই স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র, কেউ অসুস্থ হলে ঝড়-জলোচ্ছাস উপেক্ষা করেই মংলা বন্দরে যেতে পাড়ি দিতে হয় ১২০ কিলোমিটার পথ। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতায় এই পল্লীতে স্যুতা কমে গেলেও যুগ যুগ ধরে বড় সাহেব হিসেবে পরিচিত কামাল উদ্দিনের রয়েছে একচ্ছত্র আধিপত্য। তার নিয়ন্ত্রণে অন্তত ১৫ জন সেকেন্ড ইন কমান্ডের মাধ্যমে পরিচালিত হচ্ছে দুবলারচরের জীবন-জীবিকা। এজন্য মহাজন ও জেলেরা তাদের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছেন। অনেকেই তাদের জুলুম-নীপিড়ন সহ্য করলেও নানা শঙ্কায় মুখ খুলতেও সাহস পান না।

জানা গেছে, বঙ্গোপসাগরে বাংলাদেশ অংশের মংলা সমুদ্র বন্দর থেকে ১২০ কিলোমিটার দূরে সুন্দরবনের দক্ষিণে, কটকার দক্ষিণ-পশ্চিমে এবং হিরণ পয়েন্টের ক্ষিণ-পূর্বে অবস্থিত একটি দ্বীপ। এই দ্বীপটির আয়তন ৬৬.৫ কিমি ২। এটি খুলনা বিভাগের বাগেরহাট জেলায় অবস্থিত। দুবলার চর সুন্দরবনের ৪৫ এবং ৮ নম্বর কম্পার্টমেন্টে অবস্থিত। খুলনা শহর বা বাগেরহাট জেলার মোংলা বন্দর থেকে ট্রলার কিংবা লঞ্চযোগে যেতে হয় দুবলার চরে। এটি সুন্দরবনের মধ্যে একটি পর্যটন কেন্দ্রও বটে। তবে মাছ ধরার মৌসুমে এখানে পাঁচ থেকে ছয় মাস বসবাস করেন জেলেরা। আলোরকোল, কোকিলমনি, হলদিখালি, কবরখালি, মাঝেরকিল্লা, অফিসকিল্লা, নারকেলবাড়িয়া, ছোট আমবাড়িয়া, মেহেরআলির চর এবং শ্যালারচর নিয়ে গঠিত দুবলার চর। কুঙ্গা ও মরা পশুর নরে মাঝে এটি একটি বিচ্ছিন্ন দ্বীপ। দুবলার চর মূলত জেলে গ্রাম হিসেবেই পরিচিত। জোয়ার-ভাটার সঙ্গে জেগে ওঠে আবার সাগরের লোনা জলে তলিয়ে যায় দুবলার চর। মাছ ধরার সঙ্গে চলে শুঁটকি শুকানোর কাজ।

বর্ষা মৌসুমের পর বহু জেলে পাঁচ মাসের জন্য সুদূর কক্সবাজার, চট্টগ্রামসহ, বাগেরহাট, পিরোজপুর, খুলনা, সাতক্ষীরা থেকে ডেরা বেঁধে সাময়িক বসতি গড়েন এখানে। এই দ্বীপটিতে প্রতি বছরের কার্ত্তিক মাসে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের রাসমেলা এবং পুণ্যস্নানের আয়োজন হয়। ধুঁ ধুঁ বালু চরে টেলিটক ছাড়া আর কোনো মোবাইল অপারেটর কোম্পানির নেটওয়ার্কের সংযোগ নেই এখানে। এখান থেকে আহরিত শুঁটকি চট্টগ্রামসহ দেশের পাইকারী বাজারে মজুত ও বিক্রয় করা হয়। সুন্দরবনের পূর্ব বিভাগের সদর প্তর বাগেরহাট থেকে মাছ সংগ্রহের পূর্বানুমতিসাপেক্ষে বহরার ও জেলেরা দুবলার চরে প্রবেশ করেন।

