ঢাকা ১০:২০ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

পতনের আগে রাষ্ট্রপতির সাথে সম্পর্কে হয় হাসিনার!

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • সংবাদ প্রকাশের সময় : ০৭:১৬:৫৩ অপরাহ্ন, সোমবার, ১১ নভেম্বর ২০২৪ ২৬ বার পড়া হয়েছে
বাংলা টাইমস অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

গত ৫ আগস্ট গণ-আন্দোলনের মুখে পতন হয় শেখ হাসিনার সরকারের। এরপর প্রধানমন্ত্রীর পদ ছেড়ে পালিয়ে ভারতে যান শেখ হাসিনা। এরপর থেকে সেখানেই আশ্রয়ে আছেন তিনি। এদিকে, শেখ হাসিনা দেশ ছাড়ার পর মুহূর্তে জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান জানিয়েছিলেন, প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন শেখ হাসিনা। এর ফলে অন্তর্বর্তী সরকার রাষ্ট্রের দায়িত্ব নিচ্ছে।

কিন্তু, চলতি বছরের অক্টোবরে মানবজমিন পত্রিকার প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরীকে দেয়া এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে রাষ্ট্রপতি দাবি করেন, শেখ হাসিনা পদত্যাগ করেছেন বিষয়টি তিনিও শুনেছেন। তবে তার কাছে কোনো দালিলিক প্রমাণ নেই। তিনি এ-ও বলেন, এ বিষয়ে বিতর্কের সুযোগ নেই। শেখ হাসিনা চলে গেছেন এবং এটাই সত্য। সাক্ষাৎকারটি গত ১৯ অক্টোবর পত্রিকার ম্যাগাজিন সংস্করণ ‘জনতার চোখ’-এ প্রকাশিত হয়। যা নিয়ে দেশজুড়ে আলোচনা তৈরি হয়। এবার ‘জনতার চোখ’-এ চমকে দেয়ার মতো আরেকটি খবর প্রকাশিত হয়েছে।

গত ১০ নভেম্বর প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার আগে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের সাথে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সম্পর্কের টানাপোড়েন চলছিলো। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অন্তত দু’টি বিষয় নিয়ে দেখা-সাক্ষাৎ পর্যন্ত বন্ধ হয়ে যায় শেখ হাসিনা ও রাষ্ট্রপতির মধ্যে। সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিচারক নিয়োগ ও শ্রম আইন সংশোধন নিয়ে বঙ্গভবন আর গণভবনের মধ্যে চিঠি চালাচালিও চলছিলো। রীতি অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রী বিদেশ সফরে গেলে দেশে ফেরার পর রাষ্ট্রপতির সাথে সাক্ষাৎ করেন। কিন্তুচীন ও ভারত সফরের পর ব্যতিক্রম দেখা যায়। সম্পর্কের অবনতি এমনটাই হয়েছিল যে, প্রধানমন্ত্রী বঙ্গভবনের দিকে পা-ই বাড়াননি।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, এমন পরিস্থিতে বিচারক নিয়োগের প্রশ্নটি সামনে আসে। গণভবন বা আইন মন্ত্রণালয়ের তৎপরতা দেখে রাষ্ট্রপতি বিরক্ত হন। চলতি বছরের ১৮ এপ্রিল রাষ্ট্রপতি স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়, সংবিধানের ৯৫ (১) অনুচ্ছেদে সামগ্রিকতা নিয়োগ সংক্রান্ত প্রক্রিয়া উল্লেখ রয়েছে। নিয়োগের পদ্ধতি স্পষ্ট না থাকায় দীর্ঘদিন থেকে প্রথাগতভাবে নিয়োগ হয়ে আসছে। বিষয়টি লিখিত না থাকলেও আলোচনাক্রমে রাষ্ট্রপতির সাথে পরামর্শ করার নিয়ম রয়েছে। এ বিষয়ে রাষ্ট্রপতিই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন। নিয়ম ভঙ্গ করে প্রধানমন্ত্রীর অফিস থেকে বঙ্গভবনে একটি সারসংক্ষেপ পাঠানো হয়। সারসংক্ষেপ বহনকারী ব্যক্তি তাৎক্ষণিকভাবে রাষ্ট্রপতির স্বাক্ষরের জন্য চাপ দিতে থাকেন।

