ভারতীয় ভিসা বন্ধ, অন্য দেশে ছুটছেন পর্যটকরা
- সংবাদ প্রকাশের সময় : ০৯:০১:৫২ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪ ১৭ বার পড়া হয়েছে
ভারতীয় ভিসা বন্ধ থাকায় এর ব্যাপক প্রভাব পড়েছে বাংলাদেশ ও ভারতের এয়ারলাইন ও পর্যটন খাতে। ফলে মালদ্বীপ, শ্রীলঙ্কা, নেপাল, থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনামসহ অন্যান্য দক্ষিণ এশীয় ও দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় দেশগুলোয় বাংলাদেশি পর্যটক বেড়েছে।
বাংলাদেশ আউটবাউন্ড ট্যুর অপারেটরস ফোরামের তথ্য অনুযায়ী, ভারতীয় ভিসা দেয়া যখন বন্ধ রেখেছে, ঠিক তখন থেকেই শুরু পর্যটনের মৌসুম। এ কারণে ওইসব দেশে অবকাশ যাপনকালীন পর্যটকের সংখ্যা ১০ থেকে ১৫ শতাংশ বেড়েছে। ফলে বেড়েছে বিমান ভাড়াও। বিশেষ করে নেপাল ও শ্রীলঙ্কার মতো কিছু দেশের বিমান ভাড়া বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে। তবে এয়ারলাইনগুলো বলছে, সরাসরি ভিসা বন্ধ থাকায় বিমান ভাড়া বাড়েনি। সাধারণত সরবরাহর অনুপাতে জোগান এবং টিকিট কেনার সময়ের মতো সাধারণ কারণেই ভাড়া বেড়েছে।
আউটবাউন্ড ট্যুর অপারেটরস ফোরামের সভাপতি হাসানুজ্জামান রনি বলেন, একদিকে ট্যুরিস্ট মৌসুম শুরু হয়েছে। অন্যদিকে ভারতীয় ভিসা বন্ধ থাকায় অন্য রুটগুলোতে পর্যটকের প্রবাহ বেড়েছে। এছাড়া ইউরোপের ভিসা প্রাপ্তির জন্য অনেকে ভারতের বিকল্প হিসেবে নেপালকে বেছে নিয়েছেন।
তিনি বলেন, নেপালের রাউন্ড ট্রিপ টিকিট আগে ২৫-৩০ হাজার টাকা ছিল, যা এখন প্রায় দ্বিগুণ হয়ে গেছে। যদিও অন্যান্য রুটে যাত্রী বেড়েছে, তবে ভারতীয় ভিসা বন্ধ থাকায় যে পরিমাণ ব্যবসা কমেছে সেটা এখনো পোষানো যায়নি। দূরত্বের দিক দিয়ে ভারতের পর বাংলাদেশ থেকে সবচেয়ে কাছের পর্যটন গন্তব্য হলো নেপাল। দেশটিতে বর্তমানে ঢাকা থেকে দুটি এয়ারলাইন্স ফ্লাইট পরিচালনা করছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স ও নেপালের হিমালয়া এয়ারলাইন্স। এ দুই এয়ারলাইন্সই বাংলাদেশ থেকে প্রতিদিন ফ্লাইট পরিচালনা করে।
এয়ারলাইন্স দুটি জানিয়েছে, তাদের ফ্লাইটগুলোতে ৮০ শতাংশের বেশি আসন পূর্ণ থাকছে। যাত্রীদের অধিকাংশই পর্যটক। বাকিরা কাঠমান্ডু হয়ে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন গন্তব্যে যাচ্ছেন। শ্রীলঙ্কাগামী এক পর্যটক বলেন, রাউন্ড-ট্রিপ টিকিটের দাম প্রায় ৯০ হাজার টাকা। কিন্তু শ্রীলংকার নিয়মিত ভাড়া সাধারণত ৪২ হাজার থেকে ৫৩ হাজার টাকার মধ্যে থাকে। শেয়ারট্রিপ-এ ১৯ নভেম্বর শ্রীলঙ্কান এয়ারলাইন্সের ঢাকা-কলম্বো রাউন্ড-ট্রিপ ফ্লাইটের জন্য টিকিটের মূল্য ছিল ১.১২ লাখ টাকা।