আরও জানা গেছে, শুষ্ক মৌসুমে জেলেরা বঙ্গোপসাগর ও সুন্দরবনের সংলগ্ন নদী থেকে ধরে এনে এই চরে প্রচুর পরিমাণে মাছ শুটকি বানায়। রূপচাঁদা, লইট্যা, ছুরিসহ প্রায় ৮৫ প্রজাতির মাছ এবং বিভিন্ন ধরনের চিংড়ি সুন্দরবনে শুকিয়ে শুটকি প্রক্রিয়াজাত করা হয়। চরে জেলেদের থাকার জন্য বনবিভাগের অনুমতি নিয়ে আলোরকোলে ৮২৫টি, মাঝেরকেল্লায় ৪০টি, নারিকেলবাড়ীয়ায় ৯৫টি এবং শ্যালারচরে ৭৫টি অস্থায়ী জেলেঘর নির্মাণ করেছে। ছন দিয়ে এসব ঘর নির্মাণ করা হয়েছে। এছাড়া আলোরকোলে ৯০টি দোকান, ৫১টি মাছের ডিপো, মাঝেরকেল্লায় সুইটি দোকান, পাঁচটি মাছের ডিপো, নারিকেলবাড়ীয়ায় সুইটি দোকান, চারটি ডিপো এবং শ্যালারচরে সুইটি দোকান ও চারটি মাছের ডিপো বসানো হয়েছে। সাগরতীরে জেলেদের অস্থায়ী থাকার ঘর, মাছ শুকানোর চাতাল এবং মাচা বানাতে সুন্দরবনের কোনো গাছপালা ব্যবহার না করার জন্য বনবিভাগের নির্দেশনা আছে।

এসব বানাতে জেলেরা গ্রামের গাছপালা সঙ্গে নিয়ে যান সেখানে। সাতক্ষীরা, ফরিদপুর, খুলনা, যশোরসহ বিভিন্ন জেলার মানুষ সেখানে বছরে টানা পাঁচমাস কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন। এই পাঁচমাসের আয়-রোজগারের টাকায় চলে তাদের সারা বছরের হিসেব। নভেম্বর থেকে শুরু হয়ে মার্চ মাস পর্যন্ত এই পাঁচ মাসের সময়কালে তারা এই-একমাস পর ৪-৭ দিনের জন্য ছুটিতে বাড়িতে পরিবারের কাছে যাওয়ার সুযোগ পান। প্রায় ২ হাজার ট্রলার ও নৌকা নিয়ে এখানে আগত জেলেরা নভেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত এই পাঁচমাস সাগরে মাছ ধরেন। ধরে আনা মাছ জেলেরা মাচায় শুকিয়ে শুঁটকি করেন। এর ১০-১২ জনের একটি গ্রপ ১০ দিন পর্যন্ত নদীতে থেকে জাল ফেলে কেবল মাছ ধরেন।

অপর একটি গ্রপ ট্রলারযোগে বিভিন্ন জেলের জাল থেকে ধরা মাছ সংগ্রহ করে দুবলার চরে পৌঁছে দেনে। আরেকটি গ্রুপ সেই মাছ ট্রলার থেকে বিভিন্ন ড্রামে তুলে চাতালে আনেন। এরপর চাতালে থাকা আরেকটি গ্রুপ শুটকির জন্য প্রক্রিয়াজাত শুরু করেন। পরে অন্য একটি দল তা শুকানোর জন্য মাটিতে বেছানো নেট বা বাঁশের মাচায় ঝুলিয়ে রাখেন।

বাগেরহাট রামপালের শুঁটকি ব্যবসায়ী ইমরান ফরাজী জানান, তার বাবা কুদ্দুস ফরাজী ৫০ বছর আগে এই চরে শুঁটকি ব্যবসা করেছেন। তার অপর ভাই মুতাচ্ছিন ফরাজীও এই ব্যবসায় জড়িত।

তিনি জানান, এই খাত থেকে সরকার বিপুল অঙ্কের রাজস্ব পেলেও নেই সরকারি কোনো উদ্যোগ বা পৃষ্ঠপোষকতা। তারা এনজিওর থেকে চড়া সুদে ঋণ নিয়ে এই ব্যবসা করে আসছেন। মূলত সাহেবরা বনবিভাগ থেকে তাদের মাছ ধরার অনুমতির ব্যবস্থা করে থাকেন। তারা কোটি কোটি টাকা বিনিয়োগ করেন জেলে-মহাজনদের কাছে। সাহেবরা-কোনো সুদ না নিলেও বিনিয়োগের বিপরীতে কাঁচা চিংড়ি মাছ নিয়ে থাকেন। চিংড়ি মাছ ধরার পর মাথা কেটে রাখা হয়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দুবলার চরের একাধিক জেলে ও মহাজনরা জানান, কামাল উদ্দিন, খুলনার পিন্টু কমিশনার, খোকন, হক, হাকিম বিশ্বাস, জাহিুল সাহেব তাদের এখানে বিনিয়োগ করেন। সাহেবরা বিনিয়োগ করলেও সেই টাকা পর্যাপ্ত না হওয়ায় মহাজনেরা এনজিও থেকে প্রতি লাখে শতকরা ১৪ টাকা হারে সুদে টাকা নেয়। এছাড়া পাঁচমাসের জন্য এক লাখ টাকা নিয়ে বাড়তি ২০ হাজার টাকা সুদ গুনতে হয়। তবে অর্থ বিনিয়োগ ও নিরাপত্তার নিশ্চয়তার কারণে তারা সাহেবদের আশীর্বাদ মনে করেন। তারা জানান, র‌্যাব ও কোষ্টগার্ডের তদারকি এবং নজরদারির কারণে দুবলারচরে স্যুতা অনেকটাই কমে গেছে। তবে পুরো দুবলার চর নিয়ন্ত্রণ করেন কামাল উদ্দিন।