এতে বিরক্ত হয়ে রাষ্ট্রপতি পাল্টা চিঠি পাঠান সই না করেই। তাতে তিনি বলেন, যেভাবে সারসংক্ষেপ পাঠানো হয়েছে তাতে রাষ্ট্রপতির এখতিয়ার নিয়েই প্রশ্ন তোলা হয়েছে। রাষ্ট্রপতি লেখেন, ‘আমি কিছুই জানি না, অথচ আমাকেই চূড়ান্ত অনুমোদন দিতে হবে। প্রচলিত নিয়মনীতি উপেক্ষা করে রাষ্ট্রপতিকেই পুতুল বানানো হয়েছে। শুধুমাত্র আমার ক্ষেত্রে এর ব্যতিক্রম কেন? দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা পদ্ধতি ও প্রক্রিয়া উপেক্ষা করার কী অর্থ আছে’।  

আইনমন্ত্রী রাষ্ট্রপতির সাথে পরামর্শ করারও প্রয়োজন মনে করেননি। সবমিলিয়ে রাষ্ট্রপতি ব্যথিত হন-এটাও উল্লেখ ছিল চিঠিতে। চিঠির অনুলিপি দেয়া হয় প্রধানমন্ত্রী, প্রধান বিচারপতি ও আইনমন্ত্রীর দপ্তরে।  ওদিকে প্রচলিত শ্রম আইন নিয়েও ভিন্নমত দেখা দেয়। আলোচনা না করে রাষ্ট্রপতির স্বাক্ষর নেয়ার জন্য সারসংক্ষেপ পাঠানো হয়। তাতেও মনঃক্ষুণ্ন হন রাষ্ট্রপতি। এ নিয়ে ক্রমেই বঙ্গভবন ও গণভবনের মধ্যে সম্পর্কের অবনতি ঘটতে থাকে। মূলত এসব কারণ থেকেই হাসিনা ৫ আগস্ট ক্ষমতা ও দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার সময় রাষ্ট্রপতির সাথে টেলিফোনেও কোনো যোগাযোগ করেননি।  

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

ট্যাগস :

পতনের আগে রাষ্ট্রপতির সাথে সম্পর্কে হয় হাসিনার!

সংবাদ প্রকাশের সময় : ০৭:১৬:৫৩ অপরাহ্ন, সোমবার, ১১ নভেম্বর ২০২৪

গত ৫ আগস্ট গণ-আন্দোলনের মুখে পতন হয় শেখ হাসিনার সরকারের। এরপর প্রধানমন্ত্রীর পদ ছেড়ে পালিয়ে ভারতে যান শেখ হাসিনা। এরপর থেকে সেখানেই আশ্রয়ে আছেন তিনি। এদিকে, শেখ হাসিনা দেশ ছাড়ার পর মুহূর্তে জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান জানিয়েছিলেন, প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন শেখ হাসিনা। এর ফলে অন্তর্বর্তী সরকার রাষ্ট্রের দায়িত্ব নিচ্ছে।

কিন্তু, চলতি বছরের অক্টোবরে মানবজমিন পত্রিকার প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরীকে দেয়া এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে রাষ্ট্রপতি দাবি করেন, শেখ হাসিনা পদত্যাগ করেছেন বিষয়টি তিনিও শুনেছেন। তবে তার কাছে কোনো দালিলিক প্রমাণ নেই। তিনি এ-ও বলেন, এ বিষয়ে বিতর্কের সুযোগ নেই। শেখ হাসিনা চলে গেছেন এবং এটাই সত্য। সাক্ষাৎকারটি গত ১৯ অক্টোবর পত্রিকার ম্যাগাজিন সংস্করণ ‘জনতার চোখ’-এ প্রকাশিত হয়। যা নিয়ে দেশজুড়ে আলোচনা তৈরি হয়। এবার ‘জনতার চোখ’-এ চমকে দেয়ার মতো আরেকটি খবর প্রকাশিত হয়েছে।

