বিদেশে স্থায়ী হতে চাইছেন আ’ লীগের নেতারা
- সংবাদ প্রকাশের সময় : ০১:০৯:২৭ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১১ নভেম্বর ২০২৪ ২৪ বার পড়া হয়েছে
রাজনীতিতে খুব সহসা ফেরার সুযোগ নেই। দেশে ফিরলে যেতে হবে জেলে। ক্ষমতায় থাকাকালে বিতর্কিত অনেক কর্মকান্ডের কারণে পড়তে হবে তোপের মুখে। এসব চিন্তা থেকে ৫ আগস্টের পর পালিয়ে যাওয়া সিলেটের অনেক আওয়ামী লীগ নেতা বিদেশে স্থায়ী হওয়ার পরিকল্পনা নিচ্ছেন। যুক্তরাজ্যে পাড়ি জমানো কয়েকজন নেতা এরমধ্যে রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদনও করেছেন।
আর ব্রিটিশ পাসপোর্ট প্রত্যাহার করে দেশে এমপি হওয়া নেতারাও ফের সেখানেই স্থায়ী হওয়ার চেষ্টা করছেন। ইউরোপ কিংবা আমেরিকায় যাদের স্থায়ী হওয়ার সুযোগ নেই তারা চাইছেন মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে ওয়ার্ক অথবা রেসিডেন্স পারমিট ভিসার ব্যবস্থা করার।
আগামী ১০ বছরের আগে দেশে আওয়ামী লীগের রাজনীতির অনুকূল পরিবেশ তৈরির সম্ভাবনা কম মনে করেই পালিয়ে যাওয়া নেতারা বিদেশে স্থায়ী হওয়ার চিন্তাভাবনা করছেন বলে দলীয় সূত্র নিশ্চিত করেছে।
সূত্রমতে, ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পর জনরোষ থেকে বাঁচতে সিলেট আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের কয়েকশ’ নেতাকর্মী ভারতে পালিয়ে যান। এরপর সেখান থেকে সুযোগ বুঝে তারা যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে চলে যান।
যুক্তরাজ্যে যারা চলে গেছে তাদের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী শফিকুর রহমান চৌধুরী, সিটি করপোরেশনের অপসারিত মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী, মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আজাদুর রহমান আজাদ ও বিধান কুমার সাহা, জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক এমপি এডভোকেট রণজিত সরকার, সাবেক এমপি হাবিবুর রহমান হাবিব, জেলা আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক মোবাশ্বির আলী, মহানগর যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মুশফিক জায়গীরদার, সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক এমএ হান্নান, মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি আফতাব হোসেন খান। এছাড়াও আরও অর্ধশতাধিক নেতাকর্মী বর্তমানে যুক্তরাজ্যে অবস্থান করছেন।
এরমধ্যে বিধান কুমার সাহা ও রণজিত সরকার সেদেশ রাজনৈতিক আশ্রয় চেয়ে আবেদন করেছেন বলে দলের একাধিক নেতা নিশ্চিত করেছে। শফিকুর রহমান চৌধুরী ও হাবিবুর রহমান হাবিব ব্রিটিশ নাগরিকত্ব প্রত্যাহার করে দেশে নির্বাচন করেছিলেন। তারাও বর্তমান পরিস্থিতিতে দেশে ফেরার চিন্তা থেকে দূরে রয়েছেন। এ ছাড়া অন্যান্য নেতারাও আছেন পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে। আগামী ৩-৪ মাসের মধ্যে পরিস্থিতির উন্নতি না হলে তারাও রাজনৈতিক আশ্রয় চেয়ে আবেদন করার পরিকল্পনায় আছেন বলে জানা গেছে।
এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন জেলা আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সদস্য মঞ্জুর শাফি চৌধুরী এলিম ও শাহিদুর রাহমান চৌধুরী জাবেদ, মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি কিশওয়ার জাহান সৌরভ। তিনজনই যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক হলেও রাজনীতির সুবাদে কয়েক বছর ধরে টানা দেশে অবস্থান করছিলেন। আপাতত তারাও দেশে ফেরার চিন্তা মাথা সরিয়ে ফেলেছেন।
সপরিবারে কানাডায় পাড়ি জমিয়েছেন মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবদুল আলীম তুষার। তিনিও সেখানে স্থায়ী হওয়ার চিন্তা করছেন। এছাড়া জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি নাজমুল ইসলাম, তার বড় ভাই সাবেক ছাত্রলীগ নেতা কামরুল ইসলাম ও ওয়ালী উল্লাহ বদরুল সৌদি আরবে এবং জেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এমদাদ রহমান বর্তমানে অবস্থান করছেন দুবাইয়ে।
ভারতে এখনো অবস্থান করা নেতাকর্মীদের কয়েকজন মাসখানেকের মধ্যে যুক্তরাজ্যে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে সূত্র জানিয়েছে।
যুক্তরাজ্যে অবস্থান করা সিলেট আওয়ামী লীগের এক নেতা জানান, বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের রাজনীতির অনুকূল পরিবেশের জন্য অন্তত ১০ বছর অপেক্ষা করতে হবে। দেশে একেকজন নেতার বিরুদ্ধে ডজন ডজন মামলা হয়েছে। দেশে ফিরলে দীর্ঘদিন জেলে যেতে হবে।
এছাড়া বেশিরভাগ নেতাদের বাড়িঘর লুট হয়েছে, ব্যবসা-বাণিজ্য নষ্ট হয়েছে। তাই অনেকেই দেশে ফেরার চিন্তা বাদ দিয়েছেন। কেউ কেউ ইতোমধ্যে রাজনৈতিক আশ্রয় চেয়ে আবেদন করেছেন। কেউ আবেদনের জন্য আরও এক-দুই মাস সময় নিচ্ছেন। কাজের জন্যও কেউ কেউ সিলেটী মালিকানাধীন ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানগুলোতে ধর্ণা দিচ্ছেন।