তিনি যুগ যুগ ধরে দুবলার চরে একক আধিপত্য বিস্তার করে চলছেন। শেখ হাসিনার আশীর্বাদপুষ্ট আওয়ামী লীগের অনুসারী হয়েও সাধারণ জেলে ও মহাজনদের ওপর ফ্যাসিবাদী ভুমিকায় অবতীর্ণ হন কামাল উদ্দিনসহ তার সেকেন্ড ইন কমান্ড খ্যাত আরও ১৫ জন নেতা। ‘সাহেবদের’ শোষণে তাদের জীবন অতিষ্ট।

দুবলার চরে বসবাসরত ৩০ থেকে ৫০ হাজার জেলের সব কর্মযজ্ঞ ১৫ জন ‘সাহেব’ নিয়ন্ত্রণ করেন। আর এসব সাহেবরে ‘সাহেব’ দুবলার চর ফিশারম্যান গ্রুপের সভাপতি কামাল উদ্দিন আহমেদ। জেলেরে অনেকে তাকে ‘বড় সাহেব’ বা ‘কামাল মামা’ বলে ডাকেন। জেলেদের অভিযোগ, মূলত জেলেরা বন বিভাগ থেকে মাছ ধার জন্য লাইসেন্স বা অনুমোতি পত্র পান না। এই লাইসেন্স নিয়ন্ত্রণ করেন এই কামাল উদ্দিনসহ সাহেবরা। কোন জেলে কোথায় মাছ ধরবেন, কার কাছে বিক্রি করবেন, সব কিছুই কামাল সাহেব নিয়ন্ত্রণ করেন। এখানের সবকিছুই নিয়ন্ত্রণ করেন এই কামাল উদ্দিন।

দুবলার চরে চারটি সাইক্লোন শেল্টার রয়েছে। এর মধ্যে মেহেরআলী সাইক্লোন শেল্টার খল করে কামাল উদ্দিন গড়ে তুলেছেন নিজের সুরম্য প্রাসাদ। মৌসুমের ৫ মাস কামাল উদ্দিন রাজার হালে এখানেই থাকেন এবং চরের সবকিছু নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে নিজের আখের গোছান। দুবলার চরের আলোরকোলে গড়ে ওঠা নিউ মার্কেট পুরোটাই এককভাবে কামাল উদ্দিনের নিয়ন্ত্রণে থাকে। ৯৬টি দোকানের কেউই ভয়ে কামালের বিরুদ্ধে কোনো কথা বলতে চান না।

জেলেরা আরও অভিযোগ করেন, জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সমুদ্র থেকে মাছ ধরি, কিন্তু সাহেবদের যন্ত্রণায় মাছের সঠিক মূল্য পাই না। কামাল উদ্দিন এই চরের মাছ ও শুঁটকির র নিয়ন্ত্রণ করেন। এছাড়া চিংড়ি মাছের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ তার হাতেই। অনেক সময় জেলেরা নী বা সমুদ্র থেকে চাকা চিংড়ি ধরেন, কিন্তু সেগুলো কামালের লোকজন নিয়ে যায়। আবার জেলেরা কম মূল্যে কামালের কাছেই চিংড়ি বিক্রি করতে বাধ্য হন। বড় কোনো মাছ জেলেদের জালে ধরা পড়লে সেই মাছও চরে আনা হয় না। জেলেদের নৌকা থেকে কামাল উদ্দিনের লোকজন সেগুলো নিয়ে যায়।

জেলেরা জানান, কামাল উদ্দিন খুবই চতুর ও ভয়ঙ্কর লোক। তার সঙ্গে যারা ব্যবসা করতে গেছেন তারাই নিঃস্ব হয়েছেন। তার আক্রোশের কারণে অনেক জেলে সর্বশান্ত হয়েছেন, অনেক জেলেই দুবলার চরে ঢুকতে পারেন না। কামালের অনুসারীরাই ছয় মাসের বাণিজ্যে কোটিপতি হচ্ছেন। আবার তার বিপরীতে থাকা জেলে বা মহাজনেরা বড় বিনিয়োগ করেও নিঃস্ব হয়ে মৌসুম শেষ করছেন।