অন্যদিকে এয়ার ইন্ডিয়ার ট্রানজিট ফ্লাইটের টিকিটের দাম ছিল ৪৮ হাজার ৭১৪ টাকা। ট্যুর অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অভ বাংলাদেশ-এর তথ্যমতে, সাংস্কৃতিক সম্পর্ক, ভৌগোলিক নৈকট্য এবং সহজে ভিসা পাওয়ায় দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশের পর্যটকদের সবচেয়ে জনপ্রিয় গন্তব্য ছিল ভারত। দেশের মোট পর্যটকের ৪০-৪৫ শতাংশই ভারতে যেতেন।
তবে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ভারত ভিসা প্রদান বন্ধ রাখলে পরিস্থিতি বদলে যায়। যদিও ভারত সীমিত পরিসরে ফের ভিসা প্রদান শুরু করেছে, তবু সংখ্যায় সেটি খুবই কম। এতে ভারতীয় রুটে যাত্রীর সংখ্যা কমে গেছে। যাত্রী সংখ্যা কমে যাওয়ায় বেশ কয়েকটি বাংলাদেশি এয়ারলাইন্স ভারতে তাদের ফ্লাইট কমিয়ে দিয়েছে।
বর্তমানে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স, ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স ও নভোএয়ার বাংলাদেশ-ভারত রুটে ঢাকা-কলকাতা, দিল্লি, চেন্নাই এবং মুম্বাইয়ে রুটে ফ্লাইট পরিচালনা করছে। এছাড়া ভারতের ভিস্তারা এয়ারলাইন্স, এয়ার ইন্ডিয়া ও ইন্ডিগো বাংলাদেশ-ভারত রুটে ফ্লাইট পরিচালনা করে। নভোএয়ার স¤প্রতি তাদের কলকাতা ফ্লাইট বন্ধ করে দিয়েছে।
অন্যান্য এয়ারলাইন্সগুলো ফ্লাইটের সংখ্যা কমিয়ে এক-তৃতীয়াংশ থেকে অর্ধেক পর্যন্ত নামিয়ে এনেছে। অ্যামেজিং ট্যুরসের স্বত্বাধিকারী মহসিন ইকবাল বলেন, আমাদের ব্যবসার ১০ শতাংশ হতো ভারতে। কিন্তু ভারত ভিসা বন্ধ করার পর আমরা সেই ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে পারিনি। দক্ষিণ এশিয়ার গন্তব্যগুলোতে রাউন্ড-ট্রিপ টিকিট ৬০ হাজার টাকার নিচে পাওয়া কঠিন হয়ে যাচ্ছে। ভুটানের টিকিট ৫০ হাজারে বিক্রি হচ্ছে। কিছু পর্যটন গন্তব্যে ভাড়া বাড়লেও এয়ারলাইন্সগুলো জানিয়েছে, যেসব পর্যটক পরিকল্পনা করে অগ্রিম টিকিট কিনে রাখেন, তাদেরকে বাড়তি ভাড়া গুনতে হয় না।
ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের জনসংযোগ বিভাগের জেনারেল ম্যানেজার কামরুল ইসলাম এ বিষয়ে বলেন, ভারতীয় ভিসা বন্ধ হওয়ার পর থেকে আমাদের মালদ্বীপ ও ব্যাংকক রুটে যাত্রী অন্তত ১০ শতাংশ বেড়েছে। কেউ যদি একদিন আগে টিকিট কাটেন, তাহলে তো বেশি দামে কিনতে হবেই। তবে যারা প্ল্যান করে ঘোরাফেরা করেন, তারা অন্তত এক মাস আগেই টিকিট কিনে ফেলেন। বাংলাদেশ থেকে দক্ষিণ এশিয়ার পর্যটনকেন্দ্রিক দেশগুলোর মধ্যে কাঠমান্ডু, ব্যাংকক, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুরে ফ্লাইট পরিচালনা করছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স।
