ঢাকা ০৪:৩৯ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৩ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

হিমাগারে কারসাজি, ১৫ টাকার আলু ৭০ টাকা

সুজন কুমার মন্ডল, জয়পুরহাট
  • সংবাদ প্রকাশের সময় : ১১:৪৩:৪৭ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৯ নভেম্বর ২০২৪ ২০ বার পড়া হয়েছে
বাংলা টাইমস অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

জয়পুরহাটে হিমাগারের কারসাজিতে ১৫ টাকার আলু ৭০ টাকায় পৌঁছেছে। কৃষকরা যখন প্রথম আলু তুলে বিক্রি করেন, তখন এক কেজি আলুর দাম থাকে ১৪ থেকে ১৫ টাকা। কিন্তু বাজারে অস্থিরতা সৃষ্টি হতে শুরু করে জুন মাস থেকেই, আর অক্টোবরের মধ্যে আলুর দাম ৬০ থেকে৭০ টাকায় গিয়ে পৌঁছায়।

কৃষি সংশ্লিষ্টরা বলেন, প্রতি বছর এ সময়ে আলুর দাম বাড়ে। এর মূল কারণ হিমাগার মালিক, আড়তদার ও ব্যবসায়ীদের বাজার নিয়ন্ত্রণের কারসাজি। কৃষকরা তাদের উৎপাদিত আলু মৌসুম শুরুর দিকে কম দামে বিক্রি করলেও, আলু মজুতকারী ব্যবসায়ীরা সেই আলু বাজারে বিক্রি করতে ধীর গতিতে চলেন, ফলে দাম বাড়তে থাকে। কৃষকদের অভিযোগ দাম বেড়ে যাওয়ার এই বিষয়টি কাকতালীয় নয়, বরং এক দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পিত কারসাজির ফল।

কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা বলেন, চলতি বছর জয়পুরহাটে আলুর উৎপাদন লক্ষ্য ছিল ৮ লাখ ৯৫ হাজার মেট্রিক টন। তবে উৎপাদন হয়েছে ৮ লাখ ২৩ হাজার মেট্রিক টন। উৎপাদনের ২৫ শতাংশ হিমাগারে মজুত রয়েছে। ব্যবসায়ীরা ধীর গতিতে আলু বিক্রি করায় দাম বেড়ে যায় প্রতি কেজিতে ৮ থেকে ১০ টাকা।

জয়পুরহাটের খুচরা বাজারে, শনিবার (৯ নভেন্বর) আলুর দাম ছিল কেজি প্রতি ৬৫ থেকে ৭০ টাকা। আর পাইকারি বাজারে ৫৫ থেকে ৬২ টাকা।

আলু ব্যবসায়ী রোমজান আলী বলেন, হিমাগারেই ঘণ্টায় ঘণ্টায় দাম বাড়ানো হয় আলুর। গত সপ্তাহে ৩ হাজার টাকায় বিক্রি হওয়া এক বস্তা আলুর দাম ৩ হাজার ৩৫০ টাকায়।’

অথচ কৃষকদের কাছ থেকে সেই আলু সংগ্রহ করা হয়ে অনেক কম দামে। একমণ গ্যানোলা জাতের আলু ৫৫০ থেকে ৬০০ টাকা। কিন্তু হিমাগারে মজুত থাকার কারণে, দাম বেড়ে যায় কয়েকগুণ।

চলতি বছর জয়পুরহাটে ১৯টি হিমাগারে প্রায় এক লাখ ৮০ হাজার মেট্রিক টন আলু সংরক্ষণ করা হয়েছে। তবে এখন কিছু বীজ আলু ছাড়া, বাকি আলুগুলো ব্যবসায়ীদের হাতে। হিমাগার মালিকরা জানান, নভেম্বরের মধ্যে সব আলু বিক্রি করতে হবে, কারণ এই সময়ে আলুর সংরক্ষণ ব্যয় বাড়তে থাকে।

এদিকে, কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, হিমাগারের মালিকদের হাতে এতো বেশি আলু মজুত যে বাজারে অস্থিতিশীলতা রোধ করা যাচ্ছে না।

কৃষক মোক্তাদির রহমান বলেন, শুরুতে এক কেজি আলু ১৪-১৫ টাকা দরে বিক্রি করেছিলাম, এখন সেই আলু ৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

আলু ব্যবসায়ী রোমজান আলী বলেন, হিমাগার মালিক ও বড় ব্যবসায়ীরা বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে। সিন্ডিকেটের মাধ্যমে বাজারে সংকট তৈরি করা হচ্ছে। যার ফলে দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যাচ্ছে।

কৃষি বিভাগের কর্মকর্তা মেহেদী হাসান বলেন, বাজার তদারকি করছি। হিমাগারে যথেষ্ট পরিমাণ আলু মজুত রয়েছে, তারপরও দাম বৃদ্ধির দায় পুরোপুরি সিন্ডিকেটের ওপর বর্তায়।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