জানা গেছে, পিরোজপুরের প্রয়াত মুক্তিযোদ্ধা মেজর (অব.) জিয়া উদ্দিন আহমেদ ১৯৮৪ সালের অক্টোবরে তার ছোট ভাই কামাল উদ্দিন আহমেদ, ভাগ্নে শাহানুর রহমান শামীম ও কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধাকে নিয়ে সুন্দরবনের দুবলার চরে আসেন। বনস্যু বাহিনীগুলোর হাতে প্রতিনিয়ত নির্যাতিত সুন্দরবনের জেলেদের সংগঠিত করে শুঁটকি মাছের ব্যবসা শুরু করেন।

২০১৩ সালে পূর্ব সুন্দরবনের চরপুঁটিয়ায় বন্দুকযুদ্ধে জলদস্যু মোর্তজা বাহিনীর চার সদস্য নিহত ও মেজর জিয়া গুলিবিদ্ধ হন। ২০১৭ সালের ২৭ জুলাই অসুস্থ হয়ে মারা যান জিয়া। এরপর কয়েকজন সাহেবকে নিয়ে ভিন্নভাবে দুবলার চরের নিয়ন্ত্রণ নেন কামাল উদ্দিন।

অভিযোগের বিষয় জানতে চাইলে কামাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, এসব অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা। আমি জেলে, বাওয়ালি, মৌয়ালী ও শুঁটকি ব্যবসায়ীদের সার্বিক সুযোগ-সুবিধা দিয়ে আসছি। এখানে জেলেরা নিরাপদে এখন মাছ আহরণ করতে পারে। কোনো চাঁদা দিতে হয় না।

বন বিভাগের সূত্র ও মৎস্যজীবীরা জানান, মৌসুমে মাছ ধরার জন্য ১০ হাজার টাকা ফি দিয়ে বন বিভাগ থেকে লাইসেন্স সংগ্রহ করা হয়। ওই লাইসেন্স প্রতিবছর নবায়ন করতে খরচ হয় ৭০০ টাকা। এই মৌসুমে দুবলার চরের স্থানীয় ও আশপাশের লোকরে মধ্যে ১৫ জন মাছ ধরার অনুমতি পেয়েছেন। এরমধ্যে- কামাল উদ্দিন আহমেদ, আফিয়া বেগম, খান শফিউল্লাহ, শেখ মইনুদ্দিন আহমেদ, আরিফ হোসেন, রেজাউল শেখ, এবি এম মুস্তিাকিন, ইদ্রিস আলী, হাকিম বিশ্বাস, জালাল উদ্দিন আহমেদ, সুলতান মাহমুদ, বেলায়েত সরদার, কামরুন নাহার, শাহানুর রহমান এবং আসাদুর রহমান সরদার।

সুন্দরবনের দুবলারচর বন বিভাগের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা প্রহ্লা চন্দ্র রায় বলেন, ঘর নির্মাণসহ মাছ প্রক্রিয়াজাতের জন্য ১৫ জনের নামে লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে। তাদের লোকজন নিয়ে তারাই সব নিয়ন্ত্রণ করে। তবে কোনো বিচ্যুতির বিষয়ে আমাদের কাছে এখনও কেউ কোনো অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে অবশ্যই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে ।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

ট্যাগস :

দুবলারচরের জেলেদের স্বপ্ন-কান্না

সংবাদ প্রকাশের সময় : ১২:৩৮:১০ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪

খুলনার সুন্দরবন সংলগ্ন বঙ্গোপসাগরের তীরে জেগে ওঠা দুবলারচরে এখন চলছে শুঁটকির ভরা মৌসুম। টানা ৬ মাসের জন্য কয়েক হাজার মৎস্যজীবীর পচারণায় মুখর দুলারচরের বিস্তীর্ণ জনপদ। পুরোদমে শুরু হয়েছে সাগর থেকে মাছ ধরে শুঁটকি প্রক্রিয়াজাতকরণ। নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহ থেকে ১০ হাজার জেলে মাছ ধরা ও শুকানোর কাজে নেমে পড়েছে।

টানা ৫ মাস এই চরে কাজ করেন তারা। প্রতি মৌসুমে এই পল্লীতে শত কোটি টাকার বিনিয়োগ হলেও শুঁটকি শিল্পে নেই সরকারি কোনো বড় উদ্যোগ। অস্থায়ী ঘর ও মাচা করতে হয় মহাজন ও জেলেরে উদ্যোগে।