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের জেনারেল ম্যানেজার বুশরা ইসলাম বলেন, ভারত ছাড়া অন্য রুটগুলো, যেমন কুয়ালালামপুর, সিঙ্গাপুর, ব্যাংককে আমাদের যথেষ্ট যাত্রীর চাপ আছে। তবে আমরা হঠাৎ বিমান ভাড়া বাড়াইনি; ভাড়া যেভাবে ওঠা-নামা করে ওইভাবেই চলছে। টোয়াবের তথ্যানুসারে, চিকিৎসা পর্যটন, কেনাকাটা ও অবকাশযাপনের জন্য বাংলাদেশি পর্যটকদের ১৫-২০ শতাংশ থাইল্যান্ডে যায়। মালয়েশিয়ায় যায় ১০-১৫ শতাংশ ও সিঙ্গাপুরে যায় ৫-১০ শতাংশ। সংযুক্ত আরব আমিরাত, সৌদি আরব ও ওমানের মতো মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে বাংলাদেশের পর্যটকদের ১০-১৫ শতাংশ এবং ইউরোপে ৫-৮ শতাংশ পর্যটক যায়। নেপাল, শ্রীলঙ্কা ও চীনসহ এশিয়ার অন্যান্য দেশে যায় ৫-৮ শতাংশ পর্যটক। অন্যদিকে বাংলাদেশি পর্যটকদের মধ্যে ২-৫ শতাংশ যায় উত্তর আমেরিকা ও অস্ট্রেলিয়ায়।
অপরদিকে, বাংলাদেশের মানুষ চাইলেই এখন ভারতে যেতে পারছেন না। শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকে সহজে মিলছে না ভিসা। এবার বিষয়টি নিয়ে নতুন বার্তা দিল ভারত। বাংলাদেশের পরিবর্তিত রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে আপৎকালীন ও চিকিৎসার প্রয়োজন ছাড়া আপাতত বাংলাদেশি নাগরিকদের অন্য কোনো ভিসা না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ভারত। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করবে দেশটি।
শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর বাংলাদেশি নাগরিকদের ভিসা পরিষেবা বন্ধ করে দেয় ভারত। বাংলাদেশের অশান্ত পরিস্থিতিতে ভারতীয় দূতাবাসের অনেক কর্মীকে ভারতে ফিরিয়ে নেওয়া হয়। পরে পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হলে ভারতীয় ভিসা কেন্দ্রগুলো পুনরায় কাজ শুরু করে। তবে দিনের পর দিন অপেক্ষা করে ভিসা না পেয়ে ঢাকার ভারতীয় ভিসা প্রদান কেন্দ্রে বিক্ষোভও দেখান অনেকে। এর জেরে ফের ব্যাহত হয় কাজ। এর পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশের নাগরিকদের ভিসার আবেদনের ক্ষেত্রে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করল ভারত।
এদিকে ভারতীয় দূতাবাস এবং ভিসা কেন্দ্রগুলোতে বাড়তি নিরাপত্তা দেওয়ার পর সেপ্টেম্বর থেকে আবার জরুরি ভিত্তিতে পরিষেবা দেওয়া শুরু হয়। ভারতীয় ভিসা আবেদন কেন্দ্র জানিয়েছে, প্রাথমিকভাবে ভিসা সেন্টার খুলছে ঢাকা, রাজশাহী, চট্টগ্রাম, সিলেট এবং খুলনায়। তবে এখনই সকলে ভিসা পাবেন না। কেবল যারা চিকিৎসার জন্য আসবেন, তাদেরই জরুরি ভিত্তিতে দেওয়া হবে অগ্রাধিকার। এক বিজ্ঞপ্তিতে ভারত জানিয়েছে, বাংলাদেশের পরিস্থিতি এখনো স্বাভাবিক নয়। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে আবার ভিসা প্রদানের বিষয়টিও আগের মতো হয়ে যাবে। আপাতত শর্তসাপেক্ষে বাংলাদেশিদের ভিসা প্রদান করা হবে।