গত ১০ নভেম্বর প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার আগে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের সাথে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সম্পর্কের টানাপোড়েন চলছিলো। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অন্তত দু’টি বিষয় নিয়ে দেখা-সাক্ষাৎ পর্যন্ত বন্ধ হয়ে যায় শেখ হাসিনা ও রাষ্ট্রপতির মধ্যে। সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিচারক নিয়োগ ও শ্রম আইন সংশোধন নিয়ে বঙ্গভবন আর গণভবনের মধ্যে চিঠি চালাচালিও চলছিলো। রীতি অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রী বিদেশ সফরে গেলে দেশে ফেরার পর রাষ্ট্রপতির সাথে সাক্ষাৎ করেন। কিন্তুচীন ও ভারত সফরের পর ব্যতিক্রম দেখা যায়। সম্পর্কের অবনতি এমনটাই হয়েছিল যে, প্রধানমন্ত্রী বঙ্গভবনের দিকে পা-ই বাড়াননি।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, এমন পরিস্থিতে বিচারক নিয়োগের প্রশ্নটি সামনে আসে। গণভবন বা আইন মন্ত্রণালয়ের তৎপরতা দেখে রাষ্ট্রপতি বিরক্ত হন। চলতি বছরের ১৮ এপ্রিল রাষ্ট্রপতি স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়, সংবিধানের ৯৫ (১) অনুচ্ছেদে সামগ্রিকতা নিয়োগ সংক্রান্ত প্রক্রিয়া উল্লেখ রয়েছে। নিয়োগের পদ্ধতি স্পষ্ট না থাকায় দীর্ঘদিন থেকে প্রথাগতভাবে নিয়োগ হয়ে আসছে। বিষয়টি লিখিত না থাকলেও আলোচনাক্রমে রাষ্ট্রপতির সাথে পরামর্শ করার নিয়ম রয়েছে। এ বিষয়ে রাষ্ট্রপতিই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন। নিয়ম ভঙ্গ করে প্রধানমন্ত্রীর অফিস থেকে বঙ্গভবনে একটি সারসংক্ষেপ পাঠানো হয়। সারসংক্ষেপ বহনকারী ব্যক্তি তাৎক্ষণিকভাবে রাষ্ট্রপতির স্বাক্ষরের জন্য চাপ দিতে থাকেন।

এতে বিরক্ত হয়ে রাষ্ট্রপতি পাল্টা চিঠি পাঠান সই না করেই। তাতে তিনি বলেন, যেভাবে সারসংক্ষেপ পাঠানো হয়েছে তাতে রাষ্ট্রপতির এখতিয়ার নিয়েই প্রশ্ন তোলা হয়েছে। রাষ্ট্রপতি লেখেন, ‘আমি কিছুই জানি না, অথচ আমাকেই চূড়ান্ত অনুমোদন দিতে হবে। প্রচলিত নিয়মনীতি উপেক্ষা করে রাষ্ট্রপতিকেই পুতুল বানানো হয়েছে। শুধুমাত্র আমার ক্ষেত্রে এর ব্যতিক্রম কেন? দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা পদ্ধতি ও প্রক্রিয়া উপেক্ষা করার কী অর্থ আছে’।  

আইনমন্ত্রী রাষ্ট্রপতির সাথে পরামর্শ করারও প্রয়োজন মনে করেননি। সবমিলিয়ে রাষ্ট্রপতি ব্যথিত হন-এটাও উল্লেখ ছিল চিঠিতে। চিঠির অনুলিপি দেয়া হয় প্রধানমন্ত্রী, প্রধান বিচারপতি ও আইনমন্ত্রীর দপ্তরে।  ওদিকে প্রচলিত শ্রম আইন নিয়েও ভিন্নমত দেখা দেয়। আলোচনা না করে রাষ্ট্রপতির স্বাক্ষর নেয়ার জন্য সারসংক্ষেপ পাঠানো হয়। তাতেও মনঃক্ষুণ্ন হন রাষ্ট্রপতি। এ নিয়ে ক্রমেই বঙ্গভবন ও গণভবনের মধ্যে সম্পর্কের অবনতি ঘটতে থাকে। মূলত এসব কারণ থেকেই হাসিনা ৫ আগস্ট ক্ষমতা ও দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার সময় রাষ্ট্রপতির সাথে টেলিফোনেও কোনো যোগাযোগ করেননি।