ছয় মাসের বাণিজ্যে মহাজনদের কেউ হচ্ছেন কোটিপতি, আবার কেউ টানাপড়েনে নিঃস্ব হচ্ছেন। বিভিন্ন এনজিও থেকে চড়া সুদে ঋণ নিয়ে মহাজনরা দুবলারচরে ব্যবসা করলেও ‘সাহেবরে’ তারা আশীর্বাদ মনে করেন। সাহেবরা বড় অঙ্কের টাকা বিনিয়োগ করে মাথাবিহীন কাঁচা চিংড়িমাছ সংগ্রহ করেন। তারাই মূলত বন বিভাগ থেকে সাগরে জেলেদের মাছ ধরার অনুমতির ব্যবস্থা করে আসছেন যুগ যুগ ধরে। এবারও এই চরে শুটকি প্রক্রিয়াজাতকরনে ১৫ জনের নামে লাইসেন্সের অনুমতি দিয়েছে বন বিভাগ। সেই ঘুরে ফিরে এখনও ফ্যাসিবাদের খলেই রয়ে গেছে দেশের অন্যতম শুটকিপল্লী হিসেবে খ্যাত ‘দুবলার চর’।

এখানে নেই স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র, কেউ অসুস্থ হলে ঝড়-জলোচ্ছাস উপেক্ষা করেই মংলা বন্দরে যেতে পাড়ি দিতে হয় ১২০ কিলোমিটার পথ। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতায় এই পল্লীতে স্যুতা কমে গেলেও যুগ যুগ ধরে বড় সাহেব হিসেবে পরিচিত কামাল উদ্দিনের রয়েছে একচ্ছত্র আধিপত্য। তার নিয়ন্ত্রণে অন্তত ১৫ জন সেকেন্ড ইন কমান্ডের মাধ্যমে পরিচালিত হচ্ছে দুবলারচরের জীবন-জীবিকা। এজন্য মহাজন ও জেলেরা তাদের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছেন। অনেকেই তাদের জুলুম-নীপিড়ন সহ্য করলেও নানা শঙ্কায় মুখ খুলতেও সাহস পান না।

জানা গেছে, বঙ্গোপসাগরে বাংলাদেশ অংশের মংলা সমুদ্র বন্দর থেকে ১২০ কিলোমিটার দূরে সুন্দরবনের দক্ষিণে, কটকার দক্ষিণ-পশ্চিমে এবং হিরণ পয়েন্টের ক্ষিণ-পূর্বে অবস্থিত একটি দ্বীপ। এই দ্বীপটির আয়তন ৬৬.৫ কিমি ২। এটি খুলনা বিভাগের বাগেরহাট জেলায় অবস্থিত। দুবলার চর সুন্দরবনের ৪৫ এবং ৮ নম্বর কম্পার্টমেন্টে অবস্থিত। খুলনা শহর বা বাগেরহাট জেলার মোংলা বন্দর থেকে ট্রলার কিংবা লঞ্চযোগে যেতে হয় দুবলার চরে। এটি সুন্দরবনের মধ্যে একটি পর্যটন কেন্দ্রও বটে। তবে মাছ ধরার মৌসুমে এখানে পাঁচ থেকে ছয় মাস বসবাস করেন জেলেরা। আলোরকোল, কোকিলমনি, হলদিখালি, কবরখালি, মাঝেরকিল্লা, অফিসকিল্লা, নারকেলবাড়িয়া, ছোট আমবাড়িয়া, মেহেরআলির চর এবং শ্যালারচর নিয়ে গঠিত দুবলার চর। কুঙ্গা ও মরা পশুর নরে মাঝে এটি একটি বিচ্ছিন্ন দ্বীপ। দুবলার চর মূলত জেলে গ্রাম হিসেবেই পরিচিত। জোয়ার-ভাটার সঙ্গে জেগে ওঠে আবার সাগরের লোনা জলে তলিয়ে যায় দুবলার চর। মাছ ধরার সঙ্গে চলে শুঁটকি শুকানোর কাজ।

বর্ষা মৌসুমের পর বহু জেলে পাঁচ মাসের জন্য সুদূর কক্সবাজার, চট্টগ্রামসহ, বাগেরহাট, পিরোজপুর, খুলনা, সাতক্ষীরা থেকে ডেরা বেঁধে সাময়িক বসতি গড়েন এখানে। এই দ্বীপটিতে প্রতি বছরের কার্ত্তিক মাসে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের রাসমেলা এবং পুণ্যস্নানের আয়োজন হয়। ধুঁ ধুঁ বালু চরে টেলিটক ছাড়া আর কোনো মোবাইল অপারেটর কোম্পানির নেটওয়ার্কের সংযোগ নেই এখানে। এখান থেকে আহরিত শুঁটকি চট্টগ্রামসহ দেশের পাইকারী বাজারে মজুত ও বিক্রয় করা হয়। সুন্দরবনের পূর্ব বিভাগের সদর প্তর বাগেরহাট থেকে মাছ সংগ্রহের পূর্বানুমতিসাপেক্ষে বহরার ও জেলেরা দুবলার চরে প্রবেশ করেন।