ট্যাগস :

হিমাগারে কারসাজি, ১৫ টাকার আলু ৭০ টাকা

সংবাদ প্রকাশের সময় : ১১:৪৩:৪৭ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৯ নভেম্বর ২০২৪

জয়পুরহাটে হিমাগারের কারসাজিতে ১৫ টাকার আলু ৭০ টাকায় পৌঁছেছে। কৃষকরা যখন প্রথম আলু তুলে বিক্রি করেন, তখন এক কেজি আলুর দাম থাকে ১৪ থেকে ১৫ টাকা। কিন্তু বাজারে অস্থিরতা সৃষ্টি হতে শুরু করে জুন মাস থেকেই, আর অক্টোবরের মধ্যে আলুর দাম ৬০ থেকে৭০ টাকায় গিয়ে পৌঁছায়।

কৃষি সংশ্লিষ্টরা বলেন, প্রতি বছর এ সময়ে আলুর দাম বাড়ে। এর মূল কারণ হিমাগার মালিক, আড়তদার ও ব্যবসায়ীদের বাজার নিয়ন্ত্রণের কারসাজি। কৃষকরা তাদের উৎপাদিত আলু মৌসুম শুরুর দিকে কম দামে বিক্রি করলেও, আলু মজুতকারী ব্যবসায়ীরা সেই আলু বাজারে বিক্রি করতে ধীর গতিতে চলেন, ফলে দাম বাড়তে থাকে। কৃষকদের অভিযোগ দাম বেড়ে যাওয়ার এই বিষয়টি কাকতালীয় নয়, বরং এক দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পিত কারসাজির ফল।

কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা বলেন, চলতি বছর জয়পুরহাটে আলুর উৎপাদন লক্ষ্য ছিল ৮ লাখ ৯৫ হাজার মেট্রিক টন। তবে উৎপাদন হয়েছে ৮ লাখ ২৩ হাজার মেট্রিক টন। উৎপাদনের ২৫ শতাংশ হিমাগারে মজুত রয়েছে। ব্যবসায়ীরা ধীর গতিতে আলু বিক্রি করায় দাম বেড়ে যায় প্রতি কেজিতে ৮ থেকে ১০ টাকা।

জয়পুরহাটের খুচরা বাজারে, শনিবার (৯ নভেন্বর) আলুর দাম ছিল কেজি প্রতি ৬৫ থেকে ৭০ টাকা। আর পাইকারি বাজারে ৫৫ থেকে ৬২ টাকা।

আলু ব্যবসায়ী রোমজান আলী বলেন, হিমাগারেই ঘণ্টায় ঘণ্টায় দাম বাড়ানো হয় আলুর। গত সপ্তাহে ৩ হাজার টাকায় বিক্রি হওয়া এক বস্তা আলুর দাম ৩ হাজার ৩৫০ টাকায়।’

অথচ কৃষকদের কাছ থেকে সেই আলু সংগ্রহ করা হয়ে অনেক কম দামে। একমণ গ্যানোলা জাতের আলু ৫৫০ থেকে ৬০০ টাকা। কিন্তু হিমাগারে মজুত থাকার কারণে, দাম বেড়ে যায় কয়েকগুণ।

চলতি বছর জয়পুরহাটে ১৯টি হিমাগারে প্রায় এক লাখ ৮০ হাজার মেট্রিক টন আলু সংরক্ষণ করা হয়েছে। তবে এখন কিছু বীজ আলু ছাড়া, বাকি আলুগুলো ব্যবসায়ীদের হাতে। হিমাগার মালিকরা জানান, নভেম্বরের মধ্যে সব আলু বিক্রি করতে হবে, কারণ এই সময়ে আলুর সংরক্ষণ ব্যয় বাড়তে থাকে।

এদিকে, কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, হিমাগারের মালিকদের হাতে এতো বেশি আলু মজুত যে বাজারে অস্থিতিশীলতা রোধ করা যাচ্ছে না।

কৃষক মোক্তাদির রহমান বলেন, শুরুতে এক কেজি আলু ১৪-১৫ টাকা দরে বিক্রি করেছিলাম, এখন সেই আলু ৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

আলু ব্যবসায়ী রোমজান আলী বলেন, হিমাগার মালিক ও বড় ব্যবসায়ীরা বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে। সিন্ডিকেটের মাধ্যমে বাজারে সংকট তৈরি করা হচ্ছে। যার ফলে দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যাচ্ছে।

কৃষি বিভাগের কর্মকর্তা মেহেদী হাসান বলেন, বাজার তদারকি করছি। হিমাগারে যথেষ্ট পরিমাণ আলু মজুত রয়েছে, তারপরও দাম বৃদ্ধির দায় পুরোপুরি সিন্ডিকেটের ওপর বর্তায়।