আরও জানা গেছে, শুষ্ক মৌসুমে জেলেরা বঙ্গোপসাগর ও সুন্দরবনের সংলগ্ন নদী থেকে ধরে এনে এই চরে প্রচুর পরিমাণে মাছ শুটকি বানায়। রূপচাঁদা, লইট্যা, ছুরিসহ প্রায় ৮৫ প্রজাতির মাছ এবং বিভিন্ন ধরনের চিংড়ি সুন্দরবনে শুকিয়ে শুটকি প্রক্রিয়াজাত করা হয়। চরে জেলেদের থাকার জন্য বনবিভাগের অনুমতি নিয়ে আলোরকোলে ৮২৫টি, মাঝেরকেল্লায় ৪০টি, নারিকেলবাড়ীয়ায় ৯৫টি এবং শ্যালারচরে ৭৫টি অস্থায়ী জেলেঘর নির্মাণ করেছে। ছন দিয়ে এসব ঘর নির্মাণ করা হয়েছে। এছাড়া আলোরকোলে ৯০টি দোকান, ৫১টি মাছের ডিপো, মাঝেরকেল্লায় সুইটি দোকান, পাঁচটি মাছের ডিপো, নারিকেলবাড়ীয়ায় সুইটি দোকান, চারটি ডিপো এবং শ্যালারচরে সুইটি দোকান ও চারটি মাছের ডিপো বসানো হয়েছে। সাগরতীরে জেলেদের অস্থায়ী থাকার ঘর, মাছ শুকানোর চাতাল এবং মাচা বানাতে সুন্দরবনের কোনো গাছপালা ব্যবহার না করার জন্য বনবিভাগের নির্দেশনা আছে।

এসব বানাতে জেলেরা গ্রামের গাছপালা সঙ্গে নিয়ে যান সেখানে। সাতক্ষীরা, ফরিদপুর, খুলনা, যশোরসহ বিভিন্ন জেলার মানুষ সেখানে বছরে টানা পাঁচমাস কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন। এই পাঁচমাসের আয়-রোজগারের টাকায় চলে তাদের সারা বছরের হিসেব। নভেম্বর থেকে শুরু হয়ে মার্চ মাস পর্যন্ত এই পাঁচ মাসের সময়কালে তারা এই-একমাস পর ৪-৭ দিনের জন্য ছুটিতে বাড়িতে পরিবারের কাছে যাওয়ার সুযোগ পান। প্রায় ২ হাজার ট্রলার ও নৌকা নিয়ে এখানে আগত জেলেরা নভেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত এই পাঁচমাস সাগরে মাছ ধরেন। ধরে আনা মাছ জেলেরা মাচায় শুকিয়ে শুঁটকি করেন। এর ১০-১২ জনের একটি গ্রপ ১০ দিন পর্যন্ত নদীতে থেকে জাল ফেলে কেবল মাছ ধরেন।

অপর একটি গ্রপ ট্রলারযোগে বিভিন্ন জেলের জাল থেকে ধরা মাছ সংগ্রহ করে দুবলার চরে পৌঁছে দেনে। আরেকটি গ্রুপ সেই মাছ ট্রলার থেকে বিভিন্ন ড্রামে তুলে চাতালে আনেন। এরপর চাতালে থাকা আরেকটি গ্রুপ শুটকির জন্য প্রক্রিয়াজাত শুরু করেন। পরে অন্য একটি দল তা শুকানোর জন্য মাটিতে বেছানো নেট বা বাঁশের মাচায় ঝুলিয়ে রাখেন।

বাগেরহাট রামপালের শুঁটকি ব্যবসায়ী ইমরান ফরাজী জানান, তার বাবা কুদ্দুস ফরাজী ৫০ বছর আগে এই চরে শুঁটকি ব্যবসা করেছেন। তার অপর ভাই মুতাচ্ছিন ফরাজীও এই ব্যবসায় জড়িত।

তিনি জানান, এই খাত থেকে সরকার বিপুল অঙ্কের রাজস্ব পেলেও নেই সরকারি কোনো উদ্যোগ বা পৃষ্ঠপোষকতা। তারা এনজিওর থেকে চড়া সুদে ঋণ নিয়ে এই ব্যবসা করে আসছেন। মূলত সাহেবরা বনবিভাগ থেকে তাদের মাছ ধরার অনুমতির ব্যবস্থা করে থাকেন। তারা কোটি কোটি টাকা বিনিয়োগ করেন জেলে-মহাজনদের কাছে। সাহেবরা-কোনো সুদ না নিলেও বিনিয়োগের বিপরীতে কাঁচা চিংড়ি মাছ নিয়ে থাকেন। চিংড়ি মাছ ধরার পর মাথা কেটে রাখা হয়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দুবলার চরের একাধিক জেলে ও মহাজনরা জানান, কামাল উদ্দিন, খুলনার পিন্টু কমিশনার, খোকন, হক, হাকিম বিশ্বাস, জাহিুল সাহেব তাদের এখানে বিনিয়োগ করেন। সাহেবরা বিনিয়োগ করলেও সেই টাকা পর্যাপ্ত না হওয়ায় মহাজনেরা এনজিও থেকে প্রতি লাখে শতকরা ১৪ টাকা হারে সুদে টাকা নেয়। এছাড়া পাঁচমাসের জন্য এক লাখ টাকা নিয়ে বাড়তি ২০ হাজার টাকা সুদ গুনতে হয়। তবে অর্থ বিনিয়োগ ও নিরাপত্তার নিশ্চয়তার কারণে তারা সাহেবদের আশীর্বাদ মনে করেন। তারা জানান, র‌্যাব ও কোষ্টগার্ডের তদারকি এবং নজরদারির কারণে দুবলারচরে স্যুতা অনেকটাই কমে গেছে। তবে পুরো দুবলার চর নিয়ন্ত্রণ করেন কামাল উদ্দিন।

তিনি যুগ যুগ ধরে দুবলার চরে একক আধিপত্য বিস্তার করে চলছেন। শেখ হাসিনার আশীর্বাদপুষ্ট আওয়ামী লীগের অনুসারী হয়েও সাধারণ জেলে ও মহাজনদের ওপর ফ্যাসিবাদী ভুমিকায় অবতীর্ণ হন কামাল উদ্দিনসহ তার সেকেন্ড ইন কমান্ড খ্যাত আরও ১৫ জন নেতা। ‘সাহেবদের’ শোষণে তাদের জীবন অতিষ্ট।

দুবলার চরে বসবাসরত ৩০ থেকে ৫০ হাজার জেলের সব কর্মযজ্ঞ ১৫ জন ‘সাহেব’ নিয়ন্ত্রণ করেন। আর এসব সাহেবরে ‘সাহেব’ দুবলার চর ফিশারম্যান গ্রুপের সভাপতি কামাল উদ্দিন আহমেদ। জেলেরে অনেকে তাকে ‘বড় সাহেব’ বা ‘কামাল মামা’ বলে ডাকেন। জেলেদের অভিযোগ, মূলত জেলেরা বন বিভাগ থেকে মাছ ধার জন্য লাইসেন্স বা অনুমোতি পত্র পান না। এই লাইসেন্স নিয়ন্ত্রণ করেন এই কামাল উদ্দিনসহ সাহেবরা। কোন জেলে কোথায় মাছ ধরবেন, কার কাছে বিক্রি করবেন, সব কিছুই কামাল সাহেব নিয়ন্ত্রণ করেন। এখানের সবকিছুই নিয়ন্ত্রণ করেন এই কামাল উদ্দিন।

দুবলার চরে চারটি সাইক্লোন শেল্টার রয়েছে। এর মধ্যে মেহেরআলী সাইক্লোন শেল্টার খল করে কামাল উদ্দিন গড়ে তুলেছেন নিজের সুরম্য প্রাসাদ। মৌসুমের ৫ মাস কামাল উদ্দিন রাজার হালে এখানেই থাকেন এবং চরের সবকিছু নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে নিজের আখের গোছান। দুবলার চরের আলোরকোলে গড়ে ওঠা নিউ মার্কেট পুরোটাই এককভাবে কামাল উদ্দিনের নিয়ন্ত্রণে থাকে। ৯৬টি দোকানের কেউই ভয়ে কামালের বিরুদ্ধে কোনো কথা বলতে চান না।

জেলেরা আরও অভিযোগ করেন, জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সমুদ্র থেকে মাছ ধরি, কিন্তু সাহেবদের যন্ত্রণায় মাছের সঠিক মূল্য পাই না। কামাল উদ্দিন এই চরের মাছ ও শুঁটকির র নিয়ন্ত্রণ করেন। এছাড়া চিংড়ি মাছের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ তার হাতেই। অনেক সময় জেলেরা নী বা সমুদ্র থেকে চাকা চিংড়ি ধরেন, কিন্তু সেগুলো কামালের লোকজন নিয়ে যায়। আবার জেলেরা কম মূল্যে কামালের কাছেই চিংড়ি বিক্রি করতে বাধ্য হন। বড় কোনো মাছ জেলেদের জালে ধরা পড়লে সেই মাছও চরে আনা হয় না। জেলেদের নৌকা থেকে কামাল উদ্দিনের লোকজন সেগুলো নিয়ে যায়।

জেলেরা জানান, কামাল উদ্দিন খুবই চতুর ও ভয়ঙ্কর লোক। তার সঙ্গে যারা ব্যবসা করতে গেছেন তারাই নিঃস্ব হয়েছেন। তার আক্রোশের কারণে অনেক জেলে সর্বশান্ত হয়েছেন, অনেক জেলেই দুবলার চরে ঢুকতে পারেন না। কামালের অনুসারীরাই ছয় মাসের বাণিজ্যে কোটিপতি হচ্ছেন। আবার তার বিপরীতে থাকা জেলে বা মহাজনেরা বড় বিনিয়োগ করেও নিঃস্ব হয়ে মৌসুম শেষ করছেন।

জানা গেছে, পিরোজপুরের প্রয়াত মুক্তিযোদ্ধা মেজর (অব.) জিয়া উদ্দিন আহমেদ ১৯৮৪ সালের অক্টোবরে তার ছোট ভাই কামাল উদ্দিন আহমেদ, ভাগ্নে শাহানুর রহমান শামীম ও কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধাকে নিয়ে সুন্দরবনের দুবলার চরে আসেন। বনস্যু বাহিনীগুলোর হাতে প্রতিনিয়ত নির্যাতিত সুন্দরবনের জেলেদের সংগঠিত করে শুঁটকি মাছের ব্যবসা শুরু করেন।

২০১৩ সালে পূর্ব সুন্দরবনের চরপুঁটিয়ায় বন্দুকযুদ্ধে জলদস্যু মোর্তজা বাহিনীর চার সদস্য নিহত ও মেজর জিয়া গুলিবিদ্ধ হন। ২০১৭ সালের ২৭ জুলাই অসুস্থ হয়ে মারা যান জিয়া। এরপর কয়েকজন সাহেবকে নিয়ে ভিন্নভাবে দুবলার চরের নিয়ন্ত্রণ নেন কামাল উদ্দিন।

অভিযোগের বিষয় জানতে চাইলে কামাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, এসব অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা। আমি জেলে, বাওয়ালি, মৌয়ালী ও শুঁটকি ব্যবসায়ীদের সার্বিক সুযোগ-সুবিধা দিয়ে আসছি। এখানে জেলেরা নিরাপদে এখন মাছ আহরণ করতে পারে। কোনো চাঁদা দিতে হয় না।

বন বিভাগের সূত্র ও মৎস্যজীবীরা জানান, মৌসুমে মাছ ধরার জন্য ১০ হাজার টাকা ফি দিয়ে বন বিভাগ থেকে লাইসেন্স সংগ্রহ করা হয়। ওই লাইসেন্স প্রতিবছর নবায়ন করতে খরচ হয় ৭০০ টাকা। এই মৌসুমে দুবলার চরের স্থানীয় ও আশপাশের লোকরে মধ্যে ১৫ জন মাছ ধরার অনুমতি পেয়েছেন। এরমধ্যে- কামাল উদ্দিন আহমেদ, আফিয়া বেগম, খান শফিউল্লাহ, শেখ মইনুদ্দিন আহমেদ, আরিফ হোসেন, রেজাউল শেখ, এবি এম মুস্তিাকিন, ইদ্রিস আলী, হাকিম বিশ্বাস, জালাল উদ্দিন আহমেদ, সুলতান মাহমুদ, বেলায়েত সরদার, কামরুন নাহার, শাহানুর রহমান এবং আসাদুর রহমান সরদার।

সুন্দরবনের দুবলারচর বন বিভাগের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা প্রহ্লা চন্দ্র রায় বলেন, ঘর নির্মাণসহ মাছ প্রক্রিয়াজাতের জন্য ১৫ জনের নামে লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে। তাদের লোকজন নিয়ে তারাই সব নিয়ন্ত্রণ করে। তবে কোনো বিচ্যুতির বিষয়ে আমাদের কাছে এখনও কেউ কোনো অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে অবশ্যই